ভোলার চরফ্যাসনে এক দিনমজুর পরিবারকে জিম্মি করে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে ১০ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। এতেই থেমে যাননি ওই বিএনপি নেতা ও তাঁর সহযোগীরা। তাদের দাবি করা আরও ২০ হাজার টাকার জন্য দিনমজুর পরিবারকে বাড়িছাড়া করার হুমকি দিয়েছেন তারা। 

গত ২৬ মার্চ দক্ষিণ আইচা থানার নজরুল নগর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। অভিযোগ ওঠা বিএনপি নেতার নাম কামরুল সরদার। তিনি নজরুল নগর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। 

এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাজুল ইসলাম নামে ওই দিনমজুর বাদী হয়ে বিএনপি নেতা কামরুল সরদারসহ ৫ জনকে আসামি করে দক্ষিণ আইচা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 

ভুক্তভোগী তাজুল ইসলাম জানান, তাঁর মেয়ে মিতু বেগম চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। ওই কারখানায় ফারজানা নামের এক তরুণীর সঙ্গে তাঁর মেয়ের সখ্য হয় এবং তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ককে অটুট রাখতে মিতু তার বান্ধবীকে তার ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। পরে উভয় পরিবার তাদের বিয়ের জন্য সম্মতি দেয়। গত ২৬ মার্চ তার মেয়ে বান্ধবীকে নিয়ে বাড়িতে বেড়াতে আসে। এতেই বিপত্তি ঘটে। বিএনপি নেতা কামরুল সরদার ও তাঁর সহযোগী যুবদলের সদস্য মনির সরদার, রিপন, ইসলাম হাওলাদার, নিজাম হাওলাদার, আলামিনসহ কয়েকজন তাঁর বাড়িতে হানা দেন। তারা তাঁর মেয়ের বান্ধবীকে বাড়িতে রাখার কারণ জানতে চান। হবু পুত্রবধূকে বাড়িতে রাখার অপরাধে কামরুল সরদার ও তাঁর সহযোগীরা তাঁর কাছে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। তাদের টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাঁকে মারধর করা হয়। পরে তিনি বাধ্য হয়ে তাদের হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দেন। এ ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে তিনি হবু পুত্রবধূকে এক প্রতিবেশীর আশ্রয়ে রাখেন। ওই ঘটনার দুই দিন পর তাঁর মেয়ের বান্ধবীর সঙ্গে ছেলে রাকিবের বিয়ে সম্পন্ন হয়। এতেও থেমে যায়নি ওই চক্রটি। তাদের দাবি করা বাকি টাকার জন্য প্রায় সময় হুমকিধমকি দিয়ে আসছিলেন। বৃহস্পতিবার ফের ওই চক্র তাঁর বাড়িতে হানা দিয়ে ৫ হাজার টাকা দাবি করে। তিনি ওই টাকা দিতে অপারগতা জানালে তারা একদিনের মধ্যে তাঁর পরিবারকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলেন। অন্যথায় ঘর ভেঙে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। তাদের হুমকিতে তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। 

অভিযোগ অস্বীকার করে কামরুল সরদার বলেন, চরফ্যাসনে বিএনপির রাজনীতি দুই ভাগে বিভক্ত। একটি পক্ষ দিনমজুর তাজুলকে ব্যবহার করে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। 

অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে দক্ষিণ আইচা থানার ওসি এরশাদুল হক ভুইয়া জানান, অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ র পর ব র দ নমজ র ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ