প্রকৌশলের পড়ালেখার সঙ্গে কর্মক্ষেত্রের মিল কতখানি
Published: 6th, April 2025 GMT
প্রকৌশলের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যা পড়ানো হয়, শতভাগ দরকারি না হলেও কমবেশি সবই কাজে লাগে। কারণ, চাকরির ক্ষেত্রে প্রকৌশল স্নাতকদের বিভিন্ন ভূমিকায় কাজ করতে হয়। ফলে একজনের যা না জানলেও চলে, আরেকজনের কাছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে পড়ালেখা শেষ করে এখন সুইস বায়োহাইজিনিক ইক্যুইপমেন্টসে প্রকল্প কর্মকর্তা হিসেবে যুক্ত আছেন মো.
প্রকৌশলের জ্ঞান তো বটেই, পাশাপাশি কিছু দক্ষতা শিক্ষার্থীদের নিজ উদ্যোগেই অর্জন করা উচিত। কারণ, একজন প্রকৌশলীকে সমস্যা সমাধানের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন দল পরিচালনা করতে হয়। সেখানে বিভিন্ন পর্যায়ের সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হয়। পণ্য বাজারজাতসংক্রান্ত নানা বিষয়েও একজন প্রকৌশলী যুক্ত থাকেন।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সুমাইয়া বিনতে হারুন বলেন, ‘বিশ্লেষণ দক্ষতা, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, সঠিক যোগাযোগ দক্ষতা, ক্লায়েন্টের সঙ্গে সমঝোতা, দলগত কাজ এবং নেটওয়ার্কিং—এসব দক্ষতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের অংশ নয়। কিন্তু চাকরিতে এসে এগুলোর গুরুত্ব বুঝতে পারছি।’
সুমাইয়ার সঙ্গে সুর মিলিয়ে মো. তোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘যোগাযোগ দক্ষতা, নেতৃত্ব ও নেটওয়ার্কিং প্রকৌশলীদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, রক্ষণাবেক্ষণ, ব্যবস্থাপনা বা উৎপাদন—একজন প্রকৌশলীর কাজ যা-ই হোক, কাজ তো তিনি একা করেন না। তাঁকে টেকনিশিয়ানদের একটি দল চালাতে হয় বা বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করতে হয়। তাই এসব দক্ষতা না থাকলে কর্মক্ষেত্রে টেকা কঠিন।’
একাডেমি ও ইন্ডাস্ট্রির যোগাযোগদেশের বাইরে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীরা একটা কথা প্রায়ই বলেন, ভিনদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্যাম্পাস ও ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। ফলে শিক্ষার্থীরা ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পান। সুগম হয় ইন্টার্নশিপ বা সরাসরি সেসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়ার পথও। এমনকি অনেক সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আসে, গবেষকদলের সাহায্য নেয়। কিন্তু বাংলাদেশে এমন অনুশীলন খুব একটা দেখা যায় না। অনেক সময় এ কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে পুরোনো ধ্যানধারণাই থেকে যায়।
আরও পড়ুনপ্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি–ইচ্ছুকদের জন্য ৫ পরামর্শ১০ ডিসেম্বর ২০২৩সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান উল্কাসেমিতে জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেন আসিফ ইমরান খান। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তন শিক্ষার্থী বলেন, ‘কোম্পানিতে যত দ্রুত প্রযুক্তির পরিবর্তন ঘটে, বিশ্ববিদ্যালয়ে তা ঘটে না। সে ক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রি বিশেষজ্ঞ বা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একটা সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত। তাহলে পাঠ্যসূচিতে কোনো অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজন হলে সেই ধারণা তারা দ্রুত পাবে। শিক্ষার্থীরাও ইন্টার্নশিপ ও চাকরির ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবে।’
আসিফ মনে করেন, কর্মক্ষেত্রে পেশাদারি মনোভাব থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। কীভাবে সময় ব্যবস্থাপনা করতে হয়, আইডিয়া উপস্থাপন করতে হয়—এসব বিষয়ে স্বতন্ত্র কোর্স না থাকলেও নানা প্রতিযোগিতা বা প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকৌশলের শিক্ষার্থীদের এসব শেখানো উচিত। এ ছাড়া নানা রকম সফটওয়্যার ব্যবহারের দক্ষতাও শিক্ষার্থীদের এগিয়ে রাখে। হাতে-কলমে এসব সফটওয়্যারের কাজ শেখানোর জন্য হয়তো কোর্সের প্রয়োজন নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যেন নিজ আগ্রহেই শিখে নেয়, সেই পরিবেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা উচিত। সিভি তৈরি, গুছিয়ে ই–মেইল লেখা, গবেষণা উপস্থাপন, এমন নানা ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের ঘাটতি থাকে। অনেকে জানেন না, কোন দক্ষতা এখন চাকরির বাজারের জন্য জরুরি। এসব ঘাটতি পূরণে বিভিন্ন ক্লাব বা অ্যালামনাইরা ভূমিকা রাখতে পারেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইন ড স ট র প রকল প ক জ কর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুরে জমি নিয়ে বিরোধে সংঘর্ষ, হাতুড়িপেটায় একজন নিহত
প্রতীকী ছবি