দুর্ঘটনার পর ৩৮ ঘণ্টা কেটে গেলেও জ্ঞান ফেরেনি কলেজ পড়ুয়া তাসনিয়া ইসলাম প্রেমার। আর মাঝে মাঝে চোখ খুললেও এখনও মুখে কথা বলতে পারছে না শিশু আরাধ্য। বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণে বাঁচলেও মস্তিষ্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রেমার। দুই পা ভেঙে গেছে আরাধ্যর। শরীরের বিভিন্ন অংশে তৈরি হয়েছে রক্ত জমাটও। এক দুর্ঘটনায় তারা দুজনই হারিয়েছে মা-বাবাকে। আর এখন নিজেরাও মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। শেষবারের মতো মা-বাবাকে দেখার সুযোগও কপালে ধরল না প্রেমা-আরাধ্যর। দুজনই এখনও শঙ্কামুক্ত নয় বলে পরিবারকে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাদের এমন করুণ পরিণতিতে তাই মন ভালো নেই কারও। এই অবস্থায় প্রেমা-আরাধ্যর একটু ভালো খবরের জন্য অধীর অপেক্ষায় হাসপাতালে সময় কাটছে স্বজনদের।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ার জাঙ্গালিয়ায় বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে গত বুধবার দুই দম্পতিসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকার মিরপুরের রফিকুল ইসলাম শামীম ও লুৎফুন নাহার সুমি দম্পতি ও তাদের দুই মেয়ে আনীসা আক্তার (১৪) ও লিয়ানা (৮) এবং শামীমের ভাগনি তানিফা ইয়াসমিনের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত হয়ে শামীম-সুমি দম্পতির বড় মেয়ে তাসনিয়া ইসলাম প্রেমা (১৮) এখন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় আহত হয়ে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে শিশু আরাধ্য বিশ্বাস (৬) ও তার মামাতো ভাই দুর্জয় কুমার বিশ্বাস (১৮)। আরাধ্যর বাবা দিলীপ বিশ্বাস আর মা সাধনা রাণীও চলে গেছেন পরপারে। গত বুধবার প্রেমাকে ও আজ বৃহস্পতিবার আরাধ্যকে ওয়ার্ড থেকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।

সরেজমিনে আইসিইউ’র সামনে যেতেই চোখে পড়ে জেসমিন রহমান এর চোখে-মুখের বিষণ্ণতা। তিনি সম্পর্কে তাসনিয়া ইসলাম প্রেমার ছোট মামী। প্রেমার জন্য কান্না করতে করতে চোখ-মুখে ফুলে গেছে তার। বাকরুদ্ধ জেসমিন রহমান বলেন, ‘এ কি হয়ে গেল? মা-বাবাসহ পরিবারের সবাই পরপারে চলে গেছে। সেও এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। এখনও তার জ্ঞান ফেরেনি। আল্লাহ’র কাছে প্রেমার জীবনটি ভিক্ষা চাই।’ 

শিশু আইসিইউ’র সামনে যেতে না যেতেই দুই চোখ কান্নায় টলমল করতে দেখা যায় আরাধ্যর কাকা অসিত কুমার বাড়ইকে। ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পরও শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি আরাধ্যর। অসিত কুমার বাড়ই সমকালকে বলেন, ‘আরাধ্যর জীবনে এমন কঠিন দিন আসবে তা আমরা কেউ কখনও কল্পনাও করতে পারেনি। লম্বা সময় পর চোখ খুলে তাকালেও সে এখনও মুখে কথা বলতে পারছে না। আজ মা-বাবার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান হয়েছে। অথচ শেষবারের মতো মা-বাবার চেহারাটাও দেখার সুযোগ পেল না মেয়েটি। কিভাবে কি হবে বুঝতে পারছি না।’ কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।

হাসপাতালের আইসিইউর এক চিকিৎসক বলেন, ‘প্রেমার জ্ঞানের মাত্রার অবস্থা বেশি খারাপ। একদিন পরও তার জ্ঞান ফেরেনি।’ আরেক চিকিৎসক বলেন, ‘দুর্ঘটনায় আরাধ্যের দুই পা ভেঙ্গে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার মাথা, মুখ, হাতসহ বিভিন্ন অংশ। শরীরের নানা অংশে তৈরি হয়েছে রক্ত জমাট। মাঝে মাঝে চোখ খুলে তাকায় সে। তবে মুখে কথা বলতে পারছে না।’ 

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো.

তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘আহতদের সুস্থ করে তুলতে সব ধরণের চেষ্টায় করে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা।’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন ন হত দ র ঘটন আর ধ য ইসল ম ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও