ঈদ এলেই ‘স্বপ্নে যাবে বাড়ি আমার...’ জিঙ্গেলটির কথা মনে পড়ে সবার আগে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে মাঠ-ঘাট পেরিয়ে যাত্রীবোঝাই ট্রেনের ছুটে চলা। এ সময়টায় বাড়তি ভিড় থাকলেও ট্রেনযাত্রাকেই নিরাপদ মনে করেন যাত্রীরা। ফলে টিকিট পেতে লাগে কাড়াকাড়ি। ভোগান্তি লাঘবে প্রায় শতভাগ টিকেট অনলাইনে বিক্রি করে রেল কর্তৃপক্ষ। আগাম টিকেট সংগ্রহ করা ঘরমুখো মানুষের যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ।

যারা ১৪ মার্চ টিকিট কিনেছেন, তারা আজ থেকে ট্রেনে যাত্রা শুরু করবেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলাচলকারী মোট ১২০টি আন্তঃনগর ট্রেনের সঙ্গে ঈদ উপলক্ষে পাঁচ জোড়া বিশেষ ট্রেন চলবে। 

এছাড়া, বিভিন্ন লোকাল, কমিউটার ও মেইল ট্রেনও চলাচল করবে। শিডিউল বিপর্যয় রোধে ঢাকাগামী ৯টি ট্রেনের বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রাবিরতি বাতিল করা হয়েছে।

ঈদযাত্রার জন্য সবচেয়ে বেশি যাত্রী কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে যাত্রা করেন। এজন্য স্টেশনে নিরাপত্তার ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হয়েছে এবং টিকিট কাউন্টারসহ বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনী উপস্থিত রয়েছে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঈদযাত্রা সুষ্ঠু করতে আশা প্রকাশ করেছে, সব ট্রেন শিডিউল মেনে চলবে। ঈদে পাঁচটি বিশেষ ট্রেন চালু করা হচ্ছে, এগুলো হলো— চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল, ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটে দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল, ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল, ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল এবং জয়দেবপুর-পার্বতীপুর রুটে পার্বতীপুর ঈদ স্পেশাল। এর পাশাপাশি ঈদ যাত্রার জন্য ৪৪টি অতিরিক্ত বগি যুক্ত করা হয়েছে।

ঈদযাত্রায় ২৭ মার্চ থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত সব আন্তঃনগর ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধ বাতিল করা হয়েছে, তবে ঈদের পর এসব ট্রেনের নিয়মিত বন্ধ পুনরায় কার্যকর হবে। 

এই সময়ের মধ্যে ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে একতা, দ্রুতযান, পঞ্চগড়, নীলসাগর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, চিলাহাটি, বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোর যাত্রাবিরতি থাকবে না। অন্যদিকে, সুন্দরবন, মধুমতি, বেনাপোল, জাহানাবাদ, রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস এবং নকশীকাঁথা কমিউটার ট্রেন ঢাকার শহরতলী প্ল্যাটফরম থেকে যাত্রা শুরু করবে।

টিকিটবিহীন যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশ প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক নজরদারি চলবে। এ জন্য রেলওয়ে, জিআরপি, আরএনবি, বিজিবি ও র‌্যাবের সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। চলন্ত ট্রেন, স্টেশন ও রেললাইনে নাশকতা রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

এবারের ঈদযাত্রায় কিছু বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যেমন ২৬ মার্চ থেকে জয়দেবপুর স্টেশন থেকে ঢাকামুখী এবং ঢাকা স্টেশন থেকে জয়দেবপুরমুখী আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট ইস্যু করা হবে না। 

বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ঢাকাগামী এবং ঢাকা স্টেশন থেকে বিমানবন্দরগামী আন্তঃনগর ট্রেনে টিকিট দেওয়া হবে না। ঈদের ১০ দিন আগে এবং ঈদের পরে ১০ দিন পর্যন্ত ট্রেনে সেলুন কার সংযোজন করা হবে না।

ঈদের ফিরতি টিকেট ৩ এপ্রিল থেকে সংগ্রহ করা যাবে। ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০ মার্চ থেকে যথাক্রমে ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯ এপ্রিলের টিকিট পাওয়া যাবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঈদ য ত র ঈদ স প শ ল ঈদয ত র ব ম নবন র লওয়

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ