বর্ষবরণ শোভাযাত্রা নতুন নামে স্বীকৃতি পেতে অনুমোদন লাগবে: ইউনেস্কো
Published: 17th, April 2025 GMT
‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম পরিবর্তন করে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ রাখায় ইউনেস্কোর স্বীকৃতি ধরে রাখতে নতুন করে আবেদন ও অনুমোদনের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো।
গত ১১ এপ্রিল বাংলা বর্ষবরণের অন্যতম আয়োজন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম পাল্টে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ করার সিদ্ধান্ত জানায় শোভাযাত্রার আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নাম পরিবর্তন নিয়ে সমালোচনা ও নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি দেন অনেকে।
২০১৬ সালে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা অন পহেলা বৈশাখ’ শিরোনামে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত হয়েছিল আয়োজনটি। ফলে প্রশ্ন ওঠে, এই নাম পরিবর্তনে ইউনেস্কোর স্বীকৃতির কী হবে?
এই বিষয়ে জানতে চেয়ে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে জাতিসংঘের সংস্থাটিকে ই-মেইল করা হয়। জবাবে ইউনেস্কো জানিয়েছে, অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ‘জীবন্ত প্রকৃতি এবং গতিশীলতাকে’ বিবেচনায় নিয়ে এ ধরনের (নাম) পরিবর্তনের স্পষ্ট প্রক্রিয়া রাখা হয়েছে।
আরও বলা হয়েছে, এর জন্য ‘ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ কমিটি’ বা অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন হবে। ওই কমিটি ২৪টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত। এখনও পর্যন্ত, এটির(মঙ্গল শোভাযাত্রা) নাম পরিবর্তনের জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক আবেদন করা হয়নি," বলেছেন ইউনেস্কোর মুখপাত্র।
ইউনেস্কো বক্তব্যের সঙ্গে সুরক্ষা বিষয়ক একটি বার্তাও জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, অপরিমেয় সংস্কৃতি ঐতিহ্যের সুরক্ষার জন্য ইউনেস্কোর সনদে, নির্দিষ্টভাবে এথিক্যাল প্রিন্সিপালস বা নৈতিক অবস্থান সংক্রান্ত নীতিমালায় জোর দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী এ ধরনের ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রকৃতি ও গতিশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায় ও অংশীজনদের যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে এর ‘প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি, সম্ভাব্য ও নির্দিষ্ট প্রভাব সম্পর্কে সতর্কতার সাথে মূল্যায়ন করতে হবে যেন ঐতিহ্য বা সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়’, যোগ করা হয়েছে ওই বার্তায়।
তবে, বাংলাদেশের মঙ্গল শোভাযাত্রার নামের সাম্প্রতিক পরিবর্তন এ ধরনের কোনো নীতিগত অবস্থানের পক্ষে বা বিপক্ষে গেছে কি-না, সে ব্যাপারে ইউনেস্কো কোনো মন্তব্য করেনি।
‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামে খ্যাতি পেলেও সাড়ে তিন দশক আগে ১৯৮৯ সালে যাত্রা শুরুর সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের আয়োজনটির নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। পরের বছর থেকে এটি মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে পরিচিত হয় বলে জানিয়েছেন প্রথম শোভাযাত্রার আয়োজকদের একজন চারুকলার সাতাশি ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজিব তারেক।
তিনি বলেন, ইউনেস্কোর স্বীকৃতির পর মঙ্গল শোভাযাত্রা নতুন মাত্রা পায়। কিন্তু এটি যে সবসময় বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল তা নয়। এই আয়োজন নিয়ে আগে থেকেই তাদের আপত্তি জানিয়ে আসছিল বিভিন্ন ইসলামপন্থি দল ও সংগঠন। তাদের দৃষ্টিতে, এই শোভাযাত্রাটি হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতি থেকে এসেছে।
প্রতিবছরই পহেলা বৈশাখের আগে আগে এই বিতর্কটি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
এবারও কোনো কোনো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ‘মঙ্গল’ শব্দটি নিয়ে আপত্তি তোলে।
অবশ্য ১১ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ সম্মেলনে নাম পরিবর্তনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম বলেন, বাইরের কোনো চাপে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, অতীতে ‘মঙ্গল’ ব্যানারটি নিয়ে বিতর্ক কম ছিল না। ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থায় মঙ্গল শব্দটি এমনভাবে চর্চায় নিয়ে আসা হয়েছিল, যার ফলে সমাজে নেতিবাচক ধারণা জন্মে। এ কারণেই আমরা রাজনৈতিক আগ্রাসন থেকে মুক্ত ও সকল মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক চর্চার মূল চেতনায় ফিরে যেতে চেয়েছি।
বাংলাদেশে এবার বর্ষবরণের অন্যতম বিশেষ আয়োজন শোভাযাত্রাকে ঘিরে বিভাজন ও বিতর্ক বেড়েছে। এতে করে এই আয়োজনটি চূড়ান্তভাবে রাজনৈতিক বিষয়বস্তুতে পরিণত হলো কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।
শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, বর্ষবরণের এবারের শোভাযাত্রা রাজনৈতিক নয়।
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েও এই শোভাযাত্রাটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিলো বিভিন্ন মহল থেকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, বর্ষবরণের আয়োজনটি ঘিরে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল তাদের পছন্দ অনুযায়ী ব্যবহারের চেষ্টা করেছে এবং দিনে দিনে সেই প্রবণতা আরও প্রকট হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউন স ক র স অপর ম য় স র জন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
হস্তক্ষেপ নয়, পর্যবেক্ষণ ও সহযোগিতায় বিশ্বাসী টিম ডিরেক্টর রাজ্জা
সংবাদ সম্মেলন তখন শেষ। আব্দুর রাজ্জাককে মনে করিয়ে দেওয়া হলো, ‘‘বাংলাদেশ দলের টিম ডিরেক্টর কিন্তু টসেও ইনপুট দিতেন। আপনি কি…?’’ রাজ্জাক মুখে হাসি আটকে রাখেন। এই পদে আসন্ন আয়ারল্যান্ড সিরিজে দায়িত্ব পাওয়া রাজ্জাক স্রেফ এতোটুকুই বলতে পারেন, ‘‘আমাদের থেকে এমন কিছু কখনোই দেখতে পারবেন না। আমরা নতুন কিছু নিয়ে ভাববো।’’
জাতীয় দলকে নিয়ে সেই ভাবনা থেকেই আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বোর্ড একজনকে টিম ডিরেক্টর নিয়োগ দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের জাতীয় পুরুষ দলের ব্যর্থতার কারণে আলোচনা হচ্ছিল, ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ওপরে একটি ছায়া বিভাগ থাকবে যারা সরাসরি জাতীয় দল পর্যবেক্ষণ করবে।
সেই ছায়া বিভাগে সাবেক ক্রিকেটাররাই থাকবেন। প্রথম টিম ডিরেক্টর হিসেবে রাজ্জাক পেলেন দায়িত্ব। কেন টিম ডিরেক্টর নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব হলো সেই প্রশ্ন করা হয় তাকে। নাজমুল হাসান বোর্ড সভাপতির দায়িত্বে থাকার সময় টিম ডিরেক্টর পদটি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। সাবেক অধিনায়ক ও বোর্ড পরিচালক খালেদ মাহমুদ এই দায়িত্ব পালন করেছেন বিশ্বকাপসহ বেশ কয়েকটি সিরিজে। দলের সঙ্গে গভীরভাবে মিশে যেতেন তিনি। টস থেকে শুরু করে টিম মিটিংয়ে দিতেন ইনপুট। যা নিয়ে পরবর্তীতে অভিযোগ করেছিলেন কোচ ও অধিনায়ক।
তবে রাজ্জাক নিজের কাজ, পরিধি এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন বলেই নিশ্চিত করলেন,"অন্যান্য যে কোনো টিম ডিরেক্টরের মতোই হবে আমার কাজ। আমি সব কিছু পর্যবেক্ষণ করব, সব কিছুতে নজর রাখব। আর কখনও যদি টিম ম্যানেজমেন্ট মনে করে আমার কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন, তাহলে সেটিও দেওয়ার চেষ্টা করব। তাদের সাহায্য প্রয়োজন হলে আমি করব।"
"ক্রিকেট বোর্ডের মনে হয়েছে, দলের সঙ্গে একজন টিম ডিরেক্টর থাকলে ভালো হবে। এই পদটি কিন্তু আগেও ছিল। অনেক দিন ধরেই ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে বোর্ড পরিচালকের সংখ্যা কম থাকায় হয়তো দলের সঙ্গে কেউ যায়নি। তবে এর আগে প্রায় সিরিজেই দলের সঙ্গে টিম ডিরেক্টর থাকত।" - যোগ করেন তিনি।
ঢাকা/ইয়াসিন