পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকমুক্ত ঘোষণাকারী হোটেলকে পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে স্বীকৃতি দেবে সরকার।

উপদেষ্টা বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য, সন্তানদেরকে নির্মল বাতাসে নিশ্বাস নেয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, পলিথিন সস্তা না, এর বিনিময়ে আমাদের কঠিন মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে, ক্যান্সারের মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। পলিথিন শপিং ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাটের বা চটের ব্যাগ ব্যবহারের আহ্বান জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার রাত ৭ টায় শুরু হয়ে ৯টা পর্যন্ত  কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধে কক্সবাজারস্থ সকল হোটেল মালিকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

সভায় তিনি সমুদ্র তট ও আশপাশের এলাকায় সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহারের বিরূপ প্রভাব তুলে ধরেন এবং তা বন্ধে হোটেল মালিকদের সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করেন।

তিনি বলেন, আদালত উপকূলীয় জেলাগুলোতে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। 

নিষিদ্ধ পলিথিন ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন অগ্রগতি মনিটরিং করার জন্য নিয়মিত হোটেলে লোক পাঠানোর  জন্য ডিসিকে নির্দেশনা দেন।

এসময় তিনি সংশ্লিষ্ট সবার সাথে মিলে ওয়ার্ক প্ল্যান প্রস্তুত করার নির্দেশনা প্রদান করেন।

উপদেষ্টা বলেন, পর্যটন আমাদের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাত হলেও, পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। প্লাস্টিক দূষণ শুধু প্রকৃতিকে নয়, পর্যটনকেও হুমকির মুখে ফেলছে। তিনি সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান, যাতে কক্সবাজার একটি পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত হতে পারে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো.

সাইফউদ্দীন শাহীন, কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসক রুবাইয়া আফরোজসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, হোটেল মালিকদের প্রতিনিধি ছাড়াও, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক কক্সবাজারে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে গৃহীত নানা পরিকল্পনা তুলে ধরেন এবং হোটেল মালিকদের প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দেন।

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জমির উদ্দিন প্লাস্টিকের দূষণ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে উপস্থাপনা করেন। তিনি জুলাই ২০২৫ এর মধ্যে কক্সবাজারের ৫০০ হোটেল ও ৩০০ হোটেলে বাস্তবায়ন সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক করার উদ্যোগের কথা জানান।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব শ উপদ ষ ট স ঙ গ ল ইউজ প ল স ট ক ব যবহ র উপদ ষ ট পর ব শ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা

বছর পাঁচেক আগেও ধান কাটার শ্রমিকেরা বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় থাকতেন। বৈশাখে হাওরের বুকজুড়ে সবুজ ধান যখন সোনালি রঙ ছড়াতে শুরু করে, তখন থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাওরে আসতে থাকেন ধান কাটার শ্রমিকেরা। কিন্তু, এই চিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। হাওরের কৃষক এখন ধান কাটার জন্য বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে কৃষকের শ্রম এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে। তবে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কৃষি শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।

তিন বছর হলো ধান কাটার পেশা ছেড়েছেন মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের মো. মকবুল মিয়া। এখন তিনি সারাবছর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।

আরো পড়ুন:

খুলনার বরফশ্রমিক
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি

ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত

মকবুল মিয়া বলেন, ‘‘আগে বছরের ছয় মাস বর্ষায় নৌকা বাইতাম, আর হুগনা সিজন আইলে নিজের জমি চাষ করতাম, আবার মাইনষের জমিতেও কামলা দিতাম। যা আয় অইতো তাই দিয়া আমরার ছয়জনের সংসার চইল্যা যাইতো। কিন্তু, যহন থেইক্যা নতুন নতুন মেশিন হাওরে আইতাছে, তহন থেইক্যা আমরার আর বেইল নাই।’’

‘‘কেউ আর আমরারে আগের মতন দাম দেয় না। কাম করলেও ঠিকমতো টেহা পাই না, তাই পুষায় না,’’ বলেন এই কৃষিশ্রমিক।

মকবুলের মতো ধান কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, ঝাড়া, কাঁধে বহন করার মতো স্বাধীন পেশা ছেড়েছেন অষ্টগ্রামের ফয়জুল, ইটনার শামছুল মিয়া, নিকলীর ফরিদ উদ্দিনসহ অসংখ্য শ্রমিক। এক সময় যারা এ পেশায় দলবেঁধে কাজ করতেন, এখন দৃশ্যপট পুরোটাই ভিন্ন। ধান কাটার পেশা বদলে তারা এখন কেউ রিকশাচালক, কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি-ফুচকার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তারা বলছেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির গতির সঙ্গে তারা কখনো তাল মেলাতে পারবেন না। কৃষকরাও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেন না। বেশি জমি যাদের আছে তারাও আধুনিক পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। যে কৃষক অল্প জমিতে চাষাবাদ করেছেন, তারাও আর পয়সা খরচ করে কৃষিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করছেন না। তারা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। ফলে খেটে খাওয়া শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপাকে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রচুর সময় লাগে। ফসল কাটার পরে বহন ও মারাই করা, তারপর বস্তায় সংরক্ষণ করার জন্যও অনেক শ্রমিকের দরকার। এটুকু ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিকের সারা দিনের কাজ। তার জন্য মজুরি গুনতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু, এ কাজে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে সময় এবং অর্থ দুটোই কম লাগে।

বৈশাখে বর্ষার পানি ও বৈরী আবহাওয়া না থাকায় কৃষকেরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়-তুফান শুরু হলে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তারা যে পদ্ধতিতে ধান কাটা সহজ এবং দ্রুত হয় সেই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার পুরো জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর এলাকাতেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এই ধান থেকে এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ধান কাটতে এ বছর হাওর অঞ্চলে ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এই সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটতে কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ৪১৩টি ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করছেন। 

জেলা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ উদ্দিন বলেন, ‘‘মানুষের পেশা পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়। কিন্তু, কৃষি এমন একটা পেশা, যারা এ পেশা রপ্ত করেছেন তাদের জন্য নতুন পেশায় আসা খুব কঠিন। বর্তমানে কৃষিকাজে যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে কৃষিশ্রমিকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’’

‘‘শুধু কৃষিতেই নয়, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে,’’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারকেই সুদৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান, মাঠে যদি কৃষক ও শ্রমিক ন্যায্য শ্রমমূল্য না পান, তাহলে কৃষিও একদিন হুমকির মুখে পড়বে।’’

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ