বিএনপিকে জাতীয় কনভেনশন ডাকার প্রস্তাব
Published: 22nd, April 2025 GMT
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বরে অনুষ্ঠানের দাবিতে একমত পোষণ করেছে বিএনপি ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি। ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরে খুব দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ চায় দল দুটি। যুগপৎ আন্দোলনের জোট ও দলসহ ডান, বাম ও ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার অংশ হিসেবে সোমবার রাজধানীর গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির সঙ্গে বিএনপি নেতাদের পৃথক বৈঠক হয়। বৈঠকে বিগত এক দফা দাবি ও শেখ হাসিনা সরকারের পতন আন্দোলনে যেসব রাজনৈতিক জোট ও দল রাজপথে ছিল তাদের নিয়ে বিএনপির কাছে একটি জাতীয় কনভেনশন ডাকার প্রস্তাব করেছে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি। তারা আশা করেন, বিএনপি তাদের প্রস্তাবে সাড়া দেবে।
এই বৈঠকে বিএনপির পক্ষে নেতৃত্ব দেন দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতৃত্ব দেন জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও এনপিপি’র চেয়ারম্যান ড.
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ডিসেম্বরের বেশি অপেক্ষা করার কারণ আমরা দেখি না। এ ব্যাপারে যদি কেউ ভিন্নমত পোষণ করে তাহলে তাদের যুক্তি দিয়ে বলতে হবে, কেন এর বেশি সময় দরকার। সরকার বলেছে, ডিসেম্বর থেকে জুন। তার মানে কি? তাহলে ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে পারে। আমরা বলেছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে- এটাকে ধরে একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক। সরকার বলছে যে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তার মানে তারা তো বলেনি, যে ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে না। কিন্তু আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে- এ রকম একটা তারিখ ধরে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক। পার্থক্য তো খুব বেশি না। সরকার বলেছে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে, তার মানে ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে পারে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকারের কথা অনুযায়ী নির্বাচন ডিসেম্বরে হতে পারে, জানুয়ারিতে হতে পারে, ফেব্রুয়ারিতেও হতে পারে। কাজেই আমাদের সঙ্গে সরকারের পার্থক্য তো বহু মাসের না। আমরা শুধু সরকারকে বলছি, এভাবে না বলে, এভাবে বলেন।
প্রশাসনের সব জায়গায় বিএনপির লোকজন বসে আছে, নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির পক্ষ থেকে এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, যিনি এ কথা বলেছেন তিনিও তো সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। তাহলে তারা কি সব জায়গায় বিএনপির লোক বসিয়েছেন নাকি?
বিএনপিকে তো প্রশাসন থেকে উৎখাত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময় কোথাও বিএনপির লোক ছিল না। যারা (আওয়ামী লীগের সময়) বৈষম্যের শিকার হয়েছিল, অন্যায়ভাবে যাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল, তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে থেকে একজনকেও এখনও পদায়ন করা হয় নাই। তাহলে বিএনপির লোককে বসানো হলো কোথায়? যাদের বঞ্চিত করা হয়েছে তাদের একজনকেও কেউ যদি পদায়ন করা হতো, তাহলে বলতে পারতেন বিএনপির লোক বসানো হয়েছে। তাহলে এই কথাটির যুক্তি কি জানতে চেয়ে তিনি বলেন, আপনারা তাদের জিজ্ঞাসা না করে আমাদের কেন জিজ্ঞাসা করেন? আপনারা জানেন না এসব?
ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, শেখ হাসিনার পতন ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নির্বাচন দাবিতে আমরা আন্দোলন করেছি। ইতোমধ্যে আমরা একটি দাবিতে জয়ী হয়েছি। এখন কথা হচ্ছে নির্বাচনের বিষয়ে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে- জুনের মধ্যে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছে। সংস্কার কমিশনও বলেছে মে’র মধ্যে এসব শেষ করবে। আমরা চাই সুষ্ঠু নির্বাচন। কারণ, একটি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার দরকার। এজন্য আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাই। এ জন্য আমরা চাই সরকার একটি রোডম্যাপ দিক। আমরা বিএনপির কাছে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটা জাতীয় কনভেনশন ডাকার প্রস্তাব করেছি। আশা করি, বিএনপি তা বিবেচনা করবে। লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরানও বলেছেন, তারা জাতীয় কনভেনশন ডাকার প্রস্তাব করেছে বিএনপির কাছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ প রস ত ব নজর ল ইসল ম খ ন ব এনপ র ল ক ড স ম বর র জন ত ক সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।