পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পয়লা বৈশাখের ছুটিকে সামনে রেখে পর্যটন নগরী কক্সবাজার সেজেছে নতুন রূপে। সমুদ্রসৈকত থেকে শুরু করে হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ, দোকানপাট সবখানেই চলছে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা ও প্রস্তুতি। পর্যটকদের স্বাগত জানাতে স্থানীয় প্রশাসন, ব্যবসায়ী ও ট্যুরিস্ট পুলিশ একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।

পর্যটকদের সুবিধা ও নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা:
পর্যটকদের সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সৈকতের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হয়েছে তথ্যকেন্দ্র ও সিসি ক্যামেরা।

ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘‘ঈদের ছুটিতে প্রতিদিন দেড় লাখের বেশি পর্যটক সমাগম ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সমুদ্রসৈকতে পেট্রোল টিমের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পর্যটকদের যেকোনো তথ্য ও সহায়তার জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশের বিশেষ ইউনিট কাজ করবে।’'

আরো পড়ুন:

ব্যস্ততা বেড়েছে রাঙামাটির তাঁত কারখানাগুলোতে

বাংলাদেশি পর্যটক নেই, কলকাতায় পরিবহনের অফিস এখন কাপড়ের দোকান

হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় ঈদ উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন:
পর্যটকদের আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হোটেল-মোটেলগুলোতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে।

কক্সবাজারের হোটেল দ্য কক্স টুডের পরিচালক মহিউদ্দিন খান খোকন জানান, ঈদে আগত অতিথিদের জন্য বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট, হাফ বোর্ড ও ফুল বোর্ড প্যাকেজসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় সুবিধা রাখা হয়েছে।

পর্যটক বরণে হোটেলের কক্ষ রং করানো হচ্ছে 

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে দুই রাত তিন দিনের আবাসন, ডিলাক্স কাপল বেড, এয়ারপোর্ট পিকআপ ও ড্রপ, ওয়েলকাম ড্রিংক, কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট, সুইমিং পুল ব্যবহার, শিশুদের জন্য বিশেষ সুবিধা এবং স্পা, জিম, রেস্টুরেন্ট ও লন্ড্রি সার্ভিসে আকর্ষণীয় ছাড়। আমরা চাই, অতিথিরা যেন নিরাপদ ও আরামদায়ক পরিবেশে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।’’

ডি’মোর হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের বান্দরবান, কুয়াকাটা, শ্রীমঙ্গল ও সাজেক ভ্যালির শাখাগুলোতেও ঈদ স্পেশাল প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। যেখানে আবাসন, খাবার ও অন্যান্য সুবিধায় বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

কক্সবাজারের হোটেল বিচ পার্কের ম্যানেজার আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘ঈদের পরের দুইদিনের সম্পূর্ণ বুকিং হয়ে গেছে। সামনের দিনগুলোর জন্যও বুকিং আসছে। রমজান মাসে পর্যটক কম থাকায় হোটেলের সংস্কারের কাজ হয়েছে, যাতে ঈদে পর্যটকদের নতুনভাবে বরণ করা যায়।’’

হোটেল সাউথ বিচ রিসোর্টের পরিচালক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘‘পুরো রমজান জুড়ে হোটেল-মোটেলের সাজসজ্জার কাজ চলছে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এ ব্যস্ততা থাকবে। পর্যটকদের জন্য বিশেষ ডিসকাউন্ট ও অফার দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু, পরিস্থিতি এখন ভালো, দ্রব্যমূল্য কিছুটা স্থিতিশীল এবং যাতায়াত ব্যবস্থা স্বাভাবিক তাই অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ঈদে কক্সবাজারে প্রচুর পর্যটক ভিড় করবেন বলে আশা করছি।’’

সৈকতের পাড়ের শামুক-ঝিনুক, আচার কিংবা শুঁটকির দোকানগুলোতেও সাজসজ্জার ব্যস্ততা বেড়েছে

স্থানীয় ব্যবসায়ী সালমান রহমান বলেন, ‘‘পর্যটকদের বরণে আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এবার নতুন কিছু স্থানীয় পণ্যও দোকানে রাখা হয়েছে। আশা করছি, ঈদে ভালো বিক্রি হবে।’’

কক্সবাজারের ইনানী সীপার্ল ওয়াটার পার্কের অ্যাসিস্টেন্ট সেলস ম্যানেজার মো.

সরওয়ার ওসমান জানান, তাদের পার্কে দর্শনার্থীরা সুলভমূল্যে বিভিন্ন প্যাকেজ উপভোগ করতে পারবেন। এর মধ্যে রয়েছে ওয়েভ পুল, ফ্যান পুল, রেইন ড্যান্স, ওপেন স্লাইড, থান্ডার বোল, মালটি লেন, উইন্ড স্টর্ম, বডি স্লাইড ও আকোয়া লুপসহ ঘোষ্ট হাউস ও ফাইভ ডি সিনেমার বিশেষ আয়োজন।

তিনি আরও জানান, দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য লকার, তোয়ালে, কস্টিউম, কুইক বাইট রেস্টুরেন্টসহ নানা সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পার্ক খোলা থাকবে এবং দর্শনার্থীদের নিরাপদ ও আনন্দময় অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করেছে।

দর্শনীয় স্থানগুলোতে নতুন সাজ ও বিনোদনের ব্যবস্থা:
শহরের প্রধান সমুদ্রসৈকত ছাড়াও হিমছড়ি, ইনানী, মহেশখালীসহ অন্যান্য পর্যটন স্থানগুলোতে নতুন সাজের প্রস্তুতি চলছে। পর্যটকদের বিনোদনের জন্য রাখা হয়েছে লাইভ মিউজিক ও স্থানীয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনাসহ বিশেষ আয়োজন।

সমুদ্রসৈকতে পাতানো বেঞ্চি  

পর্যটন ব্যবসায়ী মো. আবদুর রহমান বলেন, ‘‘পর্যটকদের বরণে ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। টানা ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসবেন। অতিরিক্ত পর্যটকের কারণে হোটেল বুকিং পাওয়া কঠিন হতে পারে, তাই পর্যটকদের অনলাইনে আগাম বুকিং দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।’’

পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা নির্দেশিকা:
সমুদ্রস্নানে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে লাইফ গার্ড সংস্থাগুলো প্রস্তুতি নিয়েছে।

কক্সবাজার সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার সিনিয়র লাইফ গার্ড জয়নাল আবেদীন ভূট্টো বলেন, ‘‘ঈদে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমরা সৈকতের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করেছি এবং সেখানে পর্যটকদের সতর্ক করা হবে। পানির প্রবাহ বেশি এমন এলাকায় লাল পতাকা দেওয়া হবে। তাই সবাইকে অনুরোধ করছি, লাইফ গার্ডদের নির্দেশনা মেনে চলার জন্য।’’

যাতায়াত ব্যবস্থা ও অতিরিক্ত যানবাহনের ব্যবস্থা:
ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে অতিরিক্ত বাস, ট্রেন ও বিমান ফ্লাইটের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজার পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “ঈদের আগের দুইদিন থেকে কক্সবাজারগামী বাস ও বিমানের টিকিটের চাহিদা বেড়েছে। অতিরিক্ত চাপ সামলাতে পরিবহন কোম্পানিগুলো বিশেষ সার্ভিস চালু করেছে।”

সড়কে যানজট এড়াতে জেলা ট্রাফিক পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ বাড়ানো হয়েছে এবং পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

ঈদ ও পয়লা বৈশাখের ছুটিতে কক্সবাজারে বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগমের প্রত্যাশায় স্থানীয় প্রশাসন, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা চাই পর্যটকরা যাতে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে ছুটি কাটাতে পারেন। তাই সমুদ্রসৈকতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা ও পর্যটকদের সেবার মান নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’

সব মিলিয়ে, এবারের ঈদে কক্সবাজার পর্যটকদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে আসছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা, বিনোদন ও আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন।

ঢাকা/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপক ল ঈদ উৎসব ঈদ ন শ চ ত করত র ব যবস থ দ র জন য প রস ত ত র জন য ব ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’

পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে। 

যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে। 

রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”

তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।

শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’

ঢাকা/শহিদুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
  • অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খোলা, ছাড়েনি জাহাজ
  • পর্যটন শিল্প বিকাশে আইকন গ্লোবাল ট্যুর অপারেটর আল মামুন
  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
  • কক্সবাজার সৈকতে ঘোড়া, কুকুর ও গরু, স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটুকু