ছাদবিহীন বাস চালিয়ে ছয় কিলোমিটার যাত্রা, যা বললেন চালক
Published: 19th, April 2025 GMT
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষে যাত্রীবাহী বাসের ছাদ উড়ে যাওয়া আলোচিত যাত্রীবাহী বাসটির গন্তব্য ছিল বরগুনার পাথরঘাটায়। ছাদ উড়ে যাওয়ার পর বেপরোয়া গতির বাসটি প্রায় ছয় কিলোমিটার চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সেই বাসটির চালক ছিলেন শহিদুল ইসলাম।
বাসটির ছাদ উড়ে যাওয়ার পরও বাসটি কেন ছয় কিলোমিটার চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন চালক—এমন প্রশ্ন বেশ আলোচিত হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ সর্বত্র। আজ শনিবার দুপুরে বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে বাসটির টিকিট কাউন্টার কোথায়, জানতে চাইলে অন্য বাসের কাউন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছিলেন—ওই যে ছাদ খোলা গাড়ি!
বরিশাল বাস টার্মিনালে কোথাও এই বাস কোম্পানির টিকিট কাউন্টার খুঁজে পাওয়া গেল না। পরে বরিশাল বাসমালিক গ্রুপের কার্যালয়ে গিয়ে জানা গেল, এই বাস কোম্পানির কোনো কাউন্টার এখানে নেই। এই কোম্পানির পাঁচটি বাস ঢাকা থেকে বরিশাল, ঝালকাঠি হয়ে বরগুনার পাথরঘাটায় চলাচল করে।
আরও পড়ুনদুর্ঘটনায় ছাদ উড়ে যাওয়া বাস ৬ কিলোমিটার নিয়ে গেলেন চালক, যাত্রীদের চিৎকার২০ ঘণ্টা আগেবাসটি কেন ছাদ উড়ে যাওয়ার পরও ছয় কিলোমিটার চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো, এর পেছনের রহস্য কী—এই প্রশ্ন ছিল মালিক গ্রুপের নেতাদের কাছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ও যুগ্ম সম্পাদক মো.
জগলুল ফারুক বলেন, ‘আমি চালকদের সঙ্গে কথা বলে যত দূর জানতে পেরেছি, তা হলো—বাসটির ব্রেকের পাইপ ফেটে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন চালক। এ জন্য গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাসটি ছয় কিলোমিটার চালিয়ে নিয়ে গেছেন। আর এতে যাত্রীরা সবাই অক্ষত অবস্থায় আছেন।’
কিন্তু কয়েকজন চালক এমন কথার যুক্তি নেই বলে মন্তব্য করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা-বরিশাল পথে চলাচলকারী একটি বাসের চালক প্রথম আলোকে বলেন, ব্রেক ফেল হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে নিশ্চিত। কিন্তু এখানে তা হয়নি। মূলত চালক ভয়ের কারণে এতটা পথ বেপরোয়াভাবে চালিয়ে এসেছেন। কারণ, বাসটির পেছনে সেনাবাহিনীর গাড়ি ছিল এবং হাইওয়ে পুলিশ ছিল কাছাকাছি।
ঢাকার সায়েদাবাদে বাসটির টিকিট কাউন্টারে ওই দিন দায়িত্বে ছিলেন মো. সাইফুল। তিনি বলেন, তাঁরা যাত্রীর নাম ও মুঠোফোন নম্বর টিকিটে লিখে দেন। কোনো খাতায় তা লিবিবদ্ধ করেন না।ওই চালকের কথার সূত্র ধরে পাথরঘাটায় বাসটির টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, বাসটি ঢাকা থেকে ছেড়ে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটায় পাথরঘাটায় পৌঁছানোর কথা। কিন্তু পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তবে মিজানুর রহমানের কাছে ওই বাসে থাকা যাত্রীদের কোনো নাম, মুঠোফোন নম্বর পাওয়া যায়নি। এমনকি তাঁরা এসব বিবরণী রাখেনও না।
ঢাকার সায়েদাবাদে বাসটির টিকিট কাউন্টারে ওই দিন দায়িত্বে ছিলেন মো. সাইফুল। তিনি যাত্রীদের নাম–ঠিকানা দিতে পারেননি। কার সঙ্গে যোগাযোগ করলে পাওয়া যাবে, প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তাঁরা যাত্রীর নাম ও মুঠোফোন নম্বর টিকিটে লিখে দেন। কোনো খাতায় তা লিবিবদ্ধ করেন না। বাসটির চালক শহিদুলের মুঠোফোন নম্বর চাইলে তাঁরা দিতে পারেননি।
পরে বিকল্প চেষ্টায় বেলা পৌনে দুইটার দিকে শহিদুলকে পাওয়া গেল। পরিচয় শুনে শহিদুল বলেন, তিনি খুবই ক্লান্ত। তাঁর কথা বলার মতো শক্তি নেই। কেন বাসটি এতটা পথ তিনি বেপরোয়াভাবে চালিয়ে নিয়ে গেলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই অবস্থায় গাড়ি থামানোর কোনো পরিস্থিতি ছিল না। তিনি পরিস্থিতিতে অনেকটা হতভম্ব হয়ে যান। ভেতরে আতঙ্ক কাজ করছিল। তিনি কখনো এমন অবস্থার মুখোমুখি হননি। কীভাবে কী করেছেন, বলতে পারবেন না। দুর্ঘটনা কীভাবে হলো—এই প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, এক্সপ্রেসওয়েতে উল্টো পথ (রং সাইড) দিয়ে হঠাৎ একটি প্রাইভেট কার এসে পড়ে। সেটাকে সাইড দিতে গিয়ে কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে বাসটির সংঘর্ষ হয়। এরপর তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। আর চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে প্রায় ৬০ জন যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশে বাসটি ছাড়ে। ঘণ্টাখানেক পর বাসটি ঢাকা–মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠে। বাসটি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের কামারখোলা সেতুতে উঠলে একটি কাভার্ড ভ্যানের পেছনে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে তখনই বাসের ছাদ সামনে থেকে ভেঙে পেছনে গিয়ে আটকে থাকে। চালক বাসটি না থামিয়ে আরও দ্রুতগতিতে চালাতে থাকেন। পরে বাসটি ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে সমষপুরে গেলে ছাদটি উড়ে পড়ে যায়। এ সময় একটি প্রাইভেট কারকেও ধাক্কা দেয় বাসটি। যাত্রীসহ ছাদবিহীন বাস চালিয়ে যেতে থাকেন চালক। সমষপুর অতিক্রম করে আরও একটি প্রাইভেট কারকে ধাক্কা দেয় বাসটি।
দুর্ঘটনায় ছাদ উড়ে যাওয়া বাস। শুক্রবার মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের হাসাড়া এলাকায়উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প থরঘ ট য় দ র ঘটন বর শ ল ছয় ক ল
এছাড়াও পড়ুন:
সবাই ভেবেছিলেন কিশোরী ডুবে গেছে, ১০ দিন পর ফোন করে জানাল সে গাজীপুরে আছে
১০ দিন আগে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল করতে গিয়েছিল কিশোরী সোহানা খাতুন। বাড়িতে ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নদীতে অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান পায়নি। তবে গত বুধবার রাতে মাকে ফোন করেছে সোহানা; জানিয়েছে সে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।
নিখোঁজ হওয়া কিশোরীর নাম সোহানা খাতুন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রাম কারিগর পাড়ায়। তার বাবা গোলাম মওলা ও মা শিরিনা খাতুন।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯ জুলাই দুপুরে বাড়ির পাশের মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল ও কাপড় ধুতে গিয়েছিল সোহানা। দীর্ঘ সময়েও না ফেরায় তার মা নদীর ধারে যান; দেখেন, সোহানার কাপড় পড়ে আছে। এরপর স্বজন ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। খবর পেয়ে ওই রাতে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল নদীতে উদ্ধার অভিযান চালায়। পরদিন খুলনা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ১২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান না পেয়ে অভিযান স্থগিত করে। ২১ জুলাই এক কবিরাজ এনে নদীতে খোঁজার চেষ্টাও করেন সোহানার বাবা–মা।
এমন অবস্থায় বুধবার রাতে হঠাৎ সোহানা তার মায়ের ফোনে কল দিয়ে জানায়, সে ঢাকার গাজীপুরে তার প্রাক্তন স্বামীর কাছে রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সোহানার বাবা গোলাম মওলা। তিনি বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম, মেয়ে নদীতে ডুবে গেছে। সবাই মিলে খোঁজাখুঁজি করেছি। এমনকি কবিরাজও এনেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বুধবার আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে জানায়, সে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে। আমরা বিষয়টি গতকাল রাতে পুলিশকে জানিয়েছি।’ বিষয়টি বুঝতে না পেরে সবাইকে কষ্ট দেওয়ার জন্য তিনি ক্ষমা চান।
স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় দুই বছর আগে খালাতো ভাই কুতুব উদ্দিনের সঙ্গে পালিয়ে যায় সোহানা এবং দুজন বিয়ে করে। তবে বনিবনা না হওয়ায় তিন মাস আগে সোহানা তাকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসে। নদীতে নিখোঁজ হওয়ার ‘নাটক’ করে সে পালিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে কুমারখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম বলেন, শুরুতে পরিবারের লোকজন জানিয়েছিল, নদীতে গোসলে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে সোহানা। গতকাল আবার তার বাবা জানিয়েছে, মেয়ে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।