প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানি ক্ষেত্রে যে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, সেটি বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য একটি বড় ধরনের ‘সুনামি’। গত শত বছরের মধ্যে এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বা ডব্লিউটিওর কাঠামোর আওতায় স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই ধরনের শুল্কারোপের কথা নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেটি করা হয়েছে। তাই এটি আমাদের একেবারে অনাকাঙ্ক্ষিত এক ধাক্কা।

প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার পণ্য আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ বিবেচনায় বাণিজ্য–ঘাটতির ভিত্তিতে এই শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমরা প্রযুক্তি, ব্যাংকিং, বিমাসহ বিভিন্ন ধরনের যে সেবা আমদানি করি, সেটিকে এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। যদি সেবা আমদানিকেও বিবেচনায় নেওয়া হতো, তাহলে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ওপর এত পরিমাণে পাল্টা শুল্কারোপ হতো না। পুরো বিষয়টি এখনো আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। অনেকগুলো বিষয় এখনো আমাদের কাছে অস্পষ্ট। তাই আমরা আগে পুরো বিষয়টি বুঝতে ও সব ব্যাখ্যা জানার চেষ্টা করছি। এরপর এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে কাজ শুরু করব।

ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার বিকেলে ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের এই ঘটনা জানার পরপরই বৃহস্পতিবার বাণিজ্যসচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যানকে নিয়ে আমি তিন ঘণ্টা বৈঠক করেছি। সেখানে পুরো বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করেছি। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনারের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা হয়েছে। যেসব বিষয় আমাদের কাছে অস্পষ্ট, সেগুলোর ব্যাখ্যা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামী রোববার বিষয়টি নিয়ে সব অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছেন অর্থ উপদেষ্টা। সেখানেও করণীয় বিষয়ে আলোচনা হবে।

তবে আমি মনে করি, এটি যতটা দ্বিপক্ষীয় সমস্যা, তার চেয়ে বেশি এটি বৈশ্বিক সমস্যা। বিশ্ব অর্থনীতির জন্য এটি একটি ‘সুনামি’র মতো। তাই বড় বড় অর্থনীতির দেশগুলো এই ঘটনায় কি ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে বা কি প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে সেদিকেও আমরা গভীরভাবে নজর রাখছি। দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় উদ্যোগের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান কতটুকু সম্ভব হবে সেটি নিয়ে সন্দিহান। যদি এ ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় কোনো উদ্যোগ নিয়ে সমস্যার সমাধার করা যায় সরকারের পক্ষ থেকে সেটি করা হবে।

আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে, বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে এই শুল্ক যতটা কমিয়ে আনা যায় সে জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ জন্য যদি আমদানি নীতি সংশোধন করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বাড়িয়ে কিছুটা সুবিধা নেওয়া যায় সেই চেষ্টাও আমরা করব। যদিও ডব্লিউটিওর কাঠামোর আওতায় এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ খুবই কম।

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের বিষয়টি জানার পরপরই এটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে আমি বিষয়টি বোঝার ও জানার চেষ্টা করছি। বিশ্বজুড়ে এর প্রতিক্রিয়াও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমার মনে হয় পুরো বিষয়টি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে দু–এক সপ্তাহ সময় লেগে যাবে। এরপরই আমরা সরকারের পক্ষ থেকে করণীয় ঠিক করতে পারব। বাণিজ্য উপদেষ্টা হিসেবে আমি এটুকু বলতে পারি, আমাদের রপ্তানি খাত যাতে ক্ষতিগ্রস্ত বা বাধাগ্রস্ত না হয়, সে জন্য সরকারের দিক থেকে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সবটাই নেওয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমরা দুই বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করি। তার বিপরীতে দেশটিতে আমাদের রপ্তানির পরিমাণ সাত থেকে আট বিলিয়ন ডলার। দুই দেশের এই বাণিজ্যে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। এখন যদি আমদানি বাড়িয়ে হলেও রপ্তানিতে শুল্কের চাপ কমানো যায়, সেই উদ্যোগও নেওয়া হবে। এ জন্য আমরা যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।

শেখ বশিরউদ্দীন, বাণিজ্য উপদেষ্টা

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র ন র পর আম দ র ব ষয়ট ধরন র আমদ ন সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া’

ভারতীয় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীনন্দা শঙ্কর। সৃজিত মুখার্জির ‘এক যে ছিল রাজা’, সুমন ঘোষের ‘বসুপরিবার’-এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই তারকা। বলা যায়, টলিউডের প্রথম সারির সব নির্মাতার সঙ্গেই কাজ করেছেন এই নৃত্যশিল্পী। 

গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা ছেড়ে মুম্বাইয়ে বসবাস করছেন শ্রীনন্দা। সেখানে সংসার, কাজ নিয়ে সময় কাটছে তার। তবে অভিনয়ে নেই। অভিনয় থেকে দূরে থাকার কারণ কী? ফের কী অভিনয়ে ফিরবেন না শ্রীনন্দা?  

ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে আলাপকালে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শ্রীনন্দা। এ অভিনেত্রী বলেন, “টলিউডে যাদের সঙ্গেই কাজ করেছি, তাদের সঙ্গে এখনো আমার খুব ভালো সম্পর্ক। ভীষণ ভালো অভিজ্ঞতাও বলা চলে। মুশকিল হলো, বাংলা সিনেমায় তেমন বাজেট থাকে না। সত্যিই যদি খুব ভালো সিনেমা হয় বা এমন কোনো পরিচালক আমাকে অফার দেন যেখানে কোনো ভাবেই ‘না’ করব না। আমি নিশ্চয়ই আবার অভিনয়ে ফিরব।”

আরো পড়ুন:

কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী

পরিচালকের আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে মুখ খুললেন শোলাঙ্কি

কিছু কিছু লোকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়েও মাঝপথে থেমে গিয়েছেন শ্রীনন্দা। কারণ, তাদের সঙ্গে মানসিকভাবে মেলেনি। তার ভাষায়—“মুম্বাই, কলকাতা বা সাউথ ইন্ডাস্ট্রি যেখানেই হোক না কেন, আমি ভালো মানুষের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কেউ এমন চরিত্রে সুযোগ দেন, যেখানে প্রয়োজনে টাকাটা ভুলে গিয়ে শুধু পরিচালকের নাম দেখেই কাজটা করব।”

কিছুটা ইঙ্গিপূর্ণভাবে শ্রীনন্দা বলেন, “কাজের পাশাপাশি আমার সংসারও রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই পেতে হবে, যার জন্য সংসারটা ইগনোর করার কথা ভাবব। অর্থাৎ মনে হবে সংসার ফেলে এই সিনেমাটা আমাকে করতেই হবে। এই বয়েসে একটু কফি খেতে যাবেন? কাজ দেবেন? এগুলো করতে পারব না। সবাই তো চেনেই আমাকে। কাজ দিতে হলে দেবেন।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব শ্রীনন্দা। অনেকে ভেবেছিলেন, এ মাধ্যমে কাজ করে টাকা আয় করে থাকেন। তাদের উদ্দেশে শ্রীনন্দা বলেন, “অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা এটাও আমার পেশা। এখান থেকে অনেক টাকা উপার্জন করা যায়। আমি নিজেও আগে বিষয়টা জানতাম না। পোস্ট করতে করতে বুঝেছি। আমি এখন মুম্বাইয়ে মায়ের সঙ্গে পুরোদমে নাচের স্কুল চালাচ্ছি। এখন মোট ছয়টা ব্রাঞ্চ এবং ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। সব মিলিয়ে ভালো আছি।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলের শিকার হন শ্রীনন্দা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া হয়ে গিয়েছে। কয়েকদিন আগে আমাকে একজন বলেছিলেন, ‘রিল মামনি’। আমি আর মা এটা শুনে হেসে গড়িয়ে পড়েছি। মাঝেমধ্যে এসব বেশ মজাও লাগে। তবে যে পরিমাণ ভালোবাসা পাচ্ছি, সেটা খুব মন থেকেই ভক্তরা দিচ্ছেন বলে আমার বিশ্বাস। আমি মনে করি, এটা আমার জীবনে আশীর্বাদ।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ