Samakal:
2025-09-18@11:41:55 GMT

হাওরের সেবকদের স্বীকৃতি দিন

Published: 21st, March 2025 GMT

হাওরের সেবকদের স্বীকৃতি দিন

বাংলাদেশের মোট আয়তনের ৪৩ শতাংশ জুড়ে হাওর-বাঁওড়, যেখানে ৩৭৩টি হাওর, ৮৭টি বাঁওড়, ২৩০টি নদী ও লাখের ওপরে রয়েছে খাল-বিল। হাওরাঞ্চলখ্যাত জেলা– সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া। যমুনা, তিস্তা, পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পার্শ্ববর্তী জেলা বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, পাবনা ও টাঙ্গাইল প্রধানত চরাঞ্চল হিসেবে পরিচিত। 

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশের একটি পত্রিকার প্রতিবেদনমতে, হাওরাঞ্চল দেশের মোট বোরো ধান উৎপাদনের ১৮ শতাংশ, মাছ উৎপাদনের ২০ শতাংশ এবং গবাদি পশু উৎপাদনের ২২ শতাংশ জোগান দেয়। অন্যদিকে চরাঞ্চলকেন্দ্রিক দুগ্ধশিল্পের নীরবে সম্প্রসারণ হচ্ছে, যা দেশের দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য সরবরাহের বিশেষ অঞ্চল হিসেবে ইতোমধ্যে বেশ পরিচিত।
অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলটি এখন বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। হাওর ও চরাঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন একদিকে দরিদ্র শিশু, প্রান্তিক কৃষক, নারী ও কর্মক্ষম গোষ্ঠীর ওপর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি যেমন বাড়াচ্ছে, তেমনি কৃষি, মৎস্য ও গবাদি পশুর উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৪০ শতাংশ কমিয়ে এনেছে। এ ছাড়া নতুন নতুন সংক্রামক রোগের বিস্তার ঘটাচ্ছে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।
এসব অঞ্চলে মানুষের জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। মানুষ আর্থিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে দারিদ্র্য। কৃষকরা যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন এবং তারা যাতে তাদের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারেন, সে জন্য সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে প্রশিক্ষিত স্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে থাকে, যারা লোকাল সার্ভিস প্রোভাইডার (এলএসপি) বলে পরিচিত।
তারা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়। প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষি, মৎস্য ও গবাদি পশুর আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রান্তিক অঞ্চলের কৃষক ও তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়। এসব প্রশিক্ষণ উন্নত ও গুণগত মানের কৃষি উপকরণ বাছাই ও প্রাপ্তিতে সহযোগিতা করে।

সদস্যরা কৃষকের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে কৃষকের সমস্যার কথা শুনছেন; সমস্যা সমাধানে তৎক্ষণাৎ করণীয় এবং রোগবালাই প্রতিরোধে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বন্যা উপযোগী ধানের প্রজাতি, উন্নত হাঁস ও গবাদি পশুর জাত, একক ফসল থেকে উত্তরণ যেমন ভুট্টা চাষে উদ্বুদ্ধকরণ, মধু চাষ, ক্লাইমেট-রেজিলেন্ট ফার্মিং, সবজি উৎপাদনসহ নানা কার্যক্রমে তারা যুক্ত। 
এলএসপি সদস্যরা সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, কৃষির উন্নত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, নারীদের কৃষিকাজে অন্তর্ভুক্তি এবং ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখছে। অতিরিক্ত বালাইনাশক ব্যবহার বন্ধ, পলিথিন নিষিদ্ধকরণ, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বন্ধ, পরিবেশদূষণ, বন্যার সময় করণীয়, ক্লাইমেট-রেজিলেন্ট ফার্মিং, সবজি উৎপাদনসহ নানা কার্যক্রমে সামাজিক বন্ধন তৈরিতে সহায়তা করছেন। 
যারা খামারি, অর্থের অভাবে কৃষিকাজ করতে পারছেন না, তাদের গ্রামীণ সঞ্চয় এবং ঋণ সংস্থার দ্বারস্থ হতে সহায়তা করেন।
অনগ্রসর খামারিদের কৃষিকাজ ও জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ অবদান আছে। ‘অষ্টগ্রাম পনির’ তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এলএসপি তৈরি একটি জটিল প্রক্রিয়া; জ্ঞান লাভ করার জন্য লোকবল কম; তাদের যন্ত্রপাতিও কম। বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে প্রান্তিক অঞ্চলে সহায়তা দেওয়া সম্ভব হয় না। এ সময় গৃহপালিত পশুর যত্ন নেওয়া, পেস্ট ব্যবস্থাপনা ও ধান মাড়াইয়ে সমস্যা হয়। অনেক সময় পর্যাপ্ত বীজ, সার ও বালাইনাশক ব্যাপক ক্ষতি করে। 

খামারিদের জ্ঞান কম থাকায় তারা নতুন প্রযুক্তি সহজে গ্রহণ করতে চায় না বিধায় ভর্তুকি প্রদান জরুরি।
লোকাল সার্ভিস প্রোভাইডাররা হাওর ও চরাঞ্চলের কৃষির সার্বিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখলেও তাদের কোনো সামাজিক স্বীকৃতি না থাকায় এ পেশায় অনেক মেধাবী ও উচ্চশিক্ষিত তরুণ আসছেন না। হাওর অঞ্চলকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করতে গেলে স্থানীয় সেবকদের সামাজিক স্বীকৃতি দরকার। 

ড.

মো. আবুল কালাম আজাদ: পরিচালক, হাওর ও চর ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

৫ দফা দাবিতে জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু

আগামী ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ৫ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটকে এই সমাবেশ শুরু হয়।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল। দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হবে। মিছিলটি বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।

এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন আল ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ৫ দফা দাবিতে তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।

জামায়াতের দাবিগুলো হলো- জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

একই দাবিতে আগামীকাল ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল এবং ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের সব জেলা বা উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ