পাবনায় ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ৯ পরিবহনকে জরিমানা
Published: 4th, April 2025 GMT
ঈদের ছুটি শেষে পাবনায় বিভিন্ন রুটের যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের দায়ে ৭টি বাস ও ২টি সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ৫৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে জেলা শহর ও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
অভিযানে নেতৃত্বে দেন অধিদপ্তরের পাবনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাহমুদ হাসান। তাঁকে সহযোগিতা করে সেনাবাহিনী।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পাবনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঈদের ছুটি শেষে যানবাহনগুলোতে যাত্রীর চাপ তৈরি হয়েছে। আর এ সুযোগে পরিবহনমালিকেরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন, যাত্রীদের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালানো হয়। পাবনা থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় চলাচলকারী কয়েকটি বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অনেক বাসের কাউন্টারে টিকিটের মূল্য না লিখেই ভাড়া আদায় করতে দেখা যায়। এসব কারণে মাছরাঙা ট্রাভেলস নামের একটি যাত্রীবাহী বাস কাউন্টারকে ১০ হাজার, সরকার ট্রাভেলসকে ২ হাজার ও কিংস ট্রাভেলসকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া গাড়িতে মূল্যতালিকা না রাখায় মহানগর ও রিলাক্স পরিবহনকে ৪ হাজার করে মোট ৮ হাজার টাকা, ৬৩০ টাকার ভাড়া ৭০০ টাকা নেওয়ায় দুই টিকিট কাউন্টারকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে জেলার বেড়া উপজেলার কাজিরহাট ফেরিঘাটমুখী দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করায় ৪ হাজার করে মোট ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এসব পরিবহন থেকে মোট ৫৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
মাহমুদ হাসান বলেন, ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা মানুষদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বড় অপরাধ। এমন অপরাধ রোধ ও যাত্রীদের সেবায় এ অভিযান চালানো হয়েছে। ঈদের ফিরতি যাত্রা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা
জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।
এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।
আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?
উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’
আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।