একাডেমিক পড়াশোনায় ফিরছেন দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার সাধুপাড়া গ্রামের ‘ইংলিশম্যান’ হৃদয় চন্দ্র। শুধু তা–ই নয়, উপজেলা পরিষদ চত্বরে স্কুল ভবনের একটি কক্ষে ইংলিশ স্পোকেন সেন্টার তৈরি করা হবে। সেটা পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন তিনি। উপজেলা প্রশাসন এ উদ্যোগ নিয়েছে।

উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় হৃদয় চন্দ্র আবারও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছেন দিনাজপুর সেতাবগঞ্জ সরকারি কলেজে। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে তাঁর হাতে বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন বই, ইংলিশ স্পোকেন–সম্পর্কিত কয়েকটি বই তুলে দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম হাবিবুল হাসান, বোচাগঞ্জের ইউএনও মারুফ হোসাইন, হৃদয় চন্দ্রের বাবা সুধীর চন্দ্র প্রমুখ।

১০ এপ্রিল প্রথম আলো অনলাইনে “দিনাজপুরের ট্রাক্টরচালক হৃদয় চন্দ্র যেভাবে ‘ইংলিশম্যান’ হয়ে উঠলেন” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি নজরে আসে জেলা প্রশাসনের।

হৃদয় বলেন, ‘আমি ভীষণ খুশি। আবার পড়ালেখায় ফিরতে পারছি। কলেজে ভর্তি সম্পন্ন হয়েছে। একটা লম্বা সময় বিরতি গেল। বিষয়ভিত্তিক পড়ালেখায় অনেকটা পিছিয়ে আছি। আমার স্যাররাও খুশি হয়েছেন। আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন।’ পড়ালেখা শেষ করে শিক্ষকতা পেশায় যেতে চান তিনি। হৃদয়ের বাবা উপজেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

করোনাকালে আর্থিক অনটনে পড়ে স্নাতক প্রথম বর্ষেই লেখাপড়া ছেড়েছিলেন হৃদয় চন্দ্র। এর পর থেকে কখনো ট্রাক্টরচালক, কখনো বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করে সংসারে সচ্ছলতা আনতে সহায়তা করেছেন। কিন্তু লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর। বিশেষ করে ইংরেজি ভাষা শেখার প্রতি ছিল প্রবল আগ্রহ। আর তাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলা, বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করে নিজের ফেসবুকে আপলোড করে বেশ সাড়া ফেলেন তিনি। নিজ এলাকায় ‘হৃদয়’ নাম ঘুচিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন ‘ইংলিশম্যান’।

সুধীর চন্দ্র-রাধা রানী দম্পতির দুই ছেলেসন্তানের মধ্যে হৃদয় ছোট। তাঁর বাবাও ট্রাক্টর চালাতেন। বয়সের ভারে বাবা কাজ করতে পারেন না। সংসারের দায়িত্ব এখন হৃদয় ও তাঁর ভাইয়ের কাঁধে। বছর দুয়েক আগে ঋণ করে একটি ট্রাক্টর কিনেছেন। দুই ভাই সেটি চালান। এ থেকে যে আয় হয়, তাই দিয়ে চলে সাতজনের সংসার।

হৃদয়ের বিষয়ে দিনাজপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম হাবিবুল হাসান বলেন, স্নাতক শেষ হওয়া পর্যন্ত তাঁর পড়ালেখার খরচ উপজেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া হবে। পাশাপাশি এলাকার স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীরা যাতে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বাড়াতে পারে, সে জন্য একটি ইংলিশ স্পোকেন সেন্টার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হৃদয় সেটি পরিচালনা করবেন।

আরও পড়ুনদিনাজপুরের ট্রাক্টরচালক হৃদয়চন্দ্র যেভাবে ‘ইংলিশম্যান’ হয়ে উঠলেন১০ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 

ফেস্টুন অপসারণ করায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল আহমেদকে শাসিয়েছেন এক বিএনপি নেতা। তিনি ইউএনওকে আগের স্থানেই ফেস্টুন লাগিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, “তা না হলে যেটা করা দরকার, সেটাই করব।”

এই বিএনপি নেতার নাম কে এম জুয়েল। তিনি রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুলে তার বাড়ি। 

গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের সড়ক বিভাজকে থাকা বিভিন্ন দলের ফেস্টুন অপসারণ করেন ইউএনও ফয়সাল আহমেদ। বিষয়টি জানতে পেরে ইউএনওকে ফোন করে ধমকান জুয়েল।

কে এম জুয়েলের ফোনকল রেকর্ড পাওয়া গেছে। এতে শোনা গেছে, কে এম জুয়েল বলেছেন- “আজকে একটা ঘটনা ঘটেছে, আমি শুনেছি। আমি ইঞ্জিনিয়ার কে এম জুয়েল বলছি, সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেট। আপনার গোদাগাড়ী থানার প্রোপারে যে পোস্টার সরিয়েছেন, এই বিষয়ে কিছুক্ষণ আগে আমাকে ইনফর্ম করা হয়েছে। সেখানে আমার পোস্টার ছিল। জামায়াত-বিএনপির পোস্টার ছিল। আপনি যে হটাইছেন, এর কারণ কী? কোনো পরিপত্র আছে, না ইচ্ছে করেই?”

ইউএনও তখন বলেন, “জনগণ অভিযোগ দিয়েছে।” জুয়েল বলেন, “জনগণ তো অনেক অভিযোগ দিয়েছে। সমগ্র গোদাগাড়ী থানাতে ভর্তি হয়ে আছে পোস্টার। তোলেন, সব তোলেন।”

এ সময় ইউএনও কিছু বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে দিয়ে জুয়েল বলেন, “শোনেন, আমি যেটা বলছি লিগ্যাল রাইট নিয়ে বলছি, সেটার সঠিক অ্যানসার করবেন। আপনি কেন ওই জায়গার পোস্টার তুলেছেন, আর অন্য জায়গার তুলছেন না কেন? আমি ঢাকাতে আছি, আমি আসতেছি।”

ইউএনও বলেন, “আচ্ছা ঠিক আছে।” জুয়েল বলেন, “না, আপনি যেখান থেকে পোস্টার তুলেছেন, সেখানে আপনি সাবমিট করবেন পোস্টার।” কথা না বাড়িয়ে ইউএনও বলেন, “ঠিক আছে।”

এ সময় আরো ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি নেতা জুয়েল বলেন, “কালকে যেন আমরা ওখানে দেখতে পাই, পোস্টার যেখানে ছিল। ঠিক আছে মানে কী? অবশ্যই করবেন। না হলে যেটা করা দরকার সেটাই করব। আপনার এগেইনেস্টে যেরকম স্টেপ নেওয়া দরকার, সেটাই আমি করব। বিশেষ করে আমরা করব। আমার নেতার ছবি তুলেছেন আপনি ওখান থেকে। জাস্ট রিমেম্বার ইট।”

জুয়েল বলতে থাকেন, “নরসিংদী বাড়ি দেখান আপনি, না? কোন দল থেকে আসছেন আপনি? কোন দল থেকে এসেছেন? কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেছেন আপনি? কালকে পোস্টার ভদ্রলোকের মতো লাগাবেন। ফাইজলামি! এহ, বিশাল ব্যাপার। উনি টিএনও হয়ে গোদাগাড়ীতে আসছেন।”

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, “ডাইংপাড়া মোড়ে ব্যানার-ফেস্টুন এরকম পর্যায়ে ছিল যে, যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছিল। পাশাপাশি পৌরসভার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল বলে অভিযোগ ছিল। স্থানীয় জনগণ এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভা থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সরানোর জন্য। দুই-তিনবার মৌখিকভাবে ও লিখিত আকারে জানানো হয়েছিল। না সরানোর কারণে ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে পৌরসভায় রাখা হয়েছে।”

তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সভাতেও আলোচনা হয়েছিল। সেখান থেকে সকল রাজনৈতিক দলের পোস্টারই পৌরসভার পক্ষ থেকে সরানো হয়েছে। তবে, বিএনপি নেতা কে এম জুয়েলের ফোনে শাসানোর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা কে এম জুয়েল বলেন, “ইউএনওর কাছে জনগণ অভিযোগ করেছে, আর আমরা কি মানুষ না? আমরা জানোয়ার? আমার ছবি তুলে ফেলুক আপত্তি নাই। আমার নেতার ছবিতে হাত দিয়েছে কেন? তার কাছে কি নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পোস্টার তুলে ফেলতে? তিন মাসের মধ্যে কি নির্বাচন? উনি জাস্টিস করতেন, আমার কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু গরু-ছাগলের মতো আচরণ করবেন, তা তো হয় না।”

বিষয়টি নিয়ে কোথাও আলোচনা হয়নি, ইউএনও কোনো চিঠিও দেননি, দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “গতকাল আমার এক লোককে ডেকে ইউএনও বলেছেন, যেখানে পোস্টার ছিল, দয়া করে আপনারা লাগিয়ে নেন। কিন্তু, আমরা তো লাগাব না। ইউএনওকেই লাগাতে হবে।”

উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একজন সদস্য জানান, প্রায় দুই মাস আগে উপজেলা সদরের এসব ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করেন এক ব্যক্তি। এক মাসেও সেগুলো অপসারণ না হওয়ায় পরবর্তী মাসের সভাতেও বিষয়টি আলোচনায় ওঠে। ওই সভায় ট্রাফিক পুলিশ আপত্তি করেছিল যে, ফেস্টুনের কারণে রাস্তার একপাশ থেকে অন্যপাশ দেখা যায় না। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ দুটি সভার মধ্যে প্রথম সভায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল ছিলেন না। দুই সভার মাঝে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি পুনর্গঠন করা হলে তিনি পরবর্তী সভায় উপস্থিত ছিলেন।

তবে, কোনো আলোচনা হয়নি দাবি করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল বলেন, “আমি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য। পোস্টার নিয়ে কোনো আলোচনা সভায় হয়নি। ইউএনও আমাদের না জানিয়ে এভাবে ফেস্টুন অপসারণ করে ঠিক করেননি। সেখানে আমাদের নেতার ছবি ছিল।”

ঢাকা/কেয়া/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএনপির সাবেক নেতার হুমকি, সরিয়ে ফেলা পোস্টার ইউএনওকেই লাগাতে হবে
  • ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 
  • মেঘনায় নদীতে অবৈধ বালু তোলায় ব্যবহৃত ৭টি খননযন্ত্র ও ১টি বাল্কহেড জব্দ