আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে প্রেমা-আরাধ্যা
Published: 4th, April 2025 GMT
এক দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেছে কলেজপড়ুয়া তাসনিয়া ইসলাম প্রেমার। চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় সে হারিয়েছে মা-বাবা ও দুই বোনকে। ফুফাতো বোনও চলে গেছে না ফেরার দেশে। পরিবারের আপন বলতে আর কেউ নেই তার। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে সেও মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। প্রাণে বাঁচলেও দুর্ঘটনায় তার মস্তিষ্ক গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্ঘটনার এক দিন পার হলেও এখনও জ্ঞান ফেরেনি প্রেমার।
তাঁর মতো একই অবস্থা ছয় বছর বয়সী শিশু আরাধ্যা বিশ্বাসের। এই অল্প বয়সে সেও হারিয়েছে মা-বাবাকে। দীর্ঘ সময় ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন থাকার পরও শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। যে কারণে বৃহস্পতিবার আরাধ্যাকে ওয়ার্ড থেকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তাকে যখন আইসিইউতে নেওয়া হচ্ছিল, তখন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে তার বাবা দিলীপ বিশ্বাস ও মা সাধনা মণ্ডলের মরদেহ ছিল শ্মশানের পথে। মা-বাবা যে বেঁচে নেই, তা এখনও জানে না এই অবুঝ শিশুটি।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়ায় বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে গত বুধবার দুই দম্পতিসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে ঢাকার মিরপুরের রফিকুল ইসলাম শামীম ও লুৎফুন নাহার সুমি দম্পতি এবং তাদের দুই মেয়ে আনীসা আক্তার (১৪) ও লিয়ানা (৮) এবং শামীমের ভাগনি তানিফা ইয়াসমিনের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত হয়ে তাদের বড় মেয়ে প্রেমা (১৮) এখন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশু আরাধ্যা ও তার মামাতো ভাই দুর্জয় কুমার বিশ্বাস (১৮)। আহত তিনজনের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
বৃহস্পতিবার আহতদের দেখতে এসে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
জানা যায়, পেশাগত কাজের সুবাদে শামীম ও দিলীপের মধ্যে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক। তাদের কারণে দুই পরিবারের মধ্যেও সম্পর্ক অনেক পুরোনো। তারা গাজীপুরে পোশাক কারখানার কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঈদের ছুটিতে এ দুই পরিবার তাদের সন্তান ও আত্মীয়কে নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথেই ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটে।
চমেক আইসিইউর সামনে যেতেই চোখে পড়ে প্রেমার ছোট মামি জেসমিন রহমানের চোখেমুখে বিষণ্নতা। কিছুক্ষণ পায়চারি করছেন আবার এক কোণে গিয়ে চোখের পানি মুচছেন। তিনি বলেন, একদিন পার হয়ে গেলেও এখনও মেয়েটির জ্ঞান ফেরেনি। মা-বাবাসহ পরিবারের সবাই মারা গেছেন। আল্লাহ যেন তাকে বাঁচিয়ে রাখে। তার জন্য সবার দোয়া চাই।
দুর্ঘটনার খবর পেয়েই ঝিনাইদহের শৈলকুপার বোয়ালিয়া থেকে চমেক হাসপাতালে ছুটে এসেছেন আরাধ্যার আত্মীয় অসিত কুমার বাড়ৈ। শিশু আইসিইউর সামনে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
তিনি বলেন, শিশুটি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। শেষবারের মতো মা-বাবার চেহারাটাও দেখার সুযোগ পেল না। লম্বা সময় পর চোখ খুলে তাকালেও সে এখনও কথা বলতে পারছে না। দুর্ঘটনায় তার দুই পায়ের হাঁড় ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাথা, মুখ, হাতসহ বিভিন্ন অঙ্গ। তার কষ্ট আর সইতে পারছি না।
দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনায় শিশু আরাধ্যার পা ভেঙে গেছে। পায়ের গুরুতর আঘাতের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে মস্তিষ্কে। সেটিই এখন বড় দুশ্চিন্তার কারণ। প্রেমারও জ্ঞান ফেরেনি। তার অবস্থাও খুব খারাপ। এখান থেকে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার অবস্থাও নেই। আহতদের সুস্থ করে তুলতে সব ধরনের চেষ্টাই করে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছয় মানববন্ধন: লোহাগাড়া প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে যথাযথ পদক্ষেপ ও ছয় লাইনে উন্নতি করার দাবিতে গতকাল পৃথক ছয়টি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অর্ধশতাধিক সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন অংশগ্রহণ করে। উপজেলা সদর ও মহাসড়কসংলগ্ন পদুয়া, আমিরাবাদ, আধুনগর ও চুনতি ইউনিয়নে সকাল ১০টা থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যানারে এ মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে সাবেক এমপি আলহাজ শাহজাহান চৌধুরী বলেন, লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরেই একটি দুর্ঘটনাপ্রবণ অঞ্চল। দুর্ঘটনা রোধে লবণবাহী ট্রাক বন্ধ করে দিয়ে লবণ রেলে এবং পানি পথে নিয়ে যেতে হবে। অতি দ্রুত এ মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করতে হবে।
অন্য এক মানববন্ধনে লোহাগাড়া বিএনপির সভাপতি নাজমুল মোস্তফা আমিন বলেন, চুনতির জাঙ্গালিয়া মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করতে আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন দ র ঘটন য় আইস ইউত পর ব র আর ধ য অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পাল্টা আঘাতে কাঁপল ইসরায়েল
আকাশে বারবার আলোর ঝিলিক। আলো-আঁধারির খেলা। দেখতে যতটা নান্দনিক, বাস্ততে ততটাই ভয়ানক। গত পাঁচ দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে ইসরায়েলে। কার্যত এতে কেঁপে কেঁপে ওঠে প্রধান শহর তেল আবিব। হাজার হাজার মানুষ ভূগর্ভের বাঙ্কারে আশ্রয় নেয়। তাতেও রক্ষা মেলেনি। অন্তত তিনজন নিহত ও ৭০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ইরানজুড়ে ইসরায়েলের হামলার জবাবে তেহরান গত শুক্রবার রাতে মুহুর্মুহু এসব ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
কয়েকটি প্রদেশে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলও। ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমান দিয়ে এসব হামলা চালানো হয়। তেহরানের দাবি, তারা ইসরায়েলের তিনটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। পাশাপাশি দু’জন ইসরায়েলি পাইলটকে আটক করেছে। ইরানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে দাবি করে, সর্বশেষ গতকাল শনিবার ভূপাতিত করা হয় একটি যুদ্ধবিমান। এ ছাড়া গত শুক্রবার দুটি ভূপাতিত করা হয়। তিন যুদ্ধবিমানের পাইলটদের মধ্যে একজন নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্য দু’জন ইরানের হেফাজতে আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবারই প্রথম কোনো যুদ্ধে অংশ নিল। রাডার ফাঁকি দিতে পারা এসব বিমান ভূপাতিত করা প্রায় অসম্ভব বলেই বর্ণনা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ভবনে আঘাত হেনেছে। এতে ভবনটির একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে এ নিয়ে ইসরায়েলের গণমাধ্যমে কোনো উল্লেখ নেই।
হামলায় তেল আবিবসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়। এর মধ্যেই উত্তেজনার বারুদে আগুন দিচ্ছেন দুই দেশের রাজনীতিকরা। ইরান ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা হামলা চালিয়ে যাবে। আর ইসরায়েল বলেছে, এভাবে হামলা চালালে (তাদের হামলায়) তেহরান পুড়বে। এ অবস্থায় গাজাকে দ্বিতীয় পর্যায়ে নিয়ে ইরানকে প্রথম যুদ্ধলক্ষ্য ঘোষণা করেছে ইসরায়েল।
শনিবার ভোরে চালানো ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের সাত সেনা আহত হন। ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত হানে মধ্য ইসরায়েলে। এর আগে গত শুক্রবার রাতটি ছিল ইসরায়েলের বাসিন্দাদের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে ভূগর্ভের কেন্দ্রে আশ্রয় নেন। গুচ্ছ গুচ্ছ তীরের মতো এগোতে থাকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসতে থাকে। বেশ কিছু শূন্যে ঠেকিয়ে দেয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। তবে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। ইসরায়েলের বিরোধী দলের নেতা ইয়ার লাপিদ বলেন, রাতটি ছিল ইসরায়েলের জন্য কঠিন।
ইসরায়েলের জরুরি সেবা কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়ে সিএনএন জানায়, হামলা হয়েছে তেল আবিবের দক্ষিণে রিশোন লেজিয়োন এলাকায়। সেখানে ইরানের রকেট হামলায় অন্তত একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২০ জন। ওই অঞ্চলের জরুরি সেবা বিভাগের উপপরিচালক রামি মুশার বলেন, ‘এটি এক কঠিন ও জটিল পরিস্থিতি।’ ভবনগুলোর ভেতর আর কোনো হতাহত আছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে আমরা এখনও কাজ করে যাচ্ছি। ছবি ও ফুটেজে বিধ্বস্ত ভবন দেখা গেছে।
পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। শনিবার দ্বিতীয় দিনে নতুন করে ইরানের কয়েকটি প্রদেশে হামলা চালায় ইসরায়েল। এর মধ্যে রয়েছে পূর্ব আজারবাইজান, লোরেস্তান, কারমানশাহ। এতে পূর্ব আজারবাইজানের চারটি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বার্তা সংস্থা ফার্স জানায়, লোরেস্তান প্রদেশের খুররমাবাদে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। একটি ভিডিওতে পূর্ব আজারবাইজানের তাবরিজ শহরে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। পশ্চিম ইরানের আসাদাবাদে অন্তত দু’জন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। এসব এলাকায় ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়েছে।
হামলা-উত্তেজনার মধ্যে ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিমানবন্দরের মুখপাত্র লিসা ডাইভারের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানায়, বিমানবন্দর বন্ধ। পুনরায় খোলার জন্য এখনও দিন-তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। ছবিতে দেখা গেছে, চেক-ইন কাউন্টার ও যাত্রী লাউঞ্জগুলো ফাঁকা। ফ্লাইট তথ্য বোর্ডে সব ফ্লাইট বাতিল দেখানো হয়েছে। তবে লেবানন, জর্ডান ও সিরিয়া শনিবার থেকে তাদের আকাশসীমা আবার খুলে দিয়েছে।
ইরানের এক কর্মকর্তা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের পাল্টা হামলা এখনই থামছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা ফার্সকে বলেন, শুক্রবার রাতের সীমিত পদক্ষেপে এ সংঘাত শেষ হচ্ছে না। ইরানের হামলা চলতে থাকবে। এ প্রতিক্রিয়া আগ্রাসনকারীদের জন্য অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ও পরিতাপের হবে। আর ইরান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমাহ মোহাজেরানি বলেছেন, ‘আমাদের জাতীয় গৌরব পুনরায় অর্জন ও জনগণের ন্যায়সংগত অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।’
অন্যদিকে শনিবার বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইরানের প্রতিটি স্থাপনায় হামলা চালানো হবে। এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, ‘আমরা ইরানের প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় কঠোর আঘাত হেনেছি।’ এএফপি জানায়, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ইরানকে নতুন হামলা নিয়ে হুঁশিয়ার করেছেন। তিনি বলেছেন, ইরান যদি ইসরায়েলে আর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, তবে পাল্টা হামলা চালিয়ে তেহরানকে পুড়িয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, যদি আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যেতে থাকেন, তবে তেহরান জ্বলেপুড়ে যাবে।
কোনো ধরনের উস্কানি ছাড়াই গত শুক্রবার ভোরে ইরানের পারমাণবিক, সামরিক স্থাপনা ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানদের লক্ষ্য করে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইসারায়েল। এতে শীর্ষ চার জেনারেল, ছয় পরমাণু বিজ্ঞানীসহ অন্তত ৭৮ জন নিহত হন এবং আহত হন ২৩০ জন। রাতেই শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাল্টা আঘাত হানে ইরান।
আমরা সবই জানতাম, বললেন ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরানে ইসরায়েলের হামলার আগে তারা জানতেন। রয়টার্সের সঙ্গে ফোনালাপে তিনি বলেন, ‘আমরা সবই জানতাম। আমি ইরানের অপমান ও মৃত্যু ঠেকাতে চেয়েছি। আমি তাদের রক্ষায় যথেষ্ট চেষ্টা করেছি। কারণ, চুক্তি কাজ করছে– এমনটা আমি দেখতে চাই।’ তিনি বলেন, তারা এখনও চাইলে চুক্তি করতে পারে।
হামলার পর পারমাণবিক আলোচনা অর্থহীন, বলছে ইরান
ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকাই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতাতেই ইসরায়েল ইরানে হামলা চালিয়েছে। তাঁর দাবি, ওয়াশিংটনের সম্মতি না থাকলে এ হামলা কখনোই হতো না। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার লক্ষ্যে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে আলোচনা চলছিল। সে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে বাকাই বলেন, ‘অন্য পক্ষ (যুক্তরাষ্ট্র) এমনভাবে আচরণ করেছে, যা আলোচনাকে অর্থহীন করে তুলেছে।’ বার্তা সংস্থা তাসনিমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাকাই বলেন, ‘একদিকে আপনি আলোচনার দাবি করবেন, অন্যদিকে জায়নবাদী শাসকগোষ্ঠীকে (ইসরায়েল) ইরানের ভূখণ্ডে হামলা চালাতে দেবেন; তা তো হতে পারে না।’
ইরান দেখিয়ে দিয়েছে, বলছে হামাস
ইরানের পাল্টা হামলাকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনের গাজার সশস্ত্র সংগঠন হামাস। তারা বলেছে, আগ্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে বিনা শাস্তিতে যে পার পাওয়া যায় না, তা ইরান প্রমাণ করে দিয়েছে। সংগঠনটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ইজ্জাত আল রিশেক শনিবার বলেন, ‘ইসরায়েলকে শক্ত জবাব দেওয়ার মধ্য দিয়ে ইরান প্রমাণ করেছে, কোনো ঔদ্ধত্যই বিনা জবাবে পার পায় না, কোনো আগ্রাসনই শাস্তি ছাড়া পার পায় না।’ তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে যত উচ্চ ধারণাই থাকুক না কেন, ডজন ডজন ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ঠিকই ভূখণ্ডটির ভেতরে ঢুকে সফলভাবে লক্ষ্যভেদ করেছে।’
রাতে পাঁচবার জায়গা বদল করেন মার্কিন দূত
ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন দূত মাইক হাকাবি গত শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত পাঁচবার নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তর হন। সিএনএন জানায়, ইসরায়েলে ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জেরে তিনি বারবার জায়গা বদল করেন। শনিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে ইসরায়েলে অবস্থানরত হাকাবি এসব কথা জানান। তিনি লিখেন, ‘ইসরায়েলে এক কঠিন রাত কাটল।’
ইরানকে হুঁশিয়ারি মার্কিন কর্মকর্তার
বিবিসি জানায়, ইরানে হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে জানিয়েছিল ইসরায়েল। তারা যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছিল, আত্মরক্ষার্থে এ হামলা অপরিহার্য। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংস্থাবিষয়ক ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ম্যাকয় পিট জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এসব কথা বলেছেন। নিরাপত্তা পরিষদে পিট বলেন, ‘হামলার আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়েছিল। তবে এসব হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে সম্পৃক্ত ছিল না। মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিক, কর্মী ও সেনাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের জায়গা।’ ইরানকে হুঁশিয়ার করে পিট বলেন, দেশটি যদি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, ঘাঁটি কিংবা অবকাঠামোর ওপর হামলা চালায়, তবে পরিণতি হবে শোচনীয়।
কেউ যেন কারও অস্তিত্ব হুমকিতে না ফেলে, বললেন পোপ লিও
ইরান ও ইসরায়েলের উত্তেজনার মধ্যে শান্তির বার্তা দিয়েছেন ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ লিও। তিনি বলেন, দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে পারমাণবিক হুমকিমুক্ত বিশ্ব গড়তে হবে। কেউ যেন কারও অস্তিত্বের জন্য হুমকি না হয়ে ওঠে। প্রতিটি দেশের কর্তব্য হবে শান্তি ও পুনর্মিলনের পথ অন্বেষণ এবং সমাধান খুঁজে বের করা।
ভূরাজনৈতিকভাবে একাকী ইরান, বলছেন বিশ্লেষক
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হামেদ মুসাভি আল বলেন, ইরান তুলনামূলক ভূরাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন। ইসরায়েলিদের প্রতি মার্কিন সমর্থন রয়েছে, যারা তাদের সবচেয়ে উন্নত অস্ত্র সরবরাহ করছে। তাদের বার্ষিক ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিচ্ছে এবং ইসরায়েলের নিন্দার চেষ্টা করে– এমন প্রতিটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ভেটো দিচ্ছে।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান আক্রমণ ও সংঘাত নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এর প্রভাব সম্পর্কে আলজাজিরার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। মুসাভি বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইসরায়েলের যুদ্ধযন্ত্র থামাতে পারে না। ইরানের প্রতি কিছু আরব-মুসলিম দেশ, রাশিয়া ও চীনের প্রতীকী সমর্থন আছে। তবে ইরান এ দেশগুলোর কারও কাছ থেকে খুব বেশি অস্ত্র পাচ্ছে না।