আনন্দে সোলেমানের মুখ ঝলমল করছে। একটি বড় ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে রতনপুর বৈশাখী মেলার মাঠে। চারদিকে বাজছে মাদল। বাঁশির শব্দ ঘুমন্ত রতনপুরকে জাগিয়ে তুলেছে। গত বছরের শেষে সোলেমান এ গ্রামের খোরশেদ মিয়ার বাড়িতে কাজ নিয়েছে। বয়স পনেরো বা ষোলো। মালিকের সঙ্গে সোলেমান বৈশাখী মেলায় এসেছে। আগ্রহ নিয়ে বৈশাখী মেলার মাটির খেলনা দেখছে সোলেমান। মনিবের ভারী কণ্ঠ শুনতে পেলো সোলেমান। তিনি বললেন, ‘তোর এতো কষ্ট করা লাগতো না। এই চিড়া-বাতাসা নিয়া বাড়ি যা।’
সোলেমান কিছু বলার আগে খোরশেদ মিয়া আরো কিছু ব্যাগ চাপিয়ে দিলেন। সোলেমান দ্রুত হাঁটতে গিয়ে মাঝরাস্তাতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। চিড়া-বাতাসার ব্যাগটা আরও ভারী হওয়ায় একটি বট গাছের নিচে বসে। চিড়া-বাতাসার ব্যাগ খুলে গপাগপ গিলতে থাকে। বাতাসা যেন বৈশাখী মেলার সনাতনের বানানো রসগোল্লা। অনায়াসে সোলেমান সাবাড় করে দেয় কেজিখানেক চিড়া-বাতাসা। তার খাওয়া যেন থামছেই না। খেয়ে যাচ্ছে সোলেমান। বটের ছায়ায় চিড়া-বাতাসা খেতে খেতে কখন যেন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে খেয়াল নেই তার! বাড়ি যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেই প্রচণ্ড পানির পিপাসা পায়। মোল্লাবাড়ির চাপকল থেকে পানি পান করে। ধীরে ধীরে ফুলছে সোলেমানের পেট। পিঁপড়ার চেয়েও ধীরে হাঁটছে সে। তার মনে হয়, এখনই ফেটে যাবে তার পেট। হাঁটতে কষ্ট হয় খুব। তাল হারিয়ে মাটিতে পড়ে যায়।
‘মাঝ রাস্তায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন ক্যান?’ বটতলায় কানামাছি খেলতে এসে পড়ে থাকা সোলেমানকে প্রশ্ন করে ছয় বছরের এক শিশু। শিশুটির পেছনে বড় একটি দল। একজন বললো, ‘মনে হয় ঘুমায়?’ আরেকজন বললো, ‘একে জ্বিন এখানে ফেলে গেছে।’ ন্যাড়া মাথার একজন বললো, ‘মার্ডার, মার্ডার।’ শিশুদের দলটি দৌড়ে নিজ নিজ বাড়িতে খবর দিতে যায়। তাদের চেহারায় উত্তেজনা।
খোরশেদ মিয়া বৈশাখী মেলা থেকে বাড়ি ফিরেছেন। খবর পেয়েছেন এখনো বাড়ি ফেরেনি সোলেমান। তিনি চিন্তিত মুখে বারান্দায় পায়চারি করছেন। বাড়ির সবাই চিন্তিত। সোলেমানের খবর গাঁয়ে ছড়িয়ে পড়লে গাঁয়ের দুর্নাম হবে। খোরশেদ মিয়া ভাবছেন সোলেমান চিড়া-বাতাসার লোভে পালিয়ে যায়নি তো? ছেলেটাকে একা পাঠানো ঠিক হয়নি। বৈশাখী মেলায় সোলেমানকে আরও কিছু সময় থাকতে দিলে এমনটা হতো না। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে পথ চলেন তিনি। তবে ভ্রু কোঁচকানো।
বটতলায় সোলেমানের পাশে গ্রামবাসীর জটলা। গ্রামের পণ্ডিতরাও উপস্থিত। সবাই তাকিয়ে আছে সোলেমানের দিকে। পিঁপড়াদের উপস্থিতি লক্ষণীয়। গ্রামের মেম্বার বললেন, ‘আহারে কম বয়সে মারা গেলো।’ ইমাম সাহেব বললেন, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’ খোরশেদ মিয়া হঠাৎ গ্রামবাসীর জটলা দেখতে পেলেন। ভিড় ঠেলে সামনে এলেন। বটতলায় পড়ে থাকা সোলেমানকে দেখে চিৎকার করে ওঠেন খোরশেদ মিয়া। মালিকের চিৎকারে সোলেমান ধীরে ধীরে চোখ খোলে। সামনে খোরশেদ মিয়া ও গ্রামবাসীকে দেখে সোলেমান অপ্রস্তুত হয়। সোলেমান খোরশেদ মিয়াকে বলে, ‘বিশ্বাস করেন চাচা, বেশি খিদা লাগছিলো; আর হবে না। মাফ কইরা দ্যান।’ খোরশেদ মিয়া অবাক চোখে তাকান। পিঁপড়ার দল বাতাসার প্যাকেট থেকে দ্রুত নেমে যেতে থাকে।
n বয়স : ২+৩+৩+৪ বছর; সপ্তম শ্রেণি, মানিকগঞ্জ সুরেন্দ্র কুমার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব শ খ উৎসব
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।