গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় বিভিন্ন রুটে ব্যানার টাঙিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। স্থানভেদে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া গুণতে হচ্ছে ঘরমুখো যাত্রীদের।

রাজবাড়ী জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়া থেকে রাজবাড়ীর দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। দূরত্ব অনুযায়ী টার্মিনাল টোলসহ এখানকার লোকাল বাসের ভাড়া সাধারণত ৫৫ টাকা, দৌলতদিয়া থেকে পাংশার দূরত্ব ৫২ কিলোমিটার। তাই পাংশার ভাড়া ১১২ টাকা। দৌলতদিয়া থেকে কুষ্টিয়ার দূরত্ব ৯০ কিলোমিটার। আর এখানকার ভাড়া ভাড়া ১৯৫ টাকা। দৌলতদিয়া হতে ফরিদপুর রুটের দূরত্ব ৩৩ কিলোমিটার। এই অংশের ভাড়া ৭২ টাকা।

অথচ দৌলতদিয়া থেকে রাজবাড়ীর লোকাল বাসের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা। যা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৪৫ টাকা বেশি। দৌলতদিয়া থেকে পাংশাগামী যাত্রীদের ভাড়া দিতে হচ্ছে ১৮০ টাকা। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৬৮ টাকা বেশি। ফরিদপুরগামী যাত্রীদের অতিরিক্ত গুণতে হচ্ছে ২৮ টাকা এবং কুষ্টিয়াগামী যাত্রীদের অতিরিক্ত গুণতে হচ্ছে ৮৫ টাকা। এ ছাড়া এই নির্দিষ্ট দূরত্বের মাঝে যদি কেউ যেতে চায় তাহলে পরের স্ট্যান্ডের ভাড়া তাকে গুণতে হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা যায়, দৌলতদিয়া ঘাট বাস টার্মিনাল এলাকায় ঘরমুখো মানুষের ভিড়। টার্মিনাল এলাকায় এসে সুবিধা অনুযায়ী যাত্রীরা যানবাহনে উঠছেন। কেউ কেউ তিন চাকার মাহিন্দ্র ও ইজিবাইকে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। রাস্তার পাশে বাস কাউন্টারের সামনে একটি হলুদ রঙের ব্যানার টানানো রয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে- পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে একমুখী যাত্রী হওয়ায় দৌলতদিয়া হতে রাজবাড়ীর ভাড়া ১০০ টাকা, দৌলতদিয়া হতে কালুখালীর ভাড়া ১৫০ টাকা, দৌলতদিয়া হতে পাংশার ভাড়া ১৮০ টাকা এবং দৌলতদিয়া হতে কুষ্টিয়ার ভাড়া ২৮০ টাকা। পরিচালনায়: রাজবাড়ী জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ, রাজবাড়ী।

আব্দুল আওয়াল মিয়া নামে এক যাত্রী ঢাকা থেকে লঞ্চ পারাপার হয়ে বাস টার্মিনাল এসেছেন। তিনি বাসের টিকিট সংগ্রহ করতে চাইলে তার কাছে ১০০ টাকা ভাড়া চাওয়া হয়। পরে তিনি বাসে না গিয়ে মাহিন্দ্রায় (থ্রি হুইলার) ওঠেন।

তিনি বলেন, ঘাট থেকে রাজবাড়ীর ভাড়া ৫৫ টাকা। সেখানে ভাড়া নিচ্ছে ১০০ টাকা। এটা তো এক প্রকার ডাকাতি। যেখানে যে যেমন পারছে সে সেভাবেই অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে। আমাদের পরিবারের টানে আসাই লাগবে। তাই বাধ্য হয়েই আমাদের এই বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে।

সবুজ হোসেন নামে আরেক যাত্রী বলেন, আমি কুষ্টিয়া যাব। স্বাভাবিক সময়ে সাধারণত ঘাট থেকে কুষ্ঠিয়ায় বাসের ভাড়া নেয় ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। কিন্তু এখন ঈদ উপলক্ষ্যে ভাড়া নিচ্ছে ২৮০ টাকা। আমাদের বাড়ি যাওয়া লাগবে। যাত্রীও বেশি। তাই অতিরিক্ত ভাড়া না দিয়ে কোনো উপায় নেই।

রাজবাড়ী জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক সুকুমার ভৌমিক বলেন, দৌলতদিয়া-কুষ্টিয়া ও দৌলতদিয়া-ফরিদপুর রুটে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ গাড়ি চলছে। ঈদের সময় গাড়িগুলো যাত্রী নিয়ে গিয়ে খালি আসে। এজন্য গত বছরের যে ভাড়া আমরা ঈদে নিয়েছিলাম। এ বছরও সেই ভাড়া আমরা প্রশাসনকে অবহিত করেই নিচ্ছি।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.

নাহিদুর রহমান বলেন, ভাড়ার বিষয়ে সকল দপ্তর নিয়ে একটি সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই সভায় গত বছর ঈদের সময় বাসের যে ভাড়া ছিল এবার সেই তালিকা অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। ঈদের সময় বাস একবার যাত্রী নিয়ে গেলে আসার সময় খালি আসে। তাদের যাতে লোকসান না হয় এ কারণে ভাড়া সমন্বয় করা হয়েছে। সারা বাংলাদেশেই এটা নেওয়া হচ্ছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঈদয ত র ১০০ ট ক দ লতদ য় র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ