Prothomalo:
2025-11-03@10:46:37 GMT

বিবাদ ও বচনের মেলবন্ধন

Published: 24th, April 2025 GMT

ছাপ, জলছাপ আর রঙিন কালির জটিল নকশার পুরোনো দলিলে হস্তাক্ষরে সাজানো আছে মানুষের বিবাদের ধারাভাষ্য। এককথায় মামলা-মোকদ্দমার নথিপত্র, যা এখন ‘অ্যান্টিক’ বা পুরোনো নিদর্শন। কাগজের বিবর্ণতা ও অক্ষরের টেক্সচার অনেক ক্ষেত্রে পাঠযোগ্যতাকে হ্রাস করেছে। এই দলিলের জমিনে আরহাম উল হক চৌধুরীর প্রবাদ-প্রবচনের শারীরিক অবয়ব চিত্রায়ণ করেছেন বাংলা অক্ষরমালার আকৃতিগত সৌন্দর্য বিন্যাসে।

বলা যায়, এ যেন ইতিহাস, শিল্প ও ভাষার নন্দনতাত্ত্বিক সম্মিলন, যেখানে লেখার সৌন্দর্য ছাপিয়ে সময়, স্মৃতি ও সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের বয়ানও তৈরি হয়েছে।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ব্রিটিশ রাজ কিংবা পাকিস্তান আমলের নকশাখচিত দৃশ্যরূপ ও বিভিন্ন মামলার হস্তলিপি শিল্পীর নির্মিত বচন-অবয়বকে করেছে দৃষ্টিনন্দন। প্রবচন ও বচনের সাদৃশ্য–অবয়বে লোকজ ভাষার গভীরতা ও তাত্ত্বিক ভার সম্পূর্ণটা স্পষ্ট হয়েছে, তা বলা যায় না। কারণ, প্রবচনগুলোর ব্যাখ্যা বহুমাত্রিক। তবে ভাব ও ব্যঞ্জনা পুরোটা না উঠলেও ক্যালিগ্রাফির বিন্যাসে রয়েছে একধরনের ছন্দময় ভাবনা, যা ফারসি ‘তুঘরা’ অনুপ্রেরণায় হলেও স্বতন্ত্রভাবে ‘বাংলা’ই।

গবেষণা তো অবশ্যই, এ ছাড়া আরহামের শৈলীতে স্পষ্ট একধরনের কাব্যিক অনুশীলনও লক্ষণীয়, যেখানে কেবল অক্ষরের বিন্যাস নয়, কাগজের গঠন, রং এবং লেখার গতিপথ মিলে এক দৃশ্যকাব্য গড়ে ওঠে। কাজগুলো দর্শককে শুধু দেখে যাওয়ার সুযোগ দেয় না, বরং প্রতিটি বচনের মধ্যে লুকানো সময়-স্মৃতি অনুধাবনের আহ্বান জানায়।

শিল্পীর মতে, প্রাচীন বচনগুলোর শক্তি শুধু বাক্যেই নয়, বরং এগুলো বহন করে সময়ের গভীর দর্শন। আর পুরোনো দলিল, যেগুলো অনেক সময় ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে যেতে বসেছে, তাদের শরীরে যখন এসব বচনের রেখা ওঠে, তখন সেটা হয় অতীত ও বর্তমানের মধ্যে একধরনের নীরব সংলাপ।

শিল্পীর এই সত্য অনুধাবন করা যায় ‘কলের পুতুল’, ‘অচিন পাখি’, ‘ভরাডুবি’, ‘গরুর শোকে শকুনি কাঁদে’, ‘কালি-কলম-মন লিখে তিনজন’, ‘ভেজা বেড়াল’ প্রবচন লিখিত ক্যালিগ্রাফিতে। তবে কিছু কাজে ভাব আর রূপে দ্বন্দ্ব রয়েছে—দৃশ্যত চমকপ্রদ হলেও বচনের গভীর অর্থ শিল্পের ভিজ্যুয়াল প্রকাশে পুরোপুরি ফুটে ওঠেনি।

আর্টকনের সহযোগিতায় বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত ‘দলিলে দৃশ্যপট’ শিরোনামের এ প্রদর্শনী আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ঐতিহ্যকে কেবল দেখার নয়, বোঝারও প্রয়োজন আছে। আর শিল্পই পারে সেই বোধ জাগাতে।

আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার গ্যালারিতে প্রদর্শনীটি ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত দর্শকের জন্য খোলা থাকবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বচন র

এছাড়াও পড়ুন:

চীনের ‘৯৯৬’ ছড়িয়ে পড়ছে সিলিকন ভ্যালিতে, আপনি কী করবেন

‘৯টা থেকে ৫টা’ পর্যন্ত কাজ করাকে সাধারণ জীবিকা উপার্জনের উপায় বলা হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে এখন প্রতিযোগিতামূলক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌড়ে এগিয়ে থাকতে হলে ‘৯৯৬’ কাজ করতে হয়। অন্তত আশপাশের মানুষকে দেখাতে হয় যে আপনি কাজটাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।

‘৯৯৬’ মানে হচ্ছে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত, সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করা। এ ধারার যাত্রা শুরু হয় চীনের কঠিন পরিশ্রমী টেক ইন্ডাস্ট্রি থেকে। ২০২১ সালে চীনের একটি উচ্চ আদালত কোম্পানিগুলোকে ৭২ ঘণ্টার কাজের সপ্তাহ চাপিয়ে দেওয়া নিষিদ্ধ করে। কিন্তু তবু ক্যালিফোর্নিয়ার টেক কর্মীরা এই ধারণাটিকে আঁকড়ে ধরে আছে এবং সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় এক্স আর লিংকডইনে এটি নিয়ে অবিরত পোস্ট করে যাছে।

আরও পড়ুনএআই বাড়াচ্ছে কাজের চাপ, চীনের ‘৯৯৬’ সংস্কৃতি কি ফিরছে১২ অক্টোবর ২০২৫

এখনো এর প্রমাণ মূলত গল্প-গুজব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই সীমিত। তবে কিছু কোম্পানি চাকরির বিজ্ঞাপনে কর্মী ৭০ ঘণ্টার বেশি কাজ করবেন সপ্তাহে—এই প্রত্যাশা স্পষ্ট করা থাকছে। শোনা যাচ্ছে, নির্বাহীরা চাকরিপ্রার্থীদের জিজ্ঞাসা করছেন, তাঁরা কি এ ধরনের সময়সূচি মানতে রাজি। আর ‘র‍্যাম্প’ নামের একটি ফাইনান্সিয়াল অপারেশন স্টার্টআপ এক ব্লগ পোস্টে জানিয়েছে, এ বছরের প্রথমভাগে সান ফ্রান্সিসকোতে শনিবারের দিনে করপোরেট ক্রেডিট কার্ড লেনদেন বেড়েছে, যেটি তারা ধরে নিয়েছে, মানুষ বেশি উইকেন্ডেও কাজ করছেন।

যদিও সিলিকন ভ্যালির জন্য শব্দটি নতুন, ৯৯৬ আসলে বহুদিনের চর্চার এক তীব্র সংস্করণ। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ মার্গারেট ও’মারা, যিনি ‘দ্য কোড: সিলিকন ভ্যালি অ্যান্ড দ্য রিমার্কিং অব আমেরিকা’ বইয়ের লেখক, বলছেন, ১৯৬০ সাল থেকেই যখন সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিগুলো তীব্র প্রতিযোগিতায় ছিল, তখন থেকেই অনেক টেক কোম্পানির কঠোর, দীর্ঘ সময় কাজ করার সংস্কৃতি ছিল। বাইরে থেকে তারা ছিল ‘ক্যালিফোর্নিয়া ক্যাজুয়াল’ কিন্তু ভেতরে ‘পুরোনো দিনের কর্মপাগল’।

বার্কলের সমাজবিজ্ঞানী ক্যারোলিন চেন। তিনি ‘ওয়ার্ক প্রে কোড’ বইয়ের লেখক। তিনি বলেন, টেক কর্মীদের একধরনের তীব্র, প্রায় ধর্মীয় ভক্তিভরে কাজ করার মানসিকতা সিলিকন ভ্যালির সংস্কৃতির অংশ। তিনি আরও বলেন, টেকে একধরনের ‘নায়কোচিত পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতি’ আছে, যা সবার কাছেই সব সময় কাজ করার প্রত্যাশা তৈরি করে।

মার্গারেট ও’মারা মনে করেন, এই হ্যাস্টল কালচার যাদের পরিবার বা অন্য দায়িত্ব আছে, তাদের নাগালের বাইরে এবং এটি এমনিতেই একরঙা (কম বৈচিত্র্যময়) শিল্প খাতকে আরও সংকীর্ণ করে তুলতে পারে। তবে যারা বড় কোনো আইডিয়ায় প্রথমেই ঢুকে পড়তে পেরেছে এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে রাজি ও সক্ষম, তাদের জন্য পুরস্কার বিশাল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় এখন যেভাবে বিপুল বিনিয়োগ আসছে, তা ভবিষ্যতের সম্পদকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। একই সময়ে টেক কর্মীরা আগের তুলনায় অনেক বেশি অনিরাপদ বোধ করছেন।

কয়েক বছরের ছাঁটাই, উচ্চ সুদের হার আর অনিশ্চিত মুনাফার পরে টেক ইন্ডাস্ট্রি—যা একসময় দারুণ বেনিফিটের জন্য পরিচিত ছিল—এখন কড়াকড়ি চালু করেছে। ইলন মাস্কের নিজেকে ঘোষিত ‘অত্যন্ত কঠোর’ কাজের ধরন এখন আর পুরো ইন্ডাস্ট্রি থেকে আলাদা নয়। সিলিকন ভ্যালিতে এখন ‘হার্ড টেক’ যুগ চলছে, আর পাগলের মতো কাজ করা (অথবা অন্তত এমনভাবে কাজের কথা বলা) হয়ে উঠেছে নতুন নিয়ম।
ও’মারা বলেন, ২০২০ সালের সিলিকন ভ্যালি আর ২০২৫ সালের সিলিকন ভ্যালির অগ্রাধিকার ভিন্ন।

আরও পড়ুনদৈনিক ১২ ঘণ্টা, সপ্তাহে ছয় দিন কাজের দিকেই কি যাচ্ছে যুক্তরাজ্য১৩ অক্টোবর ২০২৫

অতিরিক্ত কাজে মানবিক ক্ষতি

অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার মানবিক ক্ষতি প্রমাণিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করলে ৩৫ শতাংশ বেশি স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি হয় এবং ১৭ শতাংশ বেশি হৃদ্‌রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। অতিরিক্ত কাজের ফলে কর্মীদের মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে যায়, মনোযোগ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয় এবং সৃজনশীলতা হ্রাস পায়।

ব্যবসার জন্যও ক্ষতিকর ‘৯৯৬’

কোম্পানিগুলো মনে করতে পারে, ৭০ ঘণ্টার কর্মসপ্তাহ উৎপাদনশীলতা বাড়ায়, কিন্তু গবেষণা বলছে, উল্টো কথা। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ জন পেনক্যাভেল দেখিয়েছেন, সপ্তাহে ৫০ ঘণ্টার পর উৎপাদনশীলতা দ্রুত কমতে থাকে। সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করা কর্মীদের উৎপাদন প্রায় ৫৫ ঘণ্টা কাজ করা কর্মীদের সমান, অর্থাৎ বাড়তি পরিশ্রম কোনো ফল দেয় না।

কর্মীদের করণীয়: সচেতনতা ও আত্মরক্ষা

এই সংস্কৃতি অর্থাৎ সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টার কর্মসংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ার আগেই কর্মীদের সচেতন হওয়া জরুরি।

১. সতর্ক থাকুন
চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে যদি ‘২৪/৭ উপস্থিতি’ বা ‘অসীম প্রাপ্যতা’র উল্লেখ থাকে, সাবধান হোন। সাক্ষাৎকারে সরাসরি জিজ্ঞাসা করুন সাপ্তাহিক গড় কাজের সময় ও ওভারটাইম নিয়ে।

২. আইনি অধিকার সম্পর্কে জানুন
আপনি আওয়ারলি (ঘণ্টা অনুযায়ী) নাকি এক্সেম্পট (ওভারটাইম ছাড়া স্থায়ী বেতনভুক্ত), তা বুঝুন।

৩. সীমানা নির্ধারণ করুন
নিজের কাজের সময় নথিবদ্ধ করুন, ছুটি (পিপিও) অবশ্যই ব্যবহার করুন এবং নিয়মিত কাজের সময়ের বাইরে প্রাপ্যতার বিষয়ে স্পষ্ট যোগাযোগ রাখুন।

দীর্ঘ মেয়াদে টিকে থাকার কৌশল: বেশি নয়, স্মার্ট কাজ

চীনের ৯৯৬ অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, অতিরিক্ত কাজ স্বল্প মেয়াদে ফল দিলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা ভালো ফল আনে না। কর্মীর চাকরি ছেড়ে দেওয়া, উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া এবং সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

স্মার্ট কোম্পানিগুলো এখন এআইকে ব্যবহার করছে মানুষের কাজের চাপ কমাতে, যাতে কর্মীরা সৃজনশীল ও কৌশলগত কাজে মনোযোগ দিতে পারেন সীমিত ও ভারসাম্যপূর্ণ সময়ের মধ্যে। যেসব প্রতিষ্ঠান ফ্লেক্সিবল কাজের সুযোগ, সত্যিকারের ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্স এবং টেকসই ক্যারিয়ার তৈরি করছে, তারা এখন প্রতিভাবান কর্মী নিয়োগে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাচ্ছে।

তথ্যসূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও ফোর্বস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জামায়াতের
  • চীনের ‘৯৯৬’ ছড়িয়ে পড়ছে সিলিকন ভ্যালিতে, আপনি কী করবেন