চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম সেশনে দুইটি উইকেট তুলে নিতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। তবে জিম্বাবুয়ের রানের গতিও ছিল ভালো। মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগে সফরকারীদের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৮৯ রান। ওভারপ্রতি তিনের বেশি রান তোলা জিম্বাবুয়ের হয়ে অপরাজিত রয়েছেন ওয়েলচ (৩২) ও শন উইলিয়ামস (৬)। বাংলাদেশের হয়ে একটি করে উইকেট শিকার করেছেন তানজিম হাসান সাকিব ও তাইজুল ইসলাম।

এসেই উইকেট পেলেন তাইজুল

১৯তম ওভারে প্রথমবার বল করতে আসেন তাইজুল। প্রথম বল ডিফেন্ড করেন বেন কারেন। দ্বিতীয় বলে স্কয়ার কাট করতে চেয়েছিলেন। তবে ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড হয়ে গেছেন বেন কারেন। ৫০ বল খেলে ২১ রান করেছেন তিনি। ৭২ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারাল জিম্বাবুয়ে। কারেন ফিরলেন ২১ রানে।

অভিষেকে তানজিমের উইকেট, সাজঘরে বেনেট

টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে প্রথম ইনিংসের সূচনা করে জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের বোলাররা সেভাবে কিছুই করতে পারছিলেন না দুই ওপেনার বেন কারান এবং ব্রায়ান বেনেটের কাছে। এরই মাঝে একটি সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। যদিও সেটা কাজে লাগাতে পারেনি তারা। ৮ম ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের গুড ল্যান্থের ডেলিভারি ডিফেন্ড করতে চেয়েছিলেন বেন কারেন। এজ হয়ে স্লিপে চলে যায় বল। সেখানে থাকা ফিল্ডার সাদমান সহজ ক্যাচ তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হলেন। ১১ রানে জীবন পান কারেন।

বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১১তম ওভার পর্যন্ত। টেস্ট অভিষেকে বেনেটকে ফিরিয়ে উইকেটের দেখা পান তানজিম হাসান সাকিব। তার কোয়ার্টার লেংথের ডেলিভারিটি স্কয়ার ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন বেনেট, যদিও পায়ের কোনো মুভমেন্ট ছিল না। ৪১ রানে প্রথম উইকেট হারাল জিম্বাবুয়ে, বেনেট ফিরলেন ২১ রানে। ১৩ ওভারে জিম্বাবুয়ের রান ১ উইকেটে ৪২। ক্রিজে বেন কারানের সঙ্গী নিক ওয়েলচ।

পিএসএল খেলতে পাকিস্তান যাওয়ায় এই টেস্টে নেই নাহিদ রানা। তার জায়গায় টেস্ট অভিষেক হচ্ছে পেসার তানজিম সাকিবের। দেশের হয়ে ১০ ওয়ানডে ও ১৮ টি-টোয়েন্টি খেললেও তানজিম এবারই প্রথম মাঠে নামছেন টেস্ট খেলার জন্য। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৬ ম্যাচে ২৫ উইকেট আছে তার।

সিলেট টেস্টের একাদশ থেকে বাদ পড়েছেন মাহমুদুল হাসান ও খালেদ আহমেদ। প্রায় তিন বছর পর বাংলাদেশের টেস্ট একাদশে জায়গা পেয়েছেন এনামুল হক বিজয়। সর্বশেষ ২০২২ সালের জুনে গ্রস আইল্যান্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট খেলেছিলেন ডানহাতি ব্যাটার। ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ ফর্ম বিবেচনায় তাকে দলে নেওয়া হয়। অফ স্পিনার নাঈম হাসানকেও রাখা হয়েছে। তাকে নিয়ে একাদশে স্পিনার তিনজন। 

এদিকে সিরিজ জেতার লক্ষ্যে একাদশে দুটি পরিবর্তন এনেছে জিম্বাবুয়ে। আগের ম্যাচে উইকেটের পেছনে একাধিক সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেওয়া নিয়াশা মায়াভোকে বাদ দিয়েছে তারা। জায়গা হয়নি পেস অলরাউন্ডার ভিক্টর নিয়াউচির।

এর আগে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টে ৩ উইকেটে হেরে গেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ১৯১ রানে অলআউট হওয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে সম্ভাবনা তৈরি করেও জিম্বাবুয়েকে বড় লক্ষ্য দিতে পারেনি স্বাগতিকরা। ১৭৪ রানের লক্ষ্য দিয়ে ৭ উইকেট তুলে নিলেও জিম্বাবুয়ে ম্যাচ জিতে নেয় ৩ উইকেট হাতে রেখে।

বাংলাদেশ একাদশ: সাদমান ইসলাম, এনামুল হক, মুমিনুল হক, নাজমুল হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুশফিকুর রহিম, জাকের আলি, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, তানজিম হাসান, হাসান মাহমুদ।

জিম্বাবুয়ে একাদশ: ক্রেইগ আরভিন (অধিনায়ক), ব্রায়ান বেনেট, বেন কারান, ওয়েসলি মাধেভেরে, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা, ভিনসেন্ট মাসেকেসা, ব্লেসিং মুজারাবানি, রিচার্ড এনগারাভা, টাফাডজোয়া সিগা, নিকোলাস ওয়েলচ, শন উইলিয়ামস।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত ইজ ল প রথম উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।

হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।

আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’

গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’

আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ