ক্রিকেট ইতিহাসে দুর্দান্ত ইনিংস, ১৪ বছর বয়সেই কোটি টাকার স্বপ্নে
Published: 29th, April 2025 GMT
মাত্র ১৪ বছর বয়সে আইপিএলে নিজের অভিষেক ম্যাচেই আলো ছড়িয়েছিলেন বৈভব সূর্যবংশী। তবে সোমবার যা করলেন, তা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসেই নজিরবিহীন। গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে ঝড়ের বেগে সেঞ্চুরি করে রীতিমতো রেকর্ডবই উল্টে ফেলেছেন এই কিশোর ওপেনার। ৩৫ বলের বিস্ফোরক শতরান এনে দিয়েছে দল রাজস্থান রয়্যালসকে কাঙ্ক্ষিত জয়, আর বৈভবকে এনে দিয়েছে সারা ভারতজুড়ে প্রশংসা।
তার এই অসাধারণ কৃতিত্বে মুগ্ধ হয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার ঘোষণা দিয়েছেন ১০ লাখ রুপির পুরস্কার। তরুণ এই প্রতিভাকে টেলিফোনে শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর ভাষ্য, ‘‘এই বয়সে এমন অর্জন অনন্য। বৈভব শুধু রাজ্যের নয়, গোটা দেশের গর্ব হয়ে উঠেছে।’’
নীতিশ কুমার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) বৈভবের সঙ্গে পূর্বের একটি ছবিও শেয়ার করেছেন। ক্যাপশনে লিখেছেন, “ভারতের ক্রিকেটভবিষ্যতের অন্যতম আশার নাম বৈভব সূর্যবংশী। তার প্রতিভা ও আত্মবিশ্বাস দেখার মতো। এই বয়সেই যা করে দেখাল, তা কল্পনার বাইরে। আমরা গর্বিত।”
আরো পড়ুন:
‘কলঙ্কমুক্ত হলো কী না’ প্রশ্নে যা বললেন আবাহনী কোচ
টিম গড়া থেকে সবকিছুতেই চ্যালেঞ্জ ছিল, এ বছরের ট্রফি স্পেশাল: মোসাদ্দেক
জয়পুরের সওয়াই মান সিং স্টেডিয়ামে বৈভব খেলেছেন অবিশ্বাস্য এক ইনিংস। ৩৮ বলে ১০১ রান করে আইপিএলে দ্বিতীয় দ্রুততম শতকের রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন। ইনিংসে ছিল ৭টি চার ও ১১টি ছক্কা। অর্ধশতক তুলে নিয়েছেন মাত্র ১৭ বলে। সেই ইনিংসেই মিলে যায় আরও চারটি পুরস্কার—ম্যাচসেরা, সর্বোচ্চ স্ট্রাইকরেট, সর্বোচ্চ ছক্কা ও সর্বোচ্চ ফ্যান্টাসি পয়েন্ট সংগ্রাহক।
এই চারটি স্বীকৃতির জন্য বৈভব পেয়েছেন ৪ লাখ রুপি পুরস্কার। এর বাইরেও রাজ্য সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আরও ১০ লাখ রুপি পুরস্কার যাবে তার ঝুলিতে। সবমিলিয়ে নিজের অভিষেক মৌসুমেই বৈভব যেন কোটি টাকার স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন দুর্বার গতিতে।
এর আগে গেল নভেম্বরে আইপিএলের নিলামে তাকে ১ কোটি ১০ লাখ রূপিতে (১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা) দলে ভিড়িয়েছিল রাজস্থান রয়্যালস। সবচেয়ে কম বয়সী ক্রিকেটার হিসেবে দল পেয়ে ও কোটিপতি হয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন বৈভব।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার
২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।
মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।
ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।
স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।
শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’
তার জন্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”
"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।
প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"
ঢাকা/ইয়াসিন