ছাপ, জলছাপ আর রঙিন কালির জটিল নকশার পুরোনো দলিলে হস্তাক্ষরে সাজানো আছে মানুষের বিবাদের ধারাভাষ্য। এককথায় মামলা-মোকদ্দমার নথিপত্র, যা এখন ‘অ্যান্টিক’ বা পুরোনো নিদর্শন। কাগজের বিবর্ণতা ও অক্ষরের টেক্সচার অনেক ক্ষেত্রে পাঠযোগ্যতাকে হ্রাস করেছে। এই দলিলের জমিনে আরহাম উল হক চৌধুরীর প্রবাদ-প্রবচনের শারীরিক অবয়ব চিত্রায়ণ করেছেন বাংলা অক্ষরমালার আকৃতিগত সৌন্দর্য বিন্যাসে।
বলা যায়, এ যেন ইতিহাস, শিল্প ও ভাষার নন্দনতাত্ত্বিক সম্মিলন, যেখানে লেখার সৌন্দর্য ছাপিয়ে সময়, স্মৃতি ও সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের বয়ানও তৈরি হয়েছে।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ব্রিটিশ রাজ কিংবা পাকিস্তান আমলের নকশাখচিত দৃশ্যরূপ ও বিভিন্ন মামলার হস্তলিপি শিল্পীর নির্মিত বচন-অবয়বকে করেছে দৃষ্টিনন্দন। প্রবচন ও বচনের সাদৃশ্য–অবয়বে লোকজ ভাষার গভীরতা ও তাত্ত্বিক ভার সম্পূর্ণটা স্পষ্ট হয়েছে, তা বলা যায় না। কারণ, প্রবচনগুলোর ব্যাখ্যা বহুমাত্রিক। তবে ভাব ও ব্যঞ্জনা পুরোটা না উঠলেও ক্যালিগ্রাফির বিন্যাসে রয়েছে একধরনের ছন্দময় ভাবনা, যা ফারসি ‘তুঘরা’ অনুপ্রেরণায় হলেও স্বতন্ত্রভাবে ‘বাংলা’ই।
গবেষণা তো অবশ্যই, এ ছাড়া আরহামের শৈলীতে স্পষ্ট একধরনের কাব্যিক অনুশীলনও লক্ষণীয়, যেখানে কেবল অক্ষরের বিন্যাস নয়, কাগজের গঠন, রং এবং লেখার গতিপথ মিলে এক দৃশ্যকাব্য গড়ে ওঠে। কাজগুলো দর্শককে শুধু দেখে যাওয়ার সুযোগ দেয় না, বরং প্রতিটি বচনের মধ্যে লুকানো সময়-স্মৃতি অনুধাবনের আহ্বান জানায়।
শিল্পীর মতে, প্রাচীন বচনগুলোর শক্তি শুধু বাক্যেই নয়, বরং এগুলো বহন করে সময়ের গভীর দর্শন। আর পুরোনো দলিল, যেগুলো অনেক সময় ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে যেতে বসেছে, তাদের শরীরে যখন এসব বচনের রেখা ওঠে, তখন সেটা হয় অতীত ও বর্তমানের মধ্যে একধরনের নীরব সংলাপ।
শিল্পীর এই সত্য অনুধাবন করা যায় ‘কলের পুতুল’, ‘অচিন পাখি’, ‘ভরাডুবি’, ‘গরুর শোকে শকুনি কাঁদে’, ‘কালি-কলম-মন লিখে তিনজন’, ‘ভেজা বেড়াল’ প্রবচন লিখিত ক্যালিগ্রাফিতে। তবে কিছু কাজে ভাব আর রূপে দ্বন্দ্ব রয়েছে—দৃশ্যত চমকপ্রদ হলেও বচনের গভীর অর্থ শিল্পের ভিজ্যুয়াল প্রকাশে পুরোপুরি ফুটে ওঠেনি।
আর্টকনের সহযোগিতায় বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত ‘দলিলে দৃশ্যপট’ শিরোনামের এ প্রদর্শনী আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ঐতিহ্যকে কেবল দেখার নয়, বোঝারও প্রয়োজন আছে। আর শিল্পই পারে সেই বোধ জাগাতে।
আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার গ্যালারিতে প্রদর্শনীটি ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত দর্শকের জন্য খোলা থাকবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বচন র
এছাড়াও পড়ুন:
বাঙালির বাঘ সংস্কৃতি: ‘যে বনে বাঘ নেই সে বনে শিয়ালই রাজা!’
বাঘ নিয়ে কত কথাই না বলা যায়! কত কথাই না মনে আসে! যেমন এত বড় প্রাণীটির জন্ম কোথায়, কোথায় বাস করে, কী খায়, কত দিন বাঁচে, কত প্রজাতি, কোন দেশের বাঘ বেশি হিংস্র, কেনই–বা বাঘকে বাংলাদেশের জাতীয় প্রাণী হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয় ইত্যাদি।
বাঙালির ইতিহাস, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আর ঐতিহ্যের ধারায় বেঙ্গল টাইগার এমন একটি প্রাণী, যা অহংকার, গর্ব, আনন্দ, ভয় আর সম্মানের প্রতীক। বিশাল আকৃতি, শক্তি, হিংস্রতা, রাজকীয় চলাফেরা আর দাম্ভিক আচার-আচরণের কারণে সারা বিশ্বে এই বাঘের আলাদা খ্যাতি রয়েছে।
বলা হয়, সুন্দরবন রক্ষায় সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত বনরক্ষক থাকলেও এ বনের প্রকৃত পাহারাদার বেঙ্গল টাইগার। জানা যায়, লন্ডনের রয়েল পরিবারের একজন দক্ষ শিকারি সুন্দরবনের বাঘ শিকারে বীরত্বের পরিচয় দেন। সেই থেকেই বাংলার বাঘের ঘাড়ে ‘রয়েল’ শব্দটি চেপে বসে।
বাঘ হলো বিড়াল গোত্রের সবচেয়ে বড় প্রাণী। বাংলাদেশের জাতীয় পশু বাঘ শুধু একটি প্রাণী নয়; বরং শক্তি, সাহস ও সম্মানের প্রতীক। বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য, মিথ ও লেজেন্ডে বাঘের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। সুন্দরবনের স্থানীয় জনগণ ও শিকারিরা বাঘকে ‘মামা’ বা ‘বড় মামা’ বলে সম্বোধন করেন। এটা সবার জানা যে মামা-ভাগনের সম্পর্ক সবচেয়ে মধুর, তাই বাঘকে মামা বলে সম্বোধন করলে সে আমাদের কোনো ক্ষতি করবে না, এই বিশ্বাস ও ভয় পাওয়ার কারণেই মামা বলে ডাকা হয়।
দেশে বীরত্ব ও শক্তির প্রতীক হিসেবে বাঘকে দেখা হয়। এ দেশে কেউ কোনো সাহসী ভূমিকা রাখলে তাকে বাঘের সঙ্গে তুলনা করা হয়। যেমন বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলকে শক্তি, সাহস, উৎসাহ প্রদানের জন্য ‘টাইগার বাহিনী’ নামে ডাকা হয়। আবার দেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের লোগো ‘বেঙ্গল টাইগার’।
এ ছাড়া ক্রিকেটকে নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া ও লেখা হয়। যেমন ‘বাঘের গর্জন শুনেছে বিশ্ব’, ‘বাঘের গর্জন দেখবে বিশ্ব’, ‘গর্জে ওঠো বিশ্ব’, ‘গর্জনে থাক বিজয়ী অর্জন’, ‘বাঘ দেখে দৌড়ো’ ইত্যাদি।
দেশের বিভিন্ন স্থানের নামে বাঘের প্রভাব চোখে পড়ে। যেমন বাঘমারা, বাঘা বিল, বাঘমারী, বাঘা বাজার, বাঘাবাড়ী, টাইগার পয়েন্ট, রয়্যাল চত্বর ইত্যাদি।
আমাদের সুন্দরবনের অত্যন্ত সমৃদ্ধ প্রাণী বাঘ নিয়ে অনেক গান, কবিতা, প্রবাদ রচিত হয়েছে, যা বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। যেমন প্রভাত কুমারীর কবিতা ‘হালুম হালুম হুম! ভেঙেছে মোর ঘুম। বলো তো কী চাই? হরিণছানা চাই’, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা ‘মেঘলা দিনে দুপুরবেলা যেই পড়েছে মনে, চিরকালীন ভালোবাসার বাঘ বেরুলো বনে।’
আবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঘ নিয়ে বেশ কয়েকটি গান ও কবিতা লিখেছেন। এ ছাড়া তিনি শৈশবে তাঁর দাদার সঙ্গে বাঘ শিকারে গিয়েছিলেন বলেও জানা যায়। জানা যায়, মোগল আমলে বাঘ শিকার করা ছিল আভিজাত্য ও জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। সে সময়ে মোগল সম্রাট আকবর শুধু তির-ধনুক নিয়ে শিকারে বের হতেন। তাঁর ছেলে জাহাঙ্গীর সাধারণত হেঁটে শিকারে যেতেন। এ ছাড়া মোগল সম্রাটদের তলোয়ার ও কামানে বাঘের প্রতিরূপ খোদাই লক্ষ করা যায়।
বাংলাদেশ ও ভারতীয় চলচ্চিত্রেও নামকরণে বাঘের প্রভাব চোখে পড়ে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো: ‘বাঘের বাচ্চা’, ‘বাংলার বাঘ’, ‘বাঘের থাবা’, ‘বাঘের হুংকার’, ‘বাঘ সিংহের লড়াই’, ‘বাঘবন্দী খেলা’, ‘বাঘে মহিষে লড়াই’, ‘টাইগার: দ্য বস’। এ ছাড়া ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমার প্রচারের জন্য পাপেট বাঘ ব্যবহার করা হয়েছে।
হিন্দি সিনেমা রয়েছে ‘এক থা টাইগার’, ‘দ্য টাইগার’, ‘টাইগার নাম্বার ওয়ান’ ইত্যাদি। বাংলা নাটকের নামেও বাঘের প্রভাব লক্ষণীয়। যেমন ‘বাঘ’, ‘বাইরে বাঘ ঘরে বিড়াল’, ‘বাঘ যখন বিড়াল’, ‘দিনে বাঘ রাতে বিড়াল’, ‘বাঘ বন্দি বিড়াল’, ‘নীল কমলের বাঘ’, ‘বাঘের শিন্নি’, ‘নিজের এলাকায় সবাই বাঘ’, ‘বাঘ না বাঘিনী’ ইত্যাদি।
অনেক প্রবাদ–প্রবচনে বাঘের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। যেমন ‘বাঘের ঘরে ঘোঘের বাসা’, ‘মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে’, ‘কাল হয়েছে অকাল, ছাগলে চাটে বাঘের গাল’, ‘আগে গেলে বাঘে খায়/ পরে গেলে সোনা পায়’, ‘যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যে হয়’, ‘যে বনে যায়, সেই বাঘ হয়’, ‘যে বনে বাঘ নেই সে বনে শিয়ালই রাজা!’ ইত্যাদি।এ ছাড়া বিভিন্ন সিনেমায় বাঘের সঙ্গে তুলনা করে গানের উপস্থিতি চোখে পড়ে। সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত সিনেমা ‘হীরক রাজার দেশে’ ‘পায়ে পড়ি বাঘ মামা’ গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। আবার ‘দস্যু বনহুর’ সিনেমায় ‘ডোরাকাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়’ গানটির শিল্পী হলেন আজাদ রহমান। জনপ্রিয় গানটিতে সুরও করেছেন তিনি। ‘আমীর ফকির’ সিনেমার গান ‘বাঘ শিকার যাইমু/বন্দুক লইয়া রেডি হইলাম আমি আর মামু! মামু আমার বেজায় রসিক কেন করে খামু খামু’ একসময় খুব জনপ্রিয় ছিল।
এদিকে ‘গ্রেপ্তার’ ছবির গান ‘আগে গেলে বাঘে খাবে’, ‘হাবিলদার’ সিনেমায় কুমার বিশ্বজিৎ গেয়েছেন ‘তুমি বাঘের মুখে পড়েছ, ছাড়া পাবে না, ও তুমি মরেছ!’ এ ছাড়া ‘বাংলার বাঘ তুমি, বাংলার অহংকার, তোমাতে গর্জন, তোমাতে হুংকার’ গানটি মূলত মাশরাফি বিন মুর্তজাকে উৎসর্গ করে লেখা। পাশাপাশি জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নকুল বিশ্বাসের ‘আমি বাঘ তুই হরিণের পোলা’ গানটি পৃথিবীর সব সংখ্যালঘু, নির্যাতিত, দুর্বল মানুষের জন্য লেখা।
অনেক প্রবাদ–প্রবচনে বাঘের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। যেমন ‘বাঘের ঘরে ঘোঘের বাসা’, ‘মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে’, ‘কাল হয়েছে অকাল, ছাগলে চাটে বাঘের গাল’, ‘আগে গেলে বাঘে খায়/ পরে গেলে সোনা পায়’, ‘যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যে হয়’, ‘যে বনে যায়, সেই বাঘ হয়’, ‘যে বনে বাঘ নেই সে বনে শিয়ালই রাজা!’ ইত্যাদি।
আবার মানুষও তার সাহসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাঘ হয়ে উঠতে পারে। যেমন বাঘের মতো সাহসী ও সুঠামদেহী সুপুরুষ শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হককে বলা হতো বাংলার বাঘ। আবার বাঘা যতীন ছিলেন বাংলার প্রধান বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তর দলের প্রধান নেতা। খেলাধুলায় বাঘের উপস্থিতি দেখা যায়। যেমন গ্রামীণ জীবনে বাঘবন্দী খেলা, বাঘ-ছাগল খেলা চোখে পড়ে।
পরিবেশবিদদের মতে, বাঘ সারা বিশ্বে একটি বিপন্ন প্রাণী। তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বের ১৩টি দেশে ৩ হাজার ৮৪০টি বাঘ রয়েছে। এদের মধ্যে ভারত-বাংলাদেশের সুন্দরবন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতির বাঘের আবাসভূমি। বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ক্রমে কমছে বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি।
জানা যায়, ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি। এরপর ১৯৮২ সালের জরিপে ৪২৫টি এবং ১৯৮৪ সালে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানা যায়। ২০১৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে দাঁড়ায় ১০৬টিতে। হঠাৎ সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ৪০০ থেকে ১০৬টিতে এসে দাঁড়ালে সারা বিশ্বে হইচই পড়ে যায়। ২০১৮ সালের সর্বশেষ বাঘশুমারিতে সুন্দরবনে ১১৪টি বাঘ পাওয়া গিয়েছিল। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ সালের জরিপে পাওয়া গেছে ১২৫টি।
বাংলাদেশের সুন্দরবন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতির বাঘের আবাসভূমি। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ, বিশালতা, নদ-নদীর পর্যাপ্ততা, বনের গভীরতা, শিকারের সহজলভ্যতা বাঘ বসবাসের জন্য খুবই উপযোগী। সে কারণে একক বন হিসেবে সুন্দরবনে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাঘ বাস করে। আগে এ বনে বাঘের সংখ্যা অত্যধিক ছিল। বর্তমানে এর সংখ্যা কমে আসছে।
ইউএনডিপির হিসাবমতে, সুন্দরবন থেকে বছরে অন্তত ২০টি করে বাঘ কমে যাচ্ছে। অন্য এক হিসাবমতে, প্রতিবছর গড়ে ৮-১০টি বাঘ বিভিন্ন কারণে মারা যায়। বন বিভাগ ও বিশেষজ্ঞরা বাঘের মৃত্যুর জন্য ৮টি কারণকে চিহ্নিত করেছেন। যথা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা-লবণাক্ততা, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বনের ঘনত্ব কমে যাওয়া, খাদ্যসংকট, বার্ধক্যজনিত, পুরুষ বাঘ কর্তৃক বাচ্চা খেয়ে ফেলা, ফাঁদ পেতে ও খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে হত্যা, লোকালয়ে প্রবেশের পর গ্রামবাসী কর্তৃক পিটিয়ে হত্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাঘের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছে। এক জরিপে দেখা যায়, গণপিটুনি, রোগে ভুগে এবং বিভিন্ন কারণে গত দুই যুগে ৬০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে।
আর ১৯৮৩-২০০৩ সময়ে সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন কারণে ৫৫টি বাঘ মারা যায়। তবে বন বিভাগের তথ্যমতে, ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সুন্দরবন এবং তৎসংলগ্ন পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিভিন্ন কারণে ১৬টি বাঘ মারা গেছে।
বাঘ সুন্দরবনের প্রতিবেশের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এর সুরক্ষা বনের প্রতিবেশকে সুরক্ষিত করে। দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবনের বেঙ্গল টাইগার। সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা হ্রাস পেলে স্বাভাবিকভাবেই হরিণসহ অন্য প্রাণীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাবে। ফলে বনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হতে পারে। বাঘকে সুন্দরবনের বনজ সম্পদসহ অন্যান্য প্রাণীকুলকে সংরক্ষণের জন্য বিশেষ প্রয়োজন। বনের অভিভাবক হিসেবে বাঘের সংরক্ষণ প্রয়োজন, যা পরিবেশ, সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য ও মানবজীবনযাত্রাকে রক্ষা করবে। তাহলে বাঁচবে আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশ তথা দেশ।
খ ম রেজাউল করিম সহযোগী অধ্যাপক ও প্রধান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ, যশোর