যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় সরকারি একটি সড়ক ইট দিয়ে পাকাকরণের কাজ ‘উদ্বোধন’ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য টি এস আইয়ূব। তিনি জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক পদেও আছেন। আজ শুক্রবার বিকেলে উপজেলার জহুরপুর ইউনিয়নের নরসিংহপুর গ্রামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় এক কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি পাকাকরণ কাজ বাস্তবায়ন করছে।

রাজনৈতিক নেতার সরকারি কাজের উদ্বোধন করার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নরসিংহপুর সিরাজের বাড়ি থেকে তোফায়েলের বাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কটির ইট বিছানোর কাজ শুরু হবে। কাজ শুরুর পর সুবিধামতো সময়ে ডিসি স্যার সড়কটির উদ্বোধন করবেন। ডিআরও (জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা) স্যারও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। আজ কেউ সড়কটির উদ্বোধন করেছেন কি না, জানি না।’

পিআইও কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গ্রামীণ রাস্তা টেকসইকরণে হেরিং বোন বন্ডকরণ (এইচবিবি) প্রকল্পের আওতায় এক কিলোমিটার সড়কে ইট বিছানোর জন্য দরপত্র আহ্বান করে পিআইও কার্যালয়। কাজটি পায় যশোরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স স্বজন এন্টারপ্রাইজ। প্রায় ৭৩ লাখ টাকা চুক্তিমূল্যে চলতি মাসে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। আগামী ৩০ জুন কাজটি শেষ করার কথা।

স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি জানান, ঠিকাদার এখনো সড়কের কাজ শুরু করেননি। স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা নরসিংহপুর সড়কের শুরুতে ইট দিয়ে একটি পিলার তৈরি করেন। পিলারের ওপর সাদা পাথরের ওপর উদ্বোধনী নামফলকটি স্থাপন করা হয়। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সংসদের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক টি এস আইয়ূব নরসিংহপুর গ্রামের ফলকের সামনে আসেন। এরপর শতাধিক নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে তিনি সড়কটির উদ্বোধন করেন।

সড়ক পাকাকরণ কাজের উদ্বোধনী ফলক। শুক্রবার বিকেলে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নরসিংহপুর গ্রামে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত প রকল প সড়কট র ব এনপ র সড়ক উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

আজও আঁধার কাটেনি কোচদের

বন্যহাতি ও দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে ধুঁকে ধুঁকে টিকে আছে কোচ সম্প্রদায়। তাদের কেউ কেউ দিনমজুরি, বন থেকে লাকড়ি সংগ্রহ, বাঁশ দিয়ে ডোল, ধারাই ও চাটাই তৈরি করে বিক্রি করে থাকেন। আবার কেউ নিজেদের লাগানো কাসাবা খেয়ে বেঁচে থাকেন। অভাব-অনটনে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করলেও তাদের দিকে বিশেষ নজর নেই কারও। অবহেলিত এ আদিবাসী সম্প্রদায়ের দেড় শতাধিক পরিবারের বসবাস নালিতাবাড়ী উপজেলার খলচান্দা গ্রামে। সদস্য সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩০০।
বারমারী বাজার থেকে তিন কিলোমিটার পাহাড়ি পথ মাড়িয়ে খলচান্দা গ্রামে যেতে হয়। প্রায় ১০০ গজ উত্তরে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া। স্বাধীনতার আগে মাত্র চার ঘর কোচ এই গ্রামে বাস করত। এর পর বংশবৃদ্ধি এবং ১৯৭৬ সালে চৌকিদার টিলা গ্রামে বিজিবি ক্যাম্প স্থাপন ও পরে ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প করায় আন্ধারুপাড়া গ্রাম থেকে বেশ কিছু পরিবার এখানে এসে বসতি গড়ে। এই গ্রামের বর্তমান পরিবার সংখ্যা প্রায় ৫২ ঘর। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ এ গ্রামে যেতে চান না।  টিলায় ঘেরা গ্রামে দিনদিন জনসংখ্যা বাড়লেও তাদের ভাগ্যের বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বাসিন্দারা জানান, গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা চেল্লাখালী নদী দিয়ে এক সময় ভারত থেকে ভেসে আসত অসংখ্য বড় মূল্যবান গাছ। সে গাছ নদী থেকে তুলে এনে বিক্রি করে এবং পাহাড়ের সমতল জমিতে ধান চাষ করে ভালোই চলত খলচন্দা গ্রামের কোচদের সংসার। এসব দৃশ্য এখন শুধুই স্মৃতি। তাদের মূল পেশা কৃষিকাজ হলেও পরিবারের সদস্য সংখ্যা বাড়ায় জমি সংকট এবং কর্মসংস্থানের অভাবে অনেকেই সেই কৃষিকাজ ছেড়ে দিনমজুর, কেউবা ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে নানা পেশায় যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া ঘরে বসে থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকেই।
গ্রামটিতে কোনো পাকা সড়ক নেই। যাতায়াতের সড়কটি বেহাল। শুষ্ক মৌসুমে সড়ক ধুলোময় হয়ে থাকে। বর্ষায় চলাচল সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে যায়। এ ছাড়া গ্রামে একটি মাত্র প্রাকপ্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও প্রাথমিক এবং উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে প্রায় দুই থেকে তিন কিলোমিটার দূরে। এই গ্রামে দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষার হার নাজুক। স্বাস্থ্যসেবার অবস্থাও একই। কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা পায় না কোচ পরিবারগুলো। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে তিন কিলোমিটার দূরে বারোমারি খ্রিষ্টান পল্লীর দাতব্য হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে হয়। মুমূর্ষু রোগীকে ডাক্তার দেখাতে বা চিকিৎসা নিতে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে নালিতাবাড়ী উপজেলা সদরে অথবা ৪০ কিলোমিটার দূরে জেলা সদর হাসপাতালে যেতে হয়। স্বাধীনতার এত বছর পরও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছায়নি খলচান্দা গ্রামে। আজও আঁধার কাটেনি কোচদের– এমনটিই বলছেন স্থানীয়রা। 
খলচান্দা গ্রামের মায়াদেবী কোচ বলেন, ‘আমগর সড়কটা দিয়ে শান্তি মতো যাওন যায় না। আধা মাইল দূর থাইকা দুই বেলা পানি আইনা চলি। এতে আমগর বিরাট কষ্ট অয়। মেঘ (বৃষ্টি) অইলে সড়কা দিয়া হাঁটন যায় না। সরকার যদি আমগরে গ্রামে বেশ কয়ডা টিউবওয়েলের ব্যবস্থা কইরা দিত, বিরাট উপকার অইত।’
বৃদ্ধ রুক্কিনী কোচ জানান, তাঁর বাবার বাড়ি পাশের সমেশ্চুরা গ্রামে। দেশ স্বাধীনের আগে এই গ্রামে বিয়ে হয় তাঁর। এক সময় পাহাড় আর জঙ্গলে ভরা ছিল। পাহাড় থেকে মরা কাঠ সংগ্রহ আর গাছ থেকে বিভিন্ন ফল পেড়ে খেতেন তারা। অনেক পশুপাখিও ছিল, কিন্তু এখন এই পাহাড়ে আর আগের মতো গাছও নেই, তাদের আয়ের পথও বন্ধ হয়ে গেছে।
গ্রামের রমেশ কোচ ও পরমেশ্বর কোচের ভাষ্য, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত তাদের গ্রামের মাত্র তিনজন কোচ সরকারি চাকরি পেয়েছেন। এর মধ্যে বিজিবিতে কর্মরত একজন অনেক আগে মারা গেছেন। অভাব-অনটন আর যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় এই গ্রামের কোচ উপজাতিরা শিক্ষায় এগোতে পারছেন না।
গ্রামের বাসিন্দারা জানান, মাঝে মধ্যেই বন্যহাতি হানা দেয় এই গ্রামে। গাছের কাঁঠাল ও ক্ষেতের ধান পাকার মৌসুমে বন্যহাতির পাল খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে চলে আসে। এ সময় হাতির পাল কাঁঠাল, ক্ষেতের ধান খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করে দেয়। বাড়িঘরও ভেঙে তছনছ করে ফেলে। তখন এই অসহায় কোচদের টিন পিটিয়ে, মশাল জ্বালিয়ে, ডাকচিৎকার ও হৈহুল্লোড় করে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। তাদের ভালো-মন্দের খবর কেউ রাখে না। জনপ্রতিনিধিরা শুধু নির্বাচনের সময় ভোট চাইতে আসেন। তাদের পদচারণায় কোচপল্লী তখন মুখর হলেও নির্বাচনের পর তাদের খবর রাখে না কেউ।
স্থানীয় চেয়ারম্যান হাজী জামাল উদ্দিন বলেন, খলচান্দার কোচপাড়া যাওয়ার রাস্তাটার জন্যই অনেক পিছিয়ে আছে কোচ সম্প্রদায়ের লোকগুলো। বিশেষ করে অনিরাপদ রাস্তার জন্য শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত তারা। রাস্তা ও স্কুলের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। 
এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে তাদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৯ কিলোমিটার সড়কে সীমাহীন দুর্ভোগ
  • আজও আঁধার কাটেনি কোচদের
  • ফুটপাত দখল করে ঘেরের বাঁধ আ.লীগ ও জামায়াত নেতার