বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ৬৪ জেলা থেকে ২ হাজার প্রার্থী নিয়োগ দেওয়া হবে। আবেদন শেষে বিভিন্ন জেলার প্রার্থীদের শারীরিক মাপ, কাগজপত্র যাচাই, শারীরিক সহনশীলতা পরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা এবং মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা আলাদাভাবে নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি জেলায় শারীরিক মাপ, কাগজপত্র যাচাই ও শারীরিক সহনশীলতা পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি জেলার পরীক্ষা নেওয়া বাকি রয়েছে।

কনস্টেবল হিসেবে নিয়োগ পেতে চাইলে লিখিত পরীক্ষার আগে শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। গত কয়েকটি ব্যাচ থেকে কয়েক ধাপে শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এ পরীক্ষার জন্য যথাযথ প্রস্তুতির বিকল্প নেই। শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য করণীয় সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হলো।

পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা। এই ধাপে উত্তীর্ণ হতে হলে শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও প্রস্তুত থাকা জরুরি। প্রতিটি ধাপের আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ জন্য প্রয়োজন লক্ষ্যভিত্তিক অনুশীলন, সময় ধরে পরিকল্পিত প্রস্তুতি এবং দৃঢ় মনোবল। নিচে প্রতিটি ধাপের প্রস্তুতির কৌশল ও সফল হওয়ার কার্যকর পরামর্শ দেওয়া হলো:

১.

দৌড় (১.৬ কিমি বা নির্ধারিত দূরত্ব): শারীরিক পরীক্ষার সবচেয়ে মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো দৌড়। এতে সহনশীলতা, গতি ও মানসিক দৃঢ়তা একসঙ্গে পরিমাপ করা হয়।

প্রস্তুতি: প্রথমেই ভোরবেলা জগিংয়ের অভ্যাস গড়ে তুলুন। শুরুতে ধীরে দৌড়ে গতি ও দূরত্বে অভ্যস্ত হোন, এরপর ধীরে ধীরে গতি বাড়ান। দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্ব শেষ করতে চাইলে ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং (যেমন ৩০ সেকেন্ড দ্রুত দৌড়, ১ মিনিট হাঁটা) অত্যন্ত কার্যকর। সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচ দিন এই অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে।

কৌশল: দৌড়ের শুরুতেই শক্তিশালী পুশ-অফ দিতে হাত ও পায়ের সমন্বয় বজায় রাখুন। শ্বাসপ্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ খুব গুরুত্বপূর্ণ—একটু গভীরভাবে শ্বাস নিয়ে ছন্দে ছাড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দৌড়ের সময় শরীর সোজা ও ভারসাম্যপূর্ণ রাখা এবং নিজের ছন্দে মনোযোগ ধরে রাখা প্রয়োজন। দৌড়ের সময় পায়ের পাতা ব্যবহার করুন এবং গোড়ালিতে চাপ প্রয়োগে বিরত থাকুন।

সতর্কতা ও নিরাপত্তা: উপযুক্ত রানিং শু বা কেডস ব্যবহার করুন, যাতে পায়ের আরাম ও সাপোর্ট নিশ্চিত হয়। প্রতিদিন দৌড়ের আগে ও পরে হালকা ওয়ার্ম-আপ ও কুল-ডাউন ব্যায়াম করলে পেশি সচল থাকে এবং ইনজুরির ঝুঁকি কমে। দৌড়ের সময় শরীর হাইড্রেট রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুনপল্লী উন্নয়ন বোর্ডে বড় নিয়োগ, ৩৩৪ পদে আবার বিজ্ঞপ্তি২৫ মার্চ ২০২৫

২. পুশ-আপ: এই ধাপে বাহু, কাঁধ ও বুকের পেশির কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয়।

প্রস্তুতি: এই ধাপে ভালো করতে হলে প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় পুশ-আপ অনুশীলনের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। শুরুতে দিনে ১৫–২০ বার করে দুই–তিন সেট পুশ-আপ করা যেতে পারে। ধীরে ধীরে সেট ও সংখ্যা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বাহুশক্তি বাড়াতে প্ল্যাঙ্ক এবং ভিন্নধর্মী পুশ-আপ (যেমন ওয়াইড গ্রিপ বা ক্লোজ গ্রিপ) অনুশীলন করা যেতে পারে।

কৌশল: সঠিক ফর্ম বজায় রাখা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাত কাঁধের সমান চওড়া করে মাটিতে রাখুন, পিঠ সোজা এবং শরীর যেন একটি সরলরেখায় থাকে তা নিশ্চিত করুন। নিচে নামার সময় শ্বাস নিন এবং ওপরে ওঠার সময় শ্বাস ছাড়ুন—এটি শরীরের ভারসাম্য ও ছন্দ বজায় রাখতে সাহায্য করে।

সতর্কতা: ভুল পজিশনে পুশ-আপ করলে পেশিতে টান পড়তে পারে বা ইনজুরির আশঙ্কা থাকে। তাই প্রথম থেকেই আয়নার সামনে অনুশীলন করে ভঙ্গিমা ঠিক রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। অতিরিক্ত চাপ না দিয়ে ধীরে ধীরে সক্ষমতা বাড়ানোই বেশি কার্যকর।

৩. লং জাম্প (দূরত্বে লাফ): লং জাম্পে ভারসাম্য ও পায়ের পেশিশক্তি দরকার হয়।

প্রস্তুতি: লং জাম্পে ভালো করতে হলে ঊরু ও হ্যামস্ট্রিং পেশিকে শক্তিশালী করা জরুরি। এ জন্য নিয়মিত স্কোয়াট, বক্স জাম্প, স্কিপিং (দড়ি লাফ) এবং এক পায়ে লাফানোর অনুশীলন সহায়ক। দাঁড়িয়ে লাফানো এবং দৌড়ে এসে লাফ দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে বাস্তব পরীক্ষার জন্য শরীর প্রস্তুত হয়। অনুশীলনের সময় দূরত্ব মেপে লক্ষ্য ঠিক করে অনুশীলন করলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

কৌশল: দৌড়ের শেষে গতি ধরে রেখে টেক-অফের সময় শক্তিশালীভাবে পা ঠেলে লাফ দিন। হাত সামনে ছুড়ে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করুন এবং দুই পা একসঙ্গে গুটিয়ে সঠিকভাবে ল্যান্ডিং করুন। লাফের সময় সঠিক অ্যাঙ্গেল এবং শরীরের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা লং জাম্পে সফলতার মূল চাবিকাঠি।

সতর্কতা: ল্যান্ডিংয়ের সময় হাঁটু সামান্য ভাঁজ করে ফেলুন, যাতে মাটি ছোঁয়ার সময় পায়ে অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। অনুশীলনের সময় অতিরিক্ত চাপ এড়িয়ে ধাপে ধাপে উন্নতি করুন, যাতে পেশিতে টান বা আঘাতের ঝুঁকি কমে।

আরও পড়ুনজীবন বীমা করপোরেশনে বড় নিয়োগ, নেবে ৫৪০ জন১২ এপ্রিল ২০২৫

৪. হাই জাম্প (উচ্চতায় লাফ): এই ধাপে প্রার্থীর ফ্লেক্সিবিলিটি, টাইমিং ও আত্মবিশ্বাস পরীক্ষা করা হয়।

প্রস্তুতি: হাই জাম্পে সফল হতে হলে প্রথমেই পায়ের পেশি শক্তিশালী করতে হবে। এ জন্য নিয়মিত স্কোয়াট, স্ট্রেচিং ইত্যাদি অনুশীলন জরুরি। বিভিন্ন উচ্চতার বাধা পার হওয়ার অনুশীলন শরীরকে অভ্যস্ত করে তোলে।

কৌশল: দৌড়ে গতি নিয়ে আসার পর ডমিনেন্ট পা দিয়ে জোরালো পুশ দিতে হবে এবং হিপসকে টেনে শরীরকে উঁচুতে তুলতে হবে। বাধা পার হওয়ার সময় শরীরকে আড়াআড়িভাবে বাঁকাতে হয়, যাতে নিচু হয়ে বার ছোঁয়া না যায়। চোখ লক্ষ্যবস্তুতে স্থির রেখে ভারসাম্য বজায় রাখা এবং হাত-পায়ের সুষম সমন্বয় রাখা কৌশলগতভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ।

সতর্কতা: অনেকেই লাফ দেওয়ার সময় ভয় পায় বা দ্বিধাগ্রস্ত হয়, যা উচ্চতা অতিক্রমে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আত্মবিশ্বাস বজায় রাখা এবং শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ না হারানো জরুরি। হালকা স্ট্রেচিং ও ওয়ার্ম-আপ ব্যায়াম ইনজুরি থেকে রক্ষা করে।

৫. ড্র্যাগিং (ওজন টানা): এই ধাপে পিঠ, কোমর, ঊরু ও বাহুর পেশির পরীক্ষা হয়।

প্রস্তুতি: এই ধাপে ভালো করতে হলে নিয়মিত বালুর বস্তা, টায়ার বা ভারী বস্তু টেনে নিয়ে যাওয়ার অনুশীলন করতে হবে। এ ছাড়া কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস বাড়ানোও জরুরি। কারণ, টানা ধকল সহ্য করতে দীর্ঘস্থায়ী শক্তির প্রয়োজন হয়।

কৌশল: ওজন টানার সময় শরীর নিচু করে কোমর সোজা রাখতে হবে। ভার তোলার জন্য পায়ের গোড়ালি ও ঊরুর পেশি ব্যবহার করা উচিত, যেন চাপ পিঠে না পড়ে। দুই হাতে ওজনের গ্রিপ ঠিক রেখে ধাপে ধাপে ভারসাম্য রেখে এগোতে হবে। শরীরের ওজন কেন্দ্রীভূত করে রাখা এবং হাঁটার ছন্দ বজায় রাখা সফলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সতর্কতা: অনেক সময় ভুল ভঙ্গিমায় বা কোমর বাঁকা করে ওজন টানলে পিঠে ব্যথা বা ইনজুরি হতে পারে। তাই সব সময় ওজন টানার আগে হালকা ওয়ার্ম-আপ করুন এবং যথাযথ কৌশল মেনে চলুন। অতিরিক্ত ওজন দিয়ে হঠাৎ অনুশীলন না শুরু করাই উত্তম।

আরও পড়ুনপুলিশে ২০০০ কনস্টেবল নিয়োগ: লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতিতে যা করণীয় ১৫ এপ্রিল ২০২৫

৬. রোপ ক্লাইম্বিং (দড়ি বেয়ে ওঠা): রোপ ক্লাইম্বিংয়ে হাত, পিঠ ও কাঁধের পেশি এবং গ্রিপ স্ট্রেন্থ গুরুত্বপূর্ণ।

প্রস্তুতি: রোপ ক্লাইম্বিংয়ে সফলতা অর্জনের জন্য প্রথমেই গ্রিপ শক্তি বাড়াতে হবে। পুল-আপ ও চিন-আপ অনুশীলন খুব কার্যকর। শুরুর দিকে শুধু দড়িতে ঝুলে থাকার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং সময়ের সঙ্গে ধাপে ধাপে হাত ও পায়ের সমন্বয়ে ওপরে ওঠার অনুশীলন করুন। বডিওয়েট এক্সারসাইজ যেমন প্ল্যাঙ্ক বা ব্যাক এক্সটেনশনও পিঠ ও কাঁধ শক্তিশালী করে।

কৌশল: দড়ি শক্ত করে ধরে হাত দিয়ে টান দিন এবং পা দিয়ে দড়ি স্কুইজ করে ধাপে ধাপে ওপরে উঠুন। হাত ও পায়ের কার্যকর সমন্বয় রোপ ক্লাইম্বিংয়ের মূল চাবিকাঠি। শরীরকে হালকা বাঁকিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখুন এবং প্রতিটি ধাপে থামিয়ে থামিয়ে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

সতর্কতা: ভুল পায়ের অবস্থান বা গ্রিপ স্লিপ করলে দড়ি থেকে পিছলে পড়ার ঝুঁকি থাকে। তাই দড়িতে পা জড়িয়ে ধরার সঠিক কৌশল রপ্ত করা জরুরি। অনুশীলনের সময় হাত ঘেমে গেলে নিরাপত্তার জন্য ক্লাইম্বিং গ্লাভস বা চক ব্যবহার করা যেতে পারে।

বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়

শারীরিকভাবে ফিট থাকতে প্রোটিনসমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার খান, পর্যাপ্ত পানি পান করুন। আত্মবিশ্বাস বাড়ান, ভয় বা দ্বিধা পরিহার করুন ও ধৈর্য ধরুন। প্রতিদিন দুই-তিন ঘণ্টা শরীরচর্চা করুন। প্রতিটি ধাপে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারলে আপনি শুধুই একজন পরীক্ষার্থী নয়, একজন ভবিষ্যৎ পুলিশ সদস্যের যোগ্যতা অর্জন করবেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য চ ই পর ক ষ ব যবহ র কর প রস ত ত র র প রস ত ত পর ক ষ র ভ রস ম য ত র জন য ওজন ট ন র সময় শ ক র যকর হ র কর প শ আপ এই ধ প র সময ইনজ র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

পবিত্র কোরআনে ‘রুকু’ কীভাবে এল

আমরা কোরআন তিলাওয়াত করার সময় প্রতিটি সুরার শুরুতেই আয়াত সংখ্যার সঙ্গে ‘রুকু’ সংখ্যাও লেখা দেখি। পৃষ্ঠার মাঝেও রুকু লেখা থাকে। এই রুকু মানে কী? কী কাজ এই রুকুর?

এই প্রবন্ধে রুকুর ধারণা, কোরআন তিলাওয়াতের সঙ্গে এর সম্পর্ক এবং কোরআনে রুকুর সংখ্যা নিয়ে আলোচনা করা হলো।

রুকু কী

রুকু আরবি শব্দ, যার অর্থ ‘নমন’ বা ‘বাঁকানো’। নামাজে রুকু বলতে কোমর ঝুঁকিয়ে আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের অঙ্গভঙ্গিকে বোঝায়।

তবে কোরআন তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে রুকু একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়াতের সংকলনকে বোঝায়, যা তিলাওয়াতকে সংগঠিত ও সহজতর করে। এটি বিশেষ করে হাফেজদের (যাঁরা কোরআন মুখস্থ করেন) জন্য সুবিধাজনক।

ইমাম সারাখসি (মৃ. ৪৮৩ হি.) রুকুকে রাকাতের সঙ্গে সম্পর্কিত করে বলেছেন, এক রাকাতে তিলাওয়াতের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়াতের সংকেত হিসেবে রুকু ব্যবহৃত হতো।কোরআন তিলাওয়াতে রুকুর ভূমিকা

রুকু নির্ধারণের উদ্দেশ্য ছিল তিলাওয়াতের সময় আয়াতের বিষয়বস্তুর ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং বিরতি নেওয়ার সুবিধা প্রদান। ইসলামের প্রাথমিক যুগে, বিশেষ করে হাফেজরা তিলাওয়াতের পর নির্দিষ্ট আয়াতে এসে রুকুতে যেতেন, যা এই প্রথার উৎপত্তির ইঙ্গিত দেয়।

ঐতিহাসিকভাবে রুকু নির্ধারণের প্রথা মা-ওয়ারাউন্নাহার (বুখারা, সমরখন্দ) অঞ্চলে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। এটি তারাবিহ নামাজের সময় কোরআন তিলাওয়াতকে সংগঠিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।

ইমাম সারাখসি (মৃ. ৪৮৩ হি.) রুকুকে রাকাতের সঙ্গে সম্পর্কিত করে বলেছেন, এক রাকাতে তিলাওয়াতের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়াতের সংকেত হিসেবে রুকু ব্যবহৃত হতো। অন্য একটি মত অনুসারে, হাফেজরা নির্দিষ্ট পরিমাণ তিলাওয়াতের পর রুকুতে যাওয়ার কারণে এই নামকরণ হয়েছে। (আল-সারাখসি, আল-মাবসুত, বৈরুত: দার আল-মা’রিফা)

আরও পড়ুনধীরে ধীরে কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার কারণ৩০ মে ২০২৫কোরআনে রুকুর সংখ্যা

কোরআনে রুকুর সংখ্যা বিভিন্ন অঞ্চলে ও ঐতিহ্য অনুসারে ভিন্নতা দেখায়। প্রধানত তিনটি ধারা প্রচলিত: ৫৫৮, ৫৪০ ও ৪৮০।

৫৫৮ রুকু: বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মুসহাফে সাধারণত ৫৫৮টি রুকু ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি সুরায় রুকুর সংখ্যা উল্লেখ থাকে এবং আরবি অক্ষর ‘আইন’ দিয়ে রুকু চিহ্নিত করা হয়। এই চিহ্নে তিনটি সংখ্যা থাকে:

 ১. ওপরের সংখ্যা: সুরার মধ্যে রুকুর ক্রম।

 ২. মাঝের সংখ্যা: রুকুর আয়াতসংখ্যা।

 ৩. নিচের সংখ্যা: পারার (জুজ) মধ্যে রুকুর ক্রম।

 এই পদ্ধতি তিলাওয়াতকে সুসংগঠিত করে এবং হাফেজদের জন্য সুবিধাজনক। (সিদ্দিকি, এ, ২০১৭, কোরআনিক ম্যানুস্ক্রিপ্টস অ্যান্ড দেয়ার ডিভিশনস, জার্নাল অব ইসলামিক স্টাডিজ, ২৮(২), (১৪৫-১৬৭)

বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মুসহাফে সাধারণত ৫৫৮টি রুকু ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি সুরায় রুকুর সংখ্যা উল্লেখ থাকে এবং আরবি অক্ষর ‘আইন’ দিয়ে রুকু চিহ্নিত করা হয়।

৫৪০ রুকু: বুখারায় প্রথম রুকু নির্ধারণের সময় এর সংখ্যা ছিল ৫৪০। বুখারার মাশায়েখরা রমজানে তারাবিহ নামাজে প্রতি রাকাতে ১০টি আয়াত তিলাওয়াতের প্রথা অনুসরণ করতেন। এভাবে ৩০ দিনে কোরআনের প্রায় ৬ হাজার আয়াত তিলাওয়াত হতো। তবে দশ আয়াতের ভিত্তিতে তিলাওয়াত করলে বিষয়বস্তুর মাঝখানে বিরতি পড়ত, তাই তারা বিষয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য রুকু নির্ধারণ করেন। (রহিম বখশ, আল-খাত্ত আল-উসমানি ফি রাসমিল কোরআন, লাহোর: মাকতাবা কুদ্দুসিয়া, ১৯৮২)

৪৮০ রুকু: সিন্ধুর হাশিম থাট্টুভি কোরআনের রুকুসংখ্যা ৪৮০ নির্ধারণ করেছিলেন। তিনি সুরাভিত্তিক নয়, বরং পারাভিত্তিক রুকু নির্ধারণ করেন। প্রতি পারায় ১৬টি রুকু ধরে ৩০ পারায় মোট ৪৮০ রুকু হয়।

তিনি ‘রুকু’ শব্দের পরিবর্তে ‘মাকরা’ বা ‘মাকারি’ শব্দ প্রস্তাব করেন, যা ‘কিরআত’ (পাঠ্যাংশ) থেকে উদ্ভূত। (আজমি, এম এম, ২০০৩, দ্য হিস্ট্রি অব দ্য কোরআনিক টেক্সট: ফ্রম রেভল্যুশন টু কম্পাইলেশন, যুক্তরাজ্য: আল-কোরআন সোসাইটি)

আরও পড়ুনসহজে কোরআন বোঝার পাঁচটি কৌশল০৩ মে ২০২৫রুকুর প্রচলন

হিজাজ, আন্দালুসিয়া, মিসর, আফ্রিকা ও সিরিয়ায় রুকুর প্রচলন তেমন ছিল না। রুকুর প্রচলন মূলত মা-ওয়ারাউন্নাহার (বুখারা, সমরখন্দ), ভারতবর্ষ ও তুরস্কে ব্যাপক ছিল। ওসমানি খেলাফতের পর তুরস্কে এটা বিলুপ্ত হয়ে, তবে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে এখনো রুকুর প্রচলন আছে।

বুখারার মাশায়েখরা রমজানে তারাবিহ নামাজে প্রতি রাকাতে ১০টি আয়াত তিলাওয়াতের প্রথা অনুসরণ করতেন। তবে এভাবে তিলাওয়াত করলে বিষয়বস্তুর মাঝখানে বিরতি পড়ত, তাই তারা বিষয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য রুকু নির্ধারণ করেন।

ইমাম দানি (মৃ. ৪৪৪ হি.) তাঁর গ্রন্থ আল-বায়ান ফি আদ্দি আয়িল কোরআন-এ কোরআনের বিভিন্ন ভাগ নিয়ে আলোচনা করলেও রুকু নিয়ে বিস্তারিত বলেননি। তবে ইমাম সারাখসি এবং রহিম বখশ তাঁদের লেখায় রুকুর ঐতিহাসিক বিবরণ দিয়েছেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময়ে সাহাবিরা ১০টি আয়াত করে মুখস্থ করতেন এবং এর ব্যাখ্যা বুঝে পরবর্তী আয়াত শিখতেন, যা রুকু নির্ধারণের প্রাথমিক ধারণার সঙ্গে সম্পর্কিত। (আল-দানি, আল-বায়ান ফি আদ্দি আয়িল কুরআন, কায়রো: দার আল-মা’আরিফ)

সারকথা, রুকু কোরআন তিলাওয়াতকে সহজ ও সংগঠিত করে, বিশেষ করে হাফেজদের জন্য। এটি ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে প্রচলিত একটি পদ্ধতি, যা বুখারা, সমরখন্দ ও ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে। ৫৫৮, ৫৪০ ও ৪৮০ রুকুর ধারা বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত হলেও বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে ৫৫৮ রুকুই বেশি ব্যবহৃত হয়।

লেখক: খণ্ডকালীন শিক্ষক, আরবি বিভাগ, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুনযে ঘটনায় কোরআনে পূর্ণ দুটি রুকু নাজিল হয়১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ