মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির জামিন নামঞ্জুর, কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ
Published: 8th, April 2025 GMT
মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মহীউদ্দীনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ লিয়াকত আলী মোল্লা তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গোলাম মহীউদ্দীনের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, জেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও নাশকতার অভিযোগে সদর থানায় চারটি মামলা রয়েছে।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৮ জুলাই জেলা শহরে খালপাড় এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আজাদ হোসেন খানের ওপর সন্ত্রাসী হামলা করেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এতে আজাদ হোসেনসহ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর আজাদ হোসেন বাদী হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহীউদ্দীনসহ আওয়ামী লীগের ২০ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ ১০০ থেকে ১৫০ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন।
এ ছাড়া জেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও নাশকতার অভিযোগে সদর থানায় আরও তিনটি মামলা রয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গোলাম মহীউদ্দীন আত্মগোপনে চলে যান।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অসীম কুমার বিশ্বাস বলেন, গোলাম মহীউদ্দীনের বিরুদ্ধে দায়ের করা চারটি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে তিনি জামিনে ছিলেন। এর মধ্যে দুটি মামলায় আজ মঙ্গলবার জামিনের মেয়াদ শেষ হয়। এ ছাড়া অপর দুটি মামলায় আগামী ১০ এপ্রিল এবং ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত জামিনের মেয়াদ রয়েছে।
সরকারি কৌঁসুলি এ এফ এম নুরতাজ আলম বাহার বলেন, আসামির নির্দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। বিচারক আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার
২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।
মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।
ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।
স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।
শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’
তার জন্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”
"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।
প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"
ঢাকা/ইয়াসিন