আবাসন সংকটের সমাধানসহ চার দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমাবেশ
Published: 13th, May 2025 GMT
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে চার দফা দাবি নিয়ে সমাবেশ করেছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বরে এ সমাবেশ আয়োজন করে ‘জবি ঐক্য’।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ইউজিসির কালো হাত; ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও’, ‘মন্ত্রণালয়ের কালো হাত; ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও’, ‘বাজেটের বৈষম্য মানি না, মানব না’, ‘বৈষম্যের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, জবিয়ানরা জেগেছে’ স্লোগান দেন।
চার দফা দাবি হলো—জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেট বাড়াতে হবে ও ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে অন্তত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ভাতা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। দ্বিতীয় ক্যাম্পাস এবং পুরান ঢাকার ড.
সমাবেশে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নূর নবী বলেন, প্রতিটি স্তরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় ও সচিবালয়ে এমন কিছু স্বৈরাচারী দোসর বসে আছে, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে জবির বাজেট আটকে দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ১১টি হলের কথা বলা হলেও বাস্তবে সেগুলো বিভিন্ন গোষ্ঠীর দখলে। প্রশাসন এখনও এসব হল বা জমি উদ্ধার করতে পারেনি।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী প্রিয়ন্তী বলেন, আমরা যখন অধিকার আদায়ের জন্য শিক্ষকদের পাশে চাই, তখন অনেক শিক্ষক আমাদের সহায়তা করেন না। এতে আমাদের লজ্জা লাগে।
সমাবেশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রইছ উদ্দিন বলেন, আমরা অতীতে বহু প্রশাসনকে দেখেছি, যারা বাহির থেকে এসে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়িত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা নিয়ে ভাবেনি। আবাসন আমাদের ন্যায্য অধিকার। অতীতে আমাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এখন আর কোন ধরনের বৈষম্য মেনে নেওয়া হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ সাবিনা শারমিন বলেন, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। ইউজিসির সাথে বৈঠক করে আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন ভাতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইউরোপজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ, জার্মানিতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি
ইউরোপজুড়ে কয়েকদিন ধরে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। মহাদেশটির দক্ষিণাঞ্চলে গরম ক্রমেই অসহনীয় হয়ে উঠছে। জার্মানিতে রেকর্ড তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। ইতালি, স্পেন ও গ্রিসের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। দক্ষিণ ইউরোপের কিছু অঞ্চলে রাতের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামছেই না।
প্রচন্ড গরমে সতর্কতা হিসেবে পদক্ষেপ নিচ্ছে বিভিন্ন দেশ। জার্মানি বিভিন্ন শহরে কয়েকদিন ধরে রাস্তাঘাটে লোকজন কম দেখা যাচ্ছে। অনেক স্কুল বন্ধ বা তাড়াতাড়ি ছুটি দেওয়া হচ্ছে। শীতল অনুভূতি পেতে জলাশয়ের ধারে বিপুল মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। অনেক অঞ্চলে তাপপ্রবাহ সংক্রান্ত সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে এবং তা রেডিও–টেলিভিশনে প্রচার করা হচ্ছে।
জার্মান আবহাওয়া সংস্থার একজন বিশেষজ্ঞের মতে, তীব্র তাপপ্রবাহের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। বুধবার পর্যন্ত তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। জার্মান আবহাওয়া সংস্থার আবহাওয়াবিদ মার্কো মানিত্তা সংবাদমাধ্যম ডের স্পিগেলকে জানিয়েছেন, ‘এই সময়ে, অর্থাৎ জুলাইয়ের শুরুতে, এমন তাপপ্রবাহ আগেও হয়েছে। তবে এবারের তাপমাত্রাটা অস্বাভাবিকভাবে তীব্র।’
অস্বাভাবিক তাপমাত্রার একাধিক কারণের মধ্যে রয়েছে—বায়ুমণ্ডলের ওপরের অংশে একটি শক্তিশালী উচ্চচাপ বিরাজ করছে; সূর্যকিরণ অনেক বেশি সময় ধরে থাকছে; সূর্যের অবস্থান অনেক উঁচুতে থাকার কারণে দিনের আলোও দীর্ঘ হচ্ছে; দীর্ঘ সময় ধরে দিন থাকার কারণে ভূপৃষ্ঠ যত তাপ গ্রহণ করছে, তার চেয়ে কম তাপ বিকিরণ করছে।
মার্কো মানিত্তা বলেন, এই সবকটি উপাদান একসঙ্গে মিলে তাপপ্রবাহ সৃষ্টি করছে। একে ‘হিট কাপ’ বা ‘হিট ডোম’ বলা হয়। এতে মেঘ গঠনের সুযোগ কমে যায় এবং সূর্য সরাসরি মাটিতে তাপ ছড়ায়। একই সঙ্গে বায়ুচাপ গরম বাতাসকে নিচে ঠেলে দেয়, ফলে বাতাস আরও গরম হয় এবং গরম বাড়ে। এই ‘হিট কাপ’ অনেকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এর বিপরীতে, যেসব উপাদান ঠান্ডা প্রভাব ফেলতে পারে—যেমন সাহারা মরুভূমির ধুলাবালু, ভেজা বা আর্দ্র মাটি, ঠান্ডা পানির উৎস, এগুলো এখন কমে গেছে।
জার্মান আবহাওয়া সংস্থার পূর্বাভাস অনুসারে, এই সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছাবে। জার্মানিতে স্থানভেদে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। বর্তমানে জার্মান জুড়ে তাপমাত্রা রয়েছে ৩৪ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার হতে পারে এবারের গ্রীষ্মের সবচেয়ে গরম দিন। তবে ভালো খবর হলো বৃহস্পতিবার থেকে গরম কিছুটা কমবে।
ইতালির ‘কারোন্তে’ নামের উচ্চচাপ অঞ্চল দেশটিতে বহুদিন ধরে প্রচণ্ড গরমের সৃষ্টি করছে। রোম, ফ্লোরেন্স, বোলোনিয়া ও পেরুজিয়ায় তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১৭টি শহরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। পুগলিয়া, বেসিলিকাতা ও সিসিলিতেও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৪টার পর্যন্ত কৃষি ও নির্মাণকাজে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আফ্রিকা থেকে আসা গরম বাতাস স্পেনে গ্রীষ্মের প্রথম তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে এনেছে। সেভিয়া, সারাগোসা ও অন্যান্য অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। স্পেনের আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, দেশটিতে তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে। মায়োর্কায় তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও উচ্চ আর্দ্রতার কারণে আরও বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে।
গ্রিসে কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ানোর পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। দেশটিতে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সব প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান বন্ধ রাখা হয়েছে। অনেক এলাকায় রাতের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামছে না। তবে গ্রীসের ক্রেট ও এজিয়ান দ্বীপপুঞ্জে সমুদ্রের বাতাসের কারণে কিছুটা ঠান্ডা পরিবেশ রয়েছে। সেখানে তাপমাত্রা প্রায় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।