মায়ের চিকিৎসার টাকা হারিয়ে ফেরত পেলেন কিছু
Published: 29th, April 2025 GMT
মায়ের চিকিৎসার জরুরি প্রয়োজনে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে ঢাকা থেকে ফরিদপুর যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম। কিন্তু পথেই ঘটে যায় অঘটন। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে হারিয়ে ফেলেন টাকা ভর্তি ব্যাগটি। হারানোর তিন দিন পর মানিকগঞ্জ পুলিশের সহায়তায় এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা ফেরত পেলেও এখনও নিখোঁজ ৮৭ হাজার টাকা।
গত শনিবার সকাল ৮টার দিকে উত্তরা থেকে মোটরসাইকেলে রওনা দেন মনিরুল। তাঁর মা হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসার জন্য তিনি গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিল একটি কালো ব্যাগ, যাতে রাখা ছিল দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকা। ব্যাগটি তিনি মোটরসাইকেলের পেছনে বেঁধে রেখেছিলেন। সকাল ১০টার দিকে তিনি পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় পৌঁছান। সেখানে হঠাৎ ব্যাগটি না পেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। দ্রুত উল্টো পথে ফিরে গিয়েও কোনো খোঁজ না পেয়ে, ফেসবুকে নিজের ব্যক্তিগত আইডি থেকে টাকা হারানোর তথ্য জানান।
এদিকে, ব্যাগটি মহাসড়কের বারোবাড়িয়া সেতু-সংলগ্ন এলাকায় পড়ে থাকতে দেখেন মানিকগঞ্জমুখী পল্লীসেবা গাড়ির চালক মানিক মিয়া। তাঁর সহযোগীকে দিয়ে তিনি ব্যাগটি গাড়িতে তুলে নেন। অনেক যাত্রীর সামনেই চালকের সহযোগী ব্যাগের চেইন খুলে ভেতরে টাকা দেখতে পান। পরে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে এক নারী যাত্রী ব্যাগটি নিজের দাবি করলে শুরু হয় উত্তেজনা। তখন দু’জন শ্রমিক ব্যাগটি চালকের কাছ থেকে নিয়ে নেন। ঘটনাটি জানানো হলে পল্লীসেবা গাড়ির চালকের সহযোগী মালিক সমিতিকে বিষয়টি জানান। এর পর পুলিশকে জানানো হলে, প্রায় ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় এক লাখ ৪৮ হাজার টাকাসহ ব্যাগটি উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর থানা পুলিশ।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন মনিরুলের স্বজনরা ফেসবুকে বিষয়টি দেখে তাঁকে ফোন করেন। এর পর তিনি মানিকগঞ্জ সদর থানায় যোগাযোগ করলে প্রমাণ যাচাই শেষে মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর হাতে টাকাগুলো তুলে দেয় পুলিশ।
মনিরুল ইসলাম জানান, তাঁর হারানো ব্যাগে দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকা ছিল। উদ্ধার হওয়া টাকায় ঘাটতি রয়েছে ৮৭ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি এস এম আমান উল্লাহ বলেন, টাকা উদ্ধার করে প্রকৃত মালিককে ফেরত দেওয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ব্যাগে আরও টাকা ছিল। বাকি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।