এখনকার সময়ে নিজের নামে একটি ব্যাংক হিসাব থাকা সবার জন্য জরুরি। তিনি যেকোনো শ্রেণি, পেশা ও আয়ের মানুষ হোন না কেন, এই হিসাব প্রয়োজন। পাশাপাশি এখন আয় না করলেও শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক অর্ধেক মানুষের ব্যাংক হিসাব আছে। আর বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) হিসাব ধরলে আরও বেশি মানুষ আর্থিক সেবার আওতায় এসেছেন।

যদিও ব্যাংক হিসাব ও এমএফএস হিসাব এক নয়। কারণ, এমএফএস মূলত টাকা স্থানান্তর প্ল্যাটফর্ম। এর মাধ্যমে কিছু কেনাকাটা ও বিল পরিশোধ করা যায়। পাশাপাশি সীমিত আকারে সঞ্চয়ের সুবিধা রয়েছে। এ জন্য পুরোপুরি সঞ্চয়ের প্রবণতা গড়ে তুলতে ব্যাংক হিসাবের বিকল্প নেই। আবার আর্থিক জ্ঞান বাড়াতেও ব্যাংক হিসাব প্রয়োজন।

কীভাবে ব্যাংক হিসাব খুলবেন

এখন আমরা তুলে ধরব কীভাবে আপনি ব্যাংক হিসাব খুলবেন। একটি হিসাব খোলার মাধ্যমে আপনার সঙ্গে ব্যাংকের সম্পর্ক শুরু হবে। প্রথমে আপনি ছোট অঙ্কের টাকা জমা করবেন। একসময় প্রয়োজনে কিছু ঋণ নেবেন। এটাই ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম—আমানত নেওয়া ও ঋণ দেওয়া।

তাহলে জেনে নিই, ব্যাংক হিসাব খুলতে কী প্রয়োজন। আগের চেয়ে ব্যাংক হিসাব খোলা কিন্তু এখন বেশ সহজ হয়েছে। এখন ব্যাংকে না গিয়েও ঘরে বসে অ্যাপসের মাধ্যমে হিসাব খোলা যায়। যে ব্যাংকের হিসাব খুলতে চান, সেই ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গেলে তা জানা যায়।

তবে প্রক্রিয়া যতই সহজ হোক না কেন, কিছু তথ্য ও ছবি তো দিতেই হবে। এ জন্য প্রয়োজন আপনার নিজের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), নমিনির ছবি ও এনআইডি এবং ওই ব্যাংকে হিসাব রয়েছে, এমন একজন পরিচয়দানকারী; সঙ্গে সবার স্বাক্ষর তো লাগবেই। জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংক যোগাযোগ করবে, এমন একজনের নাম–ঠিকানাও দিতে হবে। প্রতিটি হিসাব খোলার সময় গ্রাহক পরিচিতি তথ্য (কেওয়াইসি) জমা দিতে হয়। এখানে নাম–পরিচয়ের পাশাপাশি পেশা, অর্থের উৎস, মাসিক আয় ও ব্যয়ের তথ্য দিতে হবে। প্রয়োজন হলে ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই–টিআইএন) নম্বরও জমা নেয় কিছু কিছু ব্যাংক। ই–টিআইএন জমা দিলে সুদের ওপর ৫ শতাংশ কর ছাড় পাওয়া যায়।

হিসাব খোলার ফরমেই দিতে হবে আপনি কী কাজে হিসাবটি ব্যবহার করতে চান। ওই হিসাবে আনুমানিক কী পরিমাণ লেনদেন হবে, প্রতি মাসে নগদ ও চেকে কত জমা–উত্তোলন হবে, তার তথ্যও দিতে হবে।

হিসাব খোলার সময়ই আপনি কী কী সেবা নেবেন, তার চাহিদা দিতে পারেন। যেমন এটিএম কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও এসএমএস অ্যালার্ট। আর একটি হিসাব খোলার জন্য আপনাকে কতবার স্বাক্ষর করতে হবে, তার হিসাব নেই।

কোন হিসাবে কী কাগজপত্র লাগবে

দেশে একজন ব্যক্তি নানা ধরনের ব্যাংক হিসাব খুলতে পারেন। এসব হিসাব খোলার নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। ব্যাংকভেদে এই নিয়মের কিছুটা তারতম্য রয়েছে। ব্যবসায়িক হিসাব খুলতে প্রয়োজন আরও বাড়তি কিছু তথ্য।

একক মালিকানাধীন ব্যবসায়িক হিসাব

• ব্যাংকের নির্দিষ্ট আবেদনপত্র (সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তার সামনে স্বাক্ষর করতে হবে)

• পরিচিতিদানকারী ব্যক্তি দ্বারা স্বাক্ষর করা দুটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি

• নমুনা স্বাক্ষর (সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তার সামনে স্বাক্ষর করতে হবে)

• স্থানীয় সরকার সংস্থা, যেমন সিটি করপোরেশন, পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন কাউন্সিল কর্তৃক ইস্যুকৃত ট্রেড লাইসেন্সের কপি

• বাড়ি কেনা অথবা আমদানি ও রপ্তানি–সংক্রান্ত কাজে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রয়োজনীয় অনুমতির প্রমাণ

• টিআইএন সার্টিফিকেট

লিমিটেড কোম্পানি হিসাব

• ব্যাংকের নির্দিষ্ট আবেদনপত্র (সংশ্লিষ্ট ব্যাংকারের সামনে স্বাক্ষর করতে হবে)

• কোম্পানির মেমোরেন্ডাম ও আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশনের প্রত্যয়িত অনুলিপি

• ইনকরপোরেশন সার্টিফিকেট

• পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ব্যবসা শুরুর সার্টিফিকেট

• হিসাব খোলা ও পরিচালনার জন্য সব অংশীদারের যথাযথ অনুমতি ও অ্যাকাউন্ট পরিচালনাকারীর প্রত্যয়নপত্র দেখাতে হবে

• নির্দিষ্ট ফরমে পরিচালকদের নাম ও ঠিকানা

• স্বাক্ষরকারীদের ছবি

• ট্রেড লাইসেন্সের কপি

• আবেদনপত্র ও আবেদনকারীদের ছবির পেছনে পরিচিতিদানকারীর স্বাক্ষর

• হিসাব পরিচালনাকারীদের নামের তালিকা, নিয়োগপত্র ও নমুনা স্বাক্ষর

• একক অথবা যৌথ মালিকানাধীন হিসাবের ক্ষেত্রে বর্ণিত নিয়ম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের সব পরিচালক ও মালিকের পরিচিতিমূলক তথ্য

যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব

• ব্যাংকের নির্দিষ্ট আবেদনপত্র (সংশ্লিষ্ট ব্যাংকারের সামনে স্বাক্ষর করতে হবে)

• অংশীদারত্বের চুক্তিপত্র

• অংশীদারদের ঠিকানাসহ নামের তালিকা

• অংশীদারদের সভায় গৃহীত নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের অনুলিপি

• ট্রেড লাইসেন্সের কপি

• স্বাক্ষরকারী বা অংশীদারদের ছবি

• নমুনা স্বাক্ষর (সংশ্লিষ্ট ব্যাংকারের সামনে স্বাক্ষর করতে হবে)

• আবেদনপত্র ও আবেদনকারীদের ছবির পেছনে পরিচিতিদানকারীর স্বাক্ষর

• ব্যক্তিগত হিসাব খোলার ক্ষেত্রে বর্ণিত নিয়মানুযায়ী পরিচালক ও অংশীদারদের পরিচিতিমূলক তথ্য প্রদান করতে হবে। হিসাব খোলা ও পরিচালনার জন্য অংশীদারদের যথাযথ অনুমতি ও হিসাব পরিচালনাকারীর প্রত্যয়নপত্র দেখাতে হবে

• প্রকৃত ব্যবসা ও অংশীদারত্বের প্রমাণ হিসেবে সর্বশেষ পরিচালনা রিপোর্ট ও অডিট রিপোর্ট (যেখানে প্রযোজ্য) প্রদর্শন করতে হবে

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র স মন পর চ ত র জন য র করত ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক মেডিকেল টেকনোলজিস্টকে ‘আওয়ামী লীগের আমলে চাকরি পেয়েছে’ অ্যাখ্যা দিয়ে বিবস্ত্র করে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে।

বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এ মারধরের ভিডিও ধারণের চেষ্টা করলে হামলাকারীরা তিনজনের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।

ভুক্তভোগী মো. গোলাম আজম ফয়সাল চিকিৎসা কেন্দ্রেই ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে কর্মরত। হামলার পর গুরুতর আহতাবস্থায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন।

আরো পড়ুন:

তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন

রাবি ছাত্রদলের কমিটি: সভাপতি-সম্পাদকসহ অধিকাংশেরই ছাত্রত্ব নেই

ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা কেন্দ্রের ২৩ নম্বর কক্ষে ফয়সাল ডিউটিরত অবস্থায় ছিলেন। প্রথমে একজন বহিরাগত এসে ফয়সালের পরিচয় নিশ্চিত করে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই ৭-৮ জন কক্ষে প্রবেশ করে ফয়সালকে ‘আওয়ামী লীগের আমলে চাকরি পেয়েছে’ অ্যাখ্যা দিয়ে এবং কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই মারধর শুরু করে।

এক পর্যায়ে তারা ফয়সালকে টেনেহিঁচড়ে চিকিৎসা কেন্দ্রের বাইরে নিয়ে আসে এবং এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। মারধর শেষে যাওয়ার সময় যারা হামলার দৃশ্য ভিডিও করার চেষ্টা করলে তারা তিনজনের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।

ভুক্তভোগী গোলাম আযম ফয়সাল বলেন, “হামলাকারীদের মধ্যে একজন আরেকজনকে ‘জনি, আর মারিস না’ বলে থামায়। চলে যাওয়ার সময় তারা আমাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকিও দিয়ে যায়।”

নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই একটি ভাড়া বাসায় থাকি। খুব আতঙ্কে দিন পার করছি।” হামলাকারীদের কাউকে চেনেন না বলে মামলার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি বলে জানান তিনি।

এ ঘটনায় চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্মীদের মধ্য আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানান কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক মাফরুহা সিদ্দিকা লিপি। তিনি বলেন, “ফয়সাল আগে আওয়ামী লীগের মিছিল মিটিংয়ে যেত বলে আমরা শুনেছি। এ ঘটনায় আমরা সবাই আতঙ্কিত। কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করলে আমাদের পক্ষে দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে পড়বে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তাকে বহিরাগতরা অত্যন্ত নির্মম ও অমানবিকভাবে প্রহার করেছে। আমরা জনি নামে একজনের কথা শুনেছি, যার নেতৃত্বে এই হামলা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা পুলিশের সহায়তায় জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, “আমি মাত্র বিষয়টি জানতে পারছি। এ বিষয়ে প্রক্টর স্যারের সঙ্গে কথা বলব। এছাড়া ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে গতকাল পুলিশর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মিটিং হয়েছে। তারা নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে কাজ করছে।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গঙ্গাচড়ায় হিন্দুবাড়িতে হামলা ঠেকাতে ‘পর্যাপ্ত’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
  • নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে মেজর
  • দেশের চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার
  • ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে
  • ডেঙ্গুতে দুজনের, করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু
  • জাওয়াইদেহ বেদুইনদের মৌখিক সাহিত্য
  • অনুদান পায়নি ৫০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৪৬২ ব্যক্তি, করণীয় জানাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়
  • রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
  • ৪৯তম বিসিএস: অনলাইন আবেদন ও ফি জমাদানে পিএসসির নতুন নির্দেশনা
  • জানুয়ারি-জুন ছয় মাসে বিকাশের মুনাফা বেড়ে ৩০৮ কোটি টাকা