ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বরে অনুষ্ঠানের দাবিতে একমত পোষণ করেছে বিএনপি ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি। ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরে খুব দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ চায় দল দুটি। যুগপৎ আন্দোলনের জোট ও দলসহ ডান, বাম ও ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার অংশ হিসেবে সোমবার রাজধানীর গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির সঙ্গে বিএনপি নেতাদের পৃথক বৈঠক হয়। বৈঠকে বিগত এক দফা দাবি ও শেখ হাসিনা সরকারের পতন আন্দোলনে যেসব রাজনৈতিক জোট ও দল রাজপথে ছিল তাদের নিয়ে বিএনপির কাছে একটি জাতীয় কনভেনশন ডাকার প্রস্তাব করেছে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি। তারা আশা করেন, বিএনপি তাদের প্রস্তাবে সাড়া দেবে। 

এই বৈঠকে বিএনপির পক্ষে নেতৃত্ব দেন দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতৃত্ব দেন জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও এনপিপি’র চেয়ারম্যান ড.

ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির পক্ষে নেতৃত্ব দেন দলটির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। 

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ডিসেম্বরের বেশি অপেক্ষা করার কারণ আমরা দেখি না। এ ব্যাপারে যদি কেউ ভিন্নমত পোষণ করে তাহলে তাদের যুক্তি দিয়ে বলতে হবে, কেন এর বেশি সময় দরকার। সরকার বলেছে, ডিসেম্বর থেকে জুন। তার মানে কি? তাহলে ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে পারে। আমরা বলেছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে- এটাকে ধরে একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক। সরকার বলছে যে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তার মানে তারা তো বলেনি, যে ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে না। কিন্তু আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে- এ রকম একটা তারিখ ধরে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক। পার্থক্য তো খুব বেশি না। সরকার বলেছে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে, তার মানে ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে পারে। 

বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকারের কথা অনুযায়ী নির্বাচন ডিসেম্বরে হতে পারে, জানুয়ারিতে হতে পারে, ফেব্রুয়ারিতেও হতে পারে। কাজেই আমাদের সঙ্গে সরকারের পার্থক্য তো বহু মাসের না। আমরা শুধু সরকারকে বলছি, এভাবে না বলে, এভাবে বলেন।

প্রশাসনের সব জায়গায় বিএনপির লোকজন বসে আছে, নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির পক্ষ থেকে এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, যিনি এ কথা বলেছেন তিনিও তো সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। তাহলে তারা কি সব জায়গায় বিএনপির লোক বসিয়েছেন নাকি? 

বিএনপিকে তো প্রশাসন থেকে উৎখাত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময় কোথাও বিএনপির লোক ছিল না। যারা (আওয়ামী লীগের সময়) বৈষম্যের শিকার হয়েছিল, অন্যায়ভাবে যাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল, তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে থেকে একজনকেও এখনও পদায়ন করা হয় নাই। তাহলে বিএনপির লোককে বসানো হলো কোথায়? যাদের বঞ্চিত করা হয়েছে তাদের একজনকেও কেউ যদি পদায়ন করা হতো, তাহলে বলতে পারতেন বিএনপির লোক বসানো হয়েছে। তাহলে এই কথাটির যুক্তি কি জানতে চেয়ে তিনি বলেন, আপনারা তাদের জিজ্ঞাসা না করে আমাদের কেন জিজ্ঞাসা করেন? আপনারা জানেন না এসব? 

ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, শেখ হাসিনার পতন ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নির্বাচন দাবিতে আমরা আন্দোলন করেছি। ইতোমধ্যে আমরা একটি দাবিতে জয়ী হয়েছি। এখন কথা হচ্ছে নির্বাচনের বিষয়ে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে- জুনের মধ্যে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছে। সংস্কার কমিশনও বলেছে মে’র মধ্যে এসব শেষ করবে। আমরা চাই সুষ্ঠু নির্বাচন। কারণ, একটি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার দরকার। এজন্য আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাই। এ জন্য আমরা চাই সরকার একটি রোডম্যাপ দিক। আমরা বিএনপির কাছে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটা জাতীয় কনভেনশন ডাকার প্রস্তাব করেছি। আশা করি, বিএনপি তা বিবেচনা করবে। লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরানও বলেছেন, তারা জাতীয় কনভেনশন ডাকার প্রস্তাব করেছে বিএনপির কাছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ প রস ত ব নজর ল ইসল ম খ ন ব এনপ র ল ক ড স ম বর র জন ত ক সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

ফেসবুকে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য না করার নির্দেশনা সিলেট জেলা বিএনপির

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দায়িত্বহীন, অশালীন বা বিদ্বেষপূর্ণ পোস্ট, মন্তব্য কিংবা তথ্য শেয়ার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে সিলেট জেলা বিএনপি। দলের কেউ এ নির্দেশনা লঙ্ঘন করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।

গতকাল রোববার রাতে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন জেলা বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মাহবুব আলম।
এদিকে দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতার বিরুদ্ধে ফেসবুকে কুরুচিপূর্ণ ও শিষ্টাচার–বহিভূর্ত মন্তব্য করায় গতকাল রাতে বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবেদুর রহমানকে (আছকির) সাময়িক বহিষ্কারের পাশাপাশি সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলেছে জেলা বিএনপি। এ ছাড়া অনলাইন গণমাধ্যমে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী বক্তব্য দেওয়ার জন্য জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফখরুল ইসলামকে (ফারুক) সতর্কীকরণ নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

জেলা বিএনপির বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট জেলা বিএনপির আওতাধীন কিছু ইউনিটের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কার্যক্রমে অনভিপ্রেত ও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশেষ করে বিশ্বনাথ উপজেলা, বিশ্বনাথ পৌরসভা ও ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতা-কর্মীর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য, কটূক্তি ও বিভাজন সৃষ্টিকারী পোস্ট প্রচারিত হয়েছে। যা দলীয় শৃঙ্খলা ও ঐক্যের পরিপন্থী।

বিএনপি সব সময় সংগঠনের ঐক্য, শালীনতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের রাজনীতি বিশ্বাস করে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দলের কোনো পর্যায়ের নেতা বা কর্মীর কাছ থেকে বিভেদমূলক আচরণ, বিদ্বেষ ছড়ানো বা প্রকাশ্যে অপপ্রচার কখনোই কাম্য নয়। অতএব জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটের নেতা-কর্মীদের কঠোরভাবে সতর্ক করা হচ্ছে, যেন ভবিষ্যতে তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দায়িত্বহীন, অশালীন বা বিদ্বেষপূর্ণ পোস্ট, মন্তব্য বা শেয়ার থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকেন।

যোগাযোগ করলে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি ফেসবুকে কিছু নেতা-কর্মীকে একে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করতে দেখা গেছে। এ অবস্থায় জেলা বিএনপি একটি নির্দেশনা দিয়েছে। তা অমান্যকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ