ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিরাজমান অপরাধচক্রের দৌরাত্ম্য লইয়া শুক্রবার সমকাল যেই সংবাদ দিয়াছে, উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছয়টি জেলা সংযুক্তকারী আড়াই শত কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়কের অন্তত ৩০টি পয়েন্টে পুলিশ অর্ধশতাধিক চক্রের সন্ধান পাইয়াছে, যাহারা যাত্রীবাহী বাসে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি করিয়া চলিয়াছে নিরন্তর। প্রায়শ আমদানি-রপ্তানির পণ্যও গায়েব করিয়া দেয়। প্রসঙ্গত, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক পণ্যবোঝাই যানবাহনের প্রায় শতভাগ এই মহাসড়ক ব্যবহার করিয়া থাকে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়া আমদানি হওয়া পণ্যেরও ৭০ শতাংশ পরিবহন হয় এই পথে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব প্রদত্ত তথ্য বলিতেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গড়ে প্রতি মাসে প্রায় অর্ধশত পণ্য চুরির ঘটনা ঘটিয়া থাকে। সেই হিসাবে বৎসরে পাঁচ শতাধিক চুরির ঘটনা ঘটে। এহেন পরিস্থিতি উক্ত মহাসড়কে যাতায়াতকারীদের জানমালের নিরাপত্তাহীনতাই শুধু প্রতিফলিত করে না; বিশেষত ব্যবসায়ীদের মধ্যেও নানাবিধ শঙ্কার জন্ম দেয়। এহেন ডাকাতির ঘটনায় বিদেশেও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে, যাহার নেতিবাচক প্রভাব পড়িতে পারে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে। কারণ একদিকে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকের মধ্যে আস্থাহীনতার জন্ম হয়, অন্যদিকে ক্ষতিপূরণ বাবদ রপ্তানিকারককেই মোটা অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করিতে হয়। সমকালের প্রতিবেদনেই উদ্ধৃত হইয়াছে, গাজীপুরের এক তৈরি পোশাক মালিককে মহাসড়কে চুরির কবলে পড়িয়া রপ্তানি পণ্যের অংশবিশেষ ব্রাজিলে না পৌঁছাইবার কারণে ক্রেতার দাবি অনুসারে মোটা অঙ্কের খেসারত দিতে হইয়াছে।
অনস্বীকার্য, সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা নূতন নহে। দীর্ঘদিন যাবৎ এই সমস্যা সড়ক-মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়াইতেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সমস্যাটি সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট মূর্তিমান আতঙ্করূপে উপস্থিত। আমরা জানি, মহাসড়কের নিরাপত্তায় সমগ্র দেশে ‘হাইওয়ে পুলিশ’ রহিয়াছে দুই সহস্র আটশত মাত্র। প্রয়োজনের তুলনায় এই জনবল নিঃসন্দেহে কম। উপরন্তু ব্যবসায়ীগণের অভিযোগ, রপ্তানি পণ্য চুরির ঘটনায় সাধারণ চুরির ধারায় মামলা হয়। ফলে তালিকাভুক্ত অপরাধী অনেকে গ্রেপ্তার হইবার পর জামিনে বাহির হইয়া পুনরায় একই অপরাধে লিপ্ত হয়। পাশাপাশি ৫ আগস্ট ও তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের প্রভাবে বিশেষত পুলিশের বেসামাল দশা বিষয়কে জটিল করিয়া তুলিয়াছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সাত মাস পরও দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রধান বাহিনীটি দায়িত্ব পালনে পূর্ণ সক্ষম না হইয়া উঠিবার ঘটনা হতাশাজনক বটে। পূর্বের ন্যায় বাহিনীর একাংশের মধ্যে অদ্যাবধি নানা অসাধু চর্চা বহাল রহিয়াছে, এমন অভিযোগও গুরুতর বৈকি। আমরা মনে করি, চোর ও ডাকাত ধরিতে হাইওয়ে পুলিশ ইতোপূর্বে উক্ত অপরাধসমূহে জড়িতদের যেই তালিকা করিয়াছে, তাহাদের আইনের আওতায় আনিতে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধারাবাহিক অভিযান চালাইতে হইবে।
গত ২ মার্চ সমকালেরই অপর এক প্রতিবেদনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানাইয়াছিল, ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলা ও থানাকে অভিযুক্তদের নাম-পরিচয় জানাইয়া দিয়াছে হাইওয়ে পুলিশ। কেন্দ্র হইতে নজরদারিরও নাকি ব্যবস্থা হইয়াছে। তাহারা এই সংবাদও দিয়াছিলেন, সম্প্রতি ডাকাতি প্রতিরোধে মহাসড়কের কিছু এলাকায় যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের ভিডিও এবং চিত্র ধারণ করিয়া রাখা হইতেছে। তদুপরি দায়িত্বে অবহেলার দরুন কিছু ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও গৃহীত হইয়াছে। এই সকল পদক্ষেপের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হইলে ইতোমধ্যে পরিস্থিতির কিছুটা হইলেও উন্নতি লক্ষ্য করা যাইত। রপ্তানির পণ্য চুরি রোধে সাধারণ ধারায় মামলা না গ্রহণ করিয়া আইন সংশোধনপূর্বক বিশেষ ধারায় মামলা গ্রহণের যেই প্রস্তাব ব্যবসায়ীদের পক্ষ হইতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হইয়াছে, উহা অবিলম্বে আলোর মুখ দেখিবে বলিয়া আমাদের প্রত্যাশা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস য় র ঘটন হইয় ছ অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।
অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।
আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগেএ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।
সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।
এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।
আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে