হজপূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে সৌদি আরবের নির্দেশনা
Published: 30th, April 2025 GMT
প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখো মুসলমান পবিত্র হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে সমবেত হন। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম এই ধর্মীয় কর্তব্য পালনের জন্য মক্কা ও তার আশপাশের পবিত্র স্থানগুলোতে মুসল্লিরা একত্র হন। এই গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় আচার সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সৌদি হজ মন্ত্রণালয় তীর্থযাত্রীদের প্রাক-প্রস্তুতির ওপর জোর দিয়ে বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজের যাত্রা শুরুর আগেই তীর্থযাত্রীদের এই ইবাদতের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা অর্জন করা উচিত। হজের স্তম্ভ, বাধ্যবাধকতা, সুন্নাহ, নিষিদ্ধ কাজ এবং প্রতিটি আচারের সঠিক পদ্ধতি ও নিয়মকানুন সম্পর্কে জানতে হবে। এছাড়া, পবিত্র স্থানগুলোর গুরুত্ব ও সেগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোও শিখে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সৌদি হজ মন্ত্রণালয় তাদের অফিশিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে বলেছে, ‘তীর্থযাত্রীদের উচিত হজের স্তম্ভ, কর্তব্য, সুন্নাহ এবং নিষেধাজ্ঞাগুলো সম্পর্কে জানা। প্রতিটি আচারের সঠিক পদ্ধতি, নিয়ম এবং পবিত্র স্থানগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা অর্জন করা জরুরি।’
আরও পড়ুনহজযাত্রীদের বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে হজ গাইড২৪ মে ২০২৪হজের বিস্তারিত নির্দেশিকা বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশ করা হয়েছে (লিংক: https://learn.
ইসলামের নির্দেশ অনুযায়ী, যেসব মুসলমান শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম, তাদের জীবনে অন্তত একবার হজ পালন করা ফরজ। প্রতি বছর ইসলামি চান্দ্র পঞ্জিকার ১২তম মাস জিলহজ্জ মাসের অষ্টম দিনে হজ শুরু হয় এবং সাধারণত পাঁচ দিন স্থায়ী হয়। এ বছর জুনের শুরুতে হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
ইসলামের জন্মস্থান সৌদি আরবে ইতিমধ্যে হজের প্রস্তুতি শুরু করেছে। অনিয়মিত তীর্থযাত্রীদের প্রবেশ ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মক্কা ও অন্যান্য পবিত্র স্থানে শুধুমাত্র অনুমোদিত তীর্থযাত্রীদেরই প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।
এছাড়া, হজের প্রস্তুতি হিসেবে সৌদি আরব সম্প্রতি বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে হজের জন্য একটি স্মার্ট বুক প্রকাশ এবং কাবার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর ওপর একটি নির্দেশিকা। এসব উদ্যোগ তীর্থযাত্রীদের জন্য হজ পালনকে আরও সহজ ও সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে।
হজের শেষ আচার হিসেবে ‘জামারাত’ নামে একটি অনুষ্ঠানে হজযাত্রীরা শয়তানের প্রতীক হিসেবে স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপ করেন। এই আচারটি হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং তীর্থযাত্রীদের এটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সৌদি আরবের এই প্রাক-প্রস্তুতি নির্দেশনা তীর্থযাত্রীদের জন্য একটি সুসংগঠিত ও আধ্যাত্মিকভাবে পরিপূর্ণ হজ নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র : গালফ নিউজ
আরও পড়ুনহজযাত্রীদের জন্য ‘লাব্বাইক’ অ্যাপ চালু করেছে সরকার২৮ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ত র জন য ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।
ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদ, বিক্ষোভসেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।
কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।