চলতি বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০.২ শতাংশে পৌঁছাবে, কমবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি
Published: 9th, April 2025 GMT
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৯ শতাংশে নেমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তবে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বাড়বে ৫.১ শতাংশে।
অন্যদিকে পূর্বাভাস অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতি ২০২৪ অর্থবছরের ৯.৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৫ অর্থবছরে ১০.২ শতাংশে পৌঁছাবে। পাইকারি বাজারে প্রতিযোগিতার অভাব, বাজার সংক্রান্ত তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা ও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। তবে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি হিসাবের ঘাটতি জিডিপির ১.
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এডিবির ঢাকা অফিসে প্রকাশিত ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) এপ্রিল ২০২৫’ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।প্রতিবেদনে বলা হয়, তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি বাড়লেও রাজনৈতিক উত্তরণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি, শিল্প খাতে অস্থিরতা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা প্রবৃদ্ধির গতি কমিয়েছে। ২০২৪ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৪.২ শতাংশ।
বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জেয়ং বলেন, ‘বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি সহনশীল রয়েছে। এই সহনশীলতা আরও শক্তিশালী করা সম্ভব কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে।’ তিনি বলেন, তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, আর্থিক খাতের সুশাসন এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদার করা যেতে পারে।
এডিবি বলছে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে ভোগ ও বিনিয়োগে কিছুটা গতি আসবে। তবে সংকোচনমূলক আর্থিক ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার কারণে এ গতি সীমিত থাকবে। বিশ্ববাজারে শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাবও বাংলাদেশের রপ্তানি ও প্রবৃদ্ধিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।
সরবরাহপক্ষে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, আর্থিক খাতের ঝুঁকি এবং ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে সেবাখাতের প্রবৃদ্ধি মন্থর হবে। বারবার বন্যার কারণে কৃষি খাতেও প্রবৃদ্ধি কমতে পারে। তবে রপ্তানি খাতের সহায়তায় শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি সামান্য বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিবেদনটি ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক ঘোষণার আগে তৈরি হওয়ায় সেসব শুল্কের প্রভাব এতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তবে এডিও এপ্রিল ২০২৫-এ নতুন শুল্ক নীতির ফলে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রবৃদ্ধিতে সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলাদা বিশ্লেষণ রয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বর্তমানে ৬৯টি সদস্য দেশের মালিকানাধীন। প্রতিষ্ঠানটি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই ও সহনশীল প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এড ব প রব দ ধ র প রব দ ধ
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় দুর্ভিক্ষের অংক
গাজায় দুর্ভিক্ষের অংকটা সহজ। ফিলিস্তিনিরা তাদের এলাকা ছেড়ে যেতে পারছে না, যুদ্ধের ফলে কৃষিকাজ বন্ধ হয়ে গেছে এবং ইসরায়েল মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে। তাই তাদের জনসংখ্যার প্রায় প্রতিটি ক্যালোরি বিদেশ থেকে আনতে হবে।
ইসরায়েল জানে কত খাবার প্রয়োজন। তারা কয়েক দশক ধরে গাজায় ক্ষুধা নির্ণয় করে আসছে, প্রাথমিকভাবে দুর্ভিক্ষ এড়িয়ে চাপ সৃষ্টি করার জন্য খাবারের চালান গণনা করছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্টের একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ২০০৬ সালে বলেছিলেন, “ধারণাটি হল ফিলিস্তিনিদের খাদ্যতালিকাকে রাখা, কিন্তু তাদের ক্ষুধায় মারা যাওয়া নয়।”
দুই বছর পর ইসরায়েলি আদালত সরকাররি পরিকল্পনার সেই ভয়াবহ বিবরণী প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল।
ইসরায়েলি সংস্থা কোগাট, যারা এখনো গাজায় সাহায্য পাঠায়, তারা হিসাব করে জানিয়েছিল, প্রতিদিন গড়ে এক জন ফিলিস্তিনির সর্বনিম্ন ২ হাজার ২৭৯ ক্যালোরির প্রয়োজন, যা ১ দশমিক ৮৩৬ কেজি খাবারের মাধ্যমে সরবরাহ করা যেতে পারে।
বর্তমানে গাজায় মানবিক সংস্থাগুলো এরচেয়েও কম ন্যূনতম রেশনের দাবি জানাচ্ছে। দারা প্রতি মাসে ২১ লাখ মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটাতে ৬২ হাজার মেট্রিক টন শুকনো এবং টিনজাত খাবার, অথবা প্রতিদিন প্রতি ব্যক্তির জন্য প্রায় ১ কেজি খাবার চাচ্ছে।
কোগাটের রেকর্ড অনুসারে, মার্চ থেকে জুনের মধ্যে ইসরায়েল কেবল ৫৬ হাজাজর টন খাদ্য ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে দিয়েছে, যা সেই সময়ের জন্য গাজার ন্যূনতম চাহিদার এক-চতুর্থাংশেরও কম।
জাতিসংঘ সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা চলতি সপ্তাহে জানিয়েছেন, গাজায় এখন ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির’ দুর্ভিক্ষ দেখা দিচ্ছে। ‘সরবরাহের প্রবেশের উপর কঠোর বিধিনিষেধ’ থাকা সত্ত্বেও, খাদ্য সরবরাহ ‘প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম’ পর্যায়ে রয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ইসরায়েলের সরকার জানে গাজার জনগণের বেঁচে থাকার জন্য কতটা খাবার প্রয়োজন এবং কতটা খাবার ওই অঞ্চলে যায়।অতীতে অনাহার এড়াতে কতটা খাবার প্রয়োজন তা গণনা করার জন্য এই তথ্য তারা ব্যবহার করত। গাজার প্রয়োজনীয় ক্যালোরি এবং মার্চ মাস থেকে যে খাবার প্রবেশ করেছে তার মধ্যে বিশাল ব্যবধান স্পষ্ট করে দেয় যে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা আজ ভিন্ন হিসাব করছেন। তারা এই মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের জন্য অন্য কারো উপর দায় চাপাতে পারে না এবং তাদের মিত্ররাও তা করতে পারে না।
ঢাকা/শাহেদ