কুয়েট ও চবি প্রশাসনের সুবুদ্ধির উদয় হোক
Published: 23rd, April 2025 GMT
দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। আন্দোলনকারীরা তখনই এমন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হন, যখন তাঁদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়। তাঁদের দাবিদাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও অনশন কর্মসূচিকে গুরুত্বহীন করে দেখার সুযোগ নেই। ফলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অনশন কর্মসূচি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সরকারের নীতিনির্ধারকদের প্রতি আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
গত ফেব্রুয়ারিতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই মাস ধরে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট)। এখন পর্যন্ত আবাসিক হলগুলো খুলে দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিন আবাসিক হলের বাইরে থাকতে বাধ্য করে এভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা আন্দোলনের মুখে মে মাসের শুরুতে আবাসিক হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেওয়া হলেও ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানায় কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কারের বিষয়টি আরও ক্ষুব্ধ করেছে শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের দাবি, যে ঘটনায় তাঁরা মার খেয়ে আহত হলেন, তাঁদেরই আবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহিষ্কার করেছে। তা ছাড়া ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে একজন তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকেই সে মামলার বিষয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে, নয়তো শিক্ষার্থীদের নাম, রোল নম্বরসহ বিবিধ তথ্য মামলার বাদী কীভাবে পেলেন? তা ছাড়া ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের দায় স্বীকার করারও প্রয়োজনবোধ করেনি উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমন পরিস্থিতিতে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবি নিয়ে নানা বিক্ষোভ–কর্মসূচির পর আমরণ অনশনে বসেছেন শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে চতুর্থ দফায় আন্দোলন শুরু করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশনে বসেছেন ইনস্টিটিউটের কয়েকজন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে ফেরাতে ইতিমধ্যে প্রায় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। সিন্ডিকেট সভা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তারা সময় চেয়েছে। তবে পূর্ববর্তী আন্দোলনগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে চারুকলার শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে বিশ্বাস করতে চাইছেন না। তাঁরা আর কোনো মৌখিক আশ্বাস নয়, লিখিত প্রতিশ্রুতি চান।
দুই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই শিক্ষার্থীদের দাবির গুরুত্ব বুঝতে হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলাকে আর ক্যাম্পাসে বাইরে রাখার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের আন্তরিকভাবে আশ্বস্ত করা হোক। আর কুয়েটের পরিস্থিতির জন্য উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায় আছে, এটি মানতেই হবে। ক্যাম্পাসটির পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আগেই এ সমস্যা দ্রুত সমাধানে সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টার প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দ্রুত আলোচনায় বসে সংকটের নিরসন করা হোক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ র কল
এছাড়াও পড়ুন:
৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়া প্রার্থীরা গেজেটভুক্ত করার দাবিতে অনশনে
৪৩তম বিসিএসে দ্বিতীয় গেজেট থেকে বাদ পড়া কয়েকজন প্রার্থী গেজেটভুক্ত করা ও ভেরিফিকেশন নীতি প্রণয়নের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছেন। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ দাবিতে অনশন শুরু করেন তাঁরা।
অনশনে বসা প্রার্থীরা বলেন, ‘গেজেটের প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন চলবে। কয়েকবার সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেও সরকারের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাইনি। তাই এখন আমরণ অনশন শুরু করেছি।’
আরও পড়ুনবেসরকারি ব্যাংক নেবে অ্যাসিস্ট্যান্ট রিলেশনশিপ অফিসার, বেতন ৩০,০০০ টাকা২৭ এপ্রিল ২০২৫আমরণ অনশনে বসা শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ পাওয়া মো. ফয়সাল চোকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘৪৩তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত গেজেট বঞ্চিত ২২৭ প্রার্থীর গেজেট চেয়ে আমরণ অনশনে বসেছি। যত দিন না গেজেট হয়, তত দিন এ অনশন চলবে। ৪৩তম বিসিএসে গেজেটে বাদ পড়া নিরপরাধ সবার গেজেট প্রকাশ করতে হবে। পরবর্তী বিসিএসগুলোয় ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং ভেরিফিকেশন নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।’
আমরণ অনশনে বসা প্রার্থীরা হলেন, শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ পাওয়া মো. ফয়সাল চোকদার, মো. মতিউর রহমান, এম এ হান্নান সরকার, দেবাশীষ ঘোষ ও সমরজিৎ চক্রবর্তী। আগামীকাল বুধবার তাঁদের সঙ্গে বাদ পড়া আরও কয়েকজন প্রার্থী যোগ দেবেন বলে জানান তাঁরা।
দীর্ঘ পাঁচ বছরের নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষে ৪৩তম বিসিএসের সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীরা গেজেটভুক্ত হয়ে গত ১৫ জানুয়ারি চাকরিতে যোগ দেন। কিন্তু গেজেট থেকে বাদ পড়ায় ২২৭ প্রার্থী চাকরিতে যোগ দিতে পারেননি। এরপর গেজেটভুক্ত হওয়ার দাবিতে তাঁরা গত জানুয়ারি থেকে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
আরও পড়ুন৪০৪ পদে সরকারি চাকরি, আবেদন শেষ আগামীকাল১২ ঘণ্টা আগে৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ২ হাজার ১৬৩ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করেছিল সরকারি কর্ম কমিশন। ভেরিফিকেশন শেষে ৯৯ জনকে বাদ দিয়ে গত বছরের ১৫ অক্টোবর ২ হাজার ৬৪ জনকে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ দিয়ে প্রথম গেজেট প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এরপর ৩০ ডিসেম্বর ওই প্রজ্ঞাপন বাতিল করে প্রথম সুপারিশকৃত ২ হাজার ১৬৩ প্রার্থীর মধ্য থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জন এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন বিবেচনায় সাময়িকভাবে অনুপযুক্ত ২২৭ জনসহ মোট ২৬৭ জনকে বাদ দিয়ে ১ হাজার ৮৯৬ জনকে নিয়োগের দ্বিতীয় প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুনপ্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন এক ধাপ বাড়ানোর উদ্যোগ, ভিন্নমত শিক্ষকদের২৮ এপ্রিল ২০২৫