টাকায় মেলে ভালো জায়গা, না দিলে হারিয়ে যায়
Published: 11th, April 2025 GMT
মানুষের শেষ ঠিকানা কবর। সেখানেও চলছে বাণিজ্য। অতিরিক্ত টাকা ছাড়া ভালো জায়গায় মিলে না কবর, জোটে না ভালো বাঁশ। আবার কবর দেওয়ার পরে মাসে মাসে টাকা না দিলে হারিয়ে যায় কবর। রাজধানীর আজিমপুর, খিলগাঁও এবং জুরাইন কবরস্থানে এভাবেই চলছে কবর বাণিজ্য।
তিনটি কবরস্থানই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অধীন। একটি মরদেহ কবরস্থানে আসার পর নিবন্ধন ফি হিসেবে করপোরেশনকে দিতে হয় এক হাজার টাকা। বাকি কাজের জন্য প্রতিটি কবরস্থান ইজারা দেওয়া আছে তৃতীয় পক্ষকে।
খিলগাঁও কবরস্থানে একটি বড় ও মাঝারি আকারের কবর খননের খরচ মাত্র দুই টাকা। আর ছোট কবর খননের খরচ তিন টাকা। আজিমপুর কবরস্থানে একই আয়তনের বড় কবর খননের খরচ ১১ টাকা, মাঝারি কবর খননে পাঁচ টাকা ও ছোট কবর খননের খরচ সাত টাকা।
গত বছরের নভেম্বরে ডিএসসিসি কবরস্থানের বাঁশ, চাটাই সরবরাহ আর কবর খনন কাজের উন্মুক্ত দরপত্রে এ রকম আজগুবি মূল্য দিয়ে ইজারা বাগিয়ে নেয় ঠিকাদার। তবে এই মূল্যে করপোরেশনের কাছ থেকে ইজারা নিলেও বিপত্তি বাঁধে লাশ দাফনে।
২০২৪–২৫ অর্থবছরে করপোরেশনের কাছ থেকে আজিমপুর কবরস্থান মেসার্স সুজন ভূঁইয়া অ্যান্ড ট্রেডার্স, খিলগাঁও কবরস্থান সুমন এন্টারপ্রাইজ ও জুরাইনে ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ গত নভেম্বরে নতুন করে ইজারা নেন। তিনটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইজারা নিলেও তিনটিই পরিচালনা করেন সুমন ইসলাম নিজেই।
আজিমপুর ও খিলগাঁও কবরস্থানের ইজারার কার্যাদেশে দেখা যায়, আজিমপুর কবরস্থানে মেসার্স সুজন ভূঁইয়া উন্মুক্ত দরপত্রে বড় কবরের জন্য তিন ফুট ছয় ইঞ্চি বরাক বাঁশের দাম নির্ধারণ করেন ১৭.
খিলগাঁও কবরস্থানে একই আয়তনের বড় কবরের বাঁশ ১৬.৮০ টাকা, মাঝারি কবরের বাঁশ ৬.২০ টাকা, ছোট কবরের বাঁশ ৮.৫০ টাকা। আর একই আয়তনের চাটাইয়ের দাম ১৩ টাকা।
জুরাইন কবরস্থানেও কবর খনন, বাঁশ আর চাটাইয়ের দাম প্রায় একই। করপোরেশন আজিমপুর কবরস্থানে বড় কবর খননে ৩০টি বাঁশ আর ১২টি চাটাইয়ের হিসাবে ৬৯২ টাকা রাখা হয়। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে মেসার্স মায়া ট্রেডার্স এই খরচ রাখত ৮৬৫ টাকা।
সূত্রে জানা যায়, আজিমপুরে গোরখোদক আছে ৮৪ জন, জুরাইনে ২৪ জন আর খিলগাঁওয়ে ৬ জন। তারাই দুই শিফটে কবর খনন আর লাশ দাফনের কাজ করেন। এক শিফট সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা, অন্যটি দুপুর ২টা থেকে রাত ১১টা।
সিটি করপোরেশনের সঙ্গে ইজারাদারের চুক্তি অনুযায়ী, কবর খনন, বাঁশ আর চাটাইয়ের মূল্য কবরস্থানে টানানো থাকবে। কোনো অবস্থায় নির্ধারিত দর আর মালামাল কম-বেশি করলে ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল হবে। কিন্তু ইজারাদারের এই শর্ত হরহামেশাই ভঙ্গ করছেন তাদের নিয়োজিত গোরখোদকরা।
ঠিকাদার কর্তৃক তাদের কাজের মূল্য পরিশোধ না করায় কবরের জায়গা নির্ধারণ, খনন আর পরিচর্যার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। সাধারণত অস্থায়ী কবর ১৮ মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ রাখা হয়। কিন্তু নিয়মিত গোড়খোদকদের টাকা দিলে এর বেশি সময়ও রাখা যায়। আর টাকা না দিলে এর চেয়ে কম সময়েও হারিয়ে যায় কবর। অভিযোগ রয়েছে, গোরখোদকদের থেকেও একটি অংশ রাখেন ইজারাদার।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর সরেজমিনে আজিমপুর কবরস্থান ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসেছেন কবর জিয়ারত করতে। নীরবে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ দোয়া-দরুদ পড়ছেন, কেউ দুই হাত তুলে মোনাজাত করছেন। আবার কেউ প্রিয়জনের কবরের পাশে বসে কান্নাকাটি করছেন। অন্যদিকে ছয়–সাত জায়গায় মরদেহ দাফন করা হচ্ছে। আবার গোড়খোদকরা কয়েকটি নতুন কবর খুঁড়ছেন।
এদিন পুরান ঢাকার কোতোয়ালি থানা এলাকার রেজাউল করিমের লাশ দাফন করতে আসেন তার স্বজনরা। করপোরেশনের রেজিস্ট্রেশন ফি আর ইজারাদারের কবর খনন, বাঁশ আর চাটাইয়ের ফি পরিশোধ করার পরেও তাদের আরও অতিরিক্ত ৪–৫ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে।
রেজাউল করিমের স্বজন আবুল বাসার নান্টু বলেন, ইজারাদারের ফি পরিশোধ করে কবর দিতে হলে কবরস্থানের শেষ মাথায় কবর দিতে হয়। আজ জায়গা পছন্দ করে কবর দিতে চাইলে গোরখোদকরা ৪ হাজার টাকা দাবি করেন। আবার কবরে ঘাস লাগানো আর পরিচর্যার নামে আরও খরচ তো আছেই।
লালবাগের শের আলীর স্বজন মাসুদ মিয়া বলেন, সরকারি খরচে সরকারি কাজই মিলে। অতিরিক্ত টাকা ছাড়া সামনের দিকে ফাঁকা জায়গা থাকলেও সেখানে কবর দেওয়ার সুযোগ নেই। কবরের জায়গা মিলে শেষ মাথায়। সেখানে আবার সময় মতো গোরখোদকদের পাবেন না। আবার যে বাঁশ দেবে সেটা কয়েকদিন পরেই মাটির ভারে ভেঙে যাবে। আবার কবর দেওয়ার পরে মাসে মাসে টাকা না দিলে কিছুদিন পর এসে কবরই খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আব্দুর রহমান নামের হাতিরপুল থেকে আসা এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, প্রায় শুক্রবার আসি। এখানে আমার স্ত্রী ও আম্মার কবর রয়েছে। মাঝে মধ্যেই কবরস্থানের কর্মীরা আমাকে কল দিয়ে পরিষ্কার, সাইনবোর্ড, গাছ লাগানোর কথা বলে টাকা চান। আমি পাঠিয়ে দেই। কিন্তু কতদিন এভাবে টাকা দিয়ে কুলাতে পারবো জানি না। শেষ পর্যন্ত কী প্রিয়জনের শেষ চিহ্নটুকু চোখের সামনে শেষ হয়ে যাবে- এ শঙ্কাও আছে।
এদিন আজিমপুর কবরস্থানে কান্নাভেজা চোখে স্ত্রীর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে জিয়ারত করছিলেন বৃদ্ধ আতিয়ার মোল্লা। তিনি হাজারীবাগের বাসা থেকে প্রতি শুক্রবার স্ত্রীর কবরের কাছে আসেন। জানালেন, স্ত্রীর কবরটি টিকিয়ে রাখতে তাকে টাকা গুনতে হয় মাসে। তবে এটি সরকার নির্ধারিত কোনো টাকা নয়। ওই কবরস্থান ঘিরে গড়ে ওঠা বিশেষ চক্রকে দিতে হয়। নইলে কবর আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
আতিয়ার মোল্লা এই কবরস্থান থেকে তার এক স্বজনের কবরের অস্তিত্ব মুছে যাওয়ার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, পরিবারের আরও এক সদস্যের কবর এখানে দেওয়া হয়েছিল। যতদিন টাকা দিতে পেরেছি, ততদিন কবরটি ছিল। অর্থকষ্টে টাকা দিতে না পারার কয়েক মাস পর এসে দেখি কবরটি আর নেই। সেখানে আরেক মৃত ব্যক্তির নাম লেখা সাইনবোর্ড লাগানো।
তিনি বলেন, ওই কবর হারিয়ে যাওয়ার পর যত কষ্টই হোক স্ত্রীর কবরটি মাসে মাসে টাকা দিয়ে টিকিয়ে রেখেছি। টাকা না দিলে কবরে পানি দেয় না, ঘাস বড় হলেও কাটে না।
আজিমপুর কবরস্থানে এক বছর ধরে গোরখোদকের কাজ করেন রাকিব মিয়া। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে ইজারাদারের চুক্তি অনুযায়ী কবর খননের নির্দিষ্ট টাকা তার পাওয়ার কথা। গত এক বছরে এই খাত কোনো টাকা পাননি বলে জানিয়েছেন রাকিব। তিনি বলেন, লাশ দাফনের পরে স্বজনদের কাছ থেকে বকশিশ আর কবর দেখাশোনা করে সালামি বাবদ যা পাই এটাই আমার মূল উপার্জন।
রাকিব আরও বলেন, সরকারি কবর আগেই খোঁড়া থাকে। সেখানে খুশি হয়ে স্বজনরা যা দেয় তাই নেই। আর স্বজনরা যদি কবরস্থানের জায়গা পছন্দ করে তবে সেখানে ৪–৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়।
আজিমপুর কবরস্থানের মোহরার মাওলানা হাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, এই কবরস্থানে প্রতি মাসে আটশ’ থেকে এক হাজার লাশ দাফন করা হয়। গড়ে প্রতিদিন ৩০টা। সব সময়ের জন্য ১০–১৫টা কবর প্রস্তুত থাকে। কিন্তু এর বাহিরেও গোড়খোদকরা আমাদের অগোচরে স্বজনদের পছন্দে কবর খনন করেন। নিয়ম অনুযায়ী তাদের কবর খননের পারিশ্রমিক ঠিকাদারের দেওয়ার কথা। কিন্তু ইজারার প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহণে কবর খননের পারিশ্রমিক এত কম, তাই তারা স্বজনদের কাছ থেকে চেয়ে বকশিশ নেন।
এ দৃশ্য শুধু আজিমপুর কবরস্থানের নয় খিলগাঁও কবরস্থানেরও একই অবস্থা। খিলগাঁও কবরস্থানে চার বছর ধরে গোরখোদকের কাজ করেন উজ্জ্বল মিয়া। তার আরেক ভাইসহ মোট ছয়জন এই কবরস্থানে গোরখোদকের কাজ করেন।
সমকালকে তিনি বলেন, কবর খননের জন্য ঠিকাদার বা সিটি করপোরেশন কোনো টাকা দেয় না। মৃতের স্বজনরাই খুশি হয়ে টাকা দেয়। এছাড়া কবরে ঘাস, ফুলের গাছ লাগানো আর পানি দেওয়ার জন্য স্বজনরা বাড়তি টাকা দেন। সেটি দিয়েই আমরা চলি।
এসব বিষয়ে সমকালকে মোবাইল ফোনে ইজারাদার সুমন ইসলাম বলেন, ‘আমি আজিমপুর ও খিলগাঁও দুইটা কবরস্থানের ইজারা নিয়েছি। জুরাইন কবরস্থানে আমার পরিচিত আরেকজন।’
কবর খননে খরচ দুই টাকা আর ১১টাকা এবং গোড়খোদকদের অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার প্রসঙ্গে চাঁদাবাজির প্রসঙ্গে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
২০২৩–২৪ অর্থবছরে তিনটি কবরস্থানের ইজারাদার মায়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুল মালেক এই অর্থবছরেও উন্মুক্ত ইজারায় অংশ নেন। আব্দুল মালেক জানান, আগের বছরের দেওয়া মূল্যেই তিনি অংশ নিলেও বর্তমান ইজারাদার আরও কম মূল্য দেওয়ায় তিনি কাজটি পাননি।
গোরখোদকদের কবর খননের মূল্য কম দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের দিনে ৫০–১০০ টাকা দেওয়া হয়। আর তারা মৃত ব্যক্তির স্বজনদের কাছ থেকে বকশিশ পান। তাই ইজারা নিতে কম মূল্য দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা মোবাশ্বের হাসান সমকালকে বলেন, সর্বনিম্ন মূল্য ধরেই ইজারা দেওয়া হয়। এই মূল্যের মধ্যেই কবর খনন, বাঁশ আর চাটাইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। কবরস্থানে এর বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়ে সম্প্রতি কয়েকটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এর আলোকে করপোরেশন আর মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কবর ড এনস স স ত র র কবর ও কবরস থ ন কবরস থ ন র ই কবরস থ ন র ক জ কর ন ইজ র দ র র স বজনদ র র কবর র স বজনর র জন য জ র ইন র ইজ র ই কবর ও কবর দকদ র য় কবর সরক র ন কবর ড় কবর কবর দ
এছাড়াও পড়ুন:
দুই বন্ধু ও দুটি স্বপ্নের বিদায়
উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর অ্যাভিনিউতে বিজিএমইএ ভবন। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিবের জানাজায় শোকাবহ পরিবেশ। প্রিয় মানুষকে চিরবিদায় জানাতে এসেছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বন্ধু, পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজন। শোক ও অশ্রুতে তারা রাকিবকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন। রাকিবের অসমাপ্ত কাজ ও স্বপ্ন এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন সহকর্মীরা।
৯ জুন কানাডায় একটি লেকে ভ্রমণের সময় নৌকাডুবে মারা যান আবদুল্লাহ হিল রাকিব ও তাঁর বন্ধু বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন মো. সাইফুজ্জামান। কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সাইফুজ্জামান ঈদের ছুটি কাটাতে স্ত্রী ও আরেক মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বন্ধু ব্যবসায়ী রাকিব ও তাঁর ছেলের সঙ্গে একটি লেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন। অন্টারিও প্রদেশের স্টারজিয়ন লেকে ক্যানুতে (সরু লম্বা ছোট্ট নৌকা) চড়ে ভ্রমণে বের হন। নৌকাটি উল্টে গেলে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান দু’জন। বিদেশের মাটিতে একসঙ্গে দুই বন্ধুর মৃত্যু, একই ফ্লাইটে ফেরা, দেশে ফিরে একই কবরস্থানে শেষ শয্যা!
অশ্রুসজল চোখে রাকিবের কানাডাপ্রবাসী মেয়ে লামিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘বাবা স্বপ্ন দেখতেন, দেখাতেন। তিনি যেসব স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন, যেসব কাজ রেখে গেছেন, আমরা যেন সুন্দরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে পারি। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কানাডায় গিয়েছিলেন বাবা।’
রাকিব ও সাইফুজ্জামান ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাদের মরদেহ বিমানের একই ফ্লাইটে শুক্রবার রাতে ঢাকায় আনা হয়। জানাজা শেষে ঢাকায় বিমানবাহিনীর কবরস্থানে দু’জনকে সমাহিত করা হয়। তাদের সহকর্মী ও বন্ধুরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে অকালে দুটি স্বপ্ন বিদায় নিল।
রাকিবের সহকর্মীরা বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানিকে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখতেন রাকিব। তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন বলে জানান।
উত্তরায় জানাজার আগে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আবদুল্লাহ হিল রাকিবের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছি। সব সময়ই দেখেছি, তিনি নিজের পরিবার, বন্ধু, ব্যবসা ও বিজিএমইএকে সমান অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তৈরি পোশাকশিল্প খাতের যে কোনো সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি সামনে চলে যেতেন। রাকিবের দর্শন ছিল– সফলতার মাত্রা নেই। তবে একজন ব্যক্তি কতটা সফল, সেটি তাঁর কর্মযজ্ঞ দেখলে বোঝা যায়।’
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক বলেন, রাকিব উজ্জ্বল প্রদীপ। স্বপ্ন ছিল অনেক। ঝোড়ো হাওয়ায় সেই প্রদীপ নিভে গেছে। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন।
রাকিবের জন্য সবার কাছে দোয়া চান বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান। স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন রাকিবের বড় ভাই আবদুল্লাহ হিল নকীব।
ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামানের সহকর্মীরা জানান, শুক্রবার তাঁর মরদেহ কানাডা থেকে ঢাকায় আনার সময় তাঁর সঙ্গে স্ত্রী, দুই মেয়ে, বোন এবং ভগ্নিপতি ছিলেন। মরদেহ পৌঁছার পর উপস্থিত পাইলটরা সহকর্মীর মরদেহে স্যালুট দেন। এর পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে রাখা হয়। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর বনানীর ডিওএইচএসের বাসায়। বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশারের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হয়। সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারীসহ পাইলট, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এতে অংশ নেন। পরে জোহরের নামাজ শেষে ডিওএইচএস মাঠে একসঙ্গে ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান ও রাকিবের জানাজা হয়। সাইফুজ্জামানকে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। একই কবরস্থানে দাফন করা হয় রাকিবকে। তাঁর বাবা বিমানবাহিনীর সদস্য ছিলেন।