প্রকৌশলের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যা পড়ানো হয়, শতভাগ দরকারি না হলেও কমবেশি সবই কাজে লাগে। কারণ, চাকরির ক্ষেত্রে প্রকৌশল স্নাতকদের বিভিন্ন ভূমিকায় কাজ করতে হয়। ফলে একজনের যা না জানলেও চলে, আরেকজনের কাছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে পড়ালেখা শেষ করে এখন সুইস বায়োহাইজিনিক ইক্যুইপমেন্টসে প্রকল্প কর্মকর্তা হিসেবে যুক্ত আছেন মো.

তোজাম্মেল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখানে ফার্মাসিউটিক্যাল, ওয়াটার সিস্টেম ও ম্যানুফ্যাকচারিং সিস্টেম নিয়ে কাজ করছি। স্নাতকে শেখা ফ্লুইড ডায়নামিকস, হিট ট্রান্সফার, মেকানিকসের মতো বিষয়গুলো প্রতিনিয়ত কাজে লাগছে। হয়তো তাত্ত্বিকবিদ্যার গভীর হিসাব করতে হচ্ছে না বা সব ধারণা আমার লাগছে না, কিন্তু সব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা না থাকলে কর্মক্ষেত্রে এসে এসব কাজ করা কঠিন।’ তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কঠিন কঠিন সমস্যা শেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবে এই জ্ঞান কীভাবে কাজে লাগতে পারে, সেই ধারণা তাঁদের সেভাবে দেওয়া হয় না।

কিছু দক্ষতা অর্জন জরুরি

প্রকৌশলের জ্ঞান তো বটেই, পাশাপাশি কিছু দক্ষতা শিক্ষার্থীদের নিজ উদ্যোগেই অর্জন করা উচিত। কারণ, একজন প্রকৌশলীকে সমস্যা সমাধানের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন দল পরিচালনা করতে হয়। সেখানে বিভিন্ন পর্যায়ের সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হয়। পণ্য বাজারজাতসংক্রান্ত নানা বিষয়েও একজন প্রকৌশলী যুক্ত থাকেন।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সুমাইয়া বিনতে হারুন বলেন, ‘বিশ্লেষণ দক্ষতা, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, সঠিক যোগাযোগ দক্ষতা, ক্লায়েন্টের সঙ্গে সমঝোতা, দলগত কাজ এবং নেটওয়ার্কিং—এসব দক্ষতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের অংশ নয়। কিন্তু চাকরিতে এসে এগুলোর গুরুত্ব বুঝতে পারছি।’

সুমাইয়ার সঙ্গে সুর মিলিয়ে মো. তোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘যোগাযোগ দক্ষতা, নেতৃত্ব ও নেটওয়ার্কিং প্রকৌশলীদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, রক্ষণাবেক্ষণ, ব্যবস্থাপনা বা উৎপাদন—একজন প্রকৌশলীর কাজ যা-ই হোক, কাজ তো তিনি একা করেন না। তাঁকে টেকনিশিয়ানদের একটি দল চালাতে হয় বা বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করতে হয়। তাই এসব দক্ষতা না থাকলে কর্মক্ষেত্রে টেকা কঠিন।’

একাডেমি ও ইন্ডাস্ট্রির যোগাযোগ

দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীরা একটা কথা প্রায়ই বলেন, ভিনদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্যাম্পাস ও ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। ফলে শিক্ষার্থীরা ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পান। সুগম হয় ইন্টার্নশিপ বা সরাসরি সেসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়ার পথও। এমনকি অনেক সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আসে, গবেষকদলের সাহায্য নেয়। কিন্তু বাংলাদেশে এমন অনুশীলন খুব একটা দেখা যায় না। অনেক সময় এ কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে পুরোনো ধ্যানধারণাই থেকে যায়।

আরও পড়ুনপ্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি–ইচ্ছুকদের জন্য ৫ পরামর্শ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান উল্কাসেমিতে জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেন আসিফ ইমরান খান। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তন শিক্ষার্থী বলেন, ‘কোম্পানিতে যত দ্রুত প্রযুক্তির পরিবর্তন ঘটে, বিশ্ববিদ্যালয়ে তা ঘটে না। সে ক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রি বিশেষজ্ঞ বা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একটা সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত। তাহলে পাঠ্যসূচিতে কোনো অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজন হলে সেই ধারণা তারা দ্রুত পাবে। শিক্ষার্থীরাও ইন্টার্নশিপ ও চাকরির ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবে।’

আসিফ মনে করেন, কর্মক্ষেত্রে পেশাদারি মনোভাব থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। কীভাবে সময় ব্যবস্থাপনা করতে হয়, আইডিয়া উপস্থাপন করতে হয়—এসব বিষয়ে স্বতন্ত্র কোর্স না থাকলেও নানা প্রতিযোগিতা বা প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকৌশলের শিক্ষার্থীদের এসব শেখানো উচিত। এ ছাড়া নানা রকম সফটওয়্যার ব্যবহারের দক্ষতাও শিক্ষার্থীদের এগিয়ে রাখে। হাতে-কলমে এসব সফটওয়্যারের কাজ শেখানোর জন্য হয়তো কোর্সের প্রয়োজন নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যেন নিজ আগ্রহেই শিখে নেয়, সেই পরিবেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা উচিত। সিভি তৈরি, গুছিয়ে ই–মেইল লেখা, গবেষণা উপস্থাপন, এমন নানা ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের ঘাটতি থাকে। অনেকে জানেন না, কোন দক্ষতা এখন চাকরির বাজারের জন্য জরুরি। এসব ঘাটতি পূরণে বিভিন্ন ক্লাব বা অ্যালামনাইরা ভূমিকা রাখতে পারেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইন ড স ট র প রকল প ক জ কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়  সড়ক দুর্ঘটনায় জুয়েল মিয়া (৪০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরিফ (২০) নামের আরও একজন। 

শনিবার (১ নভেম্বর ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফতুল্লার পঞ্চবটি মেথর খোলার মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

নিহতের  জুয়েল মিয়া (৪০) গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ভগবানপুর গ্রামের মো. শাহ আলমের ছেলে। 

তিনি পেশায় একজন দর্জি ছিলেন। নিহত জুয়েল বর্তমানে ফতুল্লার মুসলিম নগরে সালাম আহমেদের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতেন। 
 
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতে রাস্তা পারাপারের সময় ময়দা ও আটা বোঝাই দুটি ট্রাকের মাঝখানে পড়ে দুজন আহত হন। স্থানীয়রা দ্রুত তাদের উদ্ধার করে শহরের  খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জুয়েল মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে আহত আরিফুরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।

 সংবাদ পেয়ে ফতুল্লা থানার উপ-পরিদর্শক আবু রায়হান নুর সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং দুটি ট্রাক থানায় নিয়ে যান।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত)আনোয়ার হোসেন জানান,দূর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে দুটি ট্রাক থানায় নিয়ে এসেছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো থানায় কোন লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এক যে আছে মন
  • নিউ ইয়র্কে মেয়র নির্বাচন আজ, কুওমোকে সমর্থন ট্রাম্পের
  • ফিলিস্তিনি বন্দীকে নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস, ইসরায়েলে সেনাবাহিনীর সাবেক প্রসিকিউটর গ্রেপ্তার
  • ত্রাস সৃষ্টি, টার্গেট কিলিং: ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের অন্ধকারাচ্ছন্ন ভাবমূর্তি
  • ঢাবি থেকে ড. জাকির নায়েককে ডক্টরেট দেওয়ার দাবি শিক্ষার্থীদের
  • বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু