জামালপুরে অসময়ে শুরু হয়েছে যমুনার ভাঙন। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বড়খাল থেকে খোলাবাড়ী পর্যন্ত কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যত্রতত্র চর জেগে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ার কারণে এই ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।  
বিগত বছরগুলোতে যমুনা নদীতে বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধি পেলে ভাঙন দেখা গেছে। কিন্তু চলতি বছর বর্ষা শুরু না হতেই চরডাকাতিয়া গ্রামে যমুনার তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনে চরডাকাতিয়া গ্রামের অন্তত ১৫টি বসতভিটা বিলীন হয়েছে। নদী থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরেই চরডাকাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরডাকাতিয়া গ্রাম জামে মসজিদসহ শতাধিক বসতবাড়ি। ভাঙন অব্যাহত থাকলে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে তা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
চরডাকাতিয়াপাড়ার বাসিন্দা সালমান হোসেন জানান, বিগত সময়ে ভাঙন রোধে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। চলতি বছর বর্ষা মৌসুমের আগেই যমুনা নদীর তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। যত্রতত্র চর জেগে ওঠার কারণেই এখন ভাঙন দেখা দিয়েছে। 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক যুগ ধরে বর্ষা মৌসুম এলেই যমুনা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে দেওয়ানগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা। ইতোমধ্যেই নদীতে বিলীন হয়েছে হলকারচর, কেল্লাকাটা, ডাকাতিয়াপাড়া, বড়খাল, বওলাতলী, চরডাকাতিয়াপাড়া ও খোলাবাড়ী এলাকার অধিকাংশ জায়গা। ভিটেমাটি, আবাদি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে ওইসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। এক সময় যাদের সব ছিল, আজ তারা আশ্রয় নিয়েছে অন্যের জমিতে, রেলের জমিসহ বিভিন্ন স্থানে। জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমিয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। মানবেতর জীবন কাটছে তাদের।
চরডাকাতিয়া গ্রামের আফরোজা বেগম বলেন, ‘অসময়ে যমুনা নদী চরডাকাতিয়া গ্রামে যে হারে ভাঙছে, চলতি বছর পুরো গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধি পেলে ভাঙনের মাত্রা আরও বেড়ে যাবে। মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে চরডাকাতিয়া নামে একটি বৃহৎ গ্রাম। ভিটেমাটি, আবাদি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়বে হাজারও মানুষ।’ তাঁর ভাষ্য, অসময়ের ভাঙনে আতঙ্কে রয়েছেন নদীপারের মানুষ। তাদের রাত কাটে নির্ঘুম। বসতভিটা ভেঙে নিলে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও থাকবে না। পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে দাঁড়াতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ইতোমধ্যে ওই স্থানে ১১ হাজার বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলা শুরু করেছে। গত সোমবার নাগাদ সাড়ে ছয় হাজার বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলেছে বলে জানিয়েছেন পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম। বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলার কাজ চলমান রয়েছে। যমুনা নদী প্রমত্তা। তাতে শেষ রক্ষা হবে না বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। তাদের ধারণা, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্রোতের মাত্রা বেড়ে যাবে কয়েক গুণ। তখন ভাঙনের মাত্রাও বৃদ্ধি পাবে। জরুরি ভিত্তিতে ফেলা জিওব্যাগ স্রোতে ভেসে গিয়ে আগের মতো সর্বত্র ভাঙন দেখা দেবে। সে কারণে আতঙ্কে রয়েছে এলাকাবাসী। জরুরি ভিত্তিতে এখানে ভাঙন রোধে স্থায়ী ও টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।

চরডাকাতিয়া গ্রামের ময়নাল হক বলেন, ‘এ পর্যন্ত যমুনা নদী সাতবার ভেঙেছে আমার বাড়ি। আবাদি জমি ছিল, তাও ভেঙে নিয়েছে। এখন অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছি। আমার মতো কয়েকশ মানুষ যমুনার ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়েছেন। এ বছর জিওব্যাগ ডাম্পিং করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাতে কাজ হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।’ জিওব্যাগ ফেলে সরকারি অর্থ অপচয় না করে বড়খাল থেকে খোলাবাড়ী পর্যন্ত স্থায়ী নদী শাসনের দাবি তাঁর।
কথা হয় দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ সাদার সঙ্গে। যমুনার ভাঙনকবলিত চরডাকাতিয়া গ্রাম (হাজারী গ্রাম) সরেজমিন পরিদর্শন করে তিনি জানান, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই গ্রামে যমুনার ভাঙন রোধে বালু ভর্তি জিওব্যাগ অনুমোদন করিয়েছেন। জরুরিভাবে ওই স্থানে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
জামালপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

নকিবুজ্জামানের ভাষ্য, ওই স্থানে যমুনা নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ আপাতত নেই। ওই স্থান নিয়ে 
একটি ফিজিবিলিটি স্টাডি চলমান রয়েছে। সেই স্টাডি পাস হলে প্রকল্প নেওয়া হবে। সেটা সময় সাপেক্ষ। আপাতত ভাঙন রোধে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নদ ওই স থ ন ব ল ন হয়

এছাড়াও পড়ুন:

জামিন দেওয়াকে কেন্দ্র করে আদালতে হাতাহাতি, স্টেনোগ্রাফার আহত

লক্ষ্মীপুরে আদালতে একটি জামিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন বিচারকের আদালত বর্জন করেছে আইনজীবীরা। এ সময় আইনজীবীদের সাথে আদালতের কর্মচারীদের হাতাহাতি ও এজলাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে আহত হন ওই এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। 

রবিবার (১৫ জুন) দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আদালত বর্জন করায় ভোগান্তিতে পড়েন বিচারপ্রার্থীরা। 

জানা গেছে, রায়পুর প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আহম্মেদ কাউসার উদ্দিন জামান (৩৫) এর বিরুদ্ধে গত ৬ জুন সদর থানায় চুরির মামলা দায়ের করেন তারই প্রতিবেশি জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আবু তৈয়ব। মামলায় আরও দুইজনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় আসামি কাউসার ও রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এরপর গত ১০ জুন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক এম সাইফুল ইসলাম তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ আইনজীবীরা। 

মামলায় অভিযোগ আনা হয়, বাদী এবং আসামিদের মধ্যে পূর্ব বিরোধ রয়েছে। ৫ জুন দিবাগত গভীর রাতে আসামিরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাদীর ভবনের সামনে থাকা একটি লোহার গেট কেটে নিয়ে এবং গেটের পিলার ভেঙে একটি পিক-আপ গাড়িতে করে রায়পুরের দিকে নিয়ে যায়। রায়পুর বাসাবাড়ি এলাকায় গেলে পিকআপ গাড়িটি টহল পুলিশ আটক করে। পরে গাড়িটি জব্দ ও চালক রুবেলকে আটক করে পুলিশ। মামলায় বাদী আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

আদালত সূত্র জানায়, গত ৯ জুন আসামিদের জামিন প্রার্থণা করা হয়। এতে আসামিপক্ষ উল্লেখ করেন, মামলার বাদি আইনজীবী হওয়ায় আদালতে তাদের পক্ষে কোন আইনজীবী জামিন শুনানিতে অংশ নিতে ইচ্ছুক নয়। আসামিরা তাদের পক্ষে আইনজীবী না পেয়ে জামিন শুনানির জন্য লক্ষ্মীপুর লিগ্যাল এইড অফিসে আইনি সহায়তা চান। সেখান থেকে দুইজন আইনজীবীকে শুনানি করতে বলা হলেও তারা অন্য আইজীবীদের দ্বারা হেনস্তার ভয়ে জামিন শুনানিতে অংশ নেননি। অন্যদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী আসামিদের বিরুদ্ধে জামিনের বিরোধিতা করেন। 

আদালত সূত্র আরও জানায়, আসামিরা ৯ জুন জামিনের জন্য আবেদন করলে পরদিন ১০ জুন নথি প্রাপ্ত সাপেক্ষে জামিন শুনানির জন্য রাখা হয় এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। 

বিষয়টি নিয়ে আদালতের পর্যালোচনায় উঠে আসে, ঈদুল আজহার বন্ধে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এবং গ্রেপ্তারের পর থেকে আসামিরা জামিনের শুনানির সুযোগ পাননি। চারদিন তাদের হাজতবাস হয়েছে। ৬ জুন আসামি গ্রেপ্তার হলেও বাদী একজন আইনজীবী হওয়ায় আসামিরা জামিন শুনানির জন্য কোন আইনজীবী পাননি এবং লিগ্যাল এইড অফিসের আইনজীবীরাও শুনানিতে অংশ নিতে অনীহার বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ায় ১৪ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটিতে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জামিন অযোগ্য ধারায় গুরুতর অভিযোগ না থাকায় উভয় পক্ষের শুনানি অন্তে উভয় দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হলো। 

আদালত আসামিদের রিমান্ড না মঞ্জুর করে চারদিনের হাজতবাস ও ঈদ বিবেচনা করে আসামি কাউসার ও রুবেলকে ১০০ টাকা বন্ডে একজন গণ্যমান্য ব্যক্তির জিম্মায় জামিন মঞ্জুর করেন। তাদের জামিন হওয়ায় পর থেকেই আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে। এ ঘটনায় তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বিচারকের অপসারণের দাবি জানান।

ঈদের বন্ধ শেষে রবিবার (১৫ জুন) আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়। আইনজীবী সমিতি বৈঠক করে ওই আদালতের বিচারক এম সাইফুল ইসলামের আদালতের বর্জনের ঘোষণা দেন। এদিন সকাল থেকে ওই বিচারকের কক্ষে বিচারপ্রার্থীরা এসে উপস্থিত হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বিচারপ্রার্থী জানান, আদালতের বিচারক এজলাসে বসা ছিলেন। এ সময় ৭-৮ জন আইনজীবী কক্ষে ঢুকে আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। এতে হট্টগোল দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিচারক আদালত কর্মচারীদের দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন। এ সময় আইনজীবী ও কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আহত হন এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। এতে বিচারকার্য সম্পন্ন না করেই এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক। 

আহত আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘‘আইনজীবীরা হট্টগোল করায় বিচারকের নির্দেশে আমি দরজা বন্ধ করতে গেলে আমার ওপর আইনজীবীরা হামলা করে। এতে আমার বাম চোখের পাশে রক্তাক্ত জখম হয়।’’  

উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান জানান, কয়েকজন আইনজীবী এজলাসে গিয়ে আদালত বর্জনের বিষয়টি জানিয়ে দিতে গিয়েছেন। আদালত কর্মচারীরা উল্টো তাদের ওপর হামলা করেছে। এতে তিনি নিজেও আহত হন।

ঢাকা/লিটন/টিপু 

সম্পর্কিত নিবন্ধ