চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় রাতের আঁধারে বাকপ্রতিবন্ধী এক নারীকে ঘরে ঢুকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মো. আজিজকে (৫৫) সালিশি বৈঠকে ১০ বার কান ধরিয়ে ওঠবস, মাটিতে সিজদা, বিশ হাজার টাকা জরিমানা ও সমাজচ্যুতের মাধ্যমে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ‌সহ জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। ইতোমধ্যে সালিশি বৈঠকের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ছড়িয়ে পড়েছে।

এতে অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় অভিযুক্ত ও সালিশকারকদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। অনেকের মনে প্রশ্ন, ধর্ষণচেষ্টার বিচার কি এতোটুকুতেই শেষ!

এদিকে ওই নারীর স্বজনরা সাংবাদিকদের মৌখিকভাবে অভিযোগ করে ঘটনার বর্ণনা দিলেও থানায় কোনও মামলা করেননি।

অভিযুক্ত মো.

আজিজ উপজেলার চরতী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর ব্রাহ্মণডেঙ্গা গ্রামের আনার বাপের বাড়ির মৃত সফর মুল্লুকের ছেলে। 

মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) রাত নয়টায় উপজেলার চরতী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর ব্রাহ্মণডেঙ্গা গ্রামে ওই বাকপ্রতিবন্ধী নারীর বসতঘরে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর দিন বুধবার (২ এপ্রিল) বিকাল ৩টার দিকে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ‌ একটি সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। তবে, সালিশি বৈঠকের বিষয়টি ফেসবুকের মাধ্যমে জানাজানি হয় বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল)। এর আগেও বেশ কয়েকবার ওই বাকপ্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। 

জানা যায়, ধর্ষণের চেষ্টার শিকার বাকপ্রতিবন্ধী নারী তার স্বামীসহ উপজেলার চরতী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর ব্রাহ্মণডেঙ্গা গ্রামে তার বাবার বাড়ির পাশেই আলাদা বসতঘর নির্মাণ করে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিলেন। মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে ওই প্রতিবন্ধী নারী ঘরে একা ছিলেন। সেই সুবাদে অভিযুক্ত মো. আজিজ তার বসতঘরে প্রবেশ করে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালান। এ সময় ওই বাকপ্রতিবন্ধী নারীর ধস্তাধস্তির আওয়াজ শুনে তার ভাই ও আশেপাশের লোকজন এসে অভিযুক্ত আজিজকে হাতেনাতে ধরে মারধর করেন। এক পর্যায়ে তিনি (আজিজ) কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। এর পরদিন বুধবার (২ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে উভয় পক্ষের সম্মতিতে সালিশি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। 

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য আলহাজ নুরুল আমিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, উভয় পক্ষের সম্মতিতে আমিসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি আবদুল মন্নান, জামাল উদ্দিন, মোরশেদুল আলম টিপু , নুরুল আলম সওদাগর ও আলী নবী লেদুদের নিয়ে একটি সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করা হয়। 

তিনি বলেন, সালিশি বৈঠকে অভিযুক্ত মো. আজিজকে ধর্ষণচেষ্টার শাস্তি হিসেবে ১০ বার কান ধরিয়ে ওঠবস, মাটিতে সিজদা, বিশ হাজার টাকা জরিমানা ও সমাজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়াও সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানে তাকে উপস্থিত না হওয়ার জন্য বলা হয়।

ধর্ষণচেষ্টার শিকার বাকপ্রতিবন্ধী নারীর বড় ভাই বলেন, ঘটনার দিন রাতে বাড়িতে কেউ না থাকার সুবাদে অভিযুক্ত আজিজ আমার বোনের ঘরে প্রবেশ করে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালান। এ সময় আমার বোন ধস্তাধস্তি শুরু করলে আমার ছোটভাই এবং আশেপাশের লোকজন এসে আজিজকে আটক করতে সক্ষম হন। পরে কৌশলে আজিজ পালিয়ে যান। এর পরদিন স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ‌ সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে তাকে কান ধরে ওঠবস, অর্থদণ্ড ও সমাজ থেকে বহিষ্কার করে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। সালিশি বৈঠকে বৈঠকের পরে অর্থদণ্ডের বিশ হাজার টাকা আমাদের দিতে চেয়েছিল কিন্তু আমরা নিইনি। 

তিনি আরও বলেন, এর আগেও বেশ কয়েকবার অভিযুক্ত আজিজ আমার বোনকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তবে সে সময় তাকে আমরা হাতেনাতে ধরতে পারিনি। একবার পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ধাওয়া দিয়ে পাশের একটি বিল থেকে আটক করেছিলাম। এ ঘটনায় তার সঙ্গে আমার ঝগড়া এবং মারামারি হয়েছিল। তখন এ বিষয়টি আমরা তার পরিবারকে জানিয়েছিলাম। এমনকি তার স্ত্রীও এ বিষয়ে অবগত আছেন।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে অভিযুক্ত আজিজকে বলতে শোনা যায়, আমি কান ধরে ১০ বার উঠছি আর বসছি। এরকম কাণ্ড আর কোনোদিন হবে না। আমি মাফ চাই। বৈঠকে থাকা একজন আজিজকে ইঙ্গিত করে বলন, শয়তান সওয়ার হয়েছে বল। এরপর আজিজকে কান ধরে ওঠবস করতে দেখা যায়। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, বৈঠকে থাকা একজন বলছেন, কেউ ভিডিও করছে কিনা? আবার একই ব্যক্তি বলছেন ভিডিও করতে হবে। এর পরপর আরেকজন বলছেন, এগুলো যাতে ফেসবুকে না যায়, গেলে এলাকার অসম্মান হবে। 

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ সব ক ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চুলার ধোঁয়া নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা, স্বজনদের হামলায় যুবক নিহত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় চুলার ধোঁয়া নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার জেরে ভাই-ভাবি-ভাতিজার হামলায় আহত হয়ে মনির হোসেন (৩৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের উড়শিউড়ার নন্দ দিঘিরপাড় গ্রামে হামলার ঘটনা ঘটে। পরে সন্ধ্যা সাতটার দিকে জেলা শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহত মনির হোসেন উড়শিউড়ার নন্দ দিঘিরপাড় গ্রামের মৃত খুরশিদ মিয়ার ছেলে। মনির পেশার দিনমজুর ছিলেন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি চতুর্থ ছিলেন। তাঁর স্ত্রী এবং সাত ও দেড় বছর বয়সী দুটি ছেলে আছে।

নিহতের পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে মনিরের বড় ভাই বাবুল মিয়ার (৫৫) স্ত্রী জুবায়দা বেগম (৪৫) একটি মাটির চুলা নিয়ে মনিরের বসতঘরের দরজার সামনে রান্না বসান। মাটির চুলার ধোঁয়া বসতঘরে প্রবেশ করলে মনির আপত্তি জানান। এতে বাবুলের স্ত্রী উচ্চস্বরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলা শুরু করেন। মনির প্রতিবাদ করলে বাবুল মিয়ার ছেলে শাওন মিয়া (১৫) এগিয়ে এসে চাচা মনিরের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে শাওন দা নিয়ে মনিরকে মারতে এগিয়ে এলে তাঁদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এ সময় বড় ভাই বাবুল, সাচ্চু, সাচ্চুর স্ত্রী হালিমা বেগম (৪৩) ও ছেলে ইমন (২৬) এবং শাওন লাঠি ও কাঠ দিয়ে মনিরকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে তাঁরা ইট দিয়ে মনিরের মাথায় আঘাত করেন। পরে স্থানীয় লোকজন মনিরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁকে শহরের বেসরকারি সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাতটার দিকে মনিরের মৃত্যু হয়।

হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘সাতটার দিকে ইসিজি পরীক্ষায় কোনো স্পন্দন না পাওয়ায় ওই রোগীকে মৃত ঘোষণা করি।’

নিহত ব্যক্তির স্ত্রী জুলেখা বেগম বলেন, ‘বসতঘরের সামনে মাটির চুলা এনে রান্না শুরু করেন বাবুল ভাইয়ের স্ত্রী। তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বকবক করছিলেন। আমার স্বামী পাল্টা কথা বলেন। এতে ভাতিজা শাওন দা নিয়ে স্বামীকে মারতে এগিয়ে আসে। স্বামীর বড় ভাই বাবুল ছেলেরে বলেছে, “ওরে ধর বেশি করে বাইরা।” তখন বাকিরা লাঠি, কাঠ ও ইট দিয়ে মারধর করে। শাওন আগেও স্বামীকে মারতে এসেছিল।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মাটির চুলার ধোঁয়াকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে ঝগড়ার উৎপত্তি। নিরীহ ছেলেটাকে একা পেয়ে তারা সবাই মারধর করে মেরে ফেলেছে।’

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বাবুল মিয়াসহ অন্যদের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।

খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে সদর থানা-পুলিশ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এম এম রকীব উর রাজা ওই বেসরকারি হাসপাতালে যান। সদর থানার কর্মকর্তা জিয়া উদ্দিন বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মামলার প্রক্রিয়া চলছে। জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চুলার ধোঁয়া নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা, স্বজনদের হামলায় যুবক নিহত
  • কলাপাড়ায় বসতঘর থেকে স্কুলছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার