ফেনীতে ‘একরাম চত্বর’ ভেঙে ‘জুলাই ২৪ শহীদ চত্বর’ নির্মাণ
Published: 26th, March 2025 GMT
ফেনীতে ২০১৪ সালে নিজ দলীয় নেতাদের হাতে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যার শিকার সাবেক ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা একরামুল হকের নামে নির্মিত 'একরাম চত্বর' ভেঙে 'জুলাই ২৪ শহীদ চত্বর' নির্মাণ করা হয়েছে। ২৪ এর জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ফেনীর ১১ শহীদের স্মরণে ফেনী পৌরসভার অর্থায়নে ‘জুলাই-২৪ শহীদ চত্বর' নামে এ স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়।
বুধবার (২৬ মার্চ) বিকেলে শহরের সদর হাসপাতাল মোড় এলাকায় সাবেক একরাম চত্বরের স্থানে ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ চত্বর উদ্বোধন করেন ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক ও পৌর প্রশাসক গোলাম মো.
উদ্বোধন শেষে ফেনী জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ফেনীর ১১ জন শহীদ হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা। তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে ফেনী পৌরসভার অর্থায়নে সদর হাসপাতাল মোড়ে 'জুলাই ২৪ শহীদ চত্বর' নামে স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। এটি এ এলাকার ছাত্র-জনতার দাবির প্রতিফলন। এ স্মৃতি ফলক ভবিষ্যতে একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার অনুপ্রেরণা যোগাবে।
ফেনী পৌর প্রশাসক গোলাম মো. বাতেন জানান, শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ছাত্র-জনতার দাবির প্রেক্ষিতে ফেনী পৌরসভার রাজস্ব তহবিল থেকে সুন্দর একটি চত্বর নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে ফেনীতে শহীদ হওয়া সকলের নামফলক আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এ জেনারেশনের ভূমিকা এ চত্বরের মাধ্যমে প্রতিফলিত হচ্ছে।
ফেনীর শহীদ ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণের পিতা নেছার আহমেদ বলেন, ‘‘বৈষম্যহীন একটি সমাজ গড়তে আমাদের সন্তানরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে। তাদের স্মৃতিকে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আমরা আশা করছি, ফেনীর মতো সারা দেশে শহীদদের স্মরণে এমন চত্বর করা হবে।’’
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা ফেনীর সন্তান আজিজুর রহমান রিজভী বলেন, ‘’২৬ মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে নতুন বাংলাদেশের জন্য প্রাণ বিলিয়ে দেওয়া শহীদদের স্মরণে এ চত্বর নির্মাণ করা হয়েছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য এ চত্বর নির্মাণে যারা জড়িত ছিলেন আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই।’’
২০২৪ সালে ৪ আগস্ট স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে মহিপালে ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গুলিতে নয়জন প্রাণ হারান। ফেনীর আরো দুই শহীদ ঢাকায় ও চাঁদপুরে প্রাণ হারান। সর্বমোট ১১ শহীদের স্মৃতিকে ধরে রাখতেই এই চত্বর তৈরি করা হয়েছে।
‘জুলাই-২৪’ শহীদ চত্বরটি ‘জেড’ আকৃতি, অর্থাৎ শেষ প্রজন্ম বা ‘জেড জেনারেশন’ রূপকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/সাহাব/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র ম ণ কর একর ম আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি