বাংলাদেশের মোট আয়তনের ৪৩ শতাংশ জুড়ে হাওর-বাঁওড়, যেখানে ৩৭৩টি হাওর, ৮৭টি বাঁওড়, ২৩০টি নদী ও লাখের ওপরে রয়েছে খাল-বিল। হাওরাঞ্চলখ্যাত জেলা– সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া। যমুনা, তিস্তা, পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পার্শ্ববর্তী জেলা বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, পাবনা ও টাঙ্গাইল প্রধানত চরাঞ্চল হিসেবে পরিচিত।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশের একটি পত্রিকার প্রতিবেদনমতে, হাওরাঞ্চল দেশের মোট বোরো ধান উৎপাদনের ১৮ শতাংশ, মাছ উৎপাদনের ২০ শতাংশ এবং গবাদি পশু উৎপাদনের ২২ শতাংশ জোগান দেয়। অন্যদিকে চরাঞ্চলকেন্দ্রিক দুগ্ধশিল্পের নীরবে সম্প্রসারণ হচ্ছে, যা দেশের দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য সরবরাহের বিশেষ অঞ্চল হিসেবে ইতোমধ্যে বেশ পরিচিত।
অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলটি এখন বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। হাওর ও চরাঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন একদিকে দরিদ্র শিশু, প্রান্তিক কৃষক, নারী ও কর্মক্ষম গোষ্ঠীর ওপর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি যেমন বাড়াচ্ছে, তেমনি কৃষি, মৎস্য ও গবাদি পশুর উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৪০ শতাংশ কমিয়ে এনেছে। এ ছাড়া নতুন নতুন সংক্রামক রোগের বিস্তার ঘটাচ্ছে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।
এসব অঞ্চলে মানুষের জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। মানুষ আর্থিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে দারিদ্র্য। কৃষকরা যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন এবং তারা যাতে তাদের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারেন, সে জন্য সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে প্রশিক্ষিত স্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে থাকে, যারা লোকাল সার্ভিস প্রোভাইডার (এলএসপি) বলে পরিচিত।
তারা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়। প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষি, মৎস্য ও গবাদি পশুর আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রান্তিক অঞ্চলের কৃষক ও তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়। এসব প্রশিক্ষণ উন্নত ও গুণগত মানের কৃষি উপকরণ বাছাই ও প্রাপ্তিতে সহযোগিতা করে।
সদস্যরা কৃষকের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে কৃষকের সমস্যার কথা শুনছেন; সমস্যা সমাধানে তৎক্ষণাৎ করণীয় এবং রোগবালাই প্রতিরোধে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বন্যা উপযোগী ধানের প্রজাতি, উন্নত হাঁস ও গবাদি পশুর জাত, একক ফসল থেকে উত্তরণ যেমন ভুট্টা চাষে উদ্বুদ্ধকরণ, মধু চাষ, ক্লাইমেট-রেজিলেন্ট ফার্মিং, সবজি উৎপাদনসহ নানা কার্যক্রমে তারা যুক্ত।
এলএসপি সদস্যরা সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, কৃষির উন্নত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, নারীদের কৃষিকাজে অন্তর্ভুক্তি এবং ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখছে। অতিরিক্ত বালাইনাশক ব্যবহার বন্ধ, পলিথিন নিষিদ্ধকরণ, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বন্ধ, পরিবেশদূষণ, বন্যার সময় করণীয়, ক্লাইমেট-রেজিলেন্ট ফার্মিং, সবজি উৎপাদনসহ নানা কার্যক্রমে সামাজিক বন্ধন তৈরিতে সহায়তা করছেন।
যারা খামারি, অর্থের অভাবে কৃষিকাজ করতে পারছেন না, তাদের গ্রামীণ সঞ্চয় এবং ঋণ সংস্থার দ্বারস্থ হতে সহায়তা করেন।
অনগ্রসর খামারিদের কৃষিকাজ ও জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ অবদান আছে। ‘অষ্টগ্রাম পনির’ তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এলএসপি তৈরি একটি জটিল প্রক্রিয়া; জ্ঞান লাভ করার জন্য লোকবল কম; তাদের যন্ত্রপাতিও কম। বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে প্রান্তিক অঞ্চলে সহায়তা দেওয়া সম্ভব হয় না। এ সময় গৃহপালিত পশুর যত্ন নেওয়া, পেস্ট ব্যবস্থাপনা ও ধান মাড়াইয়ে সমস্যা হয়। অনেক সময় পর্যাপ্ত বীজ, সার ও বালাইনাশক ব্যাপক ক্ষতি করে।
খামারিদের জ্ঞান কম থাকায় তারা নতুন প্রযুক্তি সহজে গ্রহণ করতে চায় না বিধায় ভর্তুকি প্রদান জরুরি।
লোকাল সার্ভিস প্রোভাইডাররা হাওর ও চরাঞ্চলের কৃষির সার্বিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখলেও তাদের কোনো সামাজিক স্বীকৃতি না থাকায় এ পেশায় অনেক মেধাবী ও উচ্চশিক্ষিত তরুণ আসছেন না। হাওর অঞ্চলকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করতে গেলে স্থানীয় সেবকদের সামাজিক স্বীকৃতি দরকার।
ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত বেড়ে ৫, আহত ২৯
ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয় বলে জানায় জেরুজালেম পোস্ট। বিবিসি আরও দুইজন নিহতের খবর দেয়। এরপর আরেকজনের ফলে নতুন হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে পাঁচজনে পৌঁছাল।
আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।