রাষ্ট্রীয় খরচে কোনো অতিথিকে হজে পাঠানো হবে না: ধর্ম উপদেষ্টা
Published: 12th, April 2025 GMT
এ বছর রাষ্ট্রীয় খরচে কোনো অতিথিকে হজে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। আজ শনিবার বেলা দেড়টার দিকে চট্টগ্রাম নগরে এক মতিবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এই তথ্য জানান।
এবারের হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে আমরা এ বছর আমার মন্ত্রণালয়ের বাইরে (ধর্ম মন্ত্রণালয়) কোনো অতিথিকে রাষ্ট্রীয় খরচে হজে পাঠাব না। এটি আমাদের প্রধান উপদেষ্টার অভিপ্রায় আছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চাপ সত্ত্বেও আমি এ পর্যন্ত টিকে আছি। আমার মন্ত্রণালয়ের সবাইকেও নেব না। গত বছর যাঁরা হজে গেছেন, তাঁরা এ বছর যেতে পারবেন না।’
‘বাল্যবিবাহ নিরোধকল্পে কনের স্থায়ী ঠিকানায় কাজির মাধ্যমে বিবাহ, তালাক নিবন্ধন আইন প্রণয়ন এবং বাংলাদেশ সরকারের সংস্কার কমিশন কর্তৃক বিবাহ নিবন্ধন ফি তিন ভাগে ভাগ করার সুপারিশের’ বিষয়ে নগরের এলজিইডি মিলনায়তনে ওই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। আয়োজক ছিল বাংলাদেশ মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রার ফোরাম। এতে চট্টগ্রাম, তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজার থেকে কাজিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক প্রশস্তকরণ, ঐক্য, যৌতুকপ্রথা, অর্থনীতি, ভাঙচুর, হামলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন ধর্ম উপদেষ্টা। পাশাপাশি হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার মন্ত্রণালয়ে অনেক লোক। ৬৪ জেলায় আমাদের ইমাম প্রশিক্ষণে ইসলামি ফাউন্ডেশনের অফিস আছে। তারপর আমাদের মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা কার্যক্রম আছে। আমাদের ৮টি বিভাগে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি আছে। আমরা সবাইকে নিতে পারব না। ২০২৫ সালে যাঁদের নেব, ২০২৬ সালে আবার তাঁদের হজে নেব না।’
হজের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলছে জানিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এবার হজ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে আমাদের ৭৫৩টি এজেন্সি হাজি সংগ্রহ করেছে। যদিও প্রতিটি এজেন্সিকে ২ হাজার হজ যাত্রী সংগ্রহ করতে হবে বলে সৌদি সরকারের একটি অর্ডার ছিল। আমি সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহবিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে এই সংখ্যা ১ হাজারে এনেছি।’
হজ ব্যবস্থাপনায় কোনো বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা নেই বলে উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছি না। তবে চ্যালেঞ্জও থাকে। শঙ্কা থাকে। কিন্তু এটিকে আমরা বিশৃঙ্খলা বলব না। আমরা সুন্দরভাবে এগোচ্ছি।’
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেন হবে
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, সম্প্রতি চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে গেল। এই সড়ক ছয় লেন করার দাবিতে নানা কথা হচ্ছে। মানববন্ধনও হয়েছে। এই সরকারের আমলেই সড়কটি ছয় লেনে প্রশস্ত করার কাজ শুরু হবে। জাইকা চট্টগ্রামে মইজ্জারটেক থেকে ৯৪ কিলোমিটার পর্যন্ত একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রাম যুগ যুগ ধরে অবহেলিত। দুনিয়ার সব সড়ক বড় হয়। কিন্তু এ রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ছোট রয়ে গেছে। অথচ কক্সবাজার একটা পর্যটন শহর।
‘বিভাজন নয়, চাই ঐক্য’
দেশে কোনো বিভাজন নয়, দরকার ঐক্য—এমন মন্তব্য করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘এ দেশ আমাদের সবার। আমাদের অন্তরের ভেতরে একে অন্যের জন্য মহব্বত তৈরি করতে হবে। ছোট মন দিয়ে বড় কাজ হয় না। মন বড় করতে হবে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলমান, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী; সবাই এ দেশের নাগরিক।’
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘যার যার ধর্ম পালন করা একটি সাংবিধানিক অধিকার। বাগানের ভেতর নানা ধরনের ফুল থাকে। জবা, চামেলি, চম্পা, গোলাপ; এই যে নানা বর্ণের, নানা রঙের, নানা সুবাসের ফুল বাগানের সৌন্দর্য বাড়ায়। আমি সুযোগ পেয়ে অন্য ধর্মের মানুষের যদি গলা টিপে ধরি, এটা খুব অন্যায়।’
ভাঙচুরের সমালোচনা করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি কয়েক দিন আগে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে গিয়েছিলাম। সেখানে লাখ লাখ মুসলমান রয়েছে। তাঁদের দোকানপাট আছে। এখানে দোকান ভাঙচুর করবেন, ইংল্যান্ডে আপনার দোকান কি ভাঙচুর হতে পারে না। আইন কখনো আমরা হাতে নেব না। আমি প্রতিবাদ করতে পারি। লিখতে পারি। বলতে পারি। মানববন্ধন করতে পারি। কিন্তু কোথাও ভাঙচুর ও হামলা করা যাবে না।’
‘রিজার্ভে হাত দিই নাই, রেমিট্যান্স বাড়ছে’
ধর্ম উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘দেশকে লুট করে সমস্ত সম্পদ যারা বিদেশে পাচার করে, তারা দেশপ্রেমিক হতে পারে না। দায়িত্ব নেওয়ার পর গত আট মাসে আমরা রিজার্ভে হাত দিই নাই। রেমিট্যান্স বাড়ছে। মানুষের আস্থাও বেড়েছে। আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়। এগুলো আমরা মার্কেট থেকে সামাল দিই। আগামী দিনে যে সরকার আসবে, তাদের জন্য আমরা রিজার্ভ রেখে যাচ্ছি। একটা টেকসই অর্থনীতি আমরা রেখে যাচ্ছি। এ দেশ আমাদের সবার।’
বিয়েতে কনের বয়স ১৬ চান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রার ফোরামের সভাপতি কাজি সৈয়দ মুহাম্মদ আবু ছাঈদ। এতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক বলেন, ‘বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েদের বয়স ১৮ এবং ছেলেদের ২১। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আসলে আমাদের দেশের ওয়েদার বলেন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা বলেন; গ্রোথ আসলে বয়সের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে নির্ভর করে না। বিগত সময়ে একটা প্রস্তাবও এসেছিল যে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৬ ও ছেলেদের ১৮ করা। আমাদের ধর্ম উপদেষ্টা এখানে আছেন। আমি মনে করি, সরকারের উচ্চ পর্যায়েও যদি এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়, তবে হয়তো এ জায়গা থেকে একটা সুযোগ তৈরি হবে। কেউ যদি বিয়ে করতে চায়, সে বিয়ে করবে। কেউ যদি না চায়, তাকে জোর করে বিয়ে করানো যাবে না।’
সৈয়দ মাহবুবুল হক বলেন, ‘যে বিয়ে করতে আগ্রহী, তার বয়সের বারটা আমি মনে করি আমার জায়গা থেকে আরেকটু কমিয়ে দিলে বিষয়টি সহজ হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র মন ত র আম দ র র বয়স
এছাড়াও পড়ুন:
সাগর-রুনিসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার ও ২১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
সাগর-রুনিসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার, নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন, দশম ওয়েজ বোর্ড গঠন, চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের পুনর্বহাল এবং পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ২১ দফা দাবিতে শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১ নভেম্বর) সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিক ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সাংবাদিক ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জের সভাপতি আবু সাউদ মাসুদের সভাপতিত্বে এবং একেএম মাহফুজুর রহমানের সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, নিউ নেশন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক এ আর ফররুখ আহমেদ খসরু, ফতুল্লা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মো: মাসুম, সিনিয়র সাংবাদিক মনির হোসেন, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের রূপগঞ্জ প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম হানিফ, দৈনিক বাংলাদেশ বুলেটিন পত্রিকার সাংবাদিক উজ্জল হোসেন মাসুম, দৈনিক ইয়াদ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার মেহবুব মিয়া, দৈনিক পূর্বাভাস পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি, দৈনিক দেশ পত্রিকার সাংবাদিক মোখলেসুর রহমান তোতাসহ প্রমূখ।
এসময় বক্তারা বলেন, ‘নো ওয়েজ বোর্ড, নো মিডিয়া’ নীতি কার্য্যকর, সাংবাদিকদের বেতন সর্বনিম্ন ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণ, প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ায় নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন ও দশম ওয়েজ বোর্ড গঠন, সাংবাদিক সুরক্ষা নীতিমালা প্রনয়ন, সাংবাদিকদের সাপ্তাহিক ছুটি ২দিন নির্ধারণ, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার, গনমাধ্যমের স্বাধীনতা বিরোধী সকল কালাকানুন বাতিল, আইন অনুযায়ী সাংবাদিকদের ন্যায্যা পাওনা আদায়ের জন্য পৃথক শ্রম আদালত স্থাপন সহ ২১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ আমরা মানববন্ধন করছি।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের আহ্বান অনতিবিলম্ভে আমাদের এসব দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি এম আর কালাম, নাহিদ আজাদ, বাংলাদেশ নিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ইমতিয়াজ আহমেদ, নিউজ টুয়েন্টিফোর টেলিভিশনের নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি শরিফ সুমন, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকার নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি মোশতাক আহমেদ, বাংলাদেশের খবর পত্রিকার নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি আল আমিন, দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি সাব্বির হোসেন, মানব জমিনের ফতুল্লা প্রতিনিধি আবু সাঈদ পাটুয়ারী রাসেল, মুসলিম টাইমসের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি সাইফুল্লাহ খালিদ রাসেল, চ্যানেল এস এর সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি সাদ্দাম হোসেন মুল্লা, দৈনিক সংগ্রামের সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি ইখতিয়ার রাহয়ান, সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম আরজু, এস এম জহিরুল ইসলাম বিদ্যুৎ, সম্রাট প্রমুখ।