রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে চলমান সংকট সমাধানের লক্ষ্যে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন আয়োজন সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বিজ্ঞপ্তিতে দিয়ে জানিয়েছে, বুধবার (২৬ মার্চ) মালয়েশিয়া এবং ফিনল্যান্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতির ওপর উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের পরিধি, পদ্ধতি, বিন্যাস এবং সংগঠন-সম্পর্কিত একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।

প্রেস উইংয়ের তথ্য অনুযায়ী, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মো.

সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী উন্মুক্ত বিতর্ক অধিবেশনে হস্তক্ষেপ করেন। রাশিয়া বেশ কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব দেয়, তবে বাংলাদেশ তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। এ সময় সালাহউদ্দিন নোমান প্রস্তাবটি ভোটাভুটির জন্য উত্থাপন করেন।

আরো পড়ুন:

টেকনাফে নৌকাডুবি: ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার, বিজিবি সদস্য নিখোঁজ

টেকনাফে রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকা ডুবি: এক নারীর মরদেহ উদ্ধার 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাধারণ পরিষদের সভাপতি প্রস্তাবে ওপর ভোট আহ্বান করেন। ১৪১টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কোনো ভোট পড়েনি। তবে ১০টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।

ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে এই প্রস্তাবটি গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, এটি এমন এক সময়ে গৃহীত হলো, যখন সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে রোহিঙ্গা সংকটের ওপর একটি বিশেষ সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যার মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর রাখাইন রাজ্য থেকে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। কয়েক দিনের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে চলে আসে। সেখানে তাদের জন্য তৈরি হয় অস্থায়ী আশ্রয়শিবির। 

উখিয়া ও টেকনাফ অঞ্চলে আগে থেকেই প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা ছিল, যারা বিভিন্ন সময় নিপীড়নের মুখে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। সব মিলে এখন প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা বাংলাদেশকে বইতে হচ্ছে।

পূর্বাপর

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের  শেষ দিকে মিয়ানমারের তৎকালীন অং সান সু চির সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়। সেপ্টেম্বরে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিও হয়। তবে সেই চুক্তির আর বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।

২০১৯ সালে দুই দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারেনি রোহিঙ্গারা, ফলে ভেস্তে যায় আলোচনা। ভেস্তে যায় রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার কার্যক্রমও।

এরপর আসে কোভিড মহামারি। রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগেও ঢিল পড়ে। বিশ্বজুড়ে সেই সংকটের মধ্যেই ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সু চির সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন সামরিক জান্তা জেনারেল মিন অং হ্লাইং। তাতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আসে নতুন ধাক্কা।

এর মধ্যে চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের অংশ হিসেবে কয়েকবার রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের যুদ্ধের তীব্রতার মধ্যে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আলোচনাতেই কম আসছে।

প্রত্যাবাসনের আলোচনা আপাতত বন্ধ; উল্টো রাখাইনে যুদ্ধের কারণে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে। এর মধ্যে সম্প্রতি আরও ৮০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের তথ্য দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

গণআন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো বড় পরিসরে সম্পৃক্ত করার কথা বলছে।

এর অংশ হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে রোহিঙ্গাবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সাইড ইভেন্টে ‘সব অংশীজনের সম্মেলন’ আয়োজনের প্রস্তাব দেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

চলতি মাসে বাংলাদেশ সফরে এসে কক্সবাজারে আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি নিজে চোখে দেখেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান দেখেন মিয়ানমারের ভেতরেই। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে তিনি তার দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করে যান।

ঢাকা/হাসান/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ত ব সরক র র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষ, আদেশ ৬ আগস্ট

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর আদেশের জন্য আগামী ৬ আগস্ট তারিখ ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ আজ বুধবার শুনানি শেষে আদেশের এই তারিখ ধার্য করেন।

গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য ১ জুলাই তারিখ ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার ও আজ বুধবার শুনানি হয়।

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়; পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।

আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।

আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারীপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন। এ ছাড়া ইন্টারভেনার (ব্যাখ্যাকারী) হিসেবে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।

সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।

রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর আজ শুনানি শেষ হলো।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষ, আদেশ ৬ আগস্ট