আঞ্চলিক সহিংস পরিস্থিতির কারণে সুয়েজ খাল থেকে মিসর প্রতি মাসে প্রায় ৮০ কোটি ডলার আয় হারাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর ইফতার মাহফিলে এসব কথা বলেন তিনি।

এর আগে ডিসেম্বরে সিসি বলেছিলেন, কোম্পানিগুলো লোহিত সাগর এড়িয়ে চলায় ২০২৪ সালে সুয়েজ খাল থেকে দেশটির আয় কমবে প্রায় ৭০০ কোটি ডলার। এদিকে গত সপ্তাহে ইয়েমেনভিত্তিক সশস্ত্র হুতি গোষ্ঠী হুমকি দিয়েছে, ইসরায়েল যদি গাজার ওপর থেকে অবরোধ না তোলে, তবে তারা লোহিত সাগর দিয়ে যাওয়া ইসরায়েলি জাহাজের ওপর আবার হামলা চালাবে। এর মধ্যেই মার্কিন বাহিনী হুতিদের ওপর হামলা শুরু করেছে। ফলে সার্বিকভাবে সুয়েজ খাল দিয়ে পণ্য পরিবহন আরও ব্যাহত হতে পারে বলেই আশঙ্কা। খবর আরব নিউজের।

এ ধরনের নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও মিসর অর্থনৈতিকভাবে ভালোই করছে বলে মনে করেন সিসি। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দাভাব তো আছেই। অন্যান্য দেশের মতো মিসরকেও সেই সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ মিসরের জন্য নতুন ঋণ অনুমোদন করেছে—এ ঘটনা উল্লেখ করে সিসি বলেছেন, মিসর ভালোই করছে।

বিশ্ববাণিজ্যের ১২ শতাংশের বেশি পণ্য পরিবহন হয় এ খাল দিয়ে। এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ইউরোপের বাণিজ্যের প্রাণভোমরা হলো মিসরের এ খাল। ১৮৫৯ থেকে ১৮৬৯ সালের মধ্যে এক দশকে খালটি খনন করা হয়।

সুয়েজ খাল যেমন মিসরের আয়ের বড় উৎস, তেমনি এ খাল নিয়ে মিসরের বিপদও কম নয়। আধুনিক ইতিহাসে মিসরের ওপর যত যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার সব কটি সুয়েজ খালের দখল নিয়ে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ইসরায়েল। সুয়েজ খালের ওপর তাদের শ্যেন দৃষ্টি অনেক আগে থেকেই। মিসরের কাছে এর গুরুত্ব অপরিসীম। বছরে ৬০০ কোটি ডলারের বেশি নগদ আয়। দেশটির আয়ের তৃতীয় বৃহত্তম উৎস এটি।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, মিসরের কাছে সুয়েজ খালের অর্থনৈতিক গুরুত্ব একমাত্র বিবেচ্য নয়। আঞ্চলিক ক্ষেত্রে প্রভাব তৈরির ক্ষেত্রে যত অস্ত্র মিসরের ভান্ডারে আছে, সুয়েজ খাল তার অন্যতম। মিসরের সবচেয়ে বড় অস্ত্র এ খাল। যুক্তরাষ্ট্র যেসব কারণে মিসরকে গুরুত্ব দেয়, সেটির পেছনেও রয়েছে সুয়েজ খাল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার

২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।

মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।

ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।

স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত‌্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।

শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’

তার জন‌্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম‌্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”

"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন‌্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।

প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ