মায়ের চিকিৎসার জরুরি প্রয়োজনে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে ঢাকা থেকে ফরিদপুর যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম। কিন্তু পথেই ঘটে যায় অঘটন। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে হারিয়ে ফেলেন টাকা ভর্তি ব্যাগটি। হারানোর তিন দিন পর মানিকগঞ্জ পুলিশের সহায়তায় এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা ফেরত পেলেও এখনও নিখোঁজ ৮৭ হাজার টাকা।
গত শনিবার সকাল ৮টার দিকে উত্তরা থেকে মোটরসাইকেলে রওনা দেন মনিরুল। তাঁর মা হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসার জন্য তিনি গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিল একটি কালো ব্যাগ, যাতে রাখা ছিল দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকা। ব্যাগটি তিনি মোটরসাইকেলের পেছনে বেঁধে রেখেছিলেন। সকাল ১০টার দিকে তিনি পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় পৌঁছান। সেখানে হঠাৎ ব্যাগটি না পেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। দ্রুত উল্টো পথে ফিরে গিয়েও কোনো খোঁজ না পেয়ে, ফেসবুকে নিজের ব্যক্তিগত আইডি থেকে টাকা হারানোর তথ্য জানান।
এদিকে, ব্যাগটি মহাসড়কের বারোবাড়িয়া সেতু-সংলগ্ন এলাকায় পড়ে থাকতে দেখেন মানিকগঞ্জমুখী পল্লীসেবা গাড়ির চালক মানিক মিয়া। তাঁর সহযোগীকে দিয়ে তিনি ব্যাগটি গাড়িতে তুলে নেন। অনেক যাত্রীর সামনেই চালকের সহযোগী ব্যাগের চেইন খুলে ভেতরে টাকা দেখতে পান। পরে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে এক নারী যাত্রী ব্যাগটি নিজের দাবি করলে শুরু হয় উত্তেজনা। তখন দু’জন শ্রমিক ব্যাগটি চালকের কাছ থেকে নিয়ে নেন। ঘটনাটি জানানো হলে পল্লীসেবা গাড়ির চালকের সহযোগী মালিক সমিতিকে বিষয়টি জানান। এর পর পুলিশকে জানানো হলে, প্রায় ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় এক লাখ ৪৮ হাজার টাকাসহ ব্যাগটি উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর থানা পুলিশ।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন মনিরুলের স্বজনরা ফেসবুকে বিষয়টি দেখে তাঁকে ফোন করেন। এর পর তিনি মানিকগঞ্জ সদর থানায় যোগাযোগ করলে প্রমাণ যাচাই শেষে মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর হাতে টাকাগুলো তুলে দেয় পুলিশ।
মনিরুল ইসলাম জানান, তাঁর হারানো ব্যাগে দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকা ছিল। উদ্ধার হওয়া টাকায় ঘাটতি রয়েছে ৮৭ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি এস এম আমান উল্লাহ বলেন, টাকা উদ্ধার করে প্রকৃত মালিককে ফেরত দেওয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ব্যাগে আরও টাকা ছিল। বাকি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ মন র ল

এছাড়াও পড়ুন:

আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য

কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।

মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।

দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।

লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।

দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।

জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।

রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।

দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ