কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পত্রিকার ‘এআই সংস্করণ’ প্রকাশ
Published: 22nd, March 2025 GMT
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থানে সাংবাদিকতা শেষ হয়ে যাবে নাকি এর পুনর্জন্ম হবে, প্রযুক্তি ও সংবাদপত্র দুনিয়ায় সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এর মধ্যেই সাংবাদিকতার জগতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ইতালির সংবাদপত্র ইল ফোইও। বিশ্বে প্রথমবারের মতো এই সংবাদপত্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে লেখা ‘এআই সংস্করণ’ প্রকাশ করছে। এ সংস্করণের প্রতিটি লেখা এআই ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। ইল ফোইওর পরিচালক ক্লডিও সেরাসা গত বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, সাংবাদিকতাকে খুন করতে নয় বরং এর পুনর্জন্ম দিতে তাঁরা পরীক্ষা চালিয়েছেন।
ইল ফোইও ইতালির বেশ পরিচিত পত্রিকা। এর প্রচারসংখ্যা ২৯ হাজার। পত্রিকার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে তারাই বিশ্বের প্রথম পুরো ছাপা সংস্করণের সংবাদগুলোয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করেছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে এখনো নতুন প্রযুক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে ইতিমধ্যে এটি বার্তাকক্ষ পরিচালনার ধরনে পরিবর্তন এনেছে।
গত মঙ্গলবার ইল ফোইও চার পাতার দৈনিক এআই সংস্করণ ছাপা শুরু করে। একই সঙ্গে তা অনলাইনেও ব্যবহার করা হয়। এ চার পাতায় ২২টি খবর ও ৩টি সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়। পত্রিকাটির নিয়মিত সংস্করণের পাশাপাশি এআই সংস্করণ প্রকাশ করা হয়। এসব পাতায় খবরের মধ্যে ঠাঁই পেয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির বক্তব্যের বিশ্লেষণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাম্প্রতিক ফোনালাপ নিয়ে সম্পাদকীয়, ফ্যাশন দুনিয়ার খবরের মতো নানা বৈচিত্র্যময় খবর।
ইল ফোইওর পরিচালক ক্লডিও সেরাসা এআই নিয়ে পরীক্ষার বিষয়টি এএফপির কাছে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দুটি উদ্দেশ্যে এ পরীক্ষা চালানো হয়। একটি হচ্ছে তত্ত্বকে বাস্তবে রূপান্তরিত করা। অন্যটি হচ্ছে, নিজেদের পরীক্ষা করা এবং এআইর সীমা বোঝা। পাশাপাশি এর সুযোগ ও সীমাবদ্ধতাগুলো খতিয়ে দেখা।
ক্লডিও বলেন, ‘আমাদের মতো একটি বিশেষ সংবাদপত্র থেকেই এসবের উদ্ভব হতে পারে। কারণ, আমাদের সংবাদপত্রটিতে বিদ্রূপাত্মক ও সৃজনশীল লেখা তৈরি করা হয়। আমরা এমন কাজ করি যা যন্ত্র দিয়ে সহজে তৈরি করা যায় না। আমাদের লক্ষ্য ছিল, বিশেষত্ব প্রদর্শনের সঙ্গে কিছু নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ইচ্ছা যা বিশ্বের কেউ কখনো করেনি।’
এটা কীভাবে সম্ভব হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে ক্লডিও বলেন, সম্পাদকীয় সভায় অনেক বিষয় উঠে আসে। এসব বিষয় নিয়মিত সংস্করণের পাশাপাশি এআই সংস্করণে প্রকাশ করা হয়। প্রতিটি প্রশ্ন এআইকে করার আগে তাকে বিশেষ কিছু নীতি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি ইল ফোইওর স্টাইল ধরে এআইকে লিখতে বলা হয়। ক্লডিও বলেন, ‘খুব বেশি ভুল থাকলে এআইকে আবার পরিবর্তন করতে বলা হয়। তবে সামান্য কিছু ভুল থাকলে তা গণ্য করা হয়নি। কারণ, আমরা এআইয়ের সীমা বুঝতে চেয়েছি।’
গত কয়েক দিনের এআই সংস্করণ ছাপিয়ে কী শিক্ষা পাওয়া গেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ক্লডিও বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সব প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে। আমরা শিখেছি, এটি এমন কিছু করতে পারে, যা মানুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতার সমতুল্য। কিন্তু আমরা আরও শিখেছি যে দীর্ঘ মেয়াদে প্রতিযোগিতায় আরও বেশি দক্ষতা তৈরি করতে হবে। উদ্ভাবনকে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। কারণ, এটিকে বন্ধ করতে পারবেন না। এটিকে বুঝতে হবে, পরিচালনা করতে হবে এবং সুযোগে রূপান্তরিত করতে হবে।’
এআইয়ের এমন কাজে সাংবাদিকেরা উদ্বেগে রয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না। সবাই খুশি। প্রত্যেকে অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে এটি নিয়েও জানতে আগ্রহী। এ ছাড়া এআই সংস্করণ প্রকাশ করে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো গেছে। এআইকে ধন্যবাদ, ঐতিহ্যবাহী পত্রিকাকে নতুন করে আবিষ্কার করার জন্য। এআই সংস্করণ প্রকাশের প্রথম দিনেই পত্রিকার বিক্রি ৬০ শতাংশ বেড়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে পাঠকেরা কীভাবে নিচ্ছেন? এর জবাবে ইল ফোইওর পরিচালক বলেন, পাঠকদের ৯০ শতাংশ খুশি। ১০ শতাংশ উদ্বেগে রয়েছেন। তাঁরা স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করার আগে বিষয়টি নিশ্চিত হতে বলেন। তবে কেউই এ পরীক্ষাকে বোকা বা অর্থহীন হিসেবে দেখছেন না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত এআই স স করণ ব যবহ র কর স ব দপত র স স করণ র পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের এআই প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার সুযোগ নিতে হবে
বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষায় এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) প্রযুক্তির বহুমাত্রিক ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান। এআইয়ের সর্বোত্তম ব্যবহারকে গুরুত্ব দিয়ে এআই–নির্ভর শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ তৈরিরও পরামর্শ দিচ্ছে তারা। আর তাই গবেষণা খাতে এআই ব্যবহারের গুরুত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি এআইয়ের কারণে কী কী সংকট হতে পারে, তা তুলে ধরতে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের প্রয়াস ইনস্টিটিউট অব স্পেশাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (পাইজার) মিলনায়তনে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘এআই ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার নতুন সুযোগ’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) প্রয়াস ইনস্টিটিউট অব স্পেশাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (পাইজার)। সেমিনারে ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটিসহ বিভিন্ন এআই টুল বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণায় কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী ও গবেষকেরা সেমিনারে অংশ নেন।
সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের এমফিল গবেষক জাহিদ হোসাইন খান এআই ও গবেষণার নানান পরিপ্রেক্ষিত সম্পর্কিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘২০২০ সাল থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বৈশ্বিক গবেষণা ও নতুন জ্ঞান অন্বেষণে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর তাই বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের এআই প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া উচিত। এআই প্রযুক্তি দ্রুতগতিতে উন্নত হচ্ছে, ফলে অনেক বিশেষজ্ঞ নতুন ডিজিটাল বৈষম্য তৈরির আশঙ্কা করছেন। আমাদের দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এআই প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার সুযোগ নিতে হবে। এ জন্য এআই প্রযুক্তির ভালো ও মন্দ দিকগুলো নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’
পাইজারের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নুর উল্লাহ বলেন, ‘পশ্চিমা দুনিয়ায় গবেষণার ব্যাপক বিস্তৃতি দেখা যায়। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের সামনে এআই নতুন সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। এআইকে ব্যবহার করে গবেষণার অসাধারণ সুযোগ তৈরি হচ্ছে, সেই বিষয়টিকে তুলে ধরতে আমরা এই সেমিনার আয়োজন করেছি। স্বাস্থ্য বা জনস্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের গবেষণায় আগ্রহী করে তুলতে কাজ করছি।’
পাইজারের অডিওলজি অ্যান্ড স্পিচ ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাথলজি বিভাগের প্রধান ফাতিমা আলম বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন নতুন বাস্তবতা। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার জন্য এখন এআই ও এআই–নির্ভর প্রযুক্তির ব্যবহার সারা বিশ্বেই বাড়ছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের সামনে এআইকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড় করানো যাবে না। এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন নতুন গবেষণার সুযোগ তৈরি করতে হবে। বিশ্বের বড় বড় গবেষণাগার বর্তমানে এআই ব্যবহার করছে। আর তাই শিক্ষার্থী ও গবেষকদের পাশাপাশি শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এআই প্রযুক্তিমুখী হওয়া প্রয়োজন।
বর্তমানে চ্যাটজিপিটিসহ বিভিন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গবেষকেরা ব্যবহার করছেন।