পড়াশোনায় ফিরছেন দিনাজপুরের ‘ইংলিশম্যান’ হৃদয়, শেখাবেন ইংরেজি
Published: 1st, May 2025 GMT
একাডেমিক পড়াশোনায় ফিরছেন দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার সাধুপাড়া গ্রামের ‘ইংলিশম্যান’ হৃদয় চন্দ্র। শুধু তা–ই নয়, উপজেলা পরিষদ চত্বরে স্কুল ভবনের একটি কক্ষে ইংলিশ স্পোকেন সেন্টার তৈরি করা হবে। সেটা পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন তিনি। উপজেলা প্রশাসন এ উদ্যোগ নিয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় হৃদয় চন্দ্র আবারও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছেন দিনাজপুর সেতাবগঞ্জ সরকারি কলেজে। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে তাঁর হাতে বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন বই, ইংলিশ স্পোকেন–সম্পর্কিত কয়েকটি বই তুলে দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম হাবিবুল হাসান, বোচাগঞ্জের ইউএনও মারুফ হোসাইন, হৃদয় চন্দ্রের বাবা সুধীর চন্দ্র প্রমুখ।
১০ এপ্রিল প্রথম আলো অনলাইনে “দিনাজপুরের ট্রাক্টরচালক হৃদয় চন্দ্র যেভাবে ‘ইংলিশম্যান’ হয়ে উঠলেন” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি নজরে আসে জেলা প্রশাসনের।
হৃদয় বলেন, ‘আমি ভীষণ খুশি। আবার পড়ালেখায় ফিরতে পারছি। কলেজে ভর্তি সম্পন্ন হয়েছে। একটা লম্বা সময় বিরতি গেল। বিষয়ভিত্তিক পড়ালেখায় অনেকটা পিছিয়ে আছি। আমার স্যাররাও খুশি হয়েছেন। আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন।’ পড়ালেখা শেষ করে শিক্ষকতা পেশায় যেতে চান তিনি। হৃদয়ের বাবা উপজেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
করোনাকালে আর্থিক অনটনে পড়ে স্নাতক প্রথম বর্ষেই লেখাপড়া ছেড়েছিলেন হৃদয় চন্দ্র। এর পর থেকে কখনো ট্রাক্টরচালক, কখনো বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করে সংসারে সচ্ছলতা আনতে সহায়তা করেছেন। কিন্তু লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর। বিশেষ করে ইংরেজি ভাষা শেখার প্রতি ছিল প্রবল আগ্রহ। আর তাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলা, বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করে নিজের ফেসবুকে আপলোড করে বেশ সাড়া ফেলেন তিনি। নিজ এলাকায় ‘হৃদয়’ নাম ঘুচিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন ‘ইংলিশম্যান’।
সুধীর চন্দ্র-রাধা রানী দম্পতির দুই ছেলেসন্তানের মধ্যে হৃদয় ছোট। তাঁর বাবাও ট্রাক্টর চালাতেন। বয়সের ভারে বাবা কাজ করতে পারেন না। সংসারের দায়িত্ব এখন হৃদয় ও তাঁর ভাইয়ের কাঁধে। বছর দুয়েক আগে ঋণ করে একটি ট্রাক্টর কিনেছেন। দুই ভাই সেটি চালান। এ থেকে যে আয় হয়, তাই দিয়ে চলে সাতজনের সংসার।
হৃদয়ের বিষয়ে দিনাজপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম হাবিবুল হাসান বলেন, স্নাতক শেষ হওয়া পর্যন্ত তাঁর পড়ালেখার খরচ উপজেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া হবে। পাশাপাশি এলাকার স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীরা যাতে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বাড়াতে পারে, সে জন্য একটি ইংলিশ স্পোকেন সেন্টার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হৃদয় সেটি পরিচালনা করবেন।
আরও পড়ুনদিনাজপুরের ট্রাক্টরচালক হৃদয়চন্দ্র যেভাবে ‘ইংলিশম্যান’ হয়ে উঠলেন১০ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
পরিবারের কাছে ফিরে গেলেন অভিনেতা সমু চৌধুরী
অভিনেতা সমু চৌধুরী পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার পর পুলিশ তাঁকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এর আগে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে মাজারের গাছতলায় গামছাপরিহিত সমু চৌধুরীর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নানা জল্পনা শুরু হয়।
গফরগাঁওয়ের পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলম বলেন, অভিনেতা সমু চৌধুরীকে রাত ৩টা ২০ মিনিটের দিকে খালাতো ভাই অপু চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় অভিনয়শিল্পী সংঘের লোকজনও ছিলেন। তিনি বলেন, সমু চৌধুরী এর আগে মাজারটিতে কয়েকবার এলেও কেউ তাঁকে চিনতে পারেননি। এবারও মাজারে একাকী সময় কাটাতে এসেছিলেন তিনি।
এর আগে গত বুধবার রাতে ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে করে গফরগাঁও উপজেলার মশাখালী ইউনিয়নে অবস্থিত মুখী শাহ্ মিসকিনের মাজারে আসেন সমু চৌধুরী। পরদিন গতকাল দুপুরে মাজারের গাবগাছের নিচে শুয়ে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। মাজারের পাশের বাসিন্দা আল মামুন হৃদয় ফেসবুকে তাঁর গাছতলায় শুয়ে থাকার ছবি পোস্ট করেন। দ্রুত সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা সমু চৌধুরীকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে দাবি করেন। সমু চৌধুরীকে এমন অবস্থায় দেখতে পেয়ে সেখানে ভিড় করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিকেল গাড়িয়ে সন্ধ্যা হলে পুলিশের অনুরোধেও থানায় যাননি সমু চৌধুরী। সন্ধ্যার পর লোকজন আরও বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় পুলিশের পাশাপাশি মাজার প্রাঙ্গণে সেনাবাহিনী অবস্থান নেয়। এ সময় সমু চৌধুরী জানান, তিনি সুস্থ আছেন। সারা রাত মাজারে ধ্যানে ছিলেন।
আরও পড়ুনঅভিনেতা সমু চৌধুরীকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছে পুলিশ, কী হয়েছিল তাঁর২১ ঘণ্টা আগেগতকাল রাত ৯টার দিকে সমু চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন গফরগাঁওয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন। সমু চৌধুরী সুস্থ আছেন কি না, তা জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন সেখানে উপস্থিত হন।
ইউএনও এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এক ঘণ্টার বেশি সময় অভিনেতার সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় এবং তাঁকে সুস্থ পাওয়া যায়। তাঁর বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়, পুরো ঘটনা তাঁর জবানিতে শোনা হয়। অভিনেতা মাজারভক্ত মানুষ। এ মাজারে আগেও এসেছিলেন। তাঁকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও গতকাল তাঁর ভাষায় গুরুবার ও গুরুত্বপূর্ণ রাত হওয়ায় তিনি মাজারেই অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবির কারণে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়।’
সমু চৌধুরীর বয়স ৬২ বছর। তিনি ১৯৯০ সালে একটি নাটকের মাধ্যমে অভিনয়জীবনে প্রবেশ করেন। এ ছাড়া উদীচীর সঙ্গে ছিলেন ১২ বছর। ব্যক্তিজীবনে তিনি অবিবাহিত। তাঁর বাড়ি যশোর। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শুধু মা জীবিত আছেন। সমু চৌধুরী যশোরে থাকেন বলেও জানান ইউএনও।
আরও পড়ুনমাজার থেকে সরতে চাইছেন না সমু চৌধুরী১৮ ঘণ্টা আগে