বিএনপির দু’পক্ষে সংঘর্ষে জামায়াত কর্মীসহ আহত ১২
Published: 12th, March 2025 GMT
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে তিন জামায়াত কর্মীসহ ১২ জন আহত হয়েছেন। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার কাশিমাড়ী বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
কাশিমাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আজিজুল সরদার ও বিএনপি কর্মী আক্তার ফারুকের সমর্থকদের এ সংঘর্ষ হয়। এতে আহতরা হলেন- আক্তার ফারুক, শহিদুল্লাহ, রফিকুল ইসলাম, মনজুর হোসেন, সফিকুল ইসলাম, খোকন পাকানি, হেলাল, মাসুদ, আল মামুন, জামায়াত কর্মী তহুর মোল্যা, মিজানুর রহমান ও আব্দুর রহমান। আহতদের মধ্যে সাতজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
বিবাদমান দু’পক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ ছিল। সম্প্রতি আক্তার পক্ষের কয়েক তরুণকে মাদকাসক্ত বলে দাবি করে আজিজুলের লোকজন। এ ঘটনা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে স্থানীয় বিএনপি অফিসে তালা লাগিয়ে দেয় আজিজুলের লোকজন। এ সময় আক্তার কিছু কর্মীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তাকে মারধর করা হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আক্তার সমর্থকরা সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালায় আজিজুলের লোকজনের ওপর। একপর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয়রা জানায় নিকটাত্মীয় হওয়ায় আহত জামায়াত কর্মীরা বিএনপি নেতা আজিজুলের পক্ষে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে আক্তার ফারুক জানান, দলীয় অফিস বন্ধ করতে বাধা দেওয়ায় কয়েক কর্মীসহ তাঁর ওপর জামায়াত কর্মীদের নিয়ে হামলা চালায় আজিজুল, জহুর মোল্যা, আলআমিন ও রবিউল। পরে তাঁর সমর্থকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। নিজেসহ তার ১২ কর্মী আহত হওয়ার দাবি করেন ফারুক।
আজিজুল সরদারের ভাষ্য–তাঁর লোকজনের ওপর আক্তার ফারুক হামলা করায় এলাকাবাসী সমবেত হয়ে পাল্টা জবাব দেয়। এ ঘটনায় তার পক্ষের ১৫ জন আহত হওয়ার দাবি করে তিনি আরও বলেন, জামায়াতের কর্মী না, বরং তার আত্মীয় হওয়ায় অপর সংগঠনের রাজনীতিতে জড়িত কয়েকজন আহত হয়েছে।
শ্যামনগর থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানান, বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কোনো পক্ষই এখনও লিখিত অভিযোগ করেনি উল্লেখ করে তিনি জানান, দু’পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ স ঘর ষ আহত জ ম য় ত কর ম আজ জ ল র র ল কজন স ঘর ষ ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
উপকূল রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ধস, প্লাবনের আশঙ্কা সুন্দরবন তীরবর্তী জনপদে
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মালঞ্চ নদীর চর দেবে গিয়ে উপকূল রক্ষা বাঁধের পাঁচ নম্বর পোল্ডারের সিংহড়তলী অংশে ভয়াবহ ধসের সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার দুপুরে শুরু হওয়া ধস আজ সোমবার আরও গুরুতর আকার ধারণ করেছে। এর আগে শুক্রবার রাতে আকস্মিকভাবে চুনকুড়ি ও সিংহড়তলী এলাকায় চর দেবে যাওয়ার পর থেকেই বাঁধে ধস শুরু হয়।
খবর পেয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা রোববার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে কাজ করছেন।
ধস একেবারে জনবসতির কোল ঘেঁষে হওয়ায় গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নদীতে জোয়ারের চাপ বেড়ে যাওয়ায় বাঁধের অবশিষ্ট দুই থেকে আড়াই ফুট অংশ যে কোনো সময় নদীতে বিলীন হতে পারে। এতে সুন্দরবন তীরবর্তী কয়েকটি জনপদ লবণ পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মালঞ্চ নদীর ছয়টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিলেও সিংহড়তলী অংশের অবস্থা সবচেয়ে সংকটাপন্ন। তারা জানান, দ্রুত বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করা না হলে পরবর্তী জোয়ারে সাত থেকে আটটি গ্রাম পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।
স্বেচ্ছাসেবক আব্দুর রাজ্জাক সমকালকে বলেন, ‘মাত্র সাত-আট মাস আগে এখানে মাটির কাজ হয়েছিল। বাঁধের পাশে অতিরিক্ত মাটি নেওয়ায় বাঁধ অনেকটা খাড়া হয়ে ছিল। কয়েকদিন ধরে ফাটল দেখা দেয়ার পর শনিবার থেকে ধস শুরু হয়। পাউবো তাৎক্ষণিকভাবে জিওশিট চাপিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করলেও শনিবার রাতে সবকিছু ধসে যায়।’
স্থানীয় বনজীবীদের নেতা বাবলুর রহমান সমকালকে বলেন, শনিবার দুপুরে বাঁধের প্রায় ৩০ ফুট অংশ নদীতে ধসে পড়ে। রোববার সকালের জোয়ারে আরও এক দফা ধসের পর বাঁধের অবশিষ্ট উচ্চতা এখন মাত্র দেড় থেকে দুই ফুট। তিনি বলেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সিংহড়তলী, চুনকুড়ি, হরিনগর, যতীন্দ্রনগর, ছোট ভেটখালীসহ অন্তত সাতটি গ্রাম তাৎক্ষণিকভাবে প্লাবিত হতে পারে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নীপা রানী সমকালকে বলেন, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের অন্তত ছয়টি অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। সিংহড়তলীর অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বসতবাড়ির পাশে ভাঙন দেখা দেয়ায় এলাকাবাসী উদ্বাস্তু হওয়ার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। অনেকেই ইতোমধ্যে একাধিকবার সর্বস্ব হারিয়েছেন।
ঘটনাস্থলে থাকা পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দীন সমকালকে বলেন, শনিবার বিকেলে ভাঙন কবলিত অংশে শতাধিক জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হলেও তাতে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়নি। এখন বাঁধের ভেতর দিয়ে ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের রিং বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। তিনি জানান, রোববার রাতের মধ্যে বিকল্প বাঁধ নির্মাণ শেষ করা গেলে বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হবে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রনী খাতুন সমকালকে বলেন, স্থানীয়দের সহযোগিতায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ভাটার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। পানি নামলে শত শত গ্রামবাসীকে নিয়ে ভাঙন রোধে পুনরায় কাজ শুরু করা হবে।’