ভেড়ামারায় ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে সাবরেজিস্ট্রার ৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ
Published: 14th, March 2025 GMT
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে সাবরেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দিন সরকারকে পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন স্থানীয় ছাত্র-জনতা ও ভুক্তভোগীরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তাঁকে ভেড়ামারা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
অভিযুক্ত বোরহান উদ্দিন সরকার দৌলতপুর উপজেলার সাবরেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত। তবে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে ভেড়ামারা সাবরেজিস্ট্রার হিসাবেও কাজ করছেন। বৃহস্পতিবার ছিল সেখানে তাঁর প্রথম কর্মদিবস।
দৌলতপুর উপজেলার দলিললেখক রফিকুল ইসলাম বলেন, বোরহান উদ্দিন ত্রুটিপূর্ণ দলিলগুলো টাকার বিনিময়ে রেজিস্ট্রি করে দেন বলে অভিযোগ আছে। দৌলতপুরেও এমন ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যা থেকে সাবরেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দিনকে তাঁর কার্যালয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ছাত্র-জনতা, ভুক্তভোগীরা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ সময় তাঁরা সাবরেজিস্ট্রারের ব্যক্তিগত সহকারীকে খুঁজতে থাকেন। বোরহান উদ্দিন ব্যক্তিগত সহকারীর মাধ্যমে দলিলে ভুলত্রুটি মার্জনা সাপেক্ষে রেজিস্ট্রি করার নামে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাই তিনি ব্যক্তিগত সহকারীকে টাকাসহ পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন।
বিক্ষুব্ধ লোকজন অভিযোগ করেন, সাবরেজিস্ট্রারের কাজ সাধারণত বেলা তিনটা পর্যন্ত। কিন্তু তিনি ত্রুটিপূর্ণ কিছু দলিল রেখে দিয়েছেন ইফতারির পর কাজ করার জন্য। যে দলিলগুলো রেজিস্ট্রি করেছেন, সেখানেও নামের ভুল বাবদ তাঁর সহকারীকে দিয়ে ১০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে সাবরেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দিন বলেন, যদি কেউ ঘুষ লেনদেনের প্রমাণ দিতে পারেন, তবে তিনি তা মেনে নেবেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোনো ঘুষ–বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত নই। জনগণের উপকার করতে গিয়ে আমি ফেঁসে গেছি। সে আমার সহকারী নয়; বরং আত্মীয়। তার মোবাইল নম্বর আমার কাছে নেই।’ নাম জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘টেনশনে আমার কিছু মনে পড়ছে না।’
ভেড়ামারার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, উপজেলার পরানখালি এলাকার বাসিন্দা রাকিব হোসেন তাঁদের জানিয়েছেন, তাঁর এক স্বজনের দলিলে নাম ভুলের কারণে সাবরেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দিনের সহকারী ১৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। এ–সংক্রান্ত মুঠোফোনে কল রেকর্ড আছে। কিন্তু সেই সহকারী টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন। সহকারীকে ফোন দিতে বললে সাবরেজিস্ট্রার বলেন, তাঁর ফোন নম্বর জানা নেই। এমনকি সহকারীর নামও তিনি বলতে নারাজ।
খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে ভেড়ামারা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আনোয়ার হোসাইন ও ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শহীদুল ইসলাম পুলিশ নিয়ে গিয়ে সাবরেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দিন সরকারকে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সহক র ক র সহক র অবর দ ধ উপজ ল র
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা
‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’
এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’
প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।