অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রথমে খুনি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময়সহ বিগত ১৫-১৬ বছরে দলটি যে গুম-খুন-হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তার বিচার করতে হবে। এরপরে দেশে সংস্কার করতে হবে। আর সংস্কার শেষ করার পরেই হবে নির্বাচন। এর আগে নির্বাচন হলে, আর আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হলে, তা হবে জুলাই-২৪-এর শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি।

আজ সোমবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যরা। জুলাই-২৪-এর গণহত্যার বিচার ত্বরান্বিত এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনের আয়োজক ‘জুলাই-২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি’।

মানববন্ধনে শহীদ শাহরিয়ার হাসানের বাবা আবুল হাসান বলেন, শহীদদের হত্যার বিচার হচ্ছে না। বিচার নিয়ে টালবাহানা চলছে। বিচারের নামে ঘুম পাড়ানোর গান শোনানো হচ্ছে। আট মাস পরও সন্তান হত্যার বিচারের জন্য কেন রাস্তায় দাঁড়াতে হবে? দেশে যদি খুনি হাসিনা থাকত, ২০৩০ সালের আগে কেউ নির্বাচনের কথা ভাবতে পারত না। অথচ আজ নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মরিয়া হয়ে উঠেছে। ঐক্য হবে, সংস্কার হবে, নির্বাচন হবে, কিন্তু আগে প্রত্যেকটা হত্যাকাণ্ডের বিচার বাংলার জমিনে দৃশ্যমান হতে হবে।

শহীদ সায়েমের মা শিউলী আক্তার বলেন, শহীদ সন্তানদের হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্বাচন হবে না। শহীদদের রক্তের সঙ্গে কোনো বেইমানি করা যাবে না। কী করে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগকে এ দেশে আনার জন্য বলা হয়? আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে দিতে হবে। এখনো সন্তান হত্যার বিচার হচ্ছে না। কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। অথচ শত শত ছেলেদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। কীভাবে এখন নির্বাচনের কথা বলা হয়? আগে বিচার করতে হবে। পরে সংস্কার করে নির্বাচন।

শহীদ আহনাফের মা জারতাজ পারভীন বলেন, একটা সন্তান হত্যারও বিচার এ সরকার এখন পর্যন্ত করতে পারেনি। যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের একজনেরও যদি ফাঁসি হতো, তাহলে তাঁরা এই সরকারকে নিজেদের সরকার ভাবতে পারতেন। তাঁদের সন্তানেরা আওয়ামী লীগকে উৎখাত করার জন্য রাস্তায় নেমেছিল। দরকার হলে শহীদ পরিবারগুলো সন্তান হত্যার বিচারের জন্য আবার রাস্তায় নামবে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতেই হবে।

সন্তান হত্যার বিচার দাবি করেন জুলাই-২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটির চেয়ারম্যান গোলাম রহমান। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা যেভাবে আপনাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছি, আপনারা কোনো সম্মান আমাদের করেননি।’

গোলাম রহমান আরও বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিনীত অনুরোধ, আমাদের ছেলেরা দেশের জন্য যে শহীদ হয়েছে, তারা কী অন্যায় করেছে? নতুন বাংলাদেশ যে গড়তে যাচ্ছেন, নতুন বাংলাদেশ তো গঠন হচ্ছে না। পুরাতন বাংলাদেশের চাইতে আরও খারাপ বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।’

মানববন্ধনে শহীদদের স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা মানববন্ধন শেষে স্মারকলিপি দিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান। ট্রাইব্যুনালের ফটকে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। পরে তাঁরা ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁরা ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের সঙ্গে সাক্ষাতের দাবি জানান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ষ দ ধ কর জ ল ই ২৪ র জন য আওয় ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় চান না সাত কলেজের শিক্ষকেরা

ঢাকার বড় সাতটি সরকারি কলেজের জন্য যে প্রক্রিয়ায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটি বাস্তবায়িত হলে ওই সব কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন ওই সব কলেজের শিক্ষকেরা। তাঁরা বলছেন এতে শিক্ষার্থী কমে গিয়ে উচ্চশিক্ষা সংকোচন হবে, বাড়বে বৈষম্য। বিশেষ করে ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে নারী শিক্ষার সুযোগ কমে যাবে। কলেজগুলোর শিক্ষকদের পদ-পদবি নিয়েও জটিলতার সৃষ্টি হবে।

এ জন্য তাঁরা চান প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় না করে পৃথক ক্যাম্পাস স্থাপন করে এই ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হোক। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রস্তাবিত ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ থাকতে পারে।

এসব দাবিতে আজ বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সামনে বড় রকমের জমায়েত দেখিয়েছেন ওই সাত কলেজের শিক্ষকেরা। এতে কয়েক শ শিক্ষক অংশ নেন এবং মানববন্ধনও করেছেন।

ঢাকার এই সাতটি কলেজ একসময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। কলেজগুলো হলো—ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু অধিভুক্ত করার পর থেকে যথাসময়ে পরীক্ষা নেওয়া, ফলাফল প্রকাশসহ বিভিন্ন দাবিতে সময়-সময় আন্দোলন করে আসছিলেন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে এই সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে এই সাত কলেজের জন্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

ঢাকার বড় সাতটি সরকারি কলেজের জন্য নতুন যে বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে, তাতে এখনকার মতো একেকটি কলেজে সব বিষয় পড়াশোনা হবে না। সাতটি কলেজকে চারটি স্কুলে বিভক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এর মধ্যে স্কুল অব সায়েন্সের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাস; স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউমিনিটিসের জন্য সরকারি বাংলা কলেজ এবং স্কুল অব বিজনেসের জন্য সরকারি তিতুমীর কলেজ; স্কুল অব ল অ্যান্ড জাস্টিসের জন্য কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ক্যাম্পাস নির্ধারণ করা হয়েছে। ‘হাইব্রিড মডেলে’ চলা নতুন ধরনের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ শতাংশ ক্লাস হবে অনলাইনে আর ৬০ শতাংশ ক্লাস হবে সশরীর। তবে সব ধরনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সশরীর।

মানববন্ধন শেষে ইউজিসির চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘মোটরসাইকেল আমার ছেলেটার জীবন নিল’
  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬৫ হাজার ছাড়াল
  • মাদারীপুরে পুকুরে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু
  • গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের ‘কঠোরতম ভাষায়’ নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব
  • প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় চান না সাত কলেজের শিক্ষকেরা
  • সিলেটে রোগীর মৃত্যুর জেরে হাসপাতালে হামলা-ভাঙচুর, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
  • যারা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ চায়, তারা আদালতে অভিযোগ দিতে পারে: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন
  • ‘গাজায় গণহত্যা চলছে, আমি সেই গণহত্যার নিন্দা করছি’
  • সিজারের সময় নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ