ফেনীতে ২০১৪ সালে নিজ দলীয় নেতাদের হাতে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যার শিকার সাবেক ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা একরামুল হকের নামে নির্মিত 'একরাম চত্বর' ভেঙে 'জুলাই ২৪ শহীদ চত্বর' নির্মাণ করা হয়েছে। ২৪ এর জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ফেনীর ১১ শহীদের স্মরণে ফেনী পৌরসভার অর্থায়নে ‘জুলাই-২৪ শহীদ চত্বর' নামে এ স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়। 

বুধবার (২৬ মার্চ) বিকেলে শহরের সদর হাসপাতাল মোড় এলাকায় সাবেক একরাম চত্বরের স্থানে ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ চত্বর উদ্বোধন করেন ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক ও পৌর প্রশাসক গোলাম মো.

বাতেন, শহীদ পরিবারের সদস্য, ছাত্র প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা।

উদ্বোধন শেষে ফেনী জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ফেনীর ১১ জন শহীদ হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা। তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে ফেনী পৌরসভার অর্থায়নে সদর হাসপাতাল মোড়ে 'জুলাই ২৪ শহীদ চত্বর' নামে স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। এটি এ এলাকার ছাত্র-জনতার দাবির প্রতিফলন। এ স্মৃতি ফলক ভবিষ্যতে একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার অনুপ্রেরণা যোগাবে।

ফেনী পৌর প্রশাসক গোলাম মো. বাতেন জানান, শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ছাত্র-জনতার দাবির প্রেক্ষিতে ফেনী পৌরসভার রাজস্ব তহবিল থেকে সুন্দর একটি চত্বর নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে ফেনীতে শহীদ হওয়া সকলের নামফলক আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এ জেনারেশনের ভূমিকা এ চত্বরের মাধ্যমে প্রতিফলিত হচ্ছে। 

ফেনীর শহীদ ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণের পিতা নেছার আহমেদ  বলেন, ‘‘বৈষম্যহীন একটি সমাজ গড়তে আমাদের সন্তানরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে। তাদের স্মৃতিকে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আমরা আশা করছি, ফেনীর মতো সারা দেশে শহীদদের স্মরণে এমন চত্বর করা হবে।’’

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা ফেনীর সন্তান আজিজুর রহমান রিজভী বলেন, ‘’২৬ মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে নতুন বাংলাদেশের জন্য প্রাণ বিলিয়ে দেওয়া শহীদদের স্মরণে এ চত্বর নির্মাণ করা হয়েছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য এ চত্বর নির্মাণে যারা জড়িত ছিলেন আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই।’’

২০২৪ সালে ৪ আগস্ট স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে মহিপালে ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গুলিতে নয়জন প্রাণ হারান। ফেনীর আরো দুই শহীদ ঢাকায় ও চাঁদপুরে প্রাণ হারান। সর্বমোট ১১ শহীদের স্মৃতিকে ধরে রাখতেই এই চত্বর তৈরি করা হয়েছে।

‘জুলাই-২৪’ শহীদ চত্বরটি ‘জেড’ আকৃতি, অর্থাৎ শেষ প্রজন্ম বা ‘জেড জেনারেশন’ রূপকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা/সাহাব/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র ম ণ কর একর ম আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁদপুরে জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা, হাসপাতাল বন্ধ

চাঁদপুর পৌর কবরস্থানে নবজাতক দাফনের সময় নড়ে ওঠা এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় শহরের তালতলা দি ইউনাইটেড হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ফারুক হোসেন গাজী (৪৫)। এই ঘটনায় আগামী দুই দিনের মধ্যে রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তর করে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন হাসপাতালটিতে নানা অবৈধ কার্যক্রম চলে আসছে। ওই নবজাতকের জন্মও হয় এই হাসপতালে। জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা করার ভিডিও ভাইরাল হলে বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের এবং পুলিশ সুপারের নির্দেশে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নবজাতককে কবরস্থানে নিয়ে আসা ওয়ার্ড বয় ফারুক গাজীকে গ্রেপ্তার করে।

এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেন পৌর কবর স্থানের কেয়ারটেকার মো. শাহজাহান মিয়াজী।

এদিকে দি ইউনাইটেড হাসপাতালে এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি বলেন, “হাসপাতালে এসে ব্যবস্থাপনায় জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেও কোন সাড়া মিলেনি। চিকিৎসক নেই, হাসপাতালের প্যাথলজি ও ওটির সঠিক পরিবেশ নেই। একই সাথে পোস্ট অপারেটিভ রোগীর জন্য কোন সুব্যবস্থা নেই এবং হাসপাতালের কাগজপত্রও নবায়ন নেই।”

তিনি আরো বলেন, “প্রাথমিকভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং ওটি, প্যাথলজি ও সংশ্লিষ্ট কক্ষ সীলগালা করা হয়েছে। একই সাথে রোগীদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্য স্থানে সেবার ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের অভিযানে পরিচালিত কার্যক্রম সিভিল সার্জন বরাবর প্রদান করা হবে। সিভিল সার্জন হাসপাতালের নিবন্ধন বাতিলসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।”

এ ভ্রাম্যমাণ আদালতে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রফিকুল হাসান ফয়সাল, জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান। অভিযানে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ সহযোগিতা করেন।

অপরদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত শেষে হাসপাতালের ড্রাগ সনদসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরীক্ষা করে দেখেন জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান।

ঢাকা/অমরেশ/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ