চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের অংশ হিসেবে বির্জা খাল পরিষ্কার ও খনন শুরু করেছে জামায়াতে ইসলামী। শনিবার সকালে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

পরে ‘সবার সহযোগিতায় বির্জা খাল পাবে প্রাণ’– স্লোগানে জামায়াত চট্টগ্রাম মহানগরের দুই শতাধিক নেতাকর্মী খালের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করেন। প্রথম দিনে একটি এস্কভেটর নামিয়ে তলা থেকে মাটি কাটা হয়।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা সমকালকে জানান, সিটি করপোরেশন থেকে অনুমোদন নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে তারা খালটি খনন ও পরিষ্কার করছেন। এ কাজে কোটি টাকা লাগলেও দল থেকে দেওয়া হবে।

উদ্বোধনের আগে নগরীর বাকলিয়াস্থ ইছহাকের পুলের অছি মিয়া দোস্ত ভবন মাঠে গণসমাবেশ হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চসিক মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা.

শাহাদাত বলেন, ‘শপথের পর থেকে আমি জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছি। সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজটি করতে চাই। কারণ চট্টগ্রাম নগরী কারও একার নয়। জলাবদ্ধতা নিরসনে বির্জা খাল খনন করায় আমি জামায়াতকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছরে উন্নয়নের নামে চট্টগ্রামকে জলাবদ্ধতার নগরী করা হয়েছে। আইন আইনের জায়গায় থাকবে। এখন থেকে আমরা কঠোর হব।’

সভাপতির বক্তব্যে জামায়াতের চট্টগ্রাম মহানগর আমির শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘শুধু জলাবদ্ধতা নিরসন নয়, চসিকে যে কোনো উন্নয়নে আমরা সর্বোচ্চ সহায়তা করব। হিংসা-বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা ভুলে মানুষের জন্য কাজ করব।’

এ সময় তিনি মেয়রের কাছে চায়না শহরের মতো সুন্দর করে গড়ে তুলতে কয়েকটি বাজার এবং আঙ্গিনাসহ আশেপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ১০টি বিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

জামায়াতের মহানগর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিনের সঞ্চালনায় গণসমাবেশে বক্তৃতা করেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার আই ইউ এ চৌধুরী, মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ, নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ম য় ত ইসল ম পর ষ ক র ন রসন

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ