রেল লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের ভিডিও করার সময় উল্টো দিক থেকে আসা আরেক ট্রেনে কাটা পড়ে ইসতিয়াক আহমেদ রাফিদ নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার (৩ এপ্রিল) সকালে তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের আজগবি এলাকার সদাশিবপুর-হাজিপাড়ায় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
এরআগে শুক্রবার (২ এপ্রিল) বিকেলে রাফিদ ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোডে রেল লাইন এলাকায় রেল দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। তার বাবার নাম রেজাউল করিম। নিহত রাফিদ রাজশাহী সরকারি কলেজে স্নাতকের শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়তেন বাংলা বিভাগে। তার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
নিহতের পরিবার জানায়, চাকরির পরীক্ষা দিতে ঢাকায় গেছিলেন ফটোগ্রাফার ইশতিয়াক আহমেদ রাফিদ। পরীক্ষা শেষে উঠেছিলেন তার খালার বাসায়। শুক্রবার বিকেলে খালাতো ভাই ঢাকার কুর্মিটোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র মুস্তাফিজুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। এসময় রেল লাইনে দাঁড়িয়ে ভিডিও করার সময় অপরদিক থেকে আসা আরেক ট্রেনে কাটাপড়ে রাফিদের মৃত্যু হয়।
রাফিদের খালাত ভাই মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘রাফিদ ভাইয়া টঙ্গী থেকে কমলপুরগামী একটি ট্রেনের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করছিলেন। এমন সময় অন্য লাইনে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আরেক ট্রেনে কাটা পড়েন তিনি। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।’’
রাফিদ শিবগঞ্জ মডেল হাইস্কুল থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়। পরে সে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের পড়ালেখা সম্পন্ন করেন। পরে তিনি রাজশাহী কলেজে স্নাতকের জন্য ভর্তি হন। শেষ পর্যন্ত সেখানেই অধ্যায়নরত ছিলেন।
রাফিদের বাবা রেজাউল করিম সরকারি চাকরিজীবী। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর অফিসে কর্মরত। চাকরির সুবাদে তারা শিবগঞ্জ পৌরএলাকার দেওয়ান জাইগীর এলাকায় ভাড়া থাকতেন।
ভাড়া বাসার মালিক একেএস রোকন জানান, রাফিদ খুবই ভদ্র-শান্তশিষ্ট স্বভাবের একজন ছেলে। পড়ালেখায় যেমন মেধাবী ছিলেন। তার হাতের তোলা ছবিও খুবই চমৎকার। যে কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার নাম বেশ পরিচিত।
শনিবার সকাল ৯টায় রাফিদকে দাফন করা হয় তার গ্রামের বাড়িতে। তার জানাজার নামাজে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত হন।
জানাজায় নামাজের আগে তার বাবা রেজাউল করিম বলেন, ‘‘আমাদের এই মুহূর্তে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। এরমাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আমাদের উত্তম প্রতিদান দিবেন। আমার ছেলেকে ভালোবাসার জন্য তার কলেজ ও স্কুলের স্যারেরা জানাযায় অংশ নিয়েছেন। তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমার ছেলের জন্য সবাই দোয়া করবেন।’’
মেধাবী শিক্ষার্থী ইসতিয়াক আহমেদ রাফিদ রাফিদের মৃত্যুতে উপজেলা প্রশাসনসহ তার সহপাঠীরা শোক জানিয়েছেন। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি ফটোগ্রাফি করতেন। ছবিতুলে বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি পুরস্কৃত হয়েছিলেন। রাফিদ মৃত্যুকালে বাবা-মা, বোনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
ঢাকা/শিয়াম/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদপুরে জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা, হাসপাতাল বন্ধ
চাঁদপুর পৌর কবরস্থানে নবজাতক দাফনের সময় নড়ে ওঠা এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় শহরের তালতলা দি ইউনাইটেড হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ফারুক হোসেন গাজী (৪৫)। এই ঘটনায় আগামী দুই দিনের মধ্যে রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তর করে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন হাসপাতালটিতে নানা অবৈধ কার্যক্রম চলে আসছে। ওই নবজাতকের জন্মও হয় এই হাসপতালে। জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা করার ভিডিও ভাইরাল হলে বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের এবং পুলিশ সুপারের নির্দেশে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নবজাতককে কবরস্থানে নিয়ে আসা ওয়ার্ড বয় ফারুক গাজীকে গ্রেপ্তার করে।
এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেন পৌর কবর স্থানের কেয়ারটেকার মো. শাহজাহান মিয়াজী।
এদিকে দি ইউনাইটেড হাসপাতালে এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি বলেন, “হাসপাতালে এসে ব্যবস্থাপনায় জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেও কোন সাড়া মিলেনি। চিকিৎসক নেই, হাসপাতালের প্যাথলজি ও ওটির সঠিক পরিবেশ নেই। একই সাথে পোস্ট অপারেটিভ রোগীর জন্য কোন সুব্যবস্থা নেই এবং হাসপাতালের কাগজপত্রও নবায়ন নেই।”
তিনি আরো বলেন, “প্রাথমিকভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং ওটি, প্যাথলজি ও সংশ্লিষ্ট কক্ষ সীলগালা করা হয়েছে। একই সাথে রোগীদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্য স্থানে সেবার ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের অভিযানে পরিচালিত কার্যক্রম সিভিল সার্জন বরাবর প্রদান করা হবে। সিভিল সার্জন হাসপাতালের নিবন্ধন বাতিলসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।”
এ ভ্রাম্যমাণ আদালতে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রফিকুল হাসান ফয়সাল, জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান। অভিযানে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ সহযোগিতা করেন।
অপরদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত শেষে হাসপাতালের ড্রাগ সনদসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরীক্ষা করে দেখেন জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান।
ঢাকা/অমরেশ/এস