মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নূতন অভিবাসন নীতির খড়্গ অবশেষে বাংলাদেশের উপরেও পড়িল। পুলিশের বিশেষ শাখা ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়া সোমবার সমকাল জানাইয়াছে, অনথিভুক্ত অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাইবার মার্কিন কর্মসূচির অধীনে রবিবার পর্যন্ত ৩১ বাংলাদেশি নাগরিককে ফেরত পাঠাইয়াছে যুক্তরাষ্ট্র। তাহাদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ, একজন নারী। ঘটনাটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। যদিও বলা হইয়াছে, অভিবাসন-সংক্রান্ত মামলায় পরাজয়ের পরও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করিতেছিলেন এবং বিভিন্ন মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হইয়াছেন, মূলত এমন ব্যক্তিদেরই দেশে ফেরত আসিতে বাধ্য করা হইয়াছে; বিষয়টি তথায় থামিয়া থাকিবে না। 

সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমসূত্রে জানা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি অনুসারে, পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমনেচ্ছু বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের মুখোমুখি হইবেন। এমনকি ইতোমধ্যে যেই সকল শিক্ষার্থী উক্ত দেশে অবস্থান করিতেছেন, তাহাদের কেহ সাম্প্রতিক ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে শামিল হইয়া থাকিলে দেশে ফিরিয়া আসিতে বাধ্য হইবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের যেই নির্বাহী আদেশে এই প্রক্রিয়া শুরু হইয়াছে, একই আদেশে নূতন মার্কিন নাগরিকত্বপ্রাপ্তির পথও বহুলাংশে রুদ্ধ করা হইয়াছে। বিশেষত জন্মসূত্রে নাগরিকত্বপ্রাপ্তি কঠিন হইতে চলিয়াছে। পরিবারের একজন নাগরিকত্ব লইয়া অবশিষ্টদের ক্রমান্বয়ে যুক্তরাষ্ট্রে লইয়া যাইবার নিয়মও বাতিল হইতেছে। 

অধিকতর উদ্বেগের বিষয়, এই সকল পদক্ষেপ ট্রাম্প প্রশাসন এমন সময়ে কার্যকর করিতেছে যখন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ প্রবাসী আয়ের একক বৃহত্তম উৎস দেশ। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত, আমদানিসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রবাসী আয়ের অবদান হিসাব করিলে ট্রাম্পের ঐ সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব বহুমুখী হইবার আশঙ্কাই অধিক। যুক্তরাষ্ট্র শরণার্থী গ্রহণের বর্তমান ধারা বন্ধ করিয়া দিলে বাংলাদেশ অন্যভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হইবার আশঙ্কা কম নহে। বিশেষত রোহিঙ্গা শরণার্থী গ্রহণে বিগত মার্কিন প্রশাসনের আশ্বাস বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা-ভার লাঘবে অল্প হইলেও যেই ভরসা জোগাইয়াছিল, উহাও বিবর্ণ হইয়া আসিবে। 

আমরা জানি, এহেন বিপদ অকস্মাৎ উপস্থিত হয় নাই। মূলত গত বৎসর নির্বাচনী প্রচারাভিযানেই ডোনাল্ড ট্রাম্প নূতন এই অভিবাসন নীতি সম্পর্কে বিস্তারিত বলিয়াছিলেন। কিন্তু আমাদের সরকার কি এতদ্বিষয়ে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করিয়াছে? অন্য অনেক দেশের নাগরিকদের ন্যায় বাংলাদেশি নাগরিকদের হস্তে যে লৌহচুড়ি ও পদযুগলে ডান্ডাবেড়ি লটকাইয়া বা সামরিক বিমানে ফেরত পাঠানো হয় নাই– উহা নিঃসন্দেহে স্বস্তির বিষয়। ইহার পশ্চাতে অন্যান্য বিষয়ের সহিত অন্তর্বর্তী সরকারের জোরদার কূটনৈতিক তৎপরতাও ভূমিকা রাখিয়াছে– বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের এহেন দাবিও ফুৎকারে উৎক্ষেপের কারণ থাকিতে পারে না। কিন্তু ইহাও সত্য, যুক্তরাষ্ট্রে কত বাংলাদেশি অবৈধ হইয়া পড়িয়াছেন, তাহার কোনো সুনির্দিষ্ট সংখ্যা সরকারের নথিতে নাই। কেহ অবৈধরূপে চিহ্নিত হইলে যুক্তরাষ্ট্রে যথাযথ আইনি লড়াই চালাইতে তাঁহাকে বাংলাদেশ সরকার আদৌ সাহায্য-সহযোগিতা করিয়াছে কিনা, তাহা আমাদের জানা নাই। বিশেষত শিক্ষার্থীদের মার্কিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নির্বিঘ্নে অধ্যয়ন চালাইয়া যাইতে সহযোগিতা করা জরুরি বলিয়া আমরা মনে করি। ট্রাম্প প্রশাসন যে ভ্রান্ত নীতির বশবর্তী হইয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনবিরোধী বিক্ষোভকে ‘অ্যান্টিসেমেটিক’ বিক্ষোভরূপে বর্ণনা করিয়া শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎকে অগণতান্ত্রিক কায়দায় ধূলিসাৎ করিয়া দিতেছে, তাহা উত্থাপন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বিশ্বাস, এতদ্বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করিলে বিশ্বজনমতও আমাদের সহিত থাকিবে। 
আমরা নিশ্চয়ই চাহিব, ইতোমধ্যে যেই সকল অনথিভুক্ত অভিবাসী দেশে ফেরত আসিয়াছেন, তাহাদের আইনি কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হইলে সরকারকে তাহা জোগাইতে হইবে। প্রয়োজনে তাহাদের কাউন্সেলিং এবং আর্থিক সহযোগিতাও দিতে হইবে। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে প্রতিকারমূলক পন্থা লইয়াও ভাবিতে হইবে। প্রতিকার অপেক্ষা প্রতিষেধক উত্তম– ইহা কে না জানে!

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সহয গ ত আম দ র গ রহণ সরক র হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

তিনভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আর্থিক ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে

সরকারের ওপর তিনভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো মাঝারি মাত্রায় আর্থিক ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। 

বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানখাত সম্পর্কিত বিশ্লেষণে করে দেখা গেছে- সম্মিলিতভাবে এসওই খাত দেশের সরকারের জন্য মাঝারি মাত্রার ফিসকাল ঝুঁকি সৃষ্টি করে। এসওই এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো সার্বিকভাবে সরকারের আর্থিক অবস্থার ওপর তিনভাবে প্রভাব ফেলে।

প্রথমত, যদি এসওই-এর ঋণের জন্য গ্যারান্টি দেয় এবং তারা সেই ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তাহলে সরকারের তা পুনর্ভরণসহ আর্থিক ও অন্যান্য ক্ষতির ঝুঁকি থাকে। এটি ঘটতে পারে যদি প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হয়ে যায় বা তাদের প্রকল্পগুলো আশানুরুপ উৎপাদশীলতা দেখাতে ব্যর্থ হয়।

দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঋণ খেলাপি না হলেও যদি তারা ক্রমাগত লোকসান করে, তাহলে তাদের সচল রাখতে সরকারকে বাড়তি পুঁজি যোগান দিতে হতে পারে।

তৃতীয়ত, যদি এসব প্রতিষ্ঠান প্রত্যাশিত মুনাফা না করতে পারে তাহলে সেটিও সরকারের রাজস্ব আয়ে চাপ বাড়াতে পারে। সার্বিকভাবে দেখা গেছে যে, এসওই সমূহের সম্পদকে সুচিন্তিতভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন, যাতে সর্ব্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করা যায়।

এ পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারকে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদে আট ধরণের নীতি কৌশল গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। এই নীতি কৌশলের মধ্যে বলা হয়েছে, নিম্ন আয়ের জনগণকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব থেকে সুরক্ষা দিতে সরকার ওএমএস (খোলা বাজারে খাদ্য পণ্য বিক্রি) টিসিবি’র ফ্যামিলি কার্ডের মতো কর্মসূচি চালু করেছে। সরকার ডায়নামিক সোশ্যাল রেজিস্ট্রি তৈরির মাধ্যমে উপকারভোগীর সহায়তাপ্রাপ্তি ব্যবস্থা পূর্ণ অটোমেশন করার উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারে।

বিদ্যুৎখাতের পরিকল্পনা বিষয়ে নীতি কৌশলে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎখাতে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সরকার ২০২৬ -২০২৭ অর্থবছরে তিন বছর মেয়াদে একটি রোডম্যাপ তৈরি করছে, যার মাধ্যমে  বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে ভর্তুকি কমিয়ে এখাতকে আর্থিকভাবে টেকসই করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার সার ব্যবস্থাপনা পুনঃমূল্যায়ন করছে এবং কৃষি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপকরণের প্রাপ্যতা ও সরবরাহে যেনন কোনো বিঘ্ন না ঘটে তা নিশ্চিত করছে।

ঋণ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন ও আর্থিক ঝুঁকি কমাতে সরকার অর্থ বিভাগের অধীনে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং বন্ড/বিল বাজার উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে।

নীতি কৌশলের বিষয়ে আরও রয়েছে, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ জোরদারে সরকার আর্থিক লেনদেনের অটোমেশন করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা যেতে পারে।

রাজস্ব আহরণ বাড়াতে ‘মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল(এমএলটিআরএস,২০২৫)’ ও ‘ট্যাক্স এক্সপেন্ডিচার নীতিমালা’ গ্রহণ করা হয়েছে।  এসব কাঠামোগত সংস্কার পরিকল্পনা গ্রহণ ও কার্যকর করার মাধ্যমে সরকার ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান সমূহের সক্ষমতা উন্নয়নের জন্য দক্ষ এসেট ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি গ্রহণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। একইসঙ্গে সরকার একটি দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়ন কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে, যার মাধ্যমে মধ্যমেয়াদে বিভিন্ন ঝুঁকি অর্থায়নের উত্তম বিকল্পের মূল্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। একটি সামগ্রিক দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং সাড়া প্রদান কৌশল তৈরি করা যেতে পারে বলে অর্থমন্ত্রণালয়ের নীতি বিবৃতি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা/হাসনাত/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ