ঈদ আসলেই নাড়ির টানে বাড়ি ফিরে যান শহরের মানুষ। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে বেশিরভাগ মানুষ বাসে যাতায়াত করেন। যাত্রাপথে বমি বমি ভাব হতে পারে। বাসযাত্রায় বমিভাব দূর করতে করণীয় সম্পর্কে কথা বলেছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ডা. মাসুদা পারভীন মিনু।
তিনি বলেন, ‘‘বাসে দীর্ঘ ভ্রমণের সময় বমিভাব (মোশন সিকনেস) অনেকের জন্যই একটি অস্বস্তিকর সমস্যা। এটি সাধারণত অন্তঃকর্ণের ভারসাম্য রক্ষাকারী অংশ ও চোখের মস্তিষ্কে সংকেত পাঠানোর অসঙ্গতির কারণে হয়ে থাকে। তবে কিছু সতর্কতা ও ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই সমস্যাটি এড়ানো সম্ভব।’’
ভ্রমণের আগে করণীয়
সঠিক খাবার নির্বাচন করুন: যাত্রার আগে অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত, মসলাদার বা ভারী খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া ভালো।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন: শরীর হাইড্রেটেড রাখলে বমিভাব কমে। তবে অতিরিক্ত পানি পান করলে সমস্যা হতে পারে।
ভ্রমণের অন্তত ৩০ মিনিট আগে ওষুধ সেবন করুন: যদি আপনি জানেন যে বাস যাত্রায় বমিভাব হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টি-মোশন সিকনেস ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন: ক্লান্তি বমিভাবের প্রবণতা বাড়িয়ে দিতে পারে, তাই ভ্রমণের আগে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন: চা, কফি বা অ্যালকোহলজাতীয় পানীয় বমিভাব বাড়িয়ে দিতে পারে।
যাত্রার সময় করণীয়:
সামনের দিকে বসুন: বাসের সামনের অংশ তুলনামূলক কম দুলতে থাকে, ফলে বমিভাব কম অনুভূত হয়।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকান: চলন্ত গাড়ির ভেতর বই বা মোবাইল স্ক্রিন দেখলে বমিভাব বাড়তে পারে। বরং চোখ সামনে রাখুন এবং দিগন্তের দিকে তাকান।
সজাগ থাকুন: কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ঘুমানো বা চোখ বন্ধ রাখলে বমিভাব বেড়ে যায়।
ফ্রেশ বাতাস নিন: বাসের জানালা খোলা থাকলে কিছুক্ষণ বাইরে তাকিয়ে শ্বাস নিন। সম্ভব হলে ভ্রমণের মাঝে বিরতি নিয়ে বাইরে কিছুক্ষণ হাঁটুন।
আদা বা লেবুর খোসা চিবান: আদা, লেবু বা পুদিনাপাতা চিবালে বা এর গন্ধ নিলে বমিভাব কমে।
ভ্রমণের সময় বমিভাব একটি অস্বস্তিকর অনুভূতি হলেও এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। সামান্য সতর্কতা অবলম্বন করলে ও কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করলে যাত্রা আরামদায়ক হতে পারে। তবে বমিভাব যদি অতিরিক্ত হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভ রমণ র করণ য়
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।