‘কাজের স্বাধীনতা দেবে বিসিবি’- সাক্ষাৎকারে সিমন্স
Published: 29th, March 2025 GMT
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দিয়ে ছয় মাসের মেয়াদ শেষ করেন ফিল সিমন্স। বিসিবির সঙ্গে নতুন করে চুক্তিবদ্ধ হন ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত। বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আগামী দুই বছরে অনেক পরিকল্পনা তাঁর। গতকাল ইংল্যান্ড থেকে ফোনে গত ছয় মাসের অভিজ্ঞতা, জাতীয় দল নিয়ে আগামী দুই বছরের পরিকল্পনা সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেন টাইগার প্রধান কোচ। তাঁর বিশ্বাস, স্বাধীনভাবে কাজ করে বাংলাদেশকে বড় দলের পর্যায় নিয়ে যেতে পারবেন। ফিল সিমন্সের এই পরিকল্পনা শুনেছেন সেকান্দার আলী
সমকাল: দীর্ঘ মেয়াদে নিয়োগ পাওয়ায় আপনাকে অভিনন্দন। বিগত ছয় মাসের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
সিমন্স: প্রথম মেয়াদ স্বল্প সময়ের হলেও আনন্দদায়ক ছিল। কিছু ভালো রেজাল্ট আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি টেস্ট ম্যাচ জিতেছি। জয়ের ম্যাচে দারুণ ক্রিকেট খেলেছে ছেলেরা। টি২০ সিরিজ জিতেছে ধারাবাহিক ভালো খেলে। সফরটি বেশ উপভোগ্য ছিল। খেলোয়াড়দের নিবেদন ও মনোভাব খুবই ইতিবাচক ছিল। মূলত এ কারণে আমি নতুন করে চুক্তি করতে আগ্রহী ছিলাম।
সমকাল: সম্প্রতি দল হিসেবে ভালো করতে না পারলেও কোনো পরিবর্তন আপনাকে নাড়া দিয়েছে?
সিমন্স: আমার কাছে মনে হয়, দলের চাওয়া পূরণ করার মতো সক্ষমতা তাদের আছে। খেলোয়াড়দের মধ্যে এই বিশ্বাসটাও তৈরি হচ্ছে। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। খেলোয়াড়দের মধ্যে ভালো করার বিশ্বাস গড়ে দেওয়ার চেষ্টা থাকবে।
সমকাল: ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এই সময়ে বেসিক কী পরিবর্তন আনতে চান?
সিমন্স: প্রথম লক্ষ্য থাকবে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে প্রসারিত করা। খেলোয়াড়দের তিন সংস্করণে ম্যাচ জেতায় অভ্যস্ত করা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, দল হিসেবে ধারাবাহিক পারফর্ম করা। একটি ওয়ানডে জিতে পরের পাঁচ ম্যাচে ভালো না খেললে কোনো মানে থাকবে না। ধারাবাহিকতা আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের চেষ্টা থাকবে ধারাবাহিক ভালো খেলা।
সমকাল: পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটারের অভাব পূরণে কি ধরনের পরিকল্পনা নিচ্ছেন?
সিমন্স: আমি প্রথমে চেষ্টা করব ওয়ানডেতে মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকের বিকল্প নিতে। মুশফিক, তামিম, মাহমুদউল্লাহ, সাকিবের স্থান পূরণ করার চ্যালেঞ্জ থাকলেও চেষ্টা করতে হবে। তারা দলের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার ছিল এবং লম্বা সময় জাতীয় দলকে সার্ভিস দিয়ে গেছে। কীভাবে এবং কাদের দিয়ে তাদের স্থান পূরণ করতে পারি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচক, কোচিং প্যানেল, খেলোয়াড়– সবাই মিলে উত্তরণের চেষ্টা করব।
সমকাল: দুই বছর পর দলকে কোথায় দেখতে চান?
সিমন্স: বাংলাদেশকে দুই বছর পর আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের ওপরের দিকে দেখতে চাই। মাঠে নিয়মিত ভালো করছে, তা দেখতে চাই। আত্মবিশ্বাস নিয়ে ম্যাচ জিততে পারবে বলে আশা করি। যার সঙ্গেই খেলুক, ম্যাচ জিততে হবে। এই বিষয়টি নিয়ে আমি কাজ করছি। খেলোয়াড়দের মানসিকতা হতে হবে এমন– ভারত, অস্ট্রেলিয়া সবার সঙ্গে জিততে হবে। তা যেখানেই ম্যাচ খেলি না কেন, জয়ের মানসিকতা থাকতে হবে। আমার বিশ্বাস, এ ক্ষেত্রে আমরা সফল হতে পারব।
সমকাল: বাংলাদেশ কেন যেন আইসিসি টুর্নামেন্টে ভালো করে না। এটা কি কোনো মনস্তাত্ত্বিক প্রতিবন্ধকতা?
সিমন্স: খুব অল্প সময় কাজ করেছি। এ ব্যাপারে খুব বেশি অভিজ্ঞতা হয়নি। আমার মনে হয় না বিষয়টি মনস্তাত্ত্বিক। একমাত্র সমস্যা হলো, বিশ্বাসের ঘাটতি। যে কারণে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করতে পারে না। মিডিয়া কী লিখছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কী লেখা হচ্ছে, সেদিকে দেখার প্রয়োজন নেই। সফল হলে তারা ভালো লিখবে। ব্যর্থ হলো সেটাও লিখবে। তাই আমাদের ভালো খেলায় মনোযোগ দিতে হবে।
সমকাল: তিন সংস্করণে খেলোয়াড়দের আলাদা করার কোনো পরিকল্পনা আছে?
সিমন্স: না। আমার মনে হয়, কেবল ভারত তিন সংস্করণে তিনটি দল বানাতে পারে। আমাদের অত বেশি সংখ্যক খেলোয়াড় নেই।
সমকাল: বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন?
সিমন্স: এই সংস্কৃতি সম্পর্কে আমার ধারণা আছে। আমার ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতাও আছে। আমি বিপিএল দেখেছি, ডিপিএল ফলো করছি। আমি বিশ্বাস করি, খেলোয়াড়রা বাংলাদেশ দলের জন্য ১১০ ভাগ দেওয়ার মানসিকতা পোষণ করবে। শতভাগ দিয়ে যারা চেষ্টা করে, আমরা তাদের সাপোর্ট করব। শতভাগ দেওয়ার পর ভালো নাও হতে পারে। তখন দেশের সবার উচিত হবে, আমাদের পাশে থাকা। কারণ, দল এবং খেলোয়াড়দের চাঙ্গা রাখা জরুরি।
সমকাল: বিসিবির কাছ থেকে শতভাগ সাপোর্ট পাওয়ার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?
সিমন্স: আশা করি, পুরো সমর্থন পাব। এ ব্যাপারে আমাদের কথা হয়েছে। বোর্ড, খেলোয়াড়, সাপোর্ট স্টাফ সবার দিক থেকে সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং সমর্থন থাকবে। বাইরের বিষয়ে খেলোয়াড়রা দুশ্চিন্তায় থাকলে মাঠে পারফর্ম করা চ্যালেঞ্জ থাকবে। সেদিক থেকে বলতে পারি, অফিসিয়ালদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে, তারা সর্বাত্মক সমর্থন দেবে। আমাদের কাজ হবে, ভালো খেলে ম্যাচ জেতা।
সমকাল: সাকিবকে নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে?
সিমন্স: আমি জানি না, সাকিব বোলিং শুরু করেছে কিনা? বিষয়গুলো নিয়ে আগে নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাদের পরিকল্পনা জানার পর বাকি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে। যে নির্দেশনা থাকবে, আমরা সেটাই অনুসরণ করব।
সমকাল: আপনি কি বাংলাদেশে বেশি থাকবেন, না সিরিজ শেষে ইংল্যান্ড ফিরে যাবেন?
সিমন্স: বাংলাদেশ দলের কোচ হিসেবে আমাকে খেলোয়াড়দের সঙ্গে কাজ করতে হবে। বেশির ভাগ সময় ক্রিকেটারদের সঙ্গে থাকব। জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য আমি খেলোয়াড়দের নিয়ে কাজ করব। টেস্ট সিরিজ শেষে আরব আমিরাত ও পাকিস্তান যেতে হবে। হ্যাঁ, আমার বিশ্রাম এবং বিরতির প্রয়োজন হবে। নির্দিষ্ট কিছু সময় বাদ দিলে বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকব। খেলোয়াড়দের সঙ্গে কাজ করব।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ ল স মন স দ ই বছর ক জ কর স মন স আম দ র সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি ও জামায়াতের কাছে কেন আরপিওর ২১ ধারা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল
নির্বাচনের আগেই সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে অনেকটাই মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। এ নিয়ে গত ছয় দিনে দল দুটির পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যেই নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন আরপিওর ২১ ধারার সংশোধনীর পরিবর্তন। জামায়াত মনে করে, সরকার বিএনপির চাপে নতি স্বীকার করে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত খসড়া সংশোধনী বাতিল করেছে। আর বিএনপি মনে করে, জামায়াত নির্বাচন পেছাতে চায়।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী সরকার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়ায় ২১ ধারার পরিবর্তন করে; যা গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদিত হয়। আরপিওর ২১ ধারা সংশোধনীর ওই পরিবর্তন বহাল থাকলে কোনো দল জোটগত নির্বাচন করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে বাধ্য ছিল। ৩০ অক্টোবর সেটি আবার পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত হয়। তাতে জোটগত নির্বাচন করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থাকছে না। এতে জামায়াত বেশ ক্ষুব্ধ হয়।
যদিও সরকারের দিক থেকে এই নতুন সিদ্ধান্তের তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে সরকার-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সেটি শুধু বিএনপির দাবির কারণে নয়, ছোট বিভিন্ন দলেরও দাবি ছিল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার নিশ্চিত করেছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবেই। আমরা সরকারের কথায় বিশ্বাস করি। সুতরাং এখন থেকে আমাদের সব কার্যক্রম নির্বাচনকেন্দ্রিক। এখন সরকার তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কীভাবে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করবে, সেটি তাদের বিষয়। তবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারকে যতটুকু সহযোগিতা দেওয়া দরকার, সেটা বিএনপি করবে।’
বাংলাদেশের শত্রুরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। যতই সময় যাচ্ছে...একটা পুরোপুরি নৈরাজ্য সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চলছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহাসচিব, বিএনপিএ দিকে আজ সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির নিয়মিত সভা হবে। তবে অন্য দিন রাতে সভা হলেও আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় সভা বসবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আজকের সভায় আলোচ্যসূচিতে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করার বিষয় থাকবে। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন–সংক্রান্ত বিষয়টিও আলোচনায় আসতে পারে।
হঠাৎ কেন সামনে এল আরপিওর সংশোধনী
আরপিওর ২১ ধারার সংশোধন বিএনপি ও জামায়াতের কাছে হঠাৎ করে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল, সে প্রশ্ন সামনে এসেছে। গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন হয়। আরপিওর ২১ ধারার এই সংশোধনীর ফলে জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হতো। এতে জামায়াত খুশি হলেও বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো অস্বস্তিতে পড়েছিল। এ কারণে এর পরিবর্তন চেয়ে বিএনপি নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও আইন উপদেষ্টাকে পৃথক চিঠি দেয়। এর পরেই সরকার আরপিওর ২১ ধারার পরিবর্তন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্তের ফলে জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, নতুন সিদ্ধান্তে বিএনপি উপকৃত হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হতো, এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ভোটের হিসাব-নিকাশে ক্ষতিগ্রস্ত হতো বিএনপি। অন্য দিকে এতে লাভবান হয় জামায়াতসহ তার মিত্র দলগুলো। এর হিসাবটা হচ্ছে, ছোট দলগুলো বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আছে একসঙ্গে নির্বাচন করার জন্য এবং সংসদ সদস্য পদে জোটের প্রার্থী হওয়ার আশায়। সে ক্ষেত্রে বিএনপির ‘ধানের শীষ’ প্রতীককে ছোট দলগুলোর নেতারা জয়ের ক্ষেত্রে ‘ভরসা’ হিসেবে দেখেন।
...যে কারণে ফ্যাসিজমের যে রাস্তা, আমরা সংস্কারে বন্ধ করতে চেয়েছিলাম, এগুলো ওনারা বন্ধ করতে দিচ্ছে না। সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের নায়েবে আমির, জামায়াতএখন জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হলে ছোট দলগুলো বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন করতে খুব আগ্রহী হবে না। এর কারণ দুটি। প্রথমত, বিএনপির সমর্থন পেলেও ব্যক্তি জনপ্রিয়তা না থাকলে ছোট দলগুলোর নেতাদের নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করে জেতা কঠিন হয়ে পড়বে। অন্য দিকে জোটের প্রার্থী হিসেবে বিএনপি আসন ছাড় দিলেও দলের কেউ বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামলে ভোটে জেতা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। সে ক্ষেত্রে বিদ্রোহীকে সরাতে বিএনপির নেতৃত্ব কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, সে প্রশ্নও আছে।
এ ছাড়া এখন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতে যে আটটি দল আছে, তারা আরপিওর ওই ধারা পরিবর্তনের পক্ষে। অর্থাৎ দলগুলো জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে—এর পক্ষে। এর জন্য দলগুলো যৌথ কর্মসূচিও করছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, জামায়াত যে নির্বাচনী জোট বা নির্বাচনী সমঝোতা করতে চাইছে, সে দলগুলো পরস্পর আস্থাশীল। তাদের কাছে ‘দাঁড়িপাল্লা’ বা ‘হাতপাখা’ বা ‘রিকশা’ প্রতীক কোনো বিষয় নয়। সমঝোতা হলে সবাই ওই প্রতীকের পক্ষে এক হয়ে কাজ করবে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা নেই। অন্যদিকে বিএনপির জোটের ক্ষেত্রে ভাবনা হচ্ছে, ধানের শীর্ষ প্রতীক না দিলে ভোটের আগেই আসন হারানোর আশঙ্কা থাকবে।
গতকাল সকালে এক বিবৃতিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ার দাবি করেন, একটি দলের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে সরকার আরপিওর সর্বশেষ সংশোধনী বাতিল করেছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) বাতিল করা হলে সেটি ন্যক্কারজনক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হবে।
আরপিওর ২১ ধারার এই সংশোধনীর ফলে জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হতো। এতে জামায়াত খুশি হলেও বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো অস্বস্তিতে পড়েছিল। এ কারণে এর পরিবর্তন চেয়ে বিএনপি নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও আইন উপদেষ্টাকে পৃথক চিঠি দেয়।ঐকমত্য কমিশন সুপারিশের পর থেকেই উত্তাপ
২৮ অক্টোবর জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ জমা দেয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশন প্রস্তাব দিয়েছে—সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। এই সময়ের মধ্যে সংবিধান সংশোধন না করলে আপনা–আপনি সেটা সংবিধানে যুক্ত হবে। এ ছাড়া গণভোট কবে, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিন নাকি তার আগে—সেটা ঠিক করবে সরকার।
চরম অনৈক্যের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটি রাষ্ট্রের জন্য সুখকর নয়। যে রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যুক্ত ছিল, তারা কীভাবে হারানো ঐক্য ফিরে পেতে পারে, সেটি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখা দরকার।অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহবিএনপি প্রথমত ক্ষুব্ধ হয় বাস্তবায়নের সুপারিশ থেকে ভিন্নমত বাদ দেওয়ায়। এ ছাড়া সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন, ২৭০ দিন সময় বেঁধে দেওয়া, সেটা না হলে আপনা-আপনি সংবিধানে যুক্ত হওয়া ইত্যাদি বিষয়ে দলটির আপত্তি আছে। দলটি গণভোট আগে নয়, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে চায়। জামায়াতের অবস্থান এর পুরো বিপরীত।
এসব নিয়ে পরস্পরকে লক্ষ্য করে দল দুটির রাজনৈতিক বক্তৃতা-বিবৃতি ক্রমেই বাড়তে থাকে। জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে এটা আসছে যে জামায়াত নির্বাচন পেছাতে চায়। নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এমন বক্তব্য অবশ্য বিএনপি আরও আগে থেকেই দিয়ে আসছে।
গতকাল দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা দেখছি যে বাংলাদেশের শত্রুরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। যতই সময় যাচ্ছে, ততই বাংলাদেশে একটা অ্যানার্কিক সিচুয়েশন, একটা পুরোপুরি নৈরাজ্য সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চলছে।’
জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে এটা আসছে যে জামায়াত নির্বাচন পেছাতে চায়। নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এমন বক্তব্য অবশ্য বিএনপি আরও আগে থেকেই দিয়ে আসছে।এর আগের দিন শনিবার বিএনপির মহাসচিব জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনকে যতটা বাধা সৃষ্টি করেছেন, সেটা আপনারা করেছেন।’
পাল্টা বক্তব্য এসেছে জামায়াতের দিক থেকেও। দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের গতকাল বিকেলে ঢাকায় এক সেমিনারে বলেছেন, ‘বিএনপি ভেতরে-ভেতরে আবার ফ্যাসিস্ট হওয়ার একটা খায়েশ আছে মনে হচ্ছে। যে কারণে ফ্যাসিজমের যে রাস্তা, আমরা সংস্কারে বন্ধ করতে চেয়েছিলাম, এগুলো ওনারা বন্ধ করতে দিচ্ছেন না।’
অবশ্য সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি যতই উসকানি দিক, জামায়াত বিএনপির সঙ্গে বিরোধে জড়াতে চায় না। মানুষের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক আছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দূর করে স্পষ্ট করা রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব। সুতরাং আসুন আমরা সব ভুলে আলোচনায় বসি।’
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে এই মুখোমুখি অবস্থা চলতে থাকলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে। অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, একটা চরম অনৈক্যের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটি রাষ্ট্রের জন্য সুখকর নয়। যে রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যুক্ত ছিল, তারা কীভাবে হারানো ঐক্য ফিরে পেতে পারে, সেটি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখা দরকার।