আজ খতমে তারাবিতে পবিত্র কোরআনের সুরা নামলের ৬০ থেকে সুরা কাসাস ও সুরা আনকাবুতের ১ থেকে ৪৪ নম্বর আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করা হবে। ২০তম পারা পড়া হবে। এই অংশে আল্লাহর কুদরত, আসমান-জমিন সৃষ্টি, আল্লাহর ক্ষমতা, ইমানদারের পরীক্ষা, মৃত্যু-পরবর্তী জীবন, রিজিক, দুই নদীর মাঝখানে পার্থক্যরেখা, মুসা (আ.) ও ফেরাউনের কাহিনি, কারুনের ঘটনা, মুসলমানদের দুঃখ-কষ্ট, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য, সবুজ-শ্যামল বাগান সৃষ্টি, মিঠা পানি ও লবণাক্ত পানির দরিয়া, কোরআন আঁকড়ে ধরা ও হিদায়েত আল্লাহর হাতে ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হয়েছে।
বান্দার ডাকে আল্লাহর সাড়া
সুরা নামলের ৬০ থেকে ৬৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহর কুদরত ও একাত্ববাদ প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। পরে মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের আলোচনা এসেছে। আল্লাহর দয়ামায়া মানুষকে বেষ্টন করে আছে। অসহায় অবস্থায়, দুঃখ-কষ্টের সময় এবং অসুস্থতার মুহূর্তে তিনিই সাড়া দেন নিরুপায় বান্দার ডাকে। গভীর অন্ধকারে জলে-স্থলে তিনিই দেন পথের দিশা। বৃষ্টি বর্ষণের আগমুহূর্তে তিনি শীতল ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত করেন। তিনিই মানুষকে রিজিক দেন। জীবন দেন।
ভালো কাজের প্রতিদান
ইসলাম বিশ্বাসী মানুষের কাছে চায় শ্রেষ্ঠ ও উত্তম আমল। যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে, মানুষের কল্যাণে কাজ করে, মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তার জন্য আল্লাহর কাছে উচ্চ মর্যাদা রয়েছে। আল্লাহ তাকে মহব্বত, নৈকট্য ও অনুগ্রহের দ্বারা সম্মানিত করবেন। তার আশার চেয়ে উত্তম প্রতিদান দেবেন। তার অস্থিরতা দূর করবেন। বর্তমানে মানুষ নানা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে সময় পার করছে, এক বাঁধনহীন উড়াল জীবন বয়ে বয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় মানুষ; কোথাও যেন শান্তি নেই, মানুষের এই অস্থিরতা কাটাতে পারে তাদের ভালো কাজ। ভালো কাজ ভয়াবহ সেই কিয়ামতের দিনেও মানুষের জন্য আলো হয়ে দাঁড়াবে।
আল্লাহ বলেন, ‘যে কেউ সৎকর্ম নিয়ে আসবে, সে উৎকৃষ্টতর প্রতিদান পাবে এবং সেদিন তারা গুরুতর অস্থিরতা থেকে নিরাপদ থাকবে।’ (সুরা নামল, আয়াত: ৮৯)
আরও পড়ুনহজ ও কোরবানির বিধান এবং আল্লাহর পছন্দনীয় বিচারের গল্প২৪ মার্চ ২০২৪সুরা কাসাসে নানা ঘটনা
৮৮ আয়াতবিশিষ্ট সুরা কাসাস মক্কায় অবতীর্ণ। এটি কোরআনের ২৮ তম সুরা। কাসাস অর্থ কাহিনি বর্ণনা করা। এ সুরায় বিস্তারিতভাবে মুসা (আ.
যে নবী বেড়ে উঠেছেন শত্রুর ঘরে
স্বপ্নের ব্যাখ্যায় ফেরাউন জানতে পারলেন, বনি ইসরায়েলের এক পুত্রসন্তান তাকে হত্যা করবে। ফেরাউন বনি ইসরায়েলের সব পুত্রসন্তানকে হত্যার নির্দেশ দেন। বনি ইসরায়েল ভেঙে পড়লেন। এদিকে মুসা (আ.)-এর মা তাঁকে প্রসব করলেন। চিন্তায় পড়ে গেলেন। আল্লাহ মায়ের অন্তরে শিশুপুত্রকে রক্ষার যাবতীয় কৌশল ঢেলে দিলেন। মা সিন্দুক বানালেন। একদিন শিশু মুসাকে সিন্দুকে বসিয়ে দরিয়ায় ভাসিয়ে দিলেন। মুসার বোন চললেন সিন্দুকের গতির পথ ধরে। সেই সিন্দুক ঢেউ ভাসিয়ে নিয়ে গেল ফেরাউনের ঘাটে। শিশু মুসা গেল ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়ার কোলে। ফেরাউন দেখে তাকে হত্যা করতে উদ্যত হলো। আসিয়া দাঁড়ালেন বাধা হয়ে। এবার তবে ক্ষুধার্ত শিশু মুসাকে দুধ খাওয়াতে হয়। দুগ্ধবতী কয়েকজন নারী চেষ্টা করলেন। কাজ হলো না। মুসার বোন অপরিচিতি হয়ে সব ঘটনা কাছ থেকে দেখছিলেন। তিনি আসিয়াকে বনি ইসরায়েলের এক নারীর খবর দেন, যার দুধ এই বাচ্চা পান করতে পারে। ডাকা হয় সেই নারীকে। সেই নারী মুসার মা।
আরও পড়ুনহালাল খাবার গ্রহণ ও অসিয়তের গুরুত্ব১৫ মার্চ ২০২৪শত্রুর ঘরে মায়ের আদরে মুসা বড় হতে থাকে। যৌবনে পদার্পণ করেন। ঘটনাচক্রে মুসার হাতে জনৈক কিবতির হত্যা হয়। ফেরাউন মুসাকে হত্যার নির্দেশ দিলে এক ব্যক্তির পরামর্শে শহর ছেড়ে মাদায়েনে চলে যান তিনি। কূপ থেকে জন্তুকে পানি খাওয়ানোকে কেন্দ্র করে শুআইব (আ.)-এর মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। আট থেকে দশ বছর শুআইব (আ.)-এর ঘরে কাজ করার পর তাঁর কন্যার সঙ্গে বিয়ে হয়। পরে নবুওয়ত ও মোজেজা লাভ করেন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে ভাই হারুন (আ.)-এর নবুওয়াত আনেন। ফেরাউনসহ অবিশ্বাসীদের একাত্ববাদের দাওয়াত দেন। মুসার বিরোধিতার জন্য ফেরাউনের নির্দেশে হামান কর্তৃক প্রাসাদ নির্মাণ করেন। একদিন মুসা (আ.) ও তাঁর সঙ্গীদের ধাওয়া করতে গিয়ে ফেরাউন ও তাঁর লোকজন নদীতে ডুবে মারা যান।
সুরা কাসাসের ৩ থেকে ৫০ নম্বর আয়াতে মুসা (আ.)-এর জীবনের এসব ঘটনার বিবরণ রয়েছে।
যে কারণে ধ্বংস হয়েছিল কারুন
মুসা (আ.)-এর সময়ে আরেক অহংকারী ও দুষ্ট লোক ছিল কারুন। তার ছিল অঢেল সম্পত্তি। বাইবেল ও তালমুদে কারুনের নাম পাওয়া যায় কোরহ। আবদুল্লাহ ইবন আব্বাসের (রা.) মতে, ‘কারুন ছিল মুসা (আ.)-এর চাচাতো ভাই। মুসা (আ.) বনি ইসরাইলের এক অঞ্চলের নেতৃত্ব দিতেন এবং কারুন নেতৃত্ব দিত অন্য অঞ্চলের।’ (তাফসিরে তাবারি)
কারুনের ধনভান্ডারের চাবিগুলো বহন করত একদল শক্তিশালী বাহিনী। তাদের পক্ষে ব্যাপারটি ছিল কষ্টসাধ্য। সম্পদের প্রাচুর্য তাকে ধোঁকায় ফেলে দিয়েছিল। সে অহংকার করত। কাউকে দান করত না। আল্লাহকে ভয় করত না। মুসা (আ.) তাকে বোঝালেন। আল্লাহর ভয় দেখালেন। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘(মুসা তাকে বলল) আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন, তা দিয়ে পরকালের ঘর অনুসন্ধান করো এবং ইহকাল থেকে তোমার অংশ ভুলে যেয়ো না।’ (সুরা কাসাস, আয়াত: ৭৭)
কারুন মুসা (আ.)-এর কথা শুনল না। সে অহংকার দেখিয়ে চলল। অবশেষে আল্লাহ তাআলা কারুনকে তার বাড়িঘরসহ জমিনে ধসিয়ে দেন।
সুরা কাসাসের ৭৬ থেকে ৮২ নম্বর আয়াতে সম্পদশালী কারুনের দম্ভ, অবাধ্যতা ও ধ্বংসের কাহিনির বর্ণনা রয়েছে।
আরও পড়ুনতারাবির নামাজে কোন দিন কোন সুরা পড়া হবে২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪সুরা আনকাবুতের বিষয়বস্তু
কোরআনের ২৯তম সুরা আনকাবুত মক্কায় অবতীর্ণ। এ সুরার আয়াত সংখ্যা ৬৯। এ সুরার আজকের অংশে তাওহিদ, রিসালাত, আখেরাত, মক্কার জীবনে মুসলমানদের কষ্ট, অত্যাচার ও বিপদের মধ্যে পড়া, বিশ্বাসী-অবিশ্বাসীদের মধ্যে পার্থক্য, নুহ (আ.), ইবরাহিম (আ.), লুত (আ.), শুআইব (আ.)-এর কষ্ট ও ত্যাগ, আদ ও সামুদ জাতি, কারুন, ফেরাউন ও হামানদের ধ্বংসের কাহিনি এবং সত্যবাদীর জন্য আল্লাহর পরীক্ষার বর্ণনা রয়েছে। শেষাংশে অবিশ্বাসীদের দেব-প্রতিমা ও মূর্তিগুলোকে মাকড়সার জাতের সঙ্গে উপমা দেওয়া হয়েছে। মাকড়সার জাল যেমন দুর্বল, অবিশ্বাসীদের দেব-প্রতিমাও তেমন দুর্বল।
রায়হান রাশেদ: লেখক ও আলেম
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–এর আকাশভ্রমণ এবং আসহাবে কাহাফের কাহিনি২২ মার্চ ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অব শ ব স দ র ইসর য় ল র জন য র আয় ত ম নদ র আল ল হ ক রআন
এছাড়াও পড়ুন:
ডলার ও বিদেশিদের ব্যাংক হিসাবে আমানত এক বছরে বেড়ে দ্বিগুণ
হঠাৎ করে দেশে অবস্থানকারী বিদেশিরা বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ জমার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। আবার বাংলাদেশিরাও দেশের ব্যাংকগুলোতে আগের চেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা জমা রাখছেন। এতে ব্যাংকগুলোতে বিদেশি মুদ্রার যে হিসাব আছে, সেটিও বাড়ছে অন্যান্য আমানত হিসাবের চেয়ে বেশি। গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রায় রক্ষিত আমানত বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। যদিও বিদেশি মুদ্রার বাইরে দেশীয় মুদ্রার আমানত হিসাবে এক বছরে আমানত বেড়েছে ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। সম্প্রতি প্রকাশিত ব্যাংকগুলোর আর্থিক তথ্য নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মূলত ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এসব হিসাবে অর্থ জমা বেশি বেড়েছে। এর ফলে ঘরে রাখা ডলার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা আবার ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। এটা শুরু হয়েছে আবাসিক বৈদেশিক মুদ্রা আমানত বা রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাব ও বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবের ওপর সুদসহ বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কারণে।
আমানত কতটা বাড়ল
দেশের ব্যাংকগুলোতে নানা ধরনের আমানত পণ্য রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে দেশি ও বিদেশিদের জন্য পৃথক আমানত পণ্য। বিদেশি মুদ্রার জন্য রয়েছে পৃথক আমানত পণ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে অবস্থান করা বিদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ এক বছরে বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বিদেশিরা সাধারণত বিদেশি মুদ্রাকে টাকায় রূপান্তর করে এই ধরনের হিসাব পরিচালনা করেন, ব্যাংকের ভাষায় এসব হিসাবকে কনভার্টেবল টাকা অ্যাকাউন্ট অব ফরেনার্স বা বিদেশিদের জন্য টাকায় রূপান্তরযোগ্য হিসাব বলা হয়। ২০২৪ সালের মার্চে এই ধরনের হিসাবে জমা ছিল ১ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা, গত মার্চ শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা।
একইভাবে বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবেও (এফসিএ) জমা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। গত বছরের মার্চে এই ধরনের হিসাবে জমা ছিল ৬ হাজার ৫৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। গত ডিসেম্বর শেষে তা বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার সমপরিমাণ। আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোই সাধারণ এফসিএ হিসাব খুলে থাকে। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এ ধরনের হিসাব খুলতে পারেন।
এ ছাড়া শুধু প্রবাসীদের জন্য আলাদা আমানত হিসাবও রয়েছে, তাতে স্থিতি খুব বেশি বাড়েনি। গত বছরের মার্চে প্রবাসীদের আমানত হিসাবে স্থিতির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা, যা গত মার্চে বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা।
অন্যদিকে বিদেশ সফর শেষে দেশে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবে (আরএফসিডি) আমানতও বেড়েছে। গত বছরের মার্চে এই ধরনের হিসাবে আমানত ছিল ২৬ হাজার ১৩০ কোটি টাকা, যা গত মার্চে বেড়ে হয়েছে ৩৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা।
তবে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে আমানত সেভাবে বাড়েনি। ২০২৪ সালের মার্চে পুরো খাতে আমানত ছিল ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা, যা গত মার্চে বেড়ে হয় ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে ১ শতাংশের কিছু বেশি।
কেন বাড়ছে ডলার ও বিদেশিদের জমা অর্থ
দেশে ডলার–সংকট দেখা দেওয়ায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মানুষের ঘরে থাকা ডলার ব্যাংকে ফেরাতে আবাসিক বৈদেশিক মুদ্রা আমানত বা রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাবের ওপর সুদসহ বাড়তি সুবিধা দেওয়ার সুযোগ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরই দি সিটিসহ কিছু ব্যাংক বাড়তি উদ্যোগ নিয়ে এই ধরনের হিসাব খুলতে শুরু করে। বর্তমানে নগদ ডলারের বড় অংশ মজুত আছে ইস্টার্ন, দি সিটি, ব্র্যাক, ডাচ্-বাংলা, প্রাইম, পূবালী, বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও এইচএসবিসি এবং দেশীয় মালিকানাধীন ইসলামীসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকে। মার্কিন ডলারের পাশাপাশি পাউন্ড, ইউরো, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, কানাডিয়ান ডলার, সিঙ্গাপুরি ডলারেও আরএফসিডি হিসাব খোলা যায়।
সুদ বৃদ্ধিসহ ব্যাংকগুলোর নানা উদ্যোগের ফলে ঘরে থাকা ডলার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা আবার ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। কারণ, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের এসব হিসাবে জমা বিদেশি মুদ্রার ওপর সুদ দিচ্ছে। পাশাপাশি এই ধরনের হিসাবের ডলার কোনো বাছবিচার ছাড়াই দেশে ও বিদেশে গিয়ে খরচ করা যাচ্ছে। প্রতিবার বিদেশ ভ্রমণের সময় এই হিসাব থেকে নগদ ৫ হাজার মার্কিন ডলার নেওয়া যায়। হিসাবধারী এবং তার ওপর নির্ভরশীলদেরও প্রয়োজনে বিদেশে কয়েকটি খাতে অর্থ খরচের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভ্রমণ, সন্তানের শিক্ষা এবং চিকিৎসা খাতে খরচ। এসব খাতে খরচের কোনো সীমা রাখেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে শুধু হিসাবধারীরা নিজ প্রয়োজনে বিদেশে অর্থ নেওয়া ও খরচের সুবিধা পেতেন।
এদিকে ব্যবহারযোগ্য সব ধরনের বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব খোলার সুযোগ রয়েছে প্রবাসীদের জন্য। সেই সঙ্গে প্রবাসীদের নামে খোলা বৈদেশিক হিসাবের সুদের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সুদের হার নির্ধারিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এত দিন শুধু অনুমোদিত চারটি বৈদেশিক মুদ্রায় প্রবাসীদের হিসাব খোলার সুযোগ ছিল। সেগুলো হলো ডলার, পাউন্ড, ইউরো ও ইয়েন। কিন্তু এখন অনুমোদিত মুদ্রার পাশাপাশি ব্যবহারযোগ্য সব বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব খুলতে পারছেন প্রবাসীরা।
এ ছাড়া যেসব বিদেশি বাংলাদেশে কর্মরত ও বসবাস করছেন, তাঁদের যে টাকার হিসাব রয়েছে, তাতেও আমানত বেড়েছে। এ ধরনের হিসাবে গত সেপ্টেম্বরে আমানত বেশ কমে যায়, তবে ডিসেম্বরে আবার তা বেড়ে যায়। আর গত মার্চ শেষে তা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগস্টে বড় পরিবর্তনের পর দেশের পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। আবার অন্তর্বর্তী সরকারের নানা পদক্ষেপে বিদেশিরা সহায়তা দিচ্ছেন। ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ছে ও এই ধরনের হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ বাড়ছে।
এ বিষয়ে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংক হিসাবে ডলার জমা রাখলে এখন সুদ পাওয়া যায়, এ ছাড়া রয়েছে নানা সুবিধা। যাঁরা নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণ করেন, তাঁরাও এখন নিজ নিজ হিসাবে ডলার জমা রাখছেন। এতে মুদ্রার মান কমলেও কোনো ক্ষতি হয় না। এ ছাড়া চীনের বিনিয়োগকারীরা দেশে আসছেন। এই কারণে বিদেশিদের হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ বাড়তে পারে। এটা অর্থনীতির জন্য ভালো খবর। কারণ, অন্য আমানতে যখন এত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না, তখন ডলার হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।