ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার একদিন আগেই কর্মব্যস্ত নগরী রাজধানী ছেড়ে গ্রামে ফেরা মানুষের ভিড় বেড়েছে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা এলাকায়। তবে সেতুতে কোনো জটলা নেই, নেই বাড়তি সময়ক্ষেপন। স্বাভাবিক সময়ের মতোই জ্যাম ছাড়া নির্বিঘ্নে সেতু এলাকা পার হয়ে যাচ্ছে গাড়ি।

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) ভোর থেকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে কিছুটা চাপ বৃদ্ধি পেলেও কোন ভোগান্তি ছিল না। এখন পর্যন্ত সড়কপথে যানজট কিংবা ভোগান্তি না থাকায় স্বস্তির হাসি ফুটেছে মানুষের মুখে। 

মাদারীপুরের শিবচর এলাকার মোটরসাইকেল যাত্রী সাইফুল বলেন, “আমি প্রায়দিনেই ব্যক্তিগত কাজে ঢাকা যাতায়াত করি। এ বছর ঈদকে সামনে রেখে মহাসড়ক ও পদ্মা সেতু টোল প্লাজায় এখনো কোন যানজট দেখিনি।” 

বাসযাত্রী কাইয়ুম বলেন, “আমার বাড়ি নড়াইল জেলায়। ঈদ করতে বাড়ি ফিরছি। সকাল বেলা হাইওয়ে হয়ে অন্যান্য সময়ের মতোই চলে আসছি। মনেই হয়নি ঈদে বাড়ি ফিরছি।” 

এদিকে ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজা এলাকায় ৭টি বুথে আদায় করা হচ্ছে যানবাহনের টোল। তবে মোটরসাইকেলের জন্য বরাবরের মতোই এবারও রয়েছে আলাদাভাবে টোল নেওয়ার ব্যবস্থা।

সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামীকাল শুক্রবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদের ছুটি শুরু হলে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পাবে সেতুতে। অন্যদিকে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনের অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

পদ্মা সেতুর সাইড অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ জানিয়েছেন, সেতুতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় টোল আদায় বেড়েছে। বুধবার রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সেতুতে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ২৩ লাখ ৮৭ হাজার ২০০ টাকা। এসময় মাওয়া প্রান্ত হয়ে পদ্মা সেতু পারি দিয়েছে ১৪ হাজার ৯৯২টি যানবাহন। এছাড়া উভয় প্রান্তে চলাচল করেছে ২৬ হাজার যানবাহন।

মুন্সীগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির জানান, এবার ঈদ যাত্রায় পদ্মাসেতু হয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ।

ঘরমুখো মানুষের যাত্রা পথ নিরবিচ্ছিন্ন করতে জেলাজুড়ে চার শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যানবাহন বিকল হয়ে পড়লে রেকার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে টহল টিমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মহা-সড়কের স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট যাত্রীরা। 

পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সেতুর উভয় প্রান্তে ২৬,৪২৮টি গাড়ি যাতায়াত করায় তিন কোটি ২৩ লাখ ৮৭ হাজার ২০০ টাকা টোল আদায় করা হয়েছে।

ঢাকা/রতন/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ