নোয়াখালীতে নিখোঁজ ছাত্রদল নেতার লাশ মিলল সেপটিক ট্যাঙ্কে
Published: 26th, April 2025 GMT
নোয়াখালী সদরে পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে ছাত্রদলের নেতা মীর হোসেন সাদ্দামের (৩১) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে উপজেলার নোয়ান্নই ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রাম থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
প্রতিবেশীর জানাজার জন্য গিয়ে দু’দিন নিখোঁজ ছিলেন সাদ্দাম। তিনি জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুর গ্রামের মৃত মমিনুল হকের ছেলে ও ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ছিলেন।
নিহতের বড় ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন সোহেল জানান, সাদ্দাম চাকরি করতেন রাজগঞ্জ বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো.
জানাজায় অংশ নেওয়ার জন্য গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে দোকান থেকে বের হন। স্ত্রী সুবর্ণা আক্তার ফোন করলে তাঁকে জানাজা শেষে ফিরতে দু-এক ঘণ্টা দেরি হবে জানান। কিন্তু ওই রাত থেকেই সাদ্দামের খোঁজ না পেয়ে শুক্রবার বেগমগঞ্জ মডেল থানায় জিডি করেন তারা।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শনিবার দুর্গাপুর গ্রামের সওদাগরের বাড়ির পাশে বাগানে আম কুড়াতে গিয়ে শিশুরা পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাঙ্কে কালো পলিথিনে মোড়ানো বস্তু দেখে অন্যদের জানায়। তারা এসে লাশ পেয়ে পুলিশে খবর দেন। পরে সদর ও বেগমগঞ্জ থানার পুলিশ দুপুরে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে গিয়ে সাদ্দামের লাশ শনাক্ত করেন।
সরেজমিন সাদ্দামের রাজেন্দ্রপুর গ্রামের বাড়িতে দেখা যায়, মা মমতাজ বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। জ্ঞান ফিরলে বিলাপ করছেন, ‘আমার বুকের মানিককে কেন হত্যা করল? সে তো কারও ক্ষতি করেনি। কাজ করে সংসার চালাত। আমি হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’ সাদ্দামের স্ত্রী সুবর্ণা আক্তার নির্বাক! সাত মাস বয়সী ছেলে ওয়াসিকে নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন তিনি।
বেগমগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুরাদ জিয়াউর রহমান জানান, ওয়ার্ড ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাদ্দামের সঙ্গে কারও বিরোধ ছিল বলে তাঁর জানা নেই। নিখোঁজের খবরে নেতাকর্মী সন্ধান শুরু করলে শুক্রবার রাতে সদরের ছয়ানী এলাকায় রাস্তায় তাঁর ব্যবহৃত মোটরসাইকেল পান। পাশেই ধানক্ষেতে রক্তের দাগ দেখে পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। সাদ্দামের ঘাতকদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ওসি লিটন দেওয়ান জানান, এখন পর্যন্ত তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে পারেননি। তবে হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনে চেষ্টা চলছে।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) এমরান খান সাংবাদিকদের জানান, পূর্বশত্রুতার জেরে এ হত্যাকাণ্ড বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল ব গমগঞ জ ছ ত রদল
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।
এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।
সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।
শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’