কুমিল্লায় সাড়ে ৩৪ হাজার টাকা নিয়ে ছয় হাজার টাকার ইনজেকশন, হাসপাতালের কনসালটেশন সেবা স্থগিত
Published: 14th, April 2025 GMT
কুমিল্লা নগরের বিশেষায়িত একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক রোগীকে ব্যবস্থাপত্রে নির্ধারিত ইনজেকশনের পরিবর্তে অন্য ইনজেকশন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, বিদেশি ইনজেকশনের কথা বলে ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে রোগীকে ৬ হাজার টাকা মূল্যের দেশি কোম্পানির ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে।
নগরের ঝাউতলা এলাকায় অবস্থিত মুন হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালটির কনসালটেশন বিভাগের সব কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ঘটনার তদন্তের তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) আবু হোসেন মো.
ভুক্তভোগী ওই রোগীর নাম মনোয়ারা বেগম। তিনি জেলার বরুড়া উপজেলার বাতাইছড়ি জালগাঁও গ্রামের মোজাফফর হোসেনের স্ত্রী। ১০ এপ্রিল মুন হাসপাতালে চিকিৎসক আশরাফ উল মতিনের প্রাইভেট চেম্বারে চিকিৎসা নিতে আসেন। আশরাফ উল মতিন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি মুন হাসপাতালে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের চিঠিতে বলা হয়েছে, মোহাম্মদ আশরাফুল মতিনের চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ১০ এপ্রিল মনোয়ারা বেগম নামের রোগীকে ইনজেকশন অ্যাকলাস্টা (প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নোভার্টিস, সুইজারল্যান্ড) প্রদান করার কথা বলা হয়। যার বাজারমূল্য ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা বলে দাবি করা হয়। কিন্তু জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ইনজেকশন অ্যাকলাস্টা পরিবর্তন করে জোলেনিক (প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা বাংলাদেশ), যার বাজারমূল্য ছয় হাজার টাকা প্রদান করার অভিযোগ পাওয়া যায়। বিষয়টি আলোচনায় এলে এ বিষয়ে আশরাফ উল মতিনের একটি স্বাক্ষরবিহীন প্রতিবাদলিপি প্রচার হয়। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না। এমতাবস্থায় সাত কার্যদিবসের মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠনপূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরাবর প্রেরণ করার নির্দেশ প্রদান করা হলো।
ওই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা পর্যন্ত মুন হাসপাতাল লিমিটেডের কনসালটেশন সেন্টারের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। তবে হাসপাতালের আন্তবিভাগ ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কার্যক্রম চালু থাকবে। বিষয়টি সিভিল সার্জন কুমিল্লা তত্ত্বাবধান করবেন। এই আদেশ অমান্য করলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে মুন হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক আফসান আনিছ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোগীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন ওই চিকিৎসকের ব্যক্তিগত সহকারী, যিনি আমাদের হাসপাতাল কর্তৃক নিয়োগকৃত নন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে আমরা ওই চিকিৎসকের চেম্বার বন্ধ রেখেছি এবং তাঁর সহকারীকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সেটির প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত ওই চিকিৎসক চেম্বার করতে পারবেন না।’
ভুক্তভোগী রোগী মনোয়ারা বেগমের মেয়ে ফারজানা আক্তার বলেন, ‘৫ এপ্রিল ব্যবস্থাপত্রে চিকিৎসক কিছু ওষুধ লিখে দেন। এর মধ্যে অ্যাকলাস্টা ইনজেকশনের নাম লিখে দিয়ে তিনি বলেন, এটা বাইরে থেকে কিনলে ৩৮ হাজার টাকা লাগবে, কিন্তু তাঁর সহকারী বিজয় সরকারের কাছ থেকে নিলে ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা রাখবে। ১০ এপ্রিল বেলা ১১টায় মাকে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে যাই। কিছুক্ষণ পর বিজয় সরকার এসে ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে ইনজেকশন পুশ করেন। আমি ওনাকে বলি, আমাকে ইনজেকশনের বোতলটা দেন। আমি একটা ছবি নেব আমার ভাইকে পাঠানোর জন্য। ইনজেকশন দেওয়ার পরও বোতল দেখাতে গড়িমসি করেন তিনি। পরে তর্কবিতর্কের পর জোর করে আমি বোতলটি হাতে নিয়ে দেখি তিনি আমার মাকে ছয় হাজার টাকা দামের দেশি প্রতিষ্ঠানের জোলেনিক ইনজেকশন দিয়েছেন। আমরা এই প্রতারণার বিচার চাই।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইনজ কশন দ ইনজ কশন র চ ক ৎসক ব যবস থ ল মত ন সহক র আশর ফ তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন না হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা হবে: আপ বাংলাদেশ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচন ২৭ নভেম্বরেই অনুষ্ঠিত না হলে তা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশাসনের প্রতারণা বলে মন্তব্য করেছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। এ সময় পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে সংগঠনটি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
২৭ নভেম্বরই জকসু নির্বাচন চায় ছাত্রশিবির
জকসু নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ ছাত্র সংগঠনগুলোর
দাবিগুলো হলো— আসন্ন জকসু নির্বাচন ২৭ নভেম্বরেই অনুষ্ঠিত করতে হবে; নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে; নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে; সব সংগঠনকে সমান সুযোগ দিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে; অরাজনৈতিক, নিরাপদ ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য ও জবির প্রধান সংগঠক মাসুদ রানা বলেন, “আমরা যখন জকসুর দাবিতে অনশন করছিলাম, তখন প্রশাসন ২৭ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের অনশন ভাঙিয়েছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, একটি মহল নির্বাচন পেছানোর পাঁয়তারা করছে।”
তিনি বলেন, “ডিসেম্বর মাসে ভর্তি পরীক্ষা ও বিভিন্ন বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় ওই মাসে নির্বাচন অসম্ভব। তাই ২৭ নভেম্বরই জকসু নির্বাচনের উপযুক্ত সময়।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা জানতে চাই, নির্বাচন পেছানোর মধ্য দিয়ে জকসু নির্বাচন ভণ্ডুল করার কোনো প্রক্রিয়া চলছে কিনা। পুরান ঢাকাকে অস্থিতিশীল করে একটি মহল নির্বাচন পণ্ড করতে চায়। শিক্ষার্থীদের জীবনের প্রথম ভোট হবে জকসু নির্বাচন—তা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী