রোহিঙ্গা সংকট: উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন করার প্রস্তাব জাতিসংঘে গৃহীত
Published: 26th, March 2025 GMT
রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে চলমান সংকট সমাধানের লক্ষ্যে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন আয়োজন সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বিজ্ঞপ্তিতে দিয়ে জানিয়েছে, বুধবার (২৬ মার্চ) মালয়েশিয়া এবং ফিনল্যান্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতির ওপর উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের পরিধি, পদ্ধতি, বিন্যাস এবং সংগঠন-সম্পর্কিত একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।
প্রেস উইংয়ের তথ্য অনুযায়ী, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মো.
আরো পড়ুন:
টেকনাফে নৌকাডুবি: ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার, বিজিবি সদস্য নিখোঁজ
টেকনাফে রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকা ডুবি: এক নারীর মরদেহ উদ্ধার
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাধারণ পরিষদের সভাপতি প্রস্তাবে ওপর ভোট আহ্বান করেন। ১৪১টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কোনো ভোট পড়েনি। তবে ১০টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।
ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে এই প্রস্তাবটি গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, এটি এমন এক সময়ে গৃহীত হলো, যখন সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে রোহিঙ্গা সংকটের ওপর একটি বিশেষ সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যার মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর রাখাইন রাজ্য থেকে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। কয়েক দিনের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে চলে আসে। সেখানে তাদের জন্য তৈরি হয় অস্থায়ী আশ্রয়শিবির।
উখিয়া ও টেকনাফ অঞ্চলে আগে থেকেই প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা ছিল, যারা বিভিন্ন সময় নিপীড়নের মুখে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। সব মিলে এখন প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা বাংলাদেশকে বইতে হচ্ছে।
পূর্বাপর
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের শেষ দিকে মিয়ানমারের তৎকালীন অং সান সু চির সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়। সেপ্টেম্বরে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিও হয়। তবে সেই চুক্তির আর বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।
২০১৯ সালে দুই দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারেনি রোহিঙ্গারা, ফলে ভেস্তে যায় আলোচনা। ভেস্তে যায় রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার কার্যক্রমও।
এরপর আসে কোভিড মহামারি। রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগেও ঢিল পড়ে। বিশ্বজুড়ে সেই সংকটের মধ্যেই ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সু চির সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন সামরিক জান্তা জেনারেল মিন অং হ্লাইং। তাতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আসে নতুন ধাক্কা।
এর মধ্যে চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের অংশ হিসেবে কয়েকবার রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের যুদ্ধের তীব্রতার মধ্যে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আলোচনাতেই কম আসছে।
প্রত্যাবাসনের আলোচনা আপাতত বন্ধ; উল্টো রাখাইনে যুদ্ধের কারণে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে। এর মধ্যে সম্প্রতি আরও ৮০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের তথ্য দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
গণআন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো বড় পরিসরে সম্পৃক্ত করার কথা বলছে।
এর অংশ হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে রোহিঙ্গাবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সাইড ইভেন্টে ‘সব অংশীজনের সম্মেলন’ আয়োজনের প্রস্তাব দেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
চলতি মাসে বাংলাদেশ সফরে এসে কক্সবাজারে আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি নিজে চোখে দেখেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান দেখেন মিয়ানমারের ভেতরেই। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে তিনি তার দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করে যান।
ঢাকা/হাসান/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ত ব সরক র র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা বিভিন্ন দলের
ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দল। অবিলম্বে এই হামলা ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে এ বিষয়ে দুনিয়ার শান্তিকামী দেশ ও বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা। গতকাল রোববার পৃথক বিবৃতিতে এসব দলের নেতারা এই দাবি জানান। তারা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ ও ইরানের জনগণের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ বকুল এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান সময়ের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তার নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। একতরফা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে ইরানের রাজনৈতিক সামরিক অগ্রযাত্রাকে রুখতে চেষ্টা করছে। যুদ্ধবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে এখনই থামতে হবে। অন্যায়ভাবে ইরানের শিশু-নারী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর বোমা ও মিসাইল হামলা বন্ধ করতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক পৃথক বিবৃতিতে বলেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অঞ্চল লক্ষ্য করে ইসরায়েলের বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা রাষ্ট্রীয় ভয়ানক সন্ত্রাসী তৎপরতা। পরিকল্পিত এই হামলা আন্তর্জাতিক সব ধরনের বিধিবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। জাতিসংঘকেও এরা পুরোপুরি ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করেছে।