ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পঞ্চগড়ে সড়ক-মহাসড়কে অভিযান চালিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। শনিবার (২৯ মার্চ) দুপুরে পঞ্চগড় জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়সহ আশপাশের এলাকায় জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সমন্বয়ে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আমিনুল হক তারেক। 

এ সময় গাড়ির ফিটনেস, রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করা হয়। দূরপাল্লার বাসের কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের কাছে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগে বিভিন্ন পরিবহনের টিকিট কাউন্টারে অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। অতিরিক্ত ভাড়ায় টিকিট বিক্রি ও ভাড়ার চার্ট না থাকায় বুড়িমারী এক্সপ্রেস, হানিফ পরিবহন, শ্যামলী এন্টারপ্রাইজ এবং মামুন এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার ম্যানেজারকে মোট ১৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানার অর্থ নগদ প্রদান করে বাস কাউন্টারগুলো।

অভিযানকালে বিআরটিএর কর্মকর্তা-কর্মচারী, সদর থানা পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পঞ্চগড় ক্যাম্পের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।  

ভ্রাম্যমাণ আদালত ও বিআরটিএর পঞ্চগড় জেলা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঈদের আগে-পরে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিআরটিএ, জেলা প্রশাসন, ট্রাফিক বিভাগের উদ্যোগে সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতি বছর ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। ঈদের আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

বিআরটিএর পঞ্চগড় কার্যালয়ের মোটরযান পরিদর্শক হিমাদ্রী ঘটক বলেছেন, ঈদকে সামনে রেখে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয়ে আমরা বিশেষ অভিযান চালিয়েছি। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার প্রতিনিয়ত দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। এর পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক অভিযান চালানো হচ্ছে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে বিআরটিএর পক্ষ থেকে এবার ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর আমিনুল হক তারেক বলেছেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি অর্থ আদায়ের অভিযোগে চারটি বাস কাউন্টারকে জরিমানা করা হয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা/নাঈম/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদয ত র ব আরট এ

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।

আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫

একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’

আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫

গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ