আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে প্রেমা-আরাধ্যা
Published: 4th, April 2025 GMT
এক দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেছে কলেজপড়ুয়া তাসনিয়া ইসলাম প্রেমার। চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় সে হারিয়েছে মা-বাবা ও দুই বোনকে। ফুফাতো বোনও চলে গেছে না ফেরার দেশে। পরিবারের আপন বলতে আর কেউ নেই তার। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে সেও মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। প্রাণে বাঁচলেও দুর্ঘটনায় তার মস্তিষ্ক গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্ঘটনার এক দিন পার হলেও এখনও জ্ঞান ফেরেনি প্রেমার।
তাঁর মতো একই অবস্থা ছয় বছর বয়সী শিশু আরাধ্যা বিশ্বাসের। এই অল্প বয়সে সেও হারিয়েছে মা-বাবাকে। দীর্ঘ সময় ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন থাকার পরও শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। যে কারণে বৃহস্পতিবার আরাধ্যাকে ওয়ার্ড থেকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তাকে যখন আইসিইউতে নেওয়া হচ্ছিল, তখন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে তার বাবা দিলীপ বিশ্বাস ও মা সাধনা মণ্ডলের মরদেহ ছিল শ্মশানের পথে। মা-বাবা যে বেঁচে নেই, তা এখনও জানে না এই অবুঝ শিশুটি।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়ায় বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে গত বুধবার দুই দম্পতিসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে ঢাকার মিরপুরের রফিকুল ইসলাম শামীম ও লুৎফুন নাহার সুমি দম্পতি এবং তাদের দুই মেয়ে আনীসা আক্তার (১৪) ও লিয়ানা (৮) এবং শামীমের ভাগনি তানিফা ইয়াসমিনের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত হয়ে তাদের বড় মেয়ে প্রেমা (১৮) এখন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশু আরাধ্যা ও তার মামাতো ভাই দুর্জয় কুমার বিশ্বাস (১৮)। আহত তিনজনের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
বৃহস্পতিবার আহতদের দেখতে এসে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
জানা যায়, পেশাগত কাজের সুবাদে শামীম ও দিলীপের মধ্যে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক। তাদের কারণে দুই পরিবারের মধ্যেও সম্পর্ক অনেক পুরোনো। তারা গাজীপুরে পোশাক কারখানার কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঈদের ছুটিতে এ দুই পরিবার তাদের সন্তান ও আত্মীয়কে নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথেই ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটে।
চমেক আইসিইউর সামনে যেতেই চোখে পড়ে প্রেমার ছোট মামি জেসমিন রহমানের চোখেমুখে বিষণ্নতা। কিছুক্ষণ পায়চারি করছেন আবার এক কোণে গিয়ে চোখের পানি মুচছেন। তিনি বলেন, একদিন পার হয়ে গেলেও এখনও মেয়েটির জ্ঞান ফেরেনি। মা-বাবাসহ পরিবারের সবাই মারা গেছেন। আল্লাহ যেন তাকে বাঁচিয়ে রাখে। তার জন্য সবার দোয়া চাই।
দুর্ঘটনার খবর পেয়েই ঝিনাইদহের শৈলকুপার বোয়ালিয়া থেকে চমেক হাসপাতালে ছুটে এসেছেন আরাধ্যার আত্মীয় অসিত কুমার বাড়ৈ। শিশু আইসিইউর সামনে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
তিনি বলেন, শিশুটি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। শেষবারের মতো মা-বাবার চেহারাটাও দেখার সুযোগ পেল না। লম্বা সময় পর চোখ খুলে তাকালেও সে এখনও কথা বলতে পারছে না। দুর্ঘটনায় তার দুই পায়ের হাঁড় ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাথা, মুখ, হাতসহ বিভিন্ন অঙ্গ। তার কষ্ট আর সইতে পারছি না।
দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনায় শিশু আরাধ্যার পা ভেঙে গেছে। পায়ের গুরুতর আঘাতের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে মস্তিষ্কে। সেটিই এখন বড় দুশ্চিন্তার কারণ। প্রেমারও জ্ঞান ফেরেনি। তার অবস্থাও খুব খারাপ। এখান থেকে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার অবস্থাও নেই। আহতদের সুস্থ করে তুলতে সব ধরনের চেষ্টাই করে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছয় মানববন্ধন: লোহাগাড়া প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে যথাযথ পদক্ষেপ ও ছয় লাইনে উন্নতি করার দাবিতে গতকাল পৃথক ছয়টি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অর্ধশতাধিক সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন অংশগ্রহণ করে। উপজেলা সদর ও মহাসড়কসংলগ্ন পদুয়া, আমিরাবাদ, আধুনগর ও চুনতি ইউনিয়নে সকাল ১০টা থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যানারে এ মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে সাবেক এমপি আলহাজ শাহজাহান চৌধুরী বলেন, লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরেই একটি দুর্ঘটনাপ্রবণ অঞ্চল। দুর্ঘটনা রোধে লবণবাহী ট্রাক বন্ধ করে দিয়ে লবণ রেলে এবং পানি পথে নিয়ে যেতে হবে। অতি দ্রুত এ মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করতে হবে।
অন্য এক মানববন্ধনে লোহাগাড়া বিএনপির সভাপতি নাজমুল মোস্তফা আমিন বলেন, চুনতির জাঙ্গালিয়া মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করতে আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন দ র ঘটন য় আইস ইউত পর ব র আর ধ য অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
নেত্রকোনায় বাবরকে নিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর মন্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন
নেত্রকোনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা অনুষ্ঠানে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে জড়িয়ে ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার প্রতিবাদে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নেত্রকোনা শহরের বড়বাজার এলাকায় ‘সচেতন আলেম ও ছাত্র–জনতা’র ব্যানারে এ কর্মসূচি হয়।
খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব গাজী মুহাম্মাদ আবদুর রহিমের সভাপতিত্বে দুপুর ১২টার দিকে শুরু হওয়া ঘণ্টাব্যপী মানববন্ধনে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম মনিরুজ্জামান, জেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন খান, হেফাজতে ইসলামের সদস্যসচিব মাওলানা মাজহারুল ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা মাওলানা আতাউর রহমান, ওলামা দলের নেতা হাফেজ মিসবাহুদ্দিন তালুকদার, খেলাফত যুব আন্দোলনের সভাপতি মুফতি মুসা শেখ, খেলাফত মজলিসের নেতা মুফতি মো. আব্দুল্লাহ, পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেহরুল আলম, খেলাফত আন্দোলনের নেতা মাওলানা জাকির হোসেন, ছাত্রনেতা মাওলানা বীন ইয়ামিন, মাওলানা আবরার ফাহাদ, মাওলানা মোতালিব খান, হাফেজ সাইফুল্লাহ প্রমুখ।
আরও পড়ুনযদি অস্ত্র হ্যান্ডলই করতে না পারেন, নিয়ে আসছিলেন কেন: নেত্রকোনায় নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী২৭ জুলাই ২০২৫মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, লুৎফুজ্জামান বাবর নেত্রকোনা–৪ (মদন–মোহনগঞ্জ–খালিয়াজুরি) আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বিএনপি সরকারের আমলে সফল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ওই সময় তিনি দলমত–নির্বিশেষে নির্বাচনী এলাকা ছাড়াও জেলার বহু বেকার তরুণ–তরুণীদের চাকরি দেওয়াসহ কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেন। তাঁকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় নেত্রকোনার জনগণ মর্মাহত হয়েছেন। এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে তাঁর এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।
গত রোববার দুপুরে নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় পুরাতন কালেক্টরেট মাঠে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি’র অংশ হিসেবে পথসভা করা হয়। অনুষ্ঠানে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশে অসংখ্য হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বড় একটি ঘটনা হলো, ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান। যদি অস্ত্র হ্যান্ডলই করতে না পারেন, তবে নিয়ে আসছিলেন কেন আপনি? আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায় এই অস্ত্রকাহিনির কারণে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মধ্যে পড়েছে। অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছে।’
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেন, ‘আমি বাবর ভাইকে (সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর) সম্মান করি, তিনি কারা নির্যাতিত নেতা। কিন্তু আপনার ওই কাজ আমি সমর্থন করি না, করি না, করি না। আপনার এই কাজের কারণে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারেনি। হাসিনার মতো একজন খুনি ও ফ্যাসিস্ট ক্ষমতায় এসেছিলেন।’ এ নিয়ে ২৭ জুলাই প্রথম আলোর অনলাইনে ‘যদি অস্ত্র হ্যান্ডলই করতে না পারেন, নিয়ে আসছিলেন কেন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।